টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে পর্ব_২৪

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২৪
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

ঐশী কিছু বলার আগেই দরজা থেকে বিথী বলে উঠলো, ‘ বাহ্ খুব সুন্দর গল্প…

ঐশী আকাশ দুই জন একসাথে দরজার দিকে তাকালো।

বিথী রুমে প্রবেশ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ বাহ্ তোমার তো দেখি খুব ভালো খাতির যত্ন করা হয়েছে।’
আকাশ কিছু না বলে মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকালো।
ঐশী উঠে দাঁড়ালো। বিথীর কাছে গিয়ে বললো,’ কখন আসলে..?’
বিথীঃ যখন গল্প শুরু হলো।
আকাশ বিথীর দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো ,’ তাহলে শুনেছো..?’
বিথীঃ হুম এক মিথ্যাবাদী থেকে আরেক মিথ্যা বানোয়াট গল্প শুনলাম।
আকাশঃ মিথ্যা!!
বিথী ভ্রু কুঁচকে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো,’ তাহলে কি সত্যি..??
আকাশ রেগে বলে উঠলো,’ যেমন বাপ তেমন মেয়ে!..
বিথী রেগে আকাশের কলার চেপে ধরে বললো,’ খবর্দার আমার বাবা কে নিয়ে কিছু বললে এখানেই শেষ করে দিবো তোমাকে।’
আকাশঃ এমন কাপুরুষ কে নিয়ে কিছু বলার মুখ নেই আমার।

বিথীঃ তুমি নিজে কি…?? নিজে ভালো তো..??
আকাশঃ আমাকে ভালো হতে দিলে কই…

ঐশীঃ চুপ সব চুপ..

আকাশঃ ঐশী আমার হাতের বাঁধন খোলে দাও।
ঐশীঃ এই লোক গুলো কে ছিলো..?
আকাশ তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে উঠলো,’ যেনে কি করবে..? তাদের কাজের শাস্তি দিতে পারবে..? পারবে অল্প বয়সে আবেগে হারিয়ে যাওয়া সেই মেয়েটিকে ফিরিয়ে দিতে..? পারবে একটা বোনের মনের প্রতিশোধের আগুন নিবাতে..?
ঐশী চুপ করে আছে৷ কেনো যেনো আকাশের কথা গুলো মিথ্যা মনে হচ্ছে না। বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হচ্ছে।

বিথীঃ ড্রামা শেষ। আর কতো অভিনয় করবে তুমি..? কতো সহজ সরল মানুষকে বোকা বানাবে..?
আকাশ বিথীর দিকে তাকিয়ে একটা মলিন হাসি দিলো। সেই হাসিতে লুকিয়ে আছে ওর মায়ের হা হা কার, চোখের জল।

ঐশী আকাশের হাতের বাঁধন খোলে সরে দাঁড়ালো।
আকাশ দাঁড়িয়ে বিথীর সামনে এসে বললো,’ আজ যদি আমি বলি তুমি যার বাচ্চা তোমার গর্ভে ধারণ করেছো তার পিতা আমি নই। সমাজের লোক কে কাল কি বলবে..? কাল জায়গায় জায়গায় ছড়িয়ে পরবে তোমাকে নিয়ে বিভিন্ন রকম কথা। ঘর থেকে বের হতে পারবে কি..? তোমার পরিবারের মান সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে একবার ভেবে দেখো..?

বিথী তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো,’ এই বাচ্চা তো অনেক আগেই তোমার বাচ্চা না বলে দিয়েছো।’

আকাশঃ আমি বাচ্চা অস্বীকার করলে চার দেওয়ালের ভেতর অস্বীকার করেছি, লোকের সামনে নয়। বিয়ের দিন যদি বাচ্চা আর তোমাকে আমি মেনে না নিতাম আজ পত্রিকায় থাকতো তোমাদের পরিবারের লোকজন।

বিথীঃ আমাদের অনেক উপকার করেছেন আপনি আকাশ চৌধুরী। এবার আমি তা খুব জলদি ফিরিয়ে দিবো। শুধু অপেক্ষা করুন।

আকাশঃ তুমি হাজার বার চেষ্টা করলেও মুক্তি পাবে না। আমি কাল তোমাকে নিয়ে যাবো। শুধু কাল কের জন্য অপেক্ষা করো।

বলেই আকাশ বেরিয়ে গেলো।

ঐশী চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছে।

বিথী ঐশীর মাথায় হাত রাখলো।
ঐশী মাথা তুলে বিথীর দিকে তাকাতেই। বিথী মুচকি হাসি দিয়ে বললো,’ এইসব বানোয়াট গল্প ভুলে যা। মিথ্যাবাদী একটা। ওর কথা বিশ্বাস করার দরকার নেই বাসায় চল।

ঐশী মাথা নেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বাসায় যাওয়া আসলেই খুব জরুরি। আজ কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যা সব জানতে হবে।

