#টিপ_টিপ_বৃষ্টিতে
#পর্ব_২৭
লেখিকা #Sabihatul_Sabha
দীপ্ত সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলে উঠলো “ভাই তুমি এখানে….?”
পরিচিত কন্ঠ শুনে পেছনে ফিরে তাকালো মুরতাসিম।
দীপ্ত মুরতাসিম এর সামনে এসে বললো,’ তুমি এখানে কি করছো..?’
মুরতাসিম দীপ্ত কে দেখে অবাক না হয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিলো, ‘ তুই যেটা করতে এসেছিস… ‘
দীপ্তঃ কিন্তু তোমাকে ইনভাইট করলো কে..?
মুরতাসিমঃ তোদের বিথী আপু আমার কোম্পানিতে জব করে। উনি বললো।
দীপ্তঃ ভালো করেছো এসেছো। আম্মু তোমার জন্য চিন্তা করে আজ বাসায় যাবে আমার সাথে।
মুরতাসিমঃ আজ না অন্য একদিন গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো৷
দীপ্তঃ ভাবি কে পেয়েছো..?
মুরতাসিম কিছু না বলে চুপচাপ আছে।
দীপ্ত বুঝলো মুরতাসিম বলতে চাচ্ছে না।
দীপ্তঃ আচ্ছা বলতে হবে না।
মুরতাসিমঃ মৌ কোথায়..? কেমন আছে..?
দীপ্তঃ এখানে ডাক দিবো..?
মুরতাসিমঃ না থাক। ওর সাথে সম্পর্ক টা ঠিক করে নে। তোরা আর এখন বাচ্চা না যে বুঝিয়ে বলতে হবে।
দীপ্ত নিচের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়লো।
সৌরভ অথৈর সাথে কথা বলে মন খারাপ করে বসে আছে।
সুরভি গিয়ে সৌরভ এর পাশে দপ করে বসে পড়লো৷
সৌরভঃ মোটি আসতে বসতে পারোস না।
সুরভিঃ ভাই পোলা তো নয় যেনো আগুন।
সুরভি কে রাগতে না দেখা যতটা অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে কোনো ছেলে নিয়ে এমন কথা শুনে।
সুরভিঃ এভাবে হেবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো..? মে তো আজ গেয়া রে।
সৌরভ সুরভির কপালে হাত রেখে দেখলো জ্বর টর এলো নাকি এমন আজগুবি কথা কেনো বলছে।
সৌরভঃ তুই কাকে বলছিস..?
সুরভিঃ দেখ। বলে মোবাইল বের করে মুরতাসিম এর কয়েকটা ছবি দেখালো।
সৌরভঃ এই ছেলেকে কোথায় পাইছোস..?
সুরভি রেগে বলে উঠলো,’ ছেলেটা কি টোকানোর জিনিস যে পাবো৷ একটু আগে দেখলাম এখানে ভাবির কাজিন মনে হয়।
সৌরভঃ আমি আব্বুকে সব বলে দিবো।বিয়ে বাড়িতে এসে তুই কি কি করে বেড়াস।
সুরভি সৌরভের দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে মোবাইল থেকে একটা ভিডিও বের করে সৌরভ এর সামনে ধরলো। যেখানে সৌরভ অথৈর সাথে কথা বলছে, হাত ও ধরেছে। দেখে মনে হচ্ছে প্রেমিকা রাগ করেছে আর প্রেমিক রাগ ভাঙাচ্ছে।
সৌরভের মুখটা সাথে সাথে চুপসে গেলো।
সুরভি বলে উঠলো,’ আমাকে হেল্প করলে আমিও হেল্প করবো।’
সৌরভঃ সত্যি…!
সুরভিঃ হুম।
সৌরভঃ কি হেল্প চাই বল..?
