মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না পর্ব ২৪

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২৪
বিষন্ন মন নিয়ে ভার্সিটিতে এসে পৌছালো অথৈ। ভার্সিটির মাঠে ওর পা ফেলতে দেরি।হুট করে রুদ্রিক এসে ওর হাত চেপে ধরে।নিজের সাথে টেনে নিয়ে যেতে লাগল।আকস্মিক এমন কান্ডে অথৈ হতভম্ব হয়ে যায়।ব্যাপারটা বুঝে উঠতেই সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠে ও,
‘ কি করছেন?আমার হাত ছাড়ুন! আর এভাবে আমাকে গোরুর মতো টানছেন কেন?’

রুদ্রিক কোনো প্রকার জবাব দিলো না।সে তার কাজে ব্যস্ত।অথৈ রাগে চিৎকার চেঁচামেচি করতে লাগল।এমন করার কারনে ভার্সিটির স্টুডেন্টের প্রায় সবার নজর তাদের দিকেই।অথৈ হাত মোচড়াচ্ছে। কিন্তু কোনোভাবেই নিজেকে ছাড়াতে পারছে না।রুদ্রিক অথৈকে টেনে একেবারে ওর বন্ধুদের সামনে এনে দাঁড়ালো।আকস্মিক অথৈকে নিয়ে রুদ্রিকের এমন আগমনে ওরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।শুধু অবাকতার রেশ নেই ইহান আর সাফাতের চোখে।আর বাকি হলো নীল,অনিক,সিয়া,মারিয়া।জেনি আজ আসেনি।গতকাল যেই হারে মার খেয়েছে।আজ ওর এতো শক্তি নেই যে ও নিজের পায়ে আজ হাটতে পারবে।
এদিকে অথৈ এইবার রাগে ঝটকা মেরে রুদ্রিকের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো।তবে রুদ্রিকের কাছ থেকে হাত ছাড়াতেই রুদ্রিক এইবার অথৈয়ের কোমড়ে হাত রেখে ওকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে আসল।অথৈয়ের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল। নীল হা করে তাকিয়ে আছে।অনিক আহাম্মকের মতো বলে,’ তুই অথৈরে এমন চিপ্পা ধরছস কেন?কিরে?তোর কি হলো?’

রুদ্রিক অনিকের কথার কোনো প্রতিত্তুর করল না।সে আপাততো দেখতে ব্যস্ত ছটফট করতে থাকা অথৈকে।নিজেকে রুদ্রিকের কাছ থেকে ছাড়াতে না পেরে এইবার অথৈ রাগি চোখে রুদ্রিকের দিকে তাকাল।দাঁতে দাঁত চিপে বলে,’ আমাকে ছাড়ুন বলছি।কিসের অধিকারে আপনি আমাকে এইভাবে ধরে রেখেছেন?’

রুদ্রিক ভাবলেশহীন কণ্ঠে বলে,’ তুমি জানো না কিসের অধিকারে?তুমি আমার কে হও তুমি জানো নাহ?’

অথৈ চিৎকার করে বলে,’ না জানি না।আর জানতেও চাই না।আর রইলো যে অধিকারের কথা আপনি বলছেন।তবে কান খুলে শুনে রাখুন।যে লোক নিজের স্ত্রীর পরিচয় সবার থেকে গোপন রাখে। তাদের বিয়ের বিষয়ে সে জানাতে পারে না।তার কোনো অধিকার নেই সেই স্ত্রীর উপর স্বামীর অধিকার দেখানো।তাই আপনারাও আমার উপর কোনো অধিকার নেই।আমি আপনার কেউ নাহ।’

অথৈয়ের কথায় রুদ্রিকের রাগে মাথা খারাপ হয়ে গেল।সে জানে সে ভুল করেছে।তাও একটা কারন বশতই করেছে।এইজন্যে এই মেয়ে এমন করবে? রুদ্রিক অথৈয়ের বাহু আঁকড়ে ধরে টেনে নিজের মুখোমুখি আনলো।রাগে চোয়াল শক্ত করে বলে উঠল,’ বড্ড বেশি কথা বলছ তুমি অথৈ। আমাকে রাগিও না।ফলাফল ভালো হবে না।আর অধিকারের কথা বলছ তাই না?শুধু তোমার হাত কেন?তোমার সসম্পূর্ণ দেহে আমি স্পর্শ করতে পারব।এমনকি এই সবার সামনে তোমার ঠোঁটে চুমুও খেতে পারব।ওয়ানা সি?’