বাসায় এসে দেখে পূর্ণা ঐশীর রুমে বসে আছে সাথে সোনিয়া।

ঐশী রুমে প্রবেশ করতেই পূর্ণা গিয়ে ঐশীকে জড়িয়ে ধরে বললো,’ কেমন আছো ভাবিপু..?’
ঐশীঃ আলহামদুলিল্লাহ.. তুমি কেমন আছো..?
পূর্ণাঃ আমিও ভালো আছি।
ঐশী সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে সোনিয়া।
ঐশী সোনিয়ার কাছে যেতেই সোনিয়া বলে উঠলো, ‘ সরি ভাবি আমি জানতাম না কিছুই। আমি আপনার আর ভাইয়ার সম্পর্কের কথা জানলে এমন ভুল কখনো করতাম না সরি।
ঐশী হেসে বললো,’ সমস্যা নেই সোনিয়া। এখানে তোমার কোনো দোষ নেই। আমি নিজেও উল্টো পাল্টা অনেক কিছু ভেবে নিতাম তোমার জায়গায় থাকলে।
সোনিয়া এবার বলে উঠলো, ‘ তাহলে থাপ্পড় কেনো মারলে..?
ঐশী মুখ গম্ভীর করে বললো,’ অন্যের স্বামীকে ভালোবাসি বলার জন্য..
সোনিয়াঃ আমি কি জানতাম ভাই তোমার স্বামী।
ঐশীঃ আচ্ছা সব কিছু বাদ দাও। কখন আসলে..?
পূর্ণাঃ এই তো পাঁচ মিনিট হবে।
ঐশীঃ আচ্ছা আমি ফ্রেশ হয়ে আসি তোমরা বসো।

বিথী এসে ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখে ওর আব্বু খাবার খাচ্ছে। কিছু সময় নিজের আব্বুর দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মানুষটা কখনো কাউকে ঠকাতে পারে না। আকাশ লাস্ট পর্যায়ে ওর আব্বুর সম্পর্কে এতো বাজে কথা বললো!!
বিথী চলে আসলো নিজের রুমে। আবারও রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলো উকিল এর সাথে দেখা করতে । আজ কেই সে আকাশের কাছে ডিভোর্স পেপার পাঠাবে।

ঐশী ফ্রেশ হয়ে বের হতেই ওর আম্মু রুমে আসলো।

ঐশীঃ আম্মু তুমি..?
~টেবিলে খাবার দিচ্ছি সবাই নিচে আসো।
ঐশীঃ তুমি যাও আমি আসছি।

সবাই টেবিলে বসে আছে। ঐশী একবার আশেপাশে তাকালো কোথাও শুভ নেই বিথীও নেই৷

ঐশী ওর আম্মুকে জিজ্ঞেস করলো বিথী কোথাও..? উনি বললো তারাহুরো করে কোথায় যেনো বেরিয়ে গেছে বিথী।

ঐশী শুভর কথা জিজ্ঞেস করতে গিয়েও করলো না।

খাবার শেষ করে সবাই রুমে আসতেই ঐশীর বড় আম্মু বললো,’ ঐশী পূর্ণা আর সোনিয়ার সাথে শপিং এ যাও। সোনিয়ার বিয়ে ঠিক হয়েছে বিয়ের শপিং করার জন্য তোমার হেল্প লাগবে। সব কিছু তুমি নিজে পছন্দ করে কিনে দিবে।

ঐশী সোনিয়ার বিয়ের কথা শুনে খুব খুশি হয়ে যায়। সোনিয়া কে জড়িয়ে ধরে নতুন জীবনের জন্য শুভ কামনা জানায়।

শপিং করে বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে যায়। পূর্ণা আর সোনিয়া থেকে যায় ঐশীর বাড়িতে।

ঐশী বিথীর কাছে গিয়ে দেখে বিথী ঘুমিয়ে আছে।

তীব্র গিয়ে সব শপিং রাখলো ড্রয়িং রুমে। সবার সব কিছু পছন্দ হয়েছে।

ঐশী নিজের পরিবারের লোকের কাহিনি দেখে অবাক হচ্ছে। সোনিয়ার বিয়ে কিন্তু সোনিয়ার পরিবারের কেউ আসলো না আবার শপিং করার জন্য ওকে নিলো। সবাই এমন রিয়েক্ট করছে বিয়ে সোনিয়ার না এই পরিবারের কোনো মেয়ের কিছু তো একটা কাহিনি হচ্ছে ওর অগোচরে..?

ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে ঐশী ওর পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ওর বড় আব্বু।

ঐশী নিরবতা ভেঙে বলে উঠলো, ‘ বড় আব্বু বর্নফুল গ্রামে কি আমাদের কোনো আত্মীয় স্বজন আছে..?’

আজাদ সাহেব চমকে তাকালো ঐশীর দিকে।

ঐশীঃ কি হলো বড় আব্বু।

আজাদ সাহেব নিজেকে সামলে ঐশীর দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলে উঠলো,’ এই গ্রামের নাম তোমাকে কে বলেছে..?’
ঐশী ওর বড় আব্বুকে বলে উঠলো,’ এটা আমার উত্তর নয়।

ওর বড় আব্বু বলে উঠলো,’ হুম আছে। আমার নানাজীর বাড়ি ছিলো বর্নফুল গ্রামে।’

ঐশীঃ আগে তো কখনো শুনিনি…

আজাদ সাহেবঃ এতো কিছু তোমার না শুনলেও চলবে… রুমে যাও।
ঐশীঃ বড় আব্বু একটা গল্প শুনবে..?
আজাদ সাহেব কিছু না বলে চুপ করে আছে।

ঐশী ঠিক আকাশের মতো করে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত বলা শুরু করলো।

গল্প শেষ করে আজাদ সাহেবের দিকে তাকালো।

আজাদ সাহেব শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। বুকের ভেতর চিনচিন ব্যাথা করছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে এক কিশোরী মেয়ের খিলখিল করে হাসির শব্দ।

ঐশী হঠাৎ বলে উঠলো, ” এই নিকৃষ্ট লোকটা তুমি ছিলে তাই না..???

চলবে,…..

ভুলত্রুটি মার্জনীয়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here