#শুধু_তুই
#পর্বঃ২১
#Rifat_Amin
সময়টা এখন বিকাল-সঁন্ধ্যার মাঝামাঝি। সূর্যটা তাঁর কঠোরতা কমিয়ে একটু মিষ্টি হতে চলেছে। আলোতেও একটু কমলাভ ভাব। ছাদের কার্নিশে দোলনায় হেলান দিয়ে হাতে রাখা গিটারটায় টুংটাং আওয়াজ করে চলেছে প্রেম। দুমিনিট আগে সারা ওদের বাসায় এসেছে, এখন সে প্রেমের ঠিক পেছনে। প্রেম সেটা উপলব্ধি করছে, কিন্তু ফিরে তাকাচ্ছে না। তাকালেই তো সারার সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যাবে। সারা চায় প্রেমকে না জানিয়ে তার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকতে, কিছুক্ষণ, আরো কিছুক্ষণ। সাজেক যাওয়ার পরিকল্পনা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছে প্রেম। বাসায় ঢোকার পর নিশ্চই সারাও জেনে গেছে বিষয়টা, আর এখন সে কোনো ভাবে হলেও আমাকে বলবে ‘আমিও যেতে চাই তোমাদের সাথে’। প্রেমের ভাবনার মাঝেই সারা উপস্থিত হলো প্রেমের সামনে। প্রেম না চাইতেও অবাক দৃষ্টিতে তাকালো সারার পানে। সারা প্রেমের এই বিষ্ময়ভরা চোখদুটো দেখে খিলখিল করে হেসে উঠে বললো,
– আমি যে এতক্ষণ তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম বুঝতে পারো নি তাইনা? (সারা)
প্রেম মুচকি হেসে বললো,
-হুমমম সেটাই। কখন এলে? (প্রেম)
সারা আবারো হেসে প্রেমের থেকে একটু সাইড নিয়ে দোলনায় বসে পড়লো৷ দোলনায় একটু ধাক্কা দিতেই সেটা মৃদু গতিতে এপাশ ওপাশ চলতে থাকলো। সারা প্রেমের হাত থেকে গিটারটা নিজের কোলে নিয়ে বললো,
– আমিও শিখবো। শিখাবা? (সারা)
প্রেম সারার থেকে খনিকটা স্পেস নিয়ে বসে বললো,
– শিখানো যায়। তবে তোমাকে অনেক টাইম ওয়েস্ট করতে হবে। আর এটা অনেক ধৈর্যের কাজ। তার থেকে না শেখাই ভালো। (সারা)
সারা যেনো এটাই চেয়েছিলো। প্রেমের কাছাকাছি থাকলে তার অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করে। অদ্ভুত সুখপ্রাপ্তি হয়। এই ভালোলাগার অর্থ সে জানে না। তবে প্রেমের উপস্থিতি সে খুব করে চায়। সারা অকপট স্বরে বললো,
– যাই হয়ে যাক। আমি শিখবই৷ তুমি শিখাবা কি’না সেটা বলো? (সারা)
প্রেম গম্ভীর স্বরে বললো,
– না শিখাবো না। (প্রেম)
সারা অবাক হয়ে গেলো। কেমন মুখের উপর না করে দিলো! সারা মন খারাপ করে বললো,
– কেনো শিখাবা না? আমাকে তুমি ফ্রেন্ড’ই ভাবো না তাইনা। (সারা)
প্রেম মুচকি হেসে বললো,
– বিষয়টা তেমন না সারা। আমার গিটার নিয়ে পরে থাকার সময় হয়না। আমার দিনের বেশীরভাগ সময় কেটে যায় ব্যস্ততায়। পড়াশোনাও করতে হয়। আমার যখন ভালোলাগে অথবা সময় বের করতে পারি, ঠিক তখনই এসব নিয়ে বসি। (প্রেম)
