#মিষ্টিমধুর_প্রতিশোধ
#পর্বঃ৩৪
#লেখিকাঃদিশা_মনি
ফাহিম ও ইভানা একসাথে অনেক সুখে দিন যাপন করছে। যে কেউ তাদের দেখে দুনিয়ার সবথেকে সুখী দম্পত্তি বলতে পারবে। দেখতে দেখতে তাদের বিয়ের দুই মাস পার হলো। এতগুলো দিন খুব ভালো ভাবেই এগিয়ে গেছে তাদের সম্পর্ক।
আজকে তাদের জীবনে আরেকটি অবিস্মরণীয় স্মৃতি তৈরি হতে চলেছে। কারণ আজ ফাহিমের জন্মদিন। বিয়ের পর এই প্রথম নিজের জন্মদিন পালন করতে চলেছে ফাহিম। তাই এটি তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে ফাহিম পড়াশোনা এবং সংসার নিয়ে এত ব্যস্ত যে নিজের জন্মদিন নিজেই ভুলে গেছে! ভাগ্য হলো ফারজানা বেগম মনে রেখেছিলেন।
বিকেলে চা খেতে বসেছিল ইভানা ও ফারজানা বেগম। ইভানা গ্রিন টি ও ফারজানা বেগম দুধ চা খাচ্ছিলেন। ফারজানা বেগম হঠাৎ করে ইভানার কাছে জানতে চান,
‘আইচ্ছা আইজকে কত তারিখ?’
ইভানা একটু ভেবে বলে,
‘আজ তো ২৫ শে জুন।’
ফারজানা বেগম আনন্দের সাথে বলেন,
‘দেখতে দেখতে ২৫ বছর কে’টে গেল। আমার ছেলেটাও বড় হয়ে গেল।’
‘মানে?’
‘ফাহিমের জন্মদিন তো ২৬ শে জুন। এই দিনই ফাহিম আমার কোল আলো কইরা আসছিল।’
ইভানা উন্মাদনার সাথে বলে ওঠে,
‘বাহ, জেনে খুব খুশি হলাম। আচ্ছা ওনার জন্মদিন কি সেলিব্রেশন হবে না?’
‘না। ছোটবেলায় ওর জন্মদিনে আমি পায়েস কইরে খাওয়াতাম। তারপর বড় হওয়ার পর এইসবে ও কোন আগ্রহ দেখায় নি।’
‘ও বুঝলাম। তবে যাইহোক এইবার কিন্তু ওনার জন্মদিন খুব ভাল ভাবে সেলিব্রেশন করব আমরা। মানে সারপ্রাইজ দেব। বুঝলেন?’
‘সেইটা কিভাবে?’
‘উম,,কালকে নাহয় সেলিব্রেশন হবে তবে আজ রাত ১২ টায় ওনাকে সারপ্রাইজ দেব। আপনি আমার সাথে থাকবেন তো?’
‘থাকবোনি।’
এসবের মধ্যে ফাহিম হঠাৎ করে চলে আসে। দুজনের কথার খন্ডাংশ সে শুনে ফেলেছে। তাই বলে,
‘কি থাকার কথা হচ্ছে?’
ইভানা থতমত খেয়ে যায়। খুব সাবধানে প্রসঙ্গ বদলে বলে,
‘আমি আর আম্মু মিলে আজ রান্না করবো।’
‘কোন স্পেশাল ইভেন্ট আছে কি আজ?’
‘কেন? রান্না করার জন্য কি কোন স্পেশাল ইভেন্ট লাগে?’
ফাহিমের মন একটু খারাপ হয়ে যায়। কাল যে তার জন্মদিন সেটা ফাহিমের মনে আছে। কিন্তু নিজের জন্মদিনের কথা তো আর সবাইকে বলতে পারবে না। তবে সে আশায় ছিল ফারজানা বেগম হয়তো মনে রেখেছে। তাই রান্না করার কথা শুনে ভেবেছিল আজ রাত ১২ টায় হয়তো তার জন্য কেক রান্না করে খাওয়াবো হবে। কিন্তু এখন তার ভাবনা বদলে গেল। ফাহিম মলিন হেসে নিজের রুমের দিকে যায়। ইভানা সেদিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
‘ভাগ্য ভালো কিছু শুনতো পায়নি। নাহলে আমার সব প্ল্যান মাটি হয়ে যেত।’
৬৭.
ঘড়ির কা’টায় এখন ১১ঃ৪০. আর মাত্র মিনিট বিশেকের অপেক্ষা। তারপরই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হবে। ইভানা ও ফারজানা বেগম শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফারহানও আছে তাদের সাথে। ফারজানা বেগম ফারহানকে ফাহিমের জন্মদিনের কথা জানিয়ে তাকে সাথে নিয়েছেন।
সবাই মিলে ছাদ অনেক সুন্দর ভাবে সাজিয়েছে। অনেক সুন্দর একটা কেকও আনা হয়েছে। নানান রঙের বেলুন, ফানুসের আয়োজনও আছে।
★★
হঠাৎ করে ফাহিমের ঘুম ভেঙে গেল। ঘুম থেকে উঠে পাশে ইভানাকে না দেখে ফাহিমের ভ্রু কুচকে যায়। ঘড়িতে সময় দেখে সে দুশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে যায়। উদ্বিগ্নতার সহিত বলে ওঠে,
‘ইভানা কোথায়? ও তো এখানেই ছিল। এত রাতে কই গেল? ওর আবার কোন বিপদ হলো না তো?’
