অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
৩০|
কামারখালি পারাপারের জন্য মাঝে লম্বা সেতু। এই সেতুটি বেলীর খুব পছন্দের। সে হাতেগনা দু’তিনবার এসেছে। কিন্তু আজ সেতুটি বেশি সুন্দর দেখাচ্ছে বৃষ্টির মাঝে। ঝুম বৃষ্টির মাঝে এমন পরিবেশ সাথে সেতু। গাড়ি সেতুর মাঝ বরাবর থামলো। তৃষ্ণা কিছুক্ষণ বেলীকে দেখল তারপর বলল,
— গিয়ে হেডলাইটের সামনে দাঁড়া। যা।
— আশ্চর্য। আপনার ঠান্ডা লেগে যাবে।
— যা।
বেলী অগ্যত গাড়ি থেকে নামলো। প্রায় শুঁকিয়ে যাওয়া শরীরে আবারও বৃষ্টির ছোঁয়া বর্শিত হচ্ছে। বেলীর আবেশে চোখ বন্ধ হবার জোগাড়। সে গাড়ি থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়ালো। গাড়ির হেডলাইটের আলোর সামনে বেলী। তৃষ্ণা গাড়িতে বসে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে কিভাবে বেলীর শরীরে বৃষ্টি ছুঁয়ে দিচ্ছে। কামিজ ছিপছিপে শরীরে মিশে আছে। চুলগুলো ঘাড় লেপ্টে কোমরে দুলিয়ে। তৃষ্ণার বুক খনিকের জন্য কঠিন ভাবে কেঁপে উঠলো। সে মাথা বের করে
বলল,
— দু’হাত মেলে দে। চোখ বন্ধ করে আকশের দিক তাকাবি। আর হাসবি।
বেলী হা হা করে হেসে ফেলল। তৃষ্ণা ভিডিও রেকর্ডার ওন করে ফেলেছে। বেলী হাসতে হাসতে বলল,
— আপনি কি করতে চাচ্ছেন বলুন তো? গাড়ি দিয়ে আমায় ধাক্কা মেরে পালাবেন না তো?
তৃষ্ণার জবাব পেলো না। আর লাইটের আলোয় সে তৃষ্ণাকে তেমন দেখতে পেলো না। তৃষ্ণার কথা মতো চোখ আবেশে বন্ধ করে, হাত মেলে দিলো। মাথা উঁচু করতেই বৃষ্টির ফোঁটা পুরো মুখ ছুঁয়ে দিতে লাগলো। বেলী নিজেই হেসে ফেলল।
প্রবল সেই বৃষ্টির মাঝে, কালো কামিজে, ওড়না তার বুক জুড়ে মাটি ছুঁই ছুঁই। দু’হাত মেলে, আকাশের পানে তাকিয়ে, তার সেই ভুবল ভুলানো হাসি। হেডলাইটের আলোর মাঝে সে এক আবেদনময়ী যুবতী। তৃষ্ণার স্বপ্নের থেকেও বুক কাঁপানো এই দৃশ্য।
বেলী প্রায় ভুলেই গেলো তার আশপাশ। এই নির্জন সেতুর মাঝে বৃষ্টির ছোঁয়ায় দাঁড়িয়ে সে। এটা যে কি এক অনুভূতি তা বেলী প্রকাশ করতে পারছে না। তার মন খুলে হাসতে ইচ্ছে করছে। কাউকে জড়িয়ে ধরে অনুভব করতে ইচ্ছে করছে। জীবনের গল্প ভাগাভাগি করতে ইচ্ছে করছে। ব্যস, সে চোখ খুলে তৃষ্ণাকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। তার চোখ জোড়া। যেই চোখ জোড়া বেলীকে সারারাত ঘুমোতে দেয় না। সবসময় লজ্জায় কুঁকড়ে দেয়। সেই চোখ জোড়া খুব আবেগে তাকিয়ে। মনে হচ্ছিলো সে কোনো অতুলনীয় কিছু দেখছে। বেলী কি সতি অতুলনীয়? কি আছে তার মাঝে? তেমন তো কিছু নেই। কিন্তু বেলীর সামনে যে দাঁড়িয়ে, তার মাঝে সব আছে। সব। বেলীর কি হলো কে জানে। সে দ্রুত পায়ে গিয়ে তৃষ্ণাকে গলা জড়িয়ে ধরলো। তৃষ্ণার আর হাত তার কোমরে। বেলী আরও কুঁকড়ে ছোট গলায় বলল,
— আপনি এতো সুন্দর কেন?