ঠিক তখন’ই ছাদে নাস্তার ট্রে নিয়ে হাজির হলাম আমি। হালকা কানে বাজলো ওদের কথোপকথন। আমি আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বললাম,
– কি নিয়ে কথা হচ্ছে বাচ্চারা? নাস্তা রেডি। (আমি)
প্রেম ঝটপট উঠে দাঁড়ালো। দোলনা থেকে উঠে আমার হাত থেকে নাস্তার ট্রে’টা নিয়ে বললো,
-তুমি কষ্ট করে আসতে গেছো কেনো? আমাকে বললেই হতো। (প্রেম)
আমি কপট রাগের স্বরে বললাম,
– হইছে! আর বলতে হবে না৷ নিজের গেস্ট আসছে আর উনার কোনো খবর’ই নাই। শেষ পর্যন্ত গেস্টকেই ছাদে উঠে আসতে হচ্ছে। তুই আমাদের মানসম্মান কিছু রাখবি বলে মনে? (আমি)
প্রেম হো-হা করে হেসে উঠলো। আমি কঠোর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছি। এদের দুই ভাইয়ের কি অসময়ে হাসার রোগ আছে নাকি? সারা দোলনা থেকে উঠে এসে বললো,
– আরে আমি তো প্রেমের ফ্রেন্ড। আমি কিছু মনে করিনি ভাবি। (সারা)
সারার মুখে ভাবি ডাকটা শুনেই আমার মগজ চিনচিন করে উঠলো। গত কালও ভাবিনি আমি এত তারাতারি কারো বউ হতে চলেছি। আর আজ কিনা কারো বউ, কারো ভাবি হয়ে গেলাম! আমি প্রেমের দিকে দৃষ্টি রেখে বললাম,
– শোন, সাজেক যাচ্ছে তোর ভাই। আমরা তো যাচ্ছি’ই। আর সাথে যাচ্ছে সারা। আমি জানি তুই এখন না, না করবি। কিন্তু কিছুই শুনছি না আমি। (আমি)
প্রেম ক্ষণকাল নিশ্চুপ থেকে বললো,
– কিভাবে যাবে ও? ওর ফ্যামিলি যদি জানতে পারে কার সাথে যাচ্ছে তাহলে অনেক ঝামেলা বাঁধবে। তুমি হয়তো জানো না ওর ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক খারাপ। এখন ওকে যদি জিজ্ঞেস করে ও কোন ফ্রেন্ডের সাথে যাচ্ছে। তাহলে কি বলবে? ওর ফ্যামিলির কি উচিত হবে না কোন ফ্রেন্ডের সাথে যাচ্ছে সেটার খবর নেয়া। তাও আবার ছেলে ফ্রেন্ড। (প্রেম)
প্রেমের যুক্তিযুক্ত কথা শোনামাত্র’ই ভাবনায় পরে গেলাম আমি। কিন্তু মেয়েটা কত আশা করে আমাদের সাথে যেতে চাইছিলো! আমরাও তখন হ্যাঁ বলে দিলাম। কিন্তু প্রেমের সাথে যে সারার ভাইয়ের সম্পর্ক খারাপ সেটা কে জানবে? সারার দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেচারি মন খারাপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে। সারা হঠাৎ বললো,
– আচ্ছা আজ যাই তাহলে ভাবি। (সারা)
সারা যে ভীতরে ভীতরে আহত হয়েছে সেটা ভালো’ই বুঝতে পারছি। এদিকে প্রেম নিরুত্তর। এর ভীতরে কি কোনো অনুভূতি নাই? আমি ঝটপট বললাম,
– কোথাও যাচ্ছো না তুমি। আগে নাস্তা করো, আমাদের সাথে আড্ডা দাও। আর তুমি অবশ্যই আমাদের সাথে যাচ্ছো সাজেক। সেটার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করবে প্রেম। আমি কিছুই শুনতে চাইনা। (আমি)