ইহান খুক খুক করে কেশে উঠল।হাজার হোক সে অথৈয়ের ভাই।এমন একটা পরিস্থিতি তার জন্যে লজ্জাজনক বটে।তবে কিছু করার নেই। তাকে এখানে থাকতেই হবে। জানতে হবে কি এমন হয়েছে।যেই কারনে অথৈ এরকম কথাবার্তা বলছে।

এদিকে রুদ্রিকের মুখের বলা প্রতিটা বাক্যে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল অথৈয়ের।লজ্জায় কান,গাল গরম হয়ে গেল।সবার সামনে লোকটা এমন বেফাঁস কথা কিভাবে বলতে পারে?অথৈ নাক মুখ কুচকে বলল,’ ছিঃ! বেশরম লোক।দূরে সরুন আপনি আমার কাছ থেকে।’

রুদ্রিক কিছু বলল না। অথৈকে ছেড়ে দিল।অথৈ চলে যাবার জন্যে পা বাড়াতে নিলেই।রুদ্রিক গম্ভীর স্বরে বলে,’ এখান থেকে যদি এক পা বাড়ানো হয়।তবে সত্যি বলছি।একটু আগের বলা কথাগুলো আমি করেই দেখাবো তোমায়।আর রুদ্রিক তার কথা রাখে।মনে রেখো।’

পায়ের তলা শিরশির করে উঠল অথৈয়ের।রুদ্রিকের কথায় আর আগানোর সাহস পেলো না।চুপচাপ সোজা হয়ে দাঁড়ালো।তবে রুদ্রিকের থেকে যথেষ্ট দূরত্ব রেখে।রুদ্রিক চোখ উল্টিয়ে এইবার নিজের বন্ধুদের দিকে তাকালো।বন্ধুদের অবাক করা চাহনিযুক্ত মুখশ্রী।সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে সে বলে উঠল,’ কয়েকদিন আগে হুট করে দাদা আমাকে মেয়ে দেখতে নিয়ে যায়। তারপর আকস্মিকভাবে দু পরিবারের সম্মতিতেই আমাদের বিয়েটাও সেদিন হয়ে যায়।তাই তোদের জানাতে পারেনি।তোরা কষ্ট পাবি আমার হুট করে বিয়ে করে নেওয়ার কথা শুনে।তাই আমি চাচ্ছিলাম সঠিক সময় এলে তোদের জানাবো।কিন্তু আমি সেখানেই মস্ত বড়ো ভুল করে ফেলেছি।তোদের আগে জানিয়ে দিলেই ভালো ছিল যে অথৈ আমার বিয়ে করা বউ।তাহলে সেদিন জেনি অথৈয়ের সাথে এমন রুড বিহেইব করার সাহস পেতো না।’

তারপর একে একে জেনির করা কান্ড ওদের বলে।কথা বলা শেষে দেখে অনিক,নীল,মারিয়া,সিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে তাকিয়ে রইল।এইগুলোর কি হলো?এদিকে রুদ্রিক অথৈকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় করিয়ে দেওয়াতে।ভালোলাগার রঙিন প্রজাপতিরা এদিক সেদিই উড়াউড়ি করতে লাগল।অজান্তেই ঠোঁটের কোণ প্রসারিত হয়ে আসল অথৈয়ের।অতঃপর হুট করেই আবার নিজেকে সামলে নিয়ে চেহারাখানা গম্ভীর করে নিলো।
রুদ্রিক বন্ধুদের রিয়েকশন দেখে ওদের কাছে গিয়ে কিছু বলবে তার আগেই সাফাত,নীল,অনিক ঝাপিয়ে পরল রুদ্রিকের দিকে।ওদের দেখা দেখি এইবার ইহানও একই কাজ করল।নীল রুদ্রিকের গলা শক্ত করে ধরে বলে,’ সালা আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করে ফেললি।তোকে তো আজ আমরা ছাড়ছি না।তোর পকেট আজ পুরো ফাঁকা করে তবেই দম নেবো।’.