জয়াকে নিয়ে বেশ নাক কুঁচকাচ্ছে আনোয়ারা। সেটা খেয়াল করে, জয়া মাথা নিচু করে চা দিয়ে আবারও রান্নাঘর চলে গেলো। আমিদ মুখ শক্ত করে বলল,
— আপনার বিহেভিয়ার পরিবর্তন হবে না মা? আপনি ভুলে যান যে জয়া আমার স্ত্রী?
— বিয়েটা মেনে নেওয়া হয়নি।
— তো? আপনার কি মনে হয়, আমি আপনাদের মানার আসায় বসে?
আনোয়ারা চোখ রাঙালেন, ক্ষিপ্ত আমিদ কথা বলেই যাচ্ছে,
— আপনার হিন্দু ধর্ম নিয়ে সমস্যা তাই আলাদা আমরা। একটু-আকটু না। মাঝে গ্রামের সমান যায়গার ডিসট্যান্স রেখেছি। আপনার ধর্মের নারাজি নিয়ে আজও জয়া কাঁদে। অথচ আপনি যখনই আসবেন ওকে কাঁদিয়ে যাবেন। আপনি ভুলে যান যে ওকে আমি তুলে এনে বিয়ে করেছি। ও আমায় বিয়ে করতে চায় নি। কিন্তু আপনার বিহেভিয়ার এমন যে ও আমার কাঁধে এসে ঝুলছে। আপনি এসেছেন নাতির বিয়ে দেখবেন। ব্যস। এর মাঝে অন্য কোনো টপিক নিয়ে কথা বাড়াবেন না মা।
আনোয়ারা স্তব্দ কন্ঠে বলল,
— বাহ, এই হলো মায়ের সাথে কথা বলার ধরন।
আবিদ শ্বাস ফেলল,
— মা তৃষ চলে আসবে। এগুলো নিয়ে কথা না বলি।
— ছেলে মেয়ের নাম গুলোও হিন্দু রেখেছে। আমার সামনে এইসব নাম ধরে ডাকবি না। আমি যেই নাম,
আমিদ শক্ত গলায় বলল,
— আমার একার ছেলে-মেয়ে না। আমাদের দুজনের।
— হ্যাঁ, আমাকে তো গুরুত্ব দিবি না আর। স্বামী মারা গেছে মাস হচ্ছে না এখনই ছেলেদের যা-তা ব্যাবহার।
আনোয়ারা সোফা ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
আমিদ চোখের ইশারায় তার ছোট ভাই আশরাফুলকে আনোয়ারার পেছন যেতে বলল।
দেখা গেলো চৌধুরী বাড়ি রিলেটিভ’স দিয়ে ভরপুর। তিন চৌধুরী, তাদের বউ, ছেলেরা, জয়ার বোন, বোনের মেয়ে, ভাই, ভাইয়ের বউ। ইচ অ্যান্ড এভরিওয়ান ওয়াজ টকিং লাইক, দেয়ার ইজ নো টুমওরোও।
কাক ভেঁজা তৃষ্ণাকে দেখে জয়া চেঁচিয়ে উঠলেন,
— ভিজেছিস। আবারও।
বলতে বলতে জয়া চেঁচামেচি শুরু করলেন।
— মাত্র ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। ওমনি শুরু হয়ে গেলো? কীভাবে ভিজলি? আক্কেল কই তোর?
ভিজে চিপচিপা বেলীকে দেখে তৃষ্ণার দিক তাকাল,
— মেয়েটাকেও ভিজিয়ে এনেছিস?
আবির দুষ্টুমি স্বরে বলল,
— কি ব্যাপার তৃষ, আবিদ-রা চলে এসেছে অনেকক্ষণ হয়ে যাচ্ছে। তোমাদের এতো লেইট কেন হলো?
