কি_নেশায়_জড়ালে #পর্ব_১০

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_১০
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

স্কুটার চলে গেলো মাহির চোখের আড়ালে।
মাহি মুচকি হেসে নিজের বাসার পথে হাঁটা ধরলো।
যাক অবশেষে তার প্রিয় মানুষটির জন্য কেউ তো আসলো। যে সত্যি ভালোবেসে আগলে রাখবে। আহনাফ এর মতো ধোঁকা বাজ নয়।
মাহির বাসা কাছেই পাঁচ মিনিটের রাস্তা। সে হেঁটে চলে গেলো নিজের বাসায়।

রূপা মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে আছে সাজ্জাদের বাসার সামনে।

সে বাসা যাবে না কিন্তু সাজ্জাদের কথা ও ফেলতে পারছে না৷ তাই ইচ্ছে না থাকা সত্যেও রূপা যেতে হলো সাজ্জাদের সাথে।

সাজ্জাদ বাসায় একাই থাকে। দুইদিন হলো ওর আম্মু এসেছে তাই সে রূপাকে নিয়ে এসেছে দেখা করাতে।

সুবর্ণা বেগম নিজের ছেলের সাথে একটা অচেনা মেয়ে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলেন৷

সাজ্জাদ ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘ আম্মু রূপা…’
রূপা সুবর্ণা বেগম কে সালাম দিলো।
সুবর্ণা বেগম সালামের উত্তর দিয়ে বললো বসতে।

বাসার কাজের লোককে গিয়ে বললো নাস্তার ব্যাবস্থা করতে।

সুবর্ণা বেগম রূপার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
রূপা ভয়ে মাথা নিচু করে আছে৷ অচেনা মানুষের সামনে সে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে না। এক ঝাঁক লজ্জা এসে ভির জমায় চোখে মুখে।

সাজ্জাদ ওর আম্মুর পাশে বসে বলে উঠলো, ‘ আম্মু এ হলো সোহা ভাবির বোন। আমার গাড়ি খারাপ হয়ে যাওয়ায় সে নিয়ে আসলো।
সুবর্ণা বেগম শান্তির নিশ্বাস নিলো৷ ভেবে ছিলো ছেলে অন্য কথা বলবে৷
সুবর্ণা বেগম রূপার থুতনিতে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ বাহ্ ভারি মিষ্টি মেয়ে তো। তা মাঝে মধ্যে বোনকে দেখতে তো জেতে পারো।
রূপাঃ আসলে আন্টি সময় হয়ে উঠে না।
সুবর্ণা বেগম নিজের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য একজন পেয়ে খুব খুশি হয়ে গেলো। প্রথম ভেবে ছিলো সাজ্জাদ এর গার্লফ্রেন্ড তাই মুখ ভার ছিলো। কারন উনি তো সাজ্জাদের জন্য আগে থেকেই বউ দেখে রেখেছেন৷ কথায় কথায় জানতে পারলো রূপা সাজ্জাদের কোম্পানিতে জব করে । এটা শুনে উনি আরও খুশি হলো।
রূপার ও সাজ্জাদের আম্মুকে অনেক ভালো লাগলো। কিন্তু এখন তো বের হতে হবে। অনেক রাত হয়ে গেছে।
এদিকে সুবর্ণা বেগম এর কথাই শেষ হয় না। উনি নিজে রূপার জন্য রান্না করছেন। রূপা হাত ঘড়ির দিকে তাকালো ১২টার উপরে বাজে।
সুবর্ণা বেগম এর চুল খোলে গেলো হাতে হলুদ ।
রূপা সুন্দর করে সুবর্ণা বেগম এর চুলগুলো খোঁপা করে দিলো।
এভাবে রান্না শেষ করে খাবার টেবিলে সব সাজিয়ে রাখলো।
সাজ্জাদ এতোক্ষন ওর আম্মুর পাগলামো দেখেছে।
রূপা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে ইশারায় বুঝালে তার যেতে হবে প্রায় ১টা বেজে গেছে।
সাজ্জাদ ওর আম্মুকে বললো,’ আম্মু খাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখবে নাকি খেতে দিবে..?’
সুবর্ণা বেগমঃ এই তো শেষ বস। রূপা তুমি ও বসো আমার পাশে।

খাওয়া শেষ করেই রূপা বললো আন্টি আমার এখন যেতে হবে।
সুবর্ণা বেগমঃ এতো রাতে যাওয়ার কি দরকার আজ থেকে যাও না। আমার ভালো লাগবে।
রূপাঃ বাসায়…
সুবর্ণা বেগমঃ আমার কাছে ফোন দিয়ে দাও আমি কথা বলছি।
রূপা ফোন দিলো ওর আম্মুর কাছে। ফোন ধরেই রূপার আম্মু রূপার সাথে রেগে গেলো। এতো রাত হলো এখনো কোথায় আছে। তাদের বুঝি টেনশন হয় না!!
রূপা ওর আম্মুকে বুঝিয়ে সুবর্ণা বেগম এর কাছে দিলো।
বেশ অনেকটা সময় কথা বলে ফোন রাখলো সুবর্ণা বেগম ।