এই চিন্তায় সে শেষ হয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ তার ঘরের লাইট বন্ধ হয়ে যায়। ফারহান দৌড়ে এসে ফাহিমকে বলে,
‘ভাই অনেক বড় বিপদ হয়ে গেছে!”‘
‘কি হয়েছে ভাইয়া? আমিও ঘুম থেকে উঠে দেখি ইভানা পাশে নেই। ওর কোন বিপদ হয়নি তো?’
‘তুই ছাদে চল। ওখানে গেলেই সব বুঝতে পারবি।’
ফাহিম একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায় যে বড় কোন বিপদ হয়ে গেছে। তাই আর সময় নষ্ট না করে দ্রুত ছাদের দিকে পা বাড়ায়। এদিকে দীর্ঘক্ষণ ধরে নিজেকে সামলে রাখা ফারহান হেসে ফেলে। বলে,
‘উফ, কি নাটকটাই না হলো। ফাহিম যখন উপরে যাবে খুব অবাক হবে। এটা তো ওর জন্মদিনের বেস্ট সারপ্রাইজ হবে..উফস ছরি ওর জন্য বেস্ট সারপ্রাইজ তো আমি রেডি করে রেখেছি। যা ও কালকে পাবে।’
বলেই অদ্ভুতভাবে হাসে ফারহান।
ফাহিম উৎকন্ঠার সাথে ছাদে এসে অবাক হয়ে যায়। ছাদ এত সুসজ্জিত দেখে বুঝতে পারে কি হয়েছে। এমন সময় ইভানা হাতে কেক নিয়ে ফাহিমের সামনে এসে বলে,
‘হ্যাপি বার্থডে মিস্টার হাজবেন্ড। সারপ্রাইজটা কেমন লাগল?’
‘খুব বাজে। এরকম করে কেউ? জানো আমি কত ভয় পেয়ে গেছিলাম? তোমার যদি কিছু হয়ে যেত তাহলে আমার কি হতো?’
ফারজানা বেগম এসে বলেন,
‘মাইয়াডারে আর বকিস না। তোর জইন্যে কত কি করল।’
ফারহানও ততক্ষণে ছাদে চলে আসে। অতঃপর বলে,
‘এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? কেকটা কা’ট।’
ফাহিম কেক কা’টে। সবার আগে নিজের মাকে খাওয়ায়। কারণ তার জন্যই তো পৃথিবীতে আসতে পেরেছিল। মায়ের পর ইভানাকে এবং তারপর ফারহানকে খাওয়ায়। সবশেষে সবাই নিজের রুমে চলে যায়।
৬৮.
আজকের নতুন দিন। আজকের সন্ধ্যায় ফাহিমের সাথে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান আছে ইভানার। আজ দুজনে বাইরে ঘুরে ফাহিমের জন্মদিন পালন করবে।
কলেজ থেকে তাই একটু আগেই চলে এলো ইভানা। উদ্দ্যেশ্য দ্রুত বাড়ি ফেরা। পথিমধ্যে হঠাৎ রিয়ার সাথে দেখা হয়ে গেল ইভানার। রিয়া ইভানাকে দেখে নিজে থেকে এগিয়ে আসে তার সম্মুখে। এসে বলে,
‘কেমন আছিস তুই?’
রিয়াকে দেখে ইভানা খুব একটা খুশি হয়না। কারণ তোহার কাছ থেকে সে শুনেছিল রিয়া কিভাবে তার বিয়েটা ভেঙে দিয়েছিল। তবুও ভদ্রতা রক্ষার্থে বলে,
‘আলহামদুলিল্লাহ তুমি?’
‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ।’
এরপর রিয়া আরো কিছু কথা বলে ইভানার কাছে সবকিছু স্বীকার করে ক্ষমা চায়। বলে,
‘আমি সবকিছুর জন্য অনুতপ্ত ইভানা। পারলে আমায় ক্ষমা করিস’
‘যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন তো কিছু বদলানো যাবে না। তবে যা হওয়ার ভালোই হয়েছে। আমি ফাহিমের সাথে এখন খুব সুখে আছি।’
‘পাশেই আমার হোস্টেল। তুই চলনা আমার সাথে। দুজনে কিছুক্ষণ গল্প করব।’
‘না অন্য কোন দিন। আজ আসলে আমার তাড়া আছে।’
‘বুঝেছি, তুই আমাকে মন থেকে ক্ষমা করতে পারিস নি। তাই যেতে চাচ্ছিস না। বেশি না দশ মিনিটের জন্য চল।’
‘ওকে।’
দুজনে মিলে রিয়াদের হোস্টেলে যায়। রিয়া নিজের রুমে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণ গগল্পগুজব করার পর ইভানা বলে,
‘এখানে কি তুমি একা থাক?’
‘না। আরেকজন থাকে। তবে সে ছুটিতে বাড়িতে গেছে।’
‘ওহ।’
‘তুই একটু বস, আমি তোর জন্য কফি নিয়ে আনছি। পাশেই একটা কফি শপ আছে।’
বলেই চলে যায়। কিছুক্ষণ পর কফি নিয়ে এসে ইভানাকে খেতে দেয়। তারপর আরো কিছুক্ষণ গল্প করে। ইভানার হঠাৎ করে খুব ঘুম পেতে থাকে। সে একটু পরেই চোখ বুজে নেয়। রিয়া বিকট হেসে বলে,
‘খুব সুখে আছিস না তুই? ভেবেছিলি নিজের স্বামীর সাথে উপভোগ করবি আজ। এখন এখানে বন্দি হয়ে থাক।’
বলেই রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ ✨