ইহান বলল,’ আমিও সাথে আছি।’

অনিক বলে,’ এতো বড়ো একটা গুড নিউজ।ওর তো উচিত পুরো ক্যাম্পাসের স্টুডেন্টদের ট্রিট দেওয়া।’

সাফাত হাসি মুখে বলল,’ সালা বিয়ে করবে না। বিয়ে করবে না করে।এখন চুপা রুস্তম হয়ে বসে আছে।তোকে আজ ফকির বানিয়ে রাস্তায় নামাবো।তবেই ক্ষান্ত হবো আমরা।’

রুদ্রিকের উপর এমন চারটা হৃষ্টপুষ্ট ছেলের ভর পরায়।ও ঠিকভাবে শ্বাস নিতে পারছে না।তাই বন্ধুদের কাছে হার মেনে বলল,’ ঠিক আছে। ঠিক আছে।তোদের সব আবদার মেনে নিলাম।এইবার আমাকে ছাড়।তোরা যেভাবে চেপে ধরেছিস। দেখা যাবে বাসর আর আমার করা হবে না।তার আগেই আমি অক্কা পেয়েছি।’

রুদ্রিকের এমন লাগামহীন কথা বলায় অথৈ লজ্জা পেলো।এখনে এতোগুলো মানুষ।তার উপর ওর বড়ো ভাই আছে।আর এই লোক কিনা কি সহজেই এসব কথা বলে চলেছে।অথৈ বিরবির করল,’ অসভ্য।চরম অসভ্য।’

এদিকে রুদ্রিককে সবাই ছেড়ে দিলো।ইহান সরে এসেই ওর মাথায় গাট্টা মেরে বলে,’ তোর লজ্জা করে না আমার সামনে এসব বলতে?আফটার অল আমি তোর বউয়ের বড়ো ভাই।সম্মান দিয়ে কথা বলবি।’

রুদ্রিক বাঁকা হেসে বলে,’ সম্মান? তাও আবার তোকে?স্বপ্নেও আমি তোকে সম্মান দিবো নাহ।’
‘ আমাকে সম্মান না দিলে।আমার বোনকেও তোর বাড়ি পাঠাবো না।’
‘ তুই আর কিছুই করতে পারবি না। কারন অথৈকে আমার রাজ্যের রানি বানিয়ে নিয়েছি।আমি চাইলে এখনই তাকে আমার রাজপ্রাসাদে নিয়ে যেতে পারি।সেখানে তুই কেন তোর চৌদ্ধগুষ্টিও আমায় আটকাতে পারবে না।’

রুদ্রিকের এহেন কথায় হেসে ফেলল ইহান। সাফাত এইবার মুচঁকি হেসে এগিয়ে যায় রুদ্রিকের দিকে।সাফাতকে দেখেই রুদ্রিকের হাসিটুকু মিলিয়ে গেল। সাফাতের ব্যবহারগুলো তার বোধগম্য হচ্ছে না।সে তো সাফাতের ভয়েই বলতে পারেনি সত্যিটা।তার বন্ধু যদি কষ্টে পেয়ে রাগে দুঃখে ওর সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করে দেয়?বন্ধু হারানোর ভয় ঝেকে ধরেছিলো ওকে।একদিকে নিজের ভালোবাসা আরেকদিকে প্রাণপ্রিয় বন্ধু।দুটোর একটাকেও ছাড়তে পারবে না রুদ্রিক।তাই তো দোটানায় পরে গিয়েছিলো।কিন্তু এখন তো দেখছে কাহিনি সম্পূর্ণ উলটো।সাফাত রুদ্রিকের হাতে হাত মিলিয়ে হেসে বলে,’ কংগ্রাচুলেশনস দোস্ত।তুই আর অথৈ যেন সারাজীবন সুখে থাকিস এই দোয়া করি।’