সুরভিঃ এখন কোনো হেল্প লাগবে না শুধু নিজের মুখ বন্ধ রাখ আমি তোর মতো না। যে অন্য কারো হেল্প লাগবে।
সৌরভ সুরভির দিকে তাকিয়ে আছে।
সুরভিঃ এভাবে তাকাবি না আমার সুন্দর ফেইসে তোর কালো নজর লেগে যাবে।
বিয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিথীর শাড়ি কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে। ঠিক করার জন্য নিজের রুমের দিকে যেতেই সামনে আকাশ এসে পথ আঁটকে ধারালো৷
বিথীঃ পথ ছাড়ুন।
আকাশঃ বিথী আম্মু বলেছে তোমাকে না নিয়ে গেলে বাসায় জায়গা দিবে না। প্লিজ রাজি হয়ে যাও।আমি মানছি আমার ভুল হয়েছে ক্ষমা করে দাওয়া যায় না৷ দ্বিতীয় বার একটা সুযোগ চাই প্লিজ।
বিথী আকাশের দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে বলে উঠলো,’ আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আপনাকে আমি বার বার এই এক কথা মনে করিয়ে দিতে চাই না। মায়ের কথা রাখতে এসেছেন! মা বলেছে তাই এসেছেন! নিজের ঘরে জায়গা করে নেওয়ার জন্য আমার কাছে এসেছেন! আমাকে ভালোবেসে তো আর আসেননি..? আপনি প্রতিশোধের নেশায় আমার সাথে সম্পর্কে ছিলেন কখনো আমাকে ভালোবাসেন নি। আপনার উদ্দেশ্য শুধু প্রতিশোধ নেওয়া ছিলো। যদি ভালোবাসতেন তাহলে মায়ের কথা এমনটা করতে পারতেন না। যেখানে ভালোবাসা, মায়া, সম্মান কিছুই নেই সেখানে আর ফিরে না যাওয়াই ভালো। আমার প্রতি আপনার কোনো ফিলিং নেই। আমি নিজেই বোকা আর আপনাকে কি দোষ দেবো৷ যদি কখনো আমার প্রতি এক ফোঁটা মায়া আপনার মনে জমে থাকে তাহলে আমার বাচ্চার কসম আমাদের সামনে আর আপনি আসবেন না৷
আকাশঃ বিথী!!
বিথী স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়,’ আমি কি এখানে একটাও মিথ্যা কিছু বলেছি..?’
আকাশ চুপ হয়ে যায়।
বিথী আকাশের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়। শাড়ির মধ্যে পা আঁটকে পড়ে যেতে নেয় বিথী, আকাশ ধরার আগেই অন্য কেউ বিথীকে আগলে নেয় নিজের বাহুডোরে৷
বিথী চোখ তুলে তাকায় লোকটির দিকে। মুরতাসিম বিথীকে আগলে রেখেছে নিজের সাথে।
বিথী মুরতাসিম কে ধন্যবাদ দেয় ওকে ধরার জন্য।
আকাশ তাকিয়ে আছে বিথী আর মুরতাসিম এর দিকে।
বিথী তো একটা কথাও ভুল বলেনি। সে কখনোই বিথীকে ভালোবাসে নি। সে শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সম্পর্ক করে ছিলো। বিথীর সাথে সম্পর্কে থাকার সময়ে আরও দুই জনের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলো সে। বিথীর অগোচরে৷
আকাশ আর পিছু ফিরে ওদের দিকে তাকায় না। মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে যায় এই বাড়ি, বউ, বাচ্চা সব কিছু চিরতরে ফেলে।আর ফিরে তাকাবে না সে। বিথী ঠিক বলেছে যেখানে ভালোবাসা শব্দটা নেই জোর করে সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না।
আদিত্য অনুষ্ঠান থেকে দূরে একটা চেয়ারে বসে আছে আর এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ঐশীর দিকে।
আদিত্যর পাশে গিয়ে বসলো সোনিয়া।
সোনিয়া আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো,’ এভাবে কি দেখোস..?’