রূপার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তোমার আম্মু খুব সরল আর ভালে মানুষ ।
বিনিময়ে রূপা একটা মিষ্টি হাসি দিলো। আসলেই ওর আম্মু অনেকটা সরল।

সুবর্ণা বেগম সারা রাত নিজের শুধু নিজের ছেলেকে নিয়েই কথা বললো রূপার সাথে। সাজ্জাদের জন্য কেমন বউ চাই.?সাজ্জাদ কি পছন্দ করে । শুরু থেকে শেষ অবদ্ধি সব। রূপা এইসব শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে গেলো। সুবর্ণা বেগম এর মনে হয় আরও বলার ছিলো।
অবশ্য মেয়ে তো উনি পছন্দ করে রেখেছেন সেটা বলেননি।
সাজ্জাদ উপর থেকে ওর আম্মু আর রূপা কে দেখে প্রশান্তির হাসি হেসেছে।
রূপা আর ওর আম্মুর মধ্যে এতোটা ভাব হয়ে যাবে হয়তো সে কল্পনা ও করেনি।

সকালে রূপা সুবর্ণা বেগম এর রুম থেকে বের হতেই সাজ্জাদ থমকে গেলো কিছু সময়ের জন্য। চোখে মুখে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়লো।
রূপা সুবর্ণা বেগম এর শাড়ি পড়ে বের হয়েছে ।
এই গোলাপি রঙের শাড়ি জেনো রূপার জন্যই। কি সুন্দর গোলাপি কন্য লাগছে।

রূপা ড্রয়িং রুমে আসতেই শাড়িতে বেজে নিচে পড়ে গেলো। সাথে সাথে কুঁচি গুলো খোলে গেলো।
রূপা লজ্জায় মাথা তোলে আর উপরে তাকালোনা। সুবর্ণা বেগম রূপাকে আবার সুন্দর করে পড়িয়ে দিলো।

রূপা সুবর্ণা বেগম আর সাজ্জাদকে বলে স্কুটি নিয়ে চলে গেলো।
পেছনে ফিরে যদি একবার তাকাতো তাহলে দেখতে পেতো এক জোরা চোখ কতোটা মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে।

রূপা বাসায় না গিয়ে অফিসে চলে আসলো।

আহনাফ আজ থেকে অফিসে আসা শুরু।
মাহি রূপাকে দেখে বলে উঠলো, ‘ এই আহনাফ এখানে কেনো..’
রূপাঃ আমি কিভাবে জানবো। এতো দিকে না তাকিয়ে কাজে মন দে।

কি আশ্চর্যের বিষয় আহনাফ একবার ও রূপার দিকে তাকায়নি। তাতে রূপার কিছু জায় আসে না।

সাজ্জাদ আহনাফ কে ডেকে বললো। আজ থেকে জেনো সাজ্জাদ এর বাসায় থাকে।

আহনাফ এতে খুশি হয়ে গেলো।

সাজ্জাদ আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ সময় আছে এখনো নিজের কোম্পানিতে চলে যা। মেঝো আব্বু কাল রাতে কল দিয়ে ছিলো।’

আহনাফ কিছু না বলে চুপচাপ নিজের কাজ করতে লাগলো।
সাজ্জাদ আজকে আহনাফ এর জন্য সারপ্রাইজ রেখেছে।

কাজ শেষ করে বাসায় আহনাফ সাজ্জাদ এক সাথে বাসায় আসার সময় সাজ্জাদ বললো,’ আহনাফ তোর আমার একটা কাজ করে দিতে হবে।
আহনাফঃ কি কাজ ভাই ।
সাজ্জাদ আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আমি বিয়ে করতে চাচ্ছি।
খুশিতে আহনাফ বলে উঠলো, ‘ কি করতে হবে শুধু তাই বলো। সব ব্যাবস্থা আমি করবো।

সাজ্জাদ হাসলো আহনাফ এর কথা শুনে।

সাজ্জাদঃ বেশি কিছু না আম্মুকে রাজি করালেই হবে৷
আহনাফঃ এটা কোনো কাজ হলো। কিন্তু কাকি তো তোমার জন্য মৌ কে পছন্দ করে রেখেছে।
সাজ্জাদঃ আমি মৌ কে নিজের বোনের চোখে দেখি।
আহনাফঃ ঠিক আছে আমি কাকি কে আজ রাতেই রাজি করিয়ে নিবো তুমি আগে কথা বলো।
সাজ্জাদের পুরো বিশ্বাস ওর আম্মু আহনাফ এর কথায় পটে যাবে। খুব জলদি সে রূপাকে বউ করে নিয়ে আসবে৷ আর বিয়ের সব কিছু আহনাফ কে দিয়ে করাবে।

আহনাফ আজ অনেক খুশি সাজ্জাদের বিয়ের পর সে রূপাকে বিয়ে করে নিবে। দরকার হলে তুলে নিয়ে এসে বিয়ে করবে। জোর করে বিয়ে করবে। তাও রূপাকেই বিয়ে করবে।

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here