রুদ্রিক অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাফাতের দিকে।এমনক বাকিদেরও একই অবস্থা।কারন ওরা সবাই বুঝতে পেরেছিলো যে সাফাত অথৈকে পছন্দ করে।আর সাফাত যে এতো সহজে এইভাবে সবটা মেনে নিবে। এটা হজম করতে কষ্ট হবে।’

সাফাত অথৈকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ অথৈ..! উপ্সস সরি,ভাবি।আপনি যদি একটু এখান থেকে যেতেন। মানে ওদের সাথে একটু কথা আছে।আসলে মানে বন্ধুদের বিষয় তো। আর আপনি আমাদের ভাবি।একটু ওকওয়ার্ড ফিল হবে।’

অথৈ আঁড়চোখে রুদ্রিকের দিকে তাকালো।রুদ্রিক অথৈয়ের দিকেই তাকিয়েছিলো।অথৈ তাকাতে সে চোখের ইশারায় সম্মতি দেয়।অথৈ এইবার সাফাতের দিকে তাকিয়্ব বলে,’ এভাবে বলবেন না ভাইয়া।আমি আপনাদের থেকে বয়সে অনেক ছোটো।আর তাছাড়া আমায় ভাবি ডাকার দরকার নেই।আর না আপনি বলে সম্বোধন করবেন।আগে যা বলতেন, যেভাবে বলতেন।ঠিক এখনও তাই করবেন।আশা করি বুঝতে পেরেছেন।তাহলে এখন আমি আসি।ঠিক আছে ভাইয়া।’

সাফাত মলিন হাসি দিলো।অথৈ চলে গেল সেখান থেকে।রুদ্রিক এইবার সাফাতের কাছে এসে ওর ঘাড়ে হাত রাখল।করুণ গলায় বলে,’ আমাকে ক্ষমা করে দে বন্ধু।তোকে কষ্ট দিতে আমি চায়নি।কিন্তু আমার হাতে যে কিছু ছিলো না।’

সাফাত সাথে সাথে চেহারার মলিনতার ছাপ আড়াল করার চেষ্টা চালালো।রুদ্রিকের বাহুতে হালকা চাপড় মেরে বলে,’ আরে কিসের ক্ষমা চাচ্ছিস তুই?এখানে তোর কোনো দোষ নেই।আর উপরওয়ালা তোদের দুজনের জুটি আগে থেকেই বানিয়েই রেখেছেন।সেখানে আমাদের কারোর কিছুই করার নেই।আমি অথৈকে পছন্দ করি ঠিক আছে।কিন্তু সেটা ভালোবাসা কি না জানি না।আর মাত্র কয়েকদিনের পছন্দের কাছে কি,আমাদের এতোবছরের বন্ধুত্বকে আমি তুচ্ছ করে দিব?এতোটা বোকা আমি নই রুদ্রিক।আর আমার কষ্ট হলেও।আমি জানি তোরা আমায় সামলে নিবি। ‘

সাফাতের কথায় রুদ্রিকের মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়ে গেল।উপরওয়ালার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করল তাকে এতো ভালো বন্ধু নামের ভাইদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে।রুদ্রিক হাত বাড়িয়ে দিলো ওর সব বন্ধুদের উদ্দেশ্যে।ইহান,সাফাত,নীল,অনিক সবাই ঝাপিয়ে পরল।ওদের গ্রুপ হাগ করতে দেখে মারিয়া ঠোঁট উলটে বলে,’ এটা কিন্তু একদম ঠিক করছিস না তোরা।আমাদেরও নেহ।আমরা মেয়ে বলে কি?তোদের হাগ করতে পারব নাহ?’

