#প্রেম_তুমি (দ্বিতীয় খণ্ড)
ফাবিহা নওশীন
পর্ব-13
“যদি বুঝতাম মানে?”
রুশান ওর পাশে বসে থাকা কলিগের দিকে তাকাল। ওর মুখ থমথমে। কেমন বিব্রতকর পরিবেশ। কলিগের সামনে সিন ক্রিয়েট হোক চায় না। কিন্তু অর্পা তো অবিবেচকের মতো ওর সামনেই প্রশ্ন করছে। কলিগ মেয়েটা বুঝতে পারছে ওদের পার্সোনাল কথা হচ্ছে। এখানে না থাকায় শ্রেয়। তাই উঠে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বলল,
“স্যার, আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।”
মেয়েটা কোন রকমে কেটে পড়ল। মেয়েটা যেতেই রুশান ক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিল অর্পার দিকে। অর্পা ওর রি দৃষ্টিকে অবজ্ঞা করে বলল,
“এভাবে না চেয়ে থেকে আমার প্রশ্নের উত্তর দেও।”
রুশান বসা থেকে দাঁড়িয়ে ধাতস্থ হয়ে বলল,
“এ নিয়ে আমরা অন্য সময় কথা বলব। এটা আমার অফিস। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্যার চলে আসবে। সো প্লিজ। সিন ক্রিয়েট করো না। এখানে আমার একটা সম্মান আছে।”
অর্পা টেবিলের উপরে ঠাস করে নিজের ব্যাগটা রেখে বলল,
“তোমার সম্মানের তন্দুরি। যদি আমার প্রশ্নের জবাব না দেও এমন সিন ক্রিয়েট করব যে সারা জীবন মনে রাখব।”
রুশান বিরক্ত মুখে আবারও বসল। তারপর দু’হাতে পুরো মুখের ঘাম মুছে চোখ তুলে অর্পার দিকে তাকাল। ওর চোখে চোখ রেখে বলল,
“কী চাও তুমি?”
অর্পা ওর বিপরীত পাশের চেয়ারে বসে বলল,
“তুমি যে সব সময় ভনিতা করে কথা বলো, ঠিক ভনিতা নয় রহস্য নিয়ে কথা বলো এর কারণ জানতে চাই। তোমার এতসব কথার মানে কী? অনেস্টলি বলবা।”
অর্পা কঠোর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। রুশান নিজেকে ধাতস্থ করার চেষ্টা করছে। নাহ! আর নয়। এইবার মনের চাপা যত কথা, যত রাগ, যত আক্রোশ সব বলবে।
“তোমার আমার ব্রেক আপ হয়েছে অনেক বছর হয়ে গেছে। এসব থেকে বেরিয়ে দুজনেই জীবনে এগিয়ে গেছি৷ এতদিন পরে এসব নিয়ে কথা না বলাই ব্যাটার ছিল কিন্তু তুমি যখন আজ জবাব চাইছো তাহলে শোন, তুমি আমাকে কখনোই বিশ্বাস করতে না। বিশ্বাসহীন ঠুনকো সম্পর্কে ছিলাম আমরা৷ তুমি সুদূর প্রবাসে থাকার পরেও আমার বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসার কোন কমতি হয়নি৷ তুমি যা বলতে তাই চোখ বুঝে বিশ্বাস করতাম। কখনো তোমাকে যাচাই করতে যাইনি। আর না কারো কথায় তোমাকে জাজ করতে গিয়েছি। সবাই যখন বলত অর্পা উড়াল দিয়েছে ও আর তোর কাছে ফিরবে না তখন কনফিডেন্সের সাথে সবাইকে বলতাম ও আসবে। ও আমাকে ছাড়া থাকতেই পারবে না। কিন্তু অন্যদিকে তুমি আমার অজান্তে আমার পেছনে স্পাই লাগিয়ে দিলে। কেন? কারণ আমার প্রতি তোমার বিন্দুমাত্র বিশ্বাস ছিল না। তোমার ধারণা তোমার আড়ালে আমি অন্য মেয়ের সাথে প্রেম করে বেড়াব। আর এইজন্য তুমি আমার পেছনে লোক লাগালে দেন সে যা বলল তাই বিশ্বাস করলে। সে না জানুক তুমি তো জানতে আমি কেমন? কারো সাথে মিশলে, হেসে কথা বললে, ছোটখাটো ফ্লার্ট করলেই সে প্রেমিকা হয়ে যায় না। বন্ধুও হতে পারে। তুমি তো জানতে আমি একটু এমনই ছিলাম। রসিক মানুষ, সবার সাথে মজা করতাম। তখন তো সমস্যা ছিল না। সমস্যা হলো বিদেশে যাবার পর। কেন? কারণ ততদিনে তুমি বদলে গেছো। বিদেশের হাওয়া গায়ে লেগেছে। সেদিন আমাকে কল করে যা নয় তাই