টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে পর্ব_২৬

#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

বিথী গালে হাত দিয়ে বসে আছে আর ভাবছে কাল আবার আরেকটা ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে।

ঐশী ধুমধাম পা ফেলে বিথীর রুমে ঢুকলো।
বিথী ভ্রু কুঁচকে ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ কি হয়েছে..??’
ঐশীঃ আমারও তো একি কথা বাসায় কি হচ্ছে..?
বিথী কিছু না বলে মোবাইল রেখে উঠে দাঁড়াতেই ঐশী রেগে বলে উঠলো,’ যাকে জিজ্ঞেস করি সেই চুপ হয়ে যায় কেনো..??
বিথীঃ তুই এতো কিছু না ভাবলেও চলবে।
ঐশী গাল ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে বসে থাকে। বিথী ঐশীকে কিছু বলতে যাবে তখনি হাতের ফোন বেজে উঠে।
বিথী ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে বলে উঠে,’ কাল সময় মতো অফিসে চলে আসবেন। বলেই ফোন কেটে দেয়।
বিথী অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। আজিব লোক কিছু না বলতে দিয়ে ফোন কেটে দিলো৷

সকালে বিথী নিজের কাজে চলে যায়।

সবাই সবার মতো নিজেদের কাজে লেগে যায় ।

সন্ধ্যায় গায়ের হলুদের আয়োজনে সবাই নিজেদের ড্রেস পরে সুন্দর করে সেজে যখন ঐশীর রুমে যায় ঐশী অবাক হয়ে সোনিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,’ তুমি লেহেঙ্গা কেনো পরেছো..?’
সোনিয়া মলিন একটা হাসি দিয়ে বলে উঠে,’ বউ বাদে সবাই লেহেঙ্গা পরবে..’
ঐশীঃ বউ তো তুমি।
সোনিয়াঃ এখনি জানতে পারবে বউ কে৷
ঐশীঃ মানে..?

ঐশীর আম্মু হাতে করে হলুদ শাড়ি নিয়ে ঐশীর রুমে এসে। ঐশীর হাতে শাড়ি দিয়ে বলে,’ রেডি হয়ে নাও। ‘
ঐশীঃ মানে..?
~ কাল সোনিয়ার নয় তোমার বিয়ে।
ঐশী রেগে বলে উঠলো,’ পাগল হয়ে গেছো আম্মু…
~ কেনো?
ঐশীঃ আমি বিবাহিত আমার আর কি বিয়ে হবে.?
~ শুভ নতুন করে আবার বিয়ে করতে চাচ্ছে।
ঐশীঃ আমাকে একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না।

পূর্ণাঃ এটা তোমার জন্য সারপ্রাইজ ভাবি।
ঐশী আর কিছু বললো না।

বিথী অফিস থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির জন্য।

মুরতাসিম গাড়ি দিয়ে যাওয়ার সময় বিথীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে, ‘ চাইলে আমি পৌঁছে দিতে পারি আপনাকে। ‘
বিথীঃ ধন্যবাদ। কিন্তু আমি চলে যেতে পারবো।
মুরতাসিমঃ রাতে এদিক টা ভালো না উঠে পড়ো।
বিথী হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাই উঠে পরলো মুরতাসিম এর গাড়িতে।সারা রাস্তা আর কেউ কারু সাথে কথা বললো না। গাড়ি থেকে নেমে বিথী বলে উঠলো,’ স্যার কিছু না মনে করলে একটা কথা বলতাম।
মুরতাসিমঃ হুম বলেন.?
বিথীঃ কাল আমার বোনের বিয়ে যদি আপনি আসতেন খুশি হতাম।
মুরতাসিম খুশি হয়ে বলে উঠলো, ‘ অবশ্যই আসবো আমি। ‘
বিথীঃ ধন্যবাদ স্যার।

ছাঁদে খুব সুন্দর করে হলুদ আয়োজন করা হয়েছে। মেয়েরা সবাই লেহেঙ্গা ছেলেরা পাঞ্জাবি পরে ছাঁদে গানের সাথে সাথে নাচছে।
বিথী বাসায় এসেই ছাঁদে গিয়ে দেখলো ঐশী নেই। সবাই কে জিজ্ঞেস করলো ঐশী কোথায়..?