আদিত্য কিছু বললো না।
সোনিয়া আবার বলে উঠলো,’ এভাবে তাকিয়ে থাকলে বেচারির উপর তোর কালো নজর লেগে যাবে। ‘
আদিত্য বিরক্ত হয়ে রেগে বলে উঠলো, ‘ আগে তো সারা দিন শুভ শুভ করতি হঠাৎ ভালোবাসা উধাও হয়ে গেলো। তোরা মেয়েরা পারিস ও বটে।
সোনিয়া একটা মলিন হাসি দিয়ে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে বললো,’ ভালোবাসা বলতে তুই কি বুজিস বলতো…?
আদিত্যঃ ভালোবাসা মানে হলো তাকে নিজের করে নেওয়া৷ যে কোনো মূল্য তাকে চাই মানে চাই। তাকে অন্য কারো সাথে দেখলে বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাওয়া। তাকে কাছে পাওয়ার হাজারো ইচ্ছে হওয়া। তাকে চাওয়ার পর না পেলে ছিনিয়ে নেওয়া।বলেই মুখ কঠিন হয়ে গেলো আদিত্যের।
আদিত্যের কথা শুনে সোনিয়া হাসতে থাকে।
আদিত্যঃ আমি এখানে হাসির কি বললাম..?
সোনিয়াঃ তোর এই চাই, ছিনিয়ে নেওয়া ভালোবাসার কথা শুনে হাসি পেলো।
আদিত্যঃ কেনো ভুল কি বললাম!
সোনিয়াঃ ভালোবাসা এমন নয় ভাই।
আদিত্যঃ তাহলে কেমন..?
সোনিয়াঃ ভালোবাসা মানে ছিনিয়ে নেওয়া নয়। ভালোবাসা মানে হলো তার খুশিতে আমার খুশি৷ তাকে ভালোবাসি বলে কাছে পেতে হবে এমনটা নয়। আমি তাকে দূর থেকে মন ভরে দেখতে পারবো এটাই অনেক৷ ভালোবাসা ছুয়ে হয়না ভালোবাসা অনুভব করতে হয়। সে ভালো আছে,আমি না হয় আমার ভালোবাসার মানুষ কে না পেলাম ও তো পেয়েছে এটাই আমার কাছে অনেক। আমি তাকে ভালো দেখতে চাই। সে আমার সাথে না থাকলেও অন্য কারো সাথে ভালো আছে এটাতেই আমি খুশি।
আদিত্য মন দিয়ে সোনিয়ার কথা শুনলো। সামনে ঐশীর দিকে তাকালো। কতটা খুশি সে তার মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। ঐশীর হাসি মাখা মুখটার দিকে তাকিয়ে আদিত্য নিজেও হেঁসে দিলো।
সোনিয়া বলে উঠলো, ‘ ভাই ভালোবাসা সুন্দর। ভীষণ সুন্দর। দেখ ভাবির মুখে বিজয়ের হাসি। ভাই আর ভাবির মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে তারা কতটা খুশি।
আদিত্য ওদের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। আসলেই ভালোবাসা মানে ছিনিয়ে নেওয়া নয় তার খুশিতে আমি খুশি।
বিয়ে পড়ানো শেষ ।
এখন বিদায় পালা।
ঐশীকে গাড়ির সামনে নেওয়া হলো। ঐশী গিয়ে গাড়িতে বসে পড়লো। সবাই অবাক হয়ে ঐশীর দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ তো হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে। ঐশী সবার এমন রিয়াকশন দেখে বিথীর দিকে তাকালো। বিথী হেঁসে ঐশীকে ইশারা করলো নেমে আশার জন্য। ঐশী জিহ্বায় কামড় দিয়ে তারাহুরো করে নামতে গিয়ে পড়ে যেতে নেয় শুভ ওকে সামলে নেয়।
শান্ত, অথৈ, দীপ্তি,মৌ,দীপ্ত সবাই মুখে হাত দিয়ে হেঁসে কুটিকুটি খাচ্ছে।
ঐশী নেমেই ওর আম্মু কে ধরে ম*রা কান্না শুরু করলো। এক এক করে সবাই কে ধরে কান্না করে ফ্রেন্ড গুলোর দিকে তাকালো।