বললে। আমার চরিত্র খারাপ, আমি আর কখনো ভালো হব না ব্লা ব্লা। একটা বারের জন্য জিজ্ঞেস করলে না, নিজের সাফাই পেশ করার সুযোগ দিলে না। যখন তোমার এতসব অপবাদের মুখে আমার সামান্য অভিমান হলো, ব্যস! কাচের টুকরোর মতো ভেঙে পড়ল সম্পর্ক। অভিমানে বললাম এত সন্দেহ দিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না, এভাবে চলতে পারে না। এর সল্যুশন প্রয়োজন। তুমি বললে তাহলে সেপারেশন ব্যাটার। চলো ব্রেক আপ করি। আমার সাথে তোমার আর থাকতে হবে না। মুক্তি দিলাম তোমায়। কি করব আমিও নিলাম।কাউকে তো জোর করে বেঁধে রাখা যায় না। তারপর জানো মজা করাই ছেড়ে দিলাম। একটা রসিক মানুষ বেরসিক হয়ে পড়ল। জীর্ণ শীর্ণ জীবন ঢের চলতে লাগল। অগোছালো মানুষটা কেমন গোছালো হয়ে উঠল। থ্যাংকস টু ইউ। এত গোছালো, মুডি পার্সোন বানানোর জন্য। এর বেশি আমার আর কিছু বলার নেই।”
রুশান চলে গেলেও অর্পা টু শব্দ করল না। স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। চোখ দিয়ে মুক্ত দানার মতো অশ্রু ঝরছে। মাঝেমধ্যে ফুঁপিয়ে উঠছে।
“রুশান, আমার মনের কথা তুমি সেদিনও বোঝোনি আজও বুঝলে না। আমিও অভিমানে বলেছিলাম ব্রেক আপ করার কথা কিন্তু তুমি যে এত সহজে মেনে নিবে সেটা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম তুমি বলবে তুমি ছাড়া অন্য কোন মেয়ে আমার জীবনে নেই আর থাকবেও না। আমি আর মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করব না। আমরা সব আবার ঠিক করে নেব। কিন্তু তুমি তা করোনি। নীরবে সরে এসেছো জীবন থেকে।”
অর্পা ঠোঁট কামড়ে ধরে ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
____________
দিশা আর দর্শন আজ সন্ধ্যে বেলায় আয়ানের বাড়িতে আসবে। অর্ষাকে দায়িত্ব দিয়েছে ওর ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করার জন্য।
“এই অর্ষা, ওরা রাস্তায় আছে। আমার অনেক নার্ভাস লাগছে। তুই দেখ না সব ঠিক আছে কি-না।”
“আয়ান ভাইয়া, আমি তো আপ্যায়নের ব্যাপারটা তেমন বুঝি না। আর ওদের ইম্প্রেশ করে কথাও বলতে পারব না। আমি শুধু তোমার বাসার সবাইকে ম্যানেজ করে ওদের সামনে আনতে পারব। নাস্তার ব্যাপারটা আয়েশা আপু দেখছে আর খালাকে আমি বলেছি যদি আমাকে ভালোবাসে তবে যেন কোন সিন ক্রিয়েট না করে সব স্বাভাবিক ভাবে নেয় আর বিয়েটা যেন হয় তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। আমাকে কথাও দিয়েছে তাই নো টেনশন।”
“তুই কিন্তু পুরো সময়টা আমার সাথে থাকবি। আমার অনেক নার্ভাস লাগছে। ওর ভাই নাকি বলেছে আমার সাথে কথা বলে, আমার পরিবারের সাথে কথা বলে ভালো লাগলে তবেই ওর বাবা-মার সাথে কথা বলবে। যদি আমাকে পছন্দ না হয়?”
“হবে না কেন? আমার ভাই যেন-তেন ছেলে না-কি? দেখতে শুনতে মাশাল্লাহ। ভালো এডুকেশন, ভালো জব কি নেই? তুমি একদম ভেবো না। তোমাকে দেখে, তোমার সাথে কথা বলে ওর ভাই টাস্কি খেয়ে থাকবে।”
“এক কাজ কর তুই ভালো করে সেজেগুজে নে। তোকে দেখে ইম্প্রেশ হয়ে রাজি হলে হতেও পারে।”
আয়ান ফিঁক করে হেসে দিল। অর্ষা ভ্রু কুঁচকে মুখ বাকিয়ে নিজের ঘরে চলে গেল। অফিস থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে নতুন একটা ড্রেস পরলেও নিজেকে বিন্দু পরিমাণ সাজায়নি। মেহমান আসছে তাই নিজেকে পরিপাটি করা উচিত।