ঐশীকে নিয়ে শুভ দাঁড়িয়ে আছে ঐশীর রুমে।

ঐশীঃ সরে দাঁড়ান।
শুভঃ আমার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত তুমি এক পা ও নরতে পারবে না ঐশী।
ঐশীঃ আপনার কাজটা কি শুনি..?
শুভঃ আমি আমার বউকে নিজে সবার আগে হলুদ লাগাতে চাই।
ঐশীঃ এই জন্য আমাকে এখানে তুলে নিয়ে আসার কি দরকার ছিলো। ছাঁদেই দিতে পরতেন।
শুভ নিজের হাতের হলুদ ঐশীর গালে লাগালো।
ঠান্ডা কিছু অনুভব হতেই ঐশী চোখ বন্ধ করে নিলো৷
শুভ নিজের গাল নিয়ে লাগালো ঐশীর গালের সাথে। ঐশীর গালের হলুদ শুভর গালেও লেগে গেলো।
ঐশীর গাল লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।
শুভ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,’ এবার যাও। ‘
ঐশী রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার ছিটকিনি তে হাত দিতেই শুভও এক সাথে হাত দিলো ছিটকিনিতে, হাতের উপর হাত পরার সাথে সাথে ঐশী হাত নামিয়ে নেয়। এতো লজ্জা কেন লাগছে আজকে লজ্জা যেনো চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে।

মৌ,দীপ্ত, দীপ্তি, অথৈ,শান্ত সবাই ছাঁদে বসে আছে। কিছু সময় আগেই এসেছে ওরা। ঐশী ওদের দেখেই জড়িয়ে ধরলো।

ওদের শুভ নিজে ইনভাইট করেছে।

সবাই মিলে আড্ডায় মেতে উঠলো।

দূরে দাঁড়িয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে বিথী। নিজের পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে তাকালো।
আকাশ তাকিয়ে আছে বিথীর দিকে।
বিথী আকাশকে দেখে তেমন কোনো রিয়েক্ট করলো না। আবারও তাকালো ঐশীর দিকে।
আকাশ বলে উঠলো,’ আমাদের বিয়ে টাও আবার নতুন করে করা দরকার।
বিথী কিছুই বললো না।
আকাশ বিথীর সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে বলে উঠলো,’ তোমার কাছে ভালোবাসা চাই না। তোমার চোখে তাকিয়ে ভালোবাসার স্বপ্ন বুনতে চাই । তোমার চোখে এই ঘৃণাময় দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকানো দেখতেও আমি রাজি তাও প্রতি দিন তোমার এই মুখটা দেখার জন্য আরেকটা চান্স দাও আমাকে। আমি এবার একজন সত্যি কারের প্রেমিক নয় স্বামী হয়ে দেখাতে চাই। আমি একজন দায়িত্ববান বাবা হতে চাই। আমি একজন ভালো স্বামী হয়ে তোমার ঘৃণা থেকে মুক্তি পেতে চাই প্লিজ বিথী ফিরিয়ে দিয়ো না।
বিথী আকাশের থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,’ ভালোবাসা হুট করে হয়ে যায় তাই না। আমি যখন আপনাকে প্রথম বৃষ্টি মধ্যে দেখি তখনি ভালোবেসে ফেলি। আপনি যখন লোক গুলোর কাছ থেকে আমাকে রক্ষা করেন ঠিক সেই সময় আমি আপনাকে আমার মনে জায়গা দিয়ে দেই। আমাদের দ্বিতীয় দেখাটা অন্য রকম ছিলো কিন্তু তখন আমার আপনার প্রতি আর কোনো ফিলিং কাজ করেনি। আমাদের প্রথম দেখাটা আমি আজ-ও ভুলতে পারি না। নিজের অজান্তে আপনাকে জায়গা দিয়ে ছিলাম তার বিনিময়ে আপনি আমার গায়ে কলঙ্কের দাগ এঁকে দিলেন। আমাকে এক বুক কষ্ট উপহার দিলেন। আমি এখন নিজেকে সামলে নিয়েছি। আমার জীবনে আর কাউকে চাই না। দ্বিতীয় বার স্বামী, ভালোবাসা এইসব নিয়ে আমার সামনে আসবেন না। আমাকে একলা থাকতে দিন প্লিজ।
আকাশ অবাক হয়ে বলে,’ প্রথম দেখা, বৃষ্টি মানে..?
বিথীঃ বাহ্ বাহ্ এতো তারা তারি সব ভুলে গেছেন। ভুলারি কথা, এতো কিছু ভুলে গেলেন আর এটা তো সাধারণ।
আকাশঃ কি ভুলবো..? তোমার সাথে আমার প্রথম দেখা হয় ফুচকার দোকানে।
বিথীঃ বৃষ্টির মধ্যে সন্ধ্যায়, লোকগুলোর হাত থেকে আপনি আমাকে বাঁচাননি..?
আকাশ মাথা নেড়ে না বলে।
বিথী স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে।