বেলী তো লজ্জায় মুখ তুলতে পারছে না। এই লোক কবে জেনো বেলীকে লজ্জায় মেরে ফেলবে। কি এক জঘন্য সিচুয়েশনে তাকে ফেলেছে।
তৃষ্ণা আঁড়চোখে অঞ্জলিকে ইশারা করলো বেলীকে নিয়ে যেতে। তারপর সে মাসুম ফেইস বানিয়ে, জয়ার কাছাকাছি গিয়ে নাক দেখাল। জয়া ওমনি সব ভুলে গেলো। ছেলে-মেয়ের অসুস্থতা তিনি একদম সহ্য করতে পারেন না। সোলাইমানের আবার অসুখ-বিসুখ ছোট থেকেই কম হয়েছে। তৃষার ও তেমন অসুখ-বিসুখ হয় না। তৃষ্ণাই হয়েছে ছুঁয়াচে। শুধু অসুখ-বিসুখ লেগেই থাকে। মানে ছেলেটা তার স্বভাব সুলভে সবাইকে ছাড়িয়ে।
— জ্বর বাধা। আবারও।
বলতে বলতে সে শাড়ির আচল দিয়ে তৃষ্ণার মাথা মুছে দিতে লাগলেন।
২৩ বয়সের ফর্সা এক যুবতী এতক্ষণ বসে ছিলো সোফায়। সে এবার উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
— ছোডদা ।
তৃষ্ণা চমকে সোফায় নজর দিলো,
— আররে, আর্বিদা। কখন এলি ?
আর্বিদা গম্ভীর ভাবে হাতের ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বলল,
— ইট’স বীন টুয়েন্টি সিক্স মিনিট’স অ্যান্ড থার্টি সেকেন্ড’স সিন্স আই ক্যম হিয়ের।
তৃষ্ণা আর্বিদার চুল টেনে দিল,
— ব্রিলিয়ান্ট হাহ?
আর্বিদার জবাবের আগেই জয়া চেঁচালো,
— পরে হবে কথা। আগে চল রুমে।
তৃষ্ণা বেলীকে ইশারা করে মায়ের পেছন চলল। তৃষ্ণা যেতেই সোফা ছাড়লো মাঝ বয়সী এক মহিলা। সে বেলীকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত দেখে বলল,
— এই মেয়ে?
অঞ্জলি হালকা মাথা দুলালো। মহিলাটি সোফায় বসা আমিদের দিক তাকিয়ে বলল,
— আমার মেয়ের আশেপাশে ও তো নেই? গরীব পরিবারের মেয়ে মানা গেলো। তা-ও এমন ছোট বয়সের মেয়ে মানলাম। কিন্তু কোথায় আমার মেয়ে আর কোথায় এ?
আমিদ উচ্চস্বরে বলল,
— তৃষ্ণা বাড়িতে। ধীরে কথা বলুন।
তারপর অঞ্জলিকে ইশারা করল,
— বেলীকে তৃষার রুমে নিয়ে যাও।
বেলী প্রায় কুঁচকে আছে। আঁড়চোখে তাকাল তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আর্বিদা নামের মেয়েটির দিক। শরীরে কি সুন্দর ঝকঝকে কামিজ পড়ে। ব্রাউন রঙের লম্বা চুলগুলো কোমরে দুলিয়ে। কানে পাথরের দুল। ফ্রেস ফেইসে হাইলাইটার এখনও চকচক করছে। বেলী দ্রুত চোখ সরিয়ে ফেলল।
তৃষা বেলীকে দেখতেই চিৎকার করে উঠলো।
— ভাবীইইইইই।
বেলী জোরপূর্বক একটু হাসলো। অঞ্জলি বেলীর দু’হাত ধরলো,
— তুমি মন খারাপ করো না বেলী। আসলে, নিজের মেয়েকে চৌধুরী বাড়ি দিতে পারেননি বলে এমন করছে।
বেলী অঞ্জলির দিক তাকাতেই, অঞ্জলি খুলে বলল,