সিয়া চোখ ছোট ছোট করে বল,’ আমাদেরও নেহ।নাহলে এক একটা ঠ্যাং ভেঙে দিবো।’

রুদ্রিক সহ বাকিরাও হেসে দিলো।ওরা মারিয়া আর সিয়াকে জায়গা করে দিলো গ্রুপে আসার জন্যে।মারিয়া আর সিয়া চওড়া হাসি দিয়ে।হুরমুর করে ছুটে গেল।বন্ধু’রা সব মিলে মুহূর্তেই পরিবেশটাকে আনন্দঘন করে তুলল।
_______________
অথৈ,রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদ ক্যান্টিনে বসে আছে।এদিকে আহিদ ক্যান্টিনের চারদিকে টুকুরটুকুর করে চোখ বুলাচ্ছে।মনে হয় কাউকে খুঁজছে।হ্যা,খুঁজছেই তো সে।সেদিনের সেই মাইশা নামের মেয়েটাকে খুঁজছে।সেদিনের পর আর একবারও মেয়েটার দেখা পায়নি আহিদ।কেমন যেন বুকটা খালি খালি লাগছে।চারদিক বিষাক্ত লাগছে।সে ঠিকভাবে নিশ্বাস নিতে পারছে না।আহিদকে এমন ছটফট করতে দেখে প্রিয়ান ভ্রু-কুচকে বলে,’ তোর কি ডায়রিয়া হয়েছে?’

আহিদ থতমত খেয়ে গেল প্রিয়ানের কথায়।পিহু,রিধি ফিক করে হেসে দিলো।ওদের হাসতে দেখে আহিদ রাগি গলায় বলে,’ কিসব বলতাছস?কিসের ডায়রিয়া হ্যা?’

প্রিয়ান বলে উঠল,’ তাহলে এমন ডায়রিয়া রোগির মতো ছটফট করতাছস কেন?আচ্ছা,ডায়রিয়া হয়নি।তবে কি কষা হয়েছে তোর?মানে বুঝতেই পারছিস।বাথরুমে এক ঘন্টা ধরে বসে থাইকা কষ্ট করেও একটা হা*গু হয় না।’

প্রিয়ানের এমন কথায় আহিদ চিল্লিয়ে উঠে,’ হোয়াট দ্যা হেল।কি বলছিস এসব?মাথা ঠিক আছে তোর?দেখ প্রিয়ান রাগ উঠাবি না একদম।এমনিতেই মেজাজ খারাপ।তুই কিন্তু আরোও খারাপ করে দিতাছস!’

এদিকে পিহু নাক মুখ কুচকে ফেলেছে প্রিয়ানের কথায়।বলে উঠল,’ ছিহ! এমন খাচ্চোর মার্কা কথা বলতে আমি জীবনেও কাউকে শুনিনি।’

প্রিয়ান সবার অগোচরে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখালো পিহুকে।তারপর দ্রুত জ্যান্টেলম্যান রূপে ফিরে আসল।এদিকে প্রিয়ানের এহেন কান্ডে পিহুর চোখ কপালে উঠে গেল।প্রিয়ান যে এমন কিছু করতে পিহু ভাবতেও পারেনি।খুক খুক করে কেশে দ্রুত একগ্লাস পানি খেয়ে নিলো।প্রিয়ান পিহুর কান্ডে দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,’ তুই আমার মতো আরেকজনকে দেখার আশা করছিস?তোর সেই আশায় এক গাদা বালি।কারন প্রিয়ান ওয়ান এন্ড ওনলি একপিসই আছে এই দুনিয়ায়।’

পিহু চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,’ তা আর বলতে? তোর মতো খাচ্চোর আর পিশা’*চ যে দুনিয়ায় একপিসই আছে তা আমি ভালোভাবেই জানি।আর আজ তো তুই নিজে মুখেই স্বিকার করলি।’

প্রিয়ান পিহুর চুল টেনে ধরল।আকস্মিক এমন করায় পিহু ব্যথা পায় অনেকটা।আর্তনাদ করে বলে,’ কুত্তা তুই যদি এখন আমার চুল না ছাড়োস।সত্যি বলতেছি তোরে আমি খু’ন করে দরকার হলে জেলে যাবো।’

ওদের দুটোর ঝগড়ার মাঝে এতোক্ষণ বসেছিলো রিধি।বেচারি সহ্য করতে না পেরে এইবার গর্জে উঠল,’ আমাকে কি তোরা আটা ময়দার গোলা পেয়েছিস?যে এইভাবে তোদের দুটোর মাঝে ফেলে আমাকে চটকাচ্ছিস?থাপড়িয়ে দুটোর গাল লাল করে দিবো বেয়াদবের দল।সর দুটো।’

