মন তুমি ছুয়ে দেখো না পর্ব ৩৪

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৩৪
সময় চলে আপন গতিতে।দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে এক সপ্তাহ।সকাল থেকেই মন মেজাজ ভালো নেই অথৈয়ের।গরম মেজাজ সে কথার অগ্নিতে পারলে সবাইকে ভষ্ম করে দেয়।তার এই গরম মেজাজের কারনে রিধি,পিহু,প্রিয়ান,আহিদ বিরক্ত হয়ে আছে।কিছু বললেই ছ্যাঁৎ করে উঠে এই মেয়ে।বিরক্ত কণ্ঠে প্রিয়ান বলে, ‘ তোর এতো ত্যাছ (তেজ শুদ্ধ ভাষা।ত্যাছ আমাদের এখানের আঞ্চলিক ভাষা) ক্যান? খামোগা আমাগো সাথে এমন করতাছস ক্যান?ওইযে তোর জামাই ওইখানে গিয়ে তারা তোর রাগের ফোয়ারা দিয়ে জ্বালায় পুড়ায় ফেল।তবুও আমাগো খ্যামা(ক্ষমা) দে বা*।’

পিহু তীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টি নিক্ষেপ করল প্রিয়ানের দিকে।চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,’ তুই কারে কি কইতাছস?তোরে এমন লাত্থি মারুম হনুমানের বাচ্চা।সর এনতে।সহ্য হইতাছে না তোরে আমার। এই পিহু এই বা**ডারে নিয়া যা।’

পিহু মুখ ঘুরিয়ে বলে,’ আমারে বলছ ক্যান?তুই নিজে ওরে সরাইতে পারোস না?’

প্রিয়ান ওকে নিয়ে এমন কাঁদা ছোড়াছুড়ি দেখে ক্ষ্যাপে গেল।রাগি স্বরে বলে, ‘ এই তোরা আমারে নিয়া এমন ফেলা ফেলা করতাছস কেন?যেমন করতাছস মনে হইতাছে আমি তোগো কোলে উইঠা বইসা আছি।’

‘ আপাততো তোর রেডিও ওফ কর।ওইটা দিয়াই তো মানুষরে আধপাগল বানায় ফালাবি। ‘

অথৈয়ের ব্যাঙ্গাত্মক কথায় প্রিয়ান ওর চুল টেনে ধরল।এতে যেন আরও রাগল অথ৷ সজোড়ে প্রিয়ানের পায়ে ওর পা দিয়ে আঘাত করল।প্রিয়ান আকষ্মিক আঘাতে ব্যথায় কুকিয়ে উঠল। পা ধরে লাফাতে লাগল।অথৈ ফিক করে হেসে দিলো।বলল,’ বেশ হয়েছে।আর করবি আমার সাথে এমন?’

প্রিয়ান ব্যথায় নাক মুখ কুচকে বলে,’ শাকচুন্নির বাচ্চা তোরে যদি আমি মেরে আজ হাড্ডি গুড্ডি না ভেঙে দেই। তবে দেখিস।’

‘ পারলে আগে আমাকে ধরে দেখা।’ এটা বলেই অথৈ দৌড় লাগালো।একবার আহিদের পিছনে যাচ্ছে।তো একবার রিধি আর পিহুর পিছনে যাচ্ছে।এভাবে দৌড়াদৌড়ির এক পর্যয়ায়ে অথৈ আবারও গিয়ে দাঁড়ায় পিহুর পিছনে।প্রিয়ান ওকে ধরতে এগিয়ে যায়।হঠাৎ প্রিয়ান নিজের তাল সামলাতে না পেরে পিহুর উপরে পরল।প্রিয়ানের মতো এমন স্বাস্থ্যসম্মত ছেলে পিহুর মতো পুচকে একটা মেয়ের উপর পরলে কি সে আর নিজেকে সামলাতে পারে?পিহুর ক্ষেত্রেও তাই হলো।প্রিয়ান সোজা পিহুকে নিয়ে মাঠের মধ্যে পরে গেল।পিহু ব্যথায় নাক মুখ কুচকে ফেলেছে।তবে অতোটাও ব্যথা পায়নি।কারন প্রিয়ান তার আগেই নিজেকে সামলে নিয়ে পিহুর বাহুর দুপাশে দু হাত রেখে নিজেকে সামলে নেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে।এদিকে পিহুর ব্যথায় চোখে পানি চলে এসেছে।আর প্রিয়ান সে তো হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। ব্যথাতুর পিহুকে দেখতেও যেন প্রিয়ানের ভালো লাগছে।সে একধ্যানে তাকিয়ে আছে পিহুর দিকে। হঠাৎ আহিদের ডাকে ধ্যান ভাঙে ওর।
‘ কিরে সালা উঠছিস না ক্যান?পিহু ব্যথায় কেঁদে দিয়েছে।উঠ জলদি।’