আমার কথা শোনামাত্র প্রেম কঠোর দৃষ্টিতে তাকালো। কিন্তু ওর কঠোর দৃষ্টির মাঝেই ব্যাঘাত ঘটালো ফোন৷ ফোনটা পকেট থেকে বের করে রিসিভ করলো শুধু। ওপাশ থেকে কে কি বললো তা বুঝতে পারলাম না৷ প্রেম হু হা করেই চলেছে। ওর কথা বলা শেষ করে আমাদের দিকে দৃষ্টি রেখে বললো,
– একটা জরুরী কাজে বাইরে যেতে হবে। সারা তুমি আড্ডা দাও। আর রাতের খাবারটা এখানেই আমাদের সাথে খাবে। আমি আসছি এক্ষুনি। (প্রেম)
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই প্রেম তড়িৎ গতিতে ছাদ থেকে নেমে গেলো। মিনিট খানেকের মাথায় বাসা থেকে ওর বাইকটা নিয়ে বেড়িয়ে পরতে দেখা গেলো। সারা অস্থির হয়ে বললো,
– ও কোথায় গেলো ভাবি? (সারা)
আমি হতাশকন্ঠে বললাম,
– ওর যাওয়ার যায়গার অভাব? মিনিটেই দেখবা বাসায়। আবার মিনিটেই দেখবা ওর বন্ধুর বাসায়। ওর কথা বাদ দাও তো।
ঠিক তখনই ছাদে উপস্থিত হলো প্রহরভাই। আমাদের দু’জনকে একসাথে দেখে মুচকি হাসলো। প্রহরভাই বললো,
-প্রেম কোথায় গেলো রে? জিজ্ঞেস করলাম কই যাচ্ছে, উত্তর দিলো না৷ তুই কিছু জানিস?
আমি উনার কাছাকাছি গিয়ে বললাম,
– ও কখন কোথায় যায় বসে যায়? (আমি)
আমার কথা প্রহরভাই কর্নপাত করলো না। সারার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোমার বাবার নাম্বারটা দিয়ো তো। নাম কি জেনো বললা? (প্রহরভাই)
সারা নম্রস্বরে জবার দিলো,
– জি সৌরভ চৌধুরী। ব্যাংক ম্যানেজার। (সারা)
প্রহরভাই হাস্যজ্বল স্বরে জবাব দিলো,
– হুম চিনে ফেলেছি। তোমার বাবার সাথে একসময় ক্রিকেট খেলতাম। তখন তোমার বাবা ছিলো আমার বয়সী। আর আমি ছিলাম দুধভাত। মানে শুধু বল কুড়িয়ে এনে দিতাম। উনি আমাকে যথেষ্ট ভালোবাসেন। তোমার কোনো টেনশন করতে হবে না। তুমি আমাদের সাথে অবশ্য’ই যাচ্ছো।(প্রহর)
———👻
সারার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে আমি আর প্রহরভাই নিচে নেমে আসলাম। সারা এখনো ছাদের মধ্যে প্রেমের গিটারটা নিয়ে বসে আছে। ওকে ভীতরে ডাকলাম কিন্তু সে বললো উপরেই ভালোলাগছে। এখন বাসাটা একদম নিরিবিলি। কোথাও কোনো আওয়াজ নেই। থাকবে কিভাবে? আন্টি আর আঙ্কেল তো এখন বিয়ের দাওয়াত দিতে আত্মীয়দের বাসায় বাসায় ঘুরছে। প্রেমকে ডেকেছিলো সাথে। কিন্তু সে কি যাওয়ার পাত্র? বাতাসে বেলকনির পর্দাটা দপদপ করে কাঁপছে। আকাশটা বোধহয় খারাপ করবে। এখন প্রহরভাই আমার সামনে মুর্তির মতো বসে আছেন। কথাবার্তা বলছেন না। শুধু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। আমি উনার দৃষ্টিতে বিরক্ত হয়ে বললাম,
– আহ! কি ওমন করে দেখছেন? (আমি)