— মহিলাটি হলেন তৃষের মাসি আঞ্জুমান। তারা দুই বোন এক ভাই। মা, তিনি আর আবির মামা। আঞ্জুমান মাসি হলেন মায়ের বড়।আবির মামা তার দু’বোনের ছোট। আর, আর্বিদা হলেন আঞ্জুমান মাসির একমাত্র মেয়ে। আঞ্জুমান মাসি যতক্ষণ থাকবে তাকে মাসি ডাকবে। সে খালা ডাকা পছন্দ করেন না। আর ডিসট্যান্ট বজায় রাখবে। সি’জ ভ্যারি ডেঞ্জারাস। শোনো, আমি যখন নতুন বউ হয়ে আসি, তখন কি যে রুড হচ্ছিলো। লাইক, আমি সোলাইমানের যোগ্য না। এই সব কথা বার্তা। দেখলে না তৃষ তার মাসির সাথে কোনো কথা বলল না ড্রয়িংরুমে। তাদের মাঝে বড় ঝগড়া হয়েছিল আমায় নিয়ে। আমাকে থার্ডক্লাশ বলেছিল। তৃষ তো সেই খেপেছিল। মাথা গরম করে যে বেরিয়েছিল পুরো তিনদিন পর ফিরেছিল। আর হ্যাঁ, ছোট থেকেই নাকি তৃষের সাথে আর্বিদার বিয়ে নিয়ে কথা হয়েছিল। বাড়ির সবাই রাজিও ছিলেন, তা অনেক বছর আগের ঘটনা। কিন্তু পড়ে বাবা না করে দেন তৃষ্ণার পছন্দ জেনে। এই ব্যাপারটা তৃষ একদম জানে না। যখন আমি বলছি একদম জানে না তার মানে একদম জানে না। ও রিলেটিভ’স বিয়ে-টিয়ে তেমন হজম করতে পারে না। তুমি তো দেখছ তৃষ্ণা কেমন? ও খুবই সাংঘাতিক রাগতে পারে। রেগে এমন না অন্যদের ক্ষতি করবে। নিজের-ই করে। টানা ওঁকে শান্ত করা যায় না। ওর বড় ভাই থেকে সম্পুর্ন আলাদা। তাই বাড়ির সবাই ওঁকে নিয়ে ভয়ে থাকে। এখন যদি ও শুনতে পায় এগুলো। বুঝতে পারছ কি করবে? তারউপর তোমার সাথে এমন বিহেভিয়ার করেছে। ও জানলে,
বেলী থামিয়ে দিল,
— আমি বলব না।
অঞ্জলি হালকা হাসলো,
— আমি জানি। তুমি বলবে না। তুমি ছাড়া আরও মানুষ আছে । যেমন, কাজের জন্য নতুন মেয়েটা। তৃষকে সেই পছন্দ করে। [ দুষ্টু হেসে ] মানে রেসপেক্ট। ও সব বলে দেয় তৃষকে। তেমনি তৃষের সব কথাও মানে। যদি তৃষ বলে ‘ চল বাড়িটা ভেঙে ফেলি, ও সঙ্গে সঙ্গে কোদাল নিয়ে তৈরি থাকবে, আর হ্যাঁ সাথে কোদাল তৃষের জন্য ও আনবে। আর ওর সেফটির জন্য সরঞ্জাম ও। তোমাকে সাধারণ টোকা দেই, যেমন, সেইবার তৃষের সেই ফিভার প্লাস ঠান্ডা। এমন অবস্থার জন্য কামারখালির ডক্টরকে বাবা রাত্রির জন্য হায়ার করে ফেললেন। সোলাইমান মানে আমার হাসবেন্ড যে বাড়িতে থাকে না সেও বাড়িতে ছিলো। পরেরদিনও তেমন রিকভারি না দেখে, বাবা সকাল-সকাল আবার গেলেন ডক্টর নিজে নিয়ে আসতে। মেইনগেইটে তালা মেরে গেলেন। সেই তালা মারা গেইটে দারোয়ান আর বাবার ট্রাস্টেড ড্রাইভার কেও রেখে গেলেন। নির্দেশ দিয়ে গেলেন ‘ গেইট খোলা যাবেনা যাই হোক ‘। কিন্তু এইযে বাড়ির তৃষের জাসুস ও কি করসে জানো? ও আঞ্জুমান খালার মতো শাড়ি পড়ে, সানগ্লাস লাগিয়ে মেইনগেইট খোলার হুকুম দিয়ে দিলো। আসলে, ও আবার আঞ্জুমান খালার কপি করতে জানে। [ কিটকিটিয়ে হেসে ] আর বাড়ির সবাই আঞ্জুমান খালাকে কিছুটা ভয় পায়। খুবই স্ট্রিক্ট পারসন তিনি। তো, মেইনগেইট খোলা হতে দেরি তৃষের জীপ বেরোতে দেরি হয় নি। তারপর আর কি, মা জাসুসকে কানে ধরিয়ে রেখেছিলেন। জাসুস কানে ধরে কি বলছিল জানো? ‘ ইশ, একদম ফিল্মস্টার লাগে। ও খালা আফনেরা আমারে ভাইর বউ বানাইলেও পারেন। ‘
কথাগুলো বলে হাসতে লাগলো অঞ্জলি। তারপর হঠাৎ সিরিয়াস মুডে চলে এলো,
— আরেকটা কথা, মাসি তোমায় যা বলেছে। তারজন্য মন খারাপ করে আবার, তুমি তৃষকে অ্যাভয়েড করতে শুরু করিয় না। তাহলে বাড়ি সহ তোমায় মাথায় তুলবে। বুঝেছ?