শান্ত বোতল থেকে পানি নিয়ে চোখে দিয়ে ঐশীকে জড়িয়ে ধরতে গেলো৷ ঐশী শান্ত কে না ধরে অথৈকে জড়িয়ে ধরলো।
শান্ত কিছু সময় এদিক ওদিকে তাকিয়ে দেখলো কেউ দেখেছে কিনা৷ তারপর সামনে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার অভিনয় করা শুরু করলো।
সোনিয়া রেগে তাকিয়ে আছে শান্তর দিকে।
শান্ত সামনে কে আছে না তাকিয়ে জড়িয়ে ধরেছে।
সোনিয়া রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ বেয়াদব ছেলে ছাড়ো আমাকে। ‘
শান্ত কোনো মেয়ের কন্ঠ শুনে তাকিয়ে মাগো বলে দূরে সরে গেলো।
ওদের এমন কাহিনি দেখে মৌ আর দীপ্তি হেসে কুটিকুটি খাচ্ছে।
সব কিছু শেষ করে ঐশী গিয়ে বসলো গাড়িতে। বিদায় পর্ব শেষ করে গাড়ি চলছে শুভর বাড়ির দিকে।
গাড়ি থেকে নামার আগেই শুভর আম্মু বললো,’ বউকে কোলে তুলে নাও শুভ।’
শুভ মায়ের কথা অনুযায়ী ঐশীকে কোলে তুলে নিলো।
এতো মানুষের সামনে শুভ ঐশীকে কোলে নিয়েছে। লজ্জায় ঐশী মরি মরি অবস্থা।
ঐশীকে নিয়ে খুব সুন্দর একটা রুমে বসানো হলো। সারা রুম জুড়ে ফুল আর ফুল। ফুলের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে আছে সারা রুম।
বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছে ঐশী।
দরজার বাহিরে শুনা যাচ্ছে সবাই শুভকে টাকার জন্য আঁটকে রেখেছে ।
অনেকক্ষন পর শুভ রুমে প্রবেশ করলো। ঐশীর ভয়ে বুক ধুকপুক ধুকপুক করছে।
শুভ ঐশীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ এভাবে বসে আছো কেনো যাও ফ্রেশ হয়ে নাও। ‘
ঐশী ঘোৃটার নিচে শুভর এই কথা শুনে রেগে গেলো।
মানে কি..? এতো কষ্ট করে বসে আছে কেনো..? স্বামী আসবে ভালোবেসে ঘোমটা তুলবে। ওকে গিফট দিবে। কিন্তু না এই নিরামিষ বর কে তো ভেবেছিলো একটু অন্তত রোমান্টিক হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে সব ভুল।নিরামিষ, নিরামিষ রয়ে গেছে।
ঐশী ঘোমটা তুলে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো শুভর দিকে। শুভ ঐশীকে ওর দিকে এভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো৷
ঐশী উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলো। শুভর দিকে না তাকিয়ে বিছানা থেকে ফুলগুলো সরাতে গেলে শুভ ঐশীর হাত ধরে নিজের দিকে ফিরায়।
ঐশীঃ হাত ছাড়ুন।
শুভঃ ঐশী তুমি কি কোনো কারনে আমার উপর রেগে আছো..?
ঐশী শুভর এমন বোকার মতো কথা শুনে মন চাচ্ছে শুভকে রুম থেকে বের করে দিতে।
শুভ ঐশীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো,’ কি হলো তুমি কি রেগে আছো..?’
ঐশী নিজের হাত ছাড়াতে গেলে শুভ ঐশীকে কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসে। ওদের মধ্যে এখন এক ইঞ্চিও দূরত্ব নেই।
চলবে…
[ ভেবে ছিলাম শেষ করে দিবো কিন্তু এটা যেনো শেষ হতেই চায় না ]
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।