প্রহরভাই যেনো আরো বিরক্ত হয়ে গেলেন। আশ্চর্য! এখানে বিরক্ত হওয়ার কি আছে। উনি কন্ঠে বিরক্তিভাব রেখে বললেন,
– তাকানোর জিনিস তাকাবো না? বউয়ের দিকে তাকানো যাবে না এটা কোন আইনে লেখা আছে? (প্রহরভাই)
আমি উনার কথায় আশ্চর্য হয়ে বললাম,
– তাকানোর জিনিস মানে? আমি তাকানোর জিনিস? (আমি)
প্রহরভাইয়ের বিরক্তিভাব কাটলো না। উনি চুপ করে রইলেন। সোফার মধ্যে হাত পা ছাড়িয়ে বললেন,
– নে এবার স্বামীসেবা কর। স্বামীসেবা করলে আল্লাহ খুশি হন। পা’টা টিপে দে। (প্রহরভাই)
আমি পরে গেলাম ফ্যাসাদে। এমনিতে বললে হয়তো কখনো পা টিপে দিতাম না। কিন্তু উনার কথায় আমার নিষ্পাপ মনটা গলে গেলো৷ তাই হাত বাড়িয়ে উনার পা টেপা শুরু করলাম। কিন্তু যখনই উনার পায়ে হাত দিলাম। ঠিক তখনই বিদ্যুৎ গতিতে ছিটকে গেলেন প্রহরভাই। একেবারে সোজা সোফা থেকে মেঝেতে। মহুর্তের ঘটনায় আমি হতবাক, বাকরুদ্ধ । এটা কি হলো? উনি মেঝেতে বসে বিষ্ময় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বললাম,
– কি হলো প্রহরভাই? আমি তো স্বামীসেবা করলাম। (আমি)
উনি আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন,
-আমি কখনো ভাবিনি তুই আমার পা টিপে দিবি। তুই জানিস না আমার পায়ে কাতুকুতু? ছোটবেলায় গোসলের সময় আম্মু আমার পা ধরলেই আমি কান্না করে ভাসিয়ে দিতাম। (প্রহরভাই)
প্রহরভাইয়ের ব্যাথিত এই বাক্যে আমার মনে আনন্দের খই ফুটলো৷ যাই হোক, প্রহরভাইকে জ্বালানোর আরেকটা উপায় পেয়ে গেলাম৷ এতদিন উনি আমাকে জ্বালিয়েছেন। এখন আমি জ্বালাবো। একটু সবার বাসায় দাওয়াত কম্প্লিট করে আঙ্কেল-আন্টি বাসায় ফিরলো। সারাকে দেখে উনারা অনেক খুশি। প্রেমের যে একটা মেয়ে বন্ধু জুটেছে এটা শুনে আন্টিতো একেবারো বিষ্মিত৷ অবশেষে প্রেম মেয়েদের সাথে তাও কথা বলে! সারা কিছুক্ষণ আন্টির সাথে আড্ডা দিলে প্রহরভাই আমাকে টেনে নিয়ে গেলেন রুমের ভীতর। দরজাটা লাগিয়ে বললেন,
– বোরিং লাগছে কেনো রে? তোকে বিয়ে করেছি কি বোরিং লাগার জন্যে? কিছু একটা কর। (প্রহর)
আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বললাম,
– তাহলে কিসের জন্য বিয়ে করেছেন আমায় প্রহরভাই? আর আপনার বোরিং লাগা কিভাবে আমি কাটাবো? (আমি)
প্রহরভাই বিরক্ত হয়ে বললেন,
– আনরোমান্টিকের বাচ্চা (প্রহর)
আমি উনার কথায় হতবাক হয়ে গিয়ে বলাম,
– তাহলে কি আপনি রোমান্টিক প্রহরভাই? (আমি)
প্রহরভাই হালকা কেশে বললেন,
-তোর থেকে আমি ৯ বছরের বড়। বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় ভুলে গেছিস? (প্রহর)
আগাম একটা করে বেশি পর্ব পড়তে চাইলে আমাকে এক্ষনি ফ্লো করুন ✊🖐️
চলবে?