ঠান্ডায় আহত বেলী মাথা দুলালো। বেলীকে খেয়াল করতেই অঞ্জলি নিজের কপালে ডান হাত ছোঁয়ালো।
— আররে চলো ওয়াস্রুম।
কাঁপতে কাঁপতে বেলী চলল। তৃষা ভাবলিলায় বলল,
— আজকে বড় ভাবীর কথার ফুলঝুরি খুলেছে। এতো কথা তো আমিও বলি না।
রাত্রির ৯টা বেজে যাচ্ছে। বেলী তৃষার লম্বা কামিজ পড়ে বসে। তৃষা বেশ তার আর তার ভাইদের নানান ভিডিও ক্লিপ দেখাচ্ছে ল্যাপটপে। বেলীও দেখছে। তার বাড়ি চলে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। মহিলাটির নজর বেশ বিরক্তি করছে বেলীকে। তৃষ্ণার উপর রাগতে না যেয়েও রাগ চলে আসছে। লোকটা এমন বেপরোয়া বিহেভিয়ার কেনো করে? এই ঝামেলা গুলোতে ফালিয়ে রফদফা।
অপেক্ষা করতে করতে তৃষ্ণার দেখা পেলো ৯:৪৫ এ। হাফপ্যান্ট আর টি-শার্ট পড়ে হাজির তৃষার রুমে। চোখ লাল হয়ে আর চোখ ছোট হয়ে আছে।ফেইসটা হলদে হয়ে আছে। হাতে রুমাল বারবার ইউস করছে। হাঁচি দিচ্ছে একটু পরপর। বেলীর মাথাটা ধরে গেলো। মানুষ এতো ছোঁয়াচে কিভাবে হয়? কিভাবে? তৃষ্ণা এসে ধরাম করে বিছানায় বসেই বেলীকে বলল,
— যা মা’কে বল গিয়ে একটা গরম কফি দিতে।
বেলী কিছুক্ষণ ঠাঁই মেরে রইলো। ধীরে বলল,
— আপু কোথায়?
— অভির সাথে বাহিরে। এমন ওয়েদারে কি ঘরে পূজা দেবে তোর মতো? ওরা লংড্রাইভ এঞ্জয় করছে।
— বাড়ি যাব আমি।
— আচ্ছা, নেব। এখনই বাড়ি দিয়ে আসব। কিন্তু আমার কোলে চড়ে যেতে হবে।
বেলী মুখ কালো করে উঠে চলল কফি আনার উদ্দেশ্যে। কফি আনতে গিয়ে বেলী পড়লো সংকট এ। সবাই ড্রয়িংরুমে। তা-ও বেলী শান্ত মন নিয়ে সেখানে গেলো। জয়া বেলীকে দেখা মাত্রই এগিয়ে এলো। বেলী ধীরে বলল,
— তৃষ্ণা ভাইয়া কফি চাইল।
আবিদ পেছন থেকে হাসতে হাসতে আসলো,
— এখনও ভাইয়া? ভাই জানে?
জয়া আবিদকে ধমক দিলো। বেলীকে বলল,
— দেখলে অবস্থা কি করেছে নিজের? রাত্রে ধুম জ্বর আসবে। আমার কথা মিলিয়ে নিয়ো।
অগ্যত বেলী চলল জয়ার পিঁছু। কফি নিয়ে বেলী রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। তৃষ্ণা কি নিয়ে জেনো কথা বলছে ল্যাপটপের দিক তাকিয়ে। আর্বিদা নামের মেয়েটি তৃষ্ণার দিক কিভাবে জেন তাকিয়ে। চাহনি টা সাধারণ ছিলো না। সেই প্রথম বেলী অদ্ভুত কিছু অনুভব করলো। খুবই অদ্ভুত।
চলবে,
নাবিলা ইষ্ক