অনুষ্ঠান শেষে সবার সবার বাড়িতে চলে যায়।

বিথীর সারারাত আর ঘুম হয়নি। সে ভুল কাউকে ভালোবেসে ঠকেছে। আজ আর জানার ও ইচ্ছে নেই। সেই লোকটি এখন কোথায়..? কে ছিলো..? আজ থেকে সে শুধু নিজেকে, নিজের সন্তান কে নিয়েই ভাববে। পেছনে ফিরে তাকাবে না।

সকাল থেকেই বিয়ের তোরজোর শুরু হয়ে গেছে। আত্মীয়স্বজন আসা শুরু।

ঐশীর ফ্রেন্ডরা সবাই চলে এসেছে। পার্লার থেকে লোক আনা হয়নি। ঐশীর নিষেধ ওর কথা হলো ওকে ওর বোন আর ফ্রেন্ডরা মিলে সাজাবে।

সবাই মিলে অনেক সুন্দর করে ঐশীকে সাজালো।

কিছু সময়ের মধ্যে ডাক শুনা গেলো জামাই এসেছে

ঐশীকে নিয়ে বসানো হলো স্টেজে

অথৈ গিয়ে দাঁড়ালো শান্তর পাশে।

শান্ত অথৈর কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো,’ সবাই বিয়ে করে নিচ্ছে তুই কবে করবি..?’
অথৈ কিছু বলার আগেই পাশ থেকে একজন বলে উঠলো,’ আমি আজ ২বছর ধরে বলছি কিন্তু আপনার ফ্রেন্ড তো রাজি হচ্ছে না।
শান্ত আর অথৈ অবাক হয়ে পাশে তাকালো।

সৌরভ হাসি হাসি মুখ করে অথৈর দিকে তাকিয়ে আছে।
অথৈ রেগে বলে উঠলো,’ আপনি!!…
সৌরভঃ তুমি রাজি থাকলে আমি আজি ডাকতে পারি কাজী।
শান্ত অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,’ আরে বাহ্। কিন্তু আপনাকে চিনলাম না..?
সৌরভ শান্তর সাথে নিজের পরিচয় দেয়,’ আমি সৌরভ মাহমুদ। একজন ডাক্তার। মানে এখনো হয়নি হবো। আর আপনার ফ্রেন্ড এর একমাত্র বয়ফ্রেন্ড। আর এখন আপনাদের বেয়াই।
অথৈ রেগে বলে উঠে, ‘ আপনি আমার কোন কালের বয়ফ্রেন্ড ছিলেন আজব! বাঁদর লোক একটা। ডাক্তার না হাতুড়ি ডাক্তার।
এই নিয়ে অথৈ আর সৌরভ কথা কাটাকাটি শুরু করে দেয়।
শান্ত একবার উপরের দিকে তাকিয়ে কেটে পড়ে এখান থেকে।

সৌরভ আর অথৈর বিষয়টা ওরা সবাই অনেক আগে থেকেই যানে। ওদের ফ্রেন্ড কে কোনো ছেলে ডিস্টার্ব করবে আর ওরা জানবে না, তা কি করে হয়। কিন্তু অথৈ কে কখনো বুঝতে দেয়নি৷ আর সৌরভ ছেলে হিসেবে খুবি ভালো। অথৈ নিজেও সৌরভ কে হয়তো ভালোবাসে কিন্তু বুঝতে পারছে না।

মুরতাসিম কে আজকে খুব সুন্দর লাগছে। এমনিতেও সে খুব সুন্দর, হ্যান্ডসাম একটা পুরুষ। বিয়ে বাড়ির সব মেয়েরা ওর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

সুরভি সিঁড়ি দিয়ে তারাহুরো করে নামতে গিয়ে পিছল খেয়ে গিয়ে পড়ে মুরতাসিম এর উপর। বেচারা একদম এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সুরভি উপরে আর মুরতাসিম নিচে।
সুরভি হা করে তাকিয়ে আছে মুরতাসিম এর দিকে।
মুরতাসিম যে ওকে উঠতে বলছে সেটা ওর কানে গেলে তো সে উঠবে৷
সুরভি কে এভাবে হা করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিজের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে চলে যায় মুরতাসিম। সুরভি নিচে বসে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে আছে মুরতাসিম এর যাওয়ার দিকে।

চলবে…

[ কাল শেষ পার্ট দিয়ে দিবো ]

ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here