রিধি ধাক্কা দিলো দুটোকে।ফলে প্রিয়ান পিহুর চুল ছেড়ে দিলো।তারপর চুপচাপ বসে রইলো।তারা জানে রিধি এখন বেজায় রেগে।আর কিছু বললে ওদের ডিরেক্ট ম্যানহোলে ছুড়ে মারবে।তাই চুপচাপ মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলো।ওদের শান্ত হতে দেখে রিধি সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।অতঃপর দৃষ্টি তাক করল আনমনা হয়ে বসে থাকা অথৈয়ের দিকে।রিধি হাত বাড়িয়ে একটা ট্যিশু পেপার নিয়ে মুড়িয়ে অথৈয়ের দিকে ছুড়ে মারল। এতে ধ্যান ভাঙে অথৈয়ের। চোখ তুলে রিধির দিকে তাকালেই রিধি ভ্রু নাচিয়ে বলে,’ কি হয়েছে তোর?এমন বোম হয়ে বসে আছিস কেন?এমন ধুন্দলের মতো বসে না থেকে।রুদ্রিক ভাইয়ার সাথে সরাসরি কথা বলে ঝামেলা মিটিয়ে নিলেই তো পারিস।’

প্রিয়ান নিজের নিরবতা ভেঙে বলে,’ হ্যা রিধি ঠিক বলছে।আর তাছাড়া এখানে তো রুদ্রিক ভাইয়ার কোনো দোষ নেই।’

‘রুদ্রিকের কোনো দোষ নেই!’ কথা কানে এসে পৌছাতেই অথৈ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় প্রিয়ানের দিকে।প্রিয়ান ভয় পেয়ে সাথে সাথে বুকে হাত দেয়।মিনমিনে গলায় বলে,’ এমনে তাকাস ক্যান ছেরি?মাইরা ফেলবি নাকি?যেমনে তাকাইছস মনে হইলো লবন মরিচ ছাড়াই আমারে আস্তো গিল্লা ফালাইবি।’

অথৈ দাঁতেদাঁত চিপে বলল,’ ঠিক তাই।তোর সাথে আমার এটাই করতে ইচ্ছে করছে।’

প্রিয়ানের চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেল।বিরবির করল,’ রুদ্রিক ভাই যে একটা চুরেল,রাক্ষসী,ডায়নি বিয়ে করছে তা কি সে জানে?যে উঠতে বসতে সবার রক্ত চুষে নেয়।’

‘ এই তুই কি বললি?সাহস থাকলে জোড়ে বল?’ অথৈ খেকিয়ে উঠে।

প্রিয়ান ধরফরিয়ে উঠে বলে,’ আরে না আমি কি বলব?কিছুই বলি নাই।বলছি রাগলে তোরে সুন্দর লাগে।’

প্রিয়ানের কথায় অথৈ কিছুই বলল না।রাগি দৃষ্টিতে প্রিয়ানের দিকে একপলক তাকিয়ে তারপর হনহন করে বেড়িয়ে পরল।ওকে বেড়োতে দেখে রিধি সাথে সাথে একটা নাম্বারে টেক্সট করল,’ আমাদের কাজ শেষ রুদ্রিক ভাইয়া।বাকিটা আপনার করতে হবে।আর হ্যা ট্রিট দিতে ভুলবেন না কিন্তু।’

মিনেট দুয়েক পর রিপ্লাই আসল,
ইফ আই ক্যান কোনভিন্স হার।আই উইল হ্যাপিলি ফিড ইউ ওল, দ্যা ফুড ইন দ্যা রেস্টুরেন্ট।’

রিধি ম্যাসেজটা দেখেই হাসল।মনে মনে চিন্তা করল রুদ্রিক ভাইয়ার না জানি কতোটা খাটাখাটুনি করতে হয় অথৈকে মানাতে।

#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।গতকাল দেওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু কাল তো শবে কদর ছিলো।নামাজ পড়ে টড়ে আর সময় পায়নি লিখার।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here