হুঁশ ফিরতেই প্রিয়ান তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়ালো।তারপর পিহুকে উঠাতে সাহায্য করল।ভাজ্ঞিস এদিকটায় তেমন একটা মানুষ নেই। নাহলে কি একটা লজ্জাকর পরিস্থিতিতে পরতো ওরা।পিহু ভেজা কণ্ঠে বলে,’ এমনভাবে পরে কেউ কারো উপর। এমন একটা হাতি মার্কা শরীরটা নিয়ে পরেছিস আমার উপর।চ্যাপ্টা হয়ে যাইনি সেটাই অনেক আহ্, আমার কোমড়।গন্ডার একটা।’

প্রিয়ান যেন চিন্তিত হয়ে পড়ল।পিহু কি আসলেই অনেকটা ব্যথা পেয়েছে।প্রিয়ান চিন্তিত গলায় বলে,’ দেখি?বেশি ব্যথা পেয়েছিস?চল তাহলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই।’

পিহু থতমত খেয়ে গেল প্রিয়ানের কথায়।ও ব্যথা পেয়েছে ঠিক আছে। তবে ওতোটাই না যে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।পিহু আলতো স্বরে বলে,’ না আসলে ব্যথা পেয়েছি কোমড়ে।তবে অতোটাও না।ঠিক আছি আমি।’
‘ আর ইউ সিয়র?’
‘ হুম!’

প্রিয়ান রাগি চোখে তাকালো অথৈয়ের দিকে।দাঁত খিচিয়ে বলে,’ তোর কারনে এমন হয়েছে ভুতনি একটা।’

অথৈ মুখ কুচকে বলল,’ তুই এমন মাইয়া মাইনষের মধ্যে আইসা চিপকা থাকবি তা কি আমি জানি?’

‘ তুই কিন্তু মার খাবি?’
‘ আয় দেখি কে কাকে মারে?’

প্রিয়ান আবার আগালো।এইভাবেই খুনশুটি চলতে লাগল ওদের।আহিদ,রিধি,পিহু হাসাহাসি করছে খুনশুটি দেখে ওদের।

দূর থেকে বন্ধুদের সাথে হাস্যজ্জ্বল অথৈকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে। তবে মনে মনে একটা চাপা কষ্টও অনুভব করছে।ওদের বন্ধুদের মাঝে হঠাৎ কি হয়ে গেল।কেমন যেন নেতিয়ে গিয়েছে সবাই।এমন কেন হচ্ছে?তবে কি ওদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরতে শুরু করে দিয়েছে?রুদ্রিক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।নাহ,তাকেই কিছু করতে হবে।এইভাবে চলতে দেওয়া যাবে না।রুদ্রিক তার এই বন্ধুগুলোকে কোনোদিন হারাতে পারবে না কিছুতেই না।

ওদিকে প্রিয়ান দৌড়াতে দৌড়াতে রুদ্রিকদের সামনে এসে পরেছে।ওখানেই ব্রেক কষে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,’ রুদ্রিক ভাই প্লিজ আপনার বউকে থামান।’

রুদ্রিক প্রিয়ানের অবস্থা দেখে হেসে দিলো।বেচারার চুলগুলো সব এলোমেলো,ইন করা শার্টটাও ঠিক নেই।বোঝাই যাচ্ছে অথৈয়ের হাতে সে বেজায় মার খেয়েছে।রুদ্রিক হাসতে হাসতে বলে,’ তো তুমি কি এমন করেছ?যার কারনে সে তোমায় এইভাবে তাড়া করছে?’

প্রিয়ান অসহায় গলায় বলে,’ আর বলেন না ভাই।আপনার বউয়ের আজ কি যেন হয়েছে।সকাল থেকেই ভালো মন্দ কিছু বলা যাচ্ছে না।তাহলেই ছ্যাঁৎ ছ্যাঁৎ করে উঠছে।’

ভ্রু-কুচকে আসে রুদ্রিকের।প্রশ্ন করল,’ কেন কি হয়েছে ওর আবার?’

প্রিয়ান মাথা চুলকে বলল,’ তা তো জানি না। ‘

তারপর পিছনে তাকিয়ে দেখে অথৈ আসছে এদিকেই।সাথে রিধি,পিহু আর আহিদ।প্রিয়ান ওদের দেখেই বলল,’ ওই তো এদিকেই আসছে।আপনিই জিজ্ঞেস করে নিন।’

অথৈ দৌড়ে এসে প্রিয়ানকে ধরতে যাবে।তার আগেই রুদ্রিক ওর হাত আকঁড়ে ধরে থামিয়ে দেয়।অথৈ তা দেখে বলে,’ কি হলো?আপনি আমাকে আটকালেন কেন?’

রুদ্রিক পকেট থেকে রুমাল বের করল।অনেকক্ষণ যাবত দৌড়াদৌড়ি করার কারনে অথৈয়ের কপালে বিন্দু বিন্দু জমেছে।রুমাল দ্বারা তা খুব যত্ন করে মুছে দিতে দিতে বলে,’ কি হয়েছে তোমার?এমন ছোটাছুটি করছ কেন?এইযে গরমে কি অবস্থা হচ্ছে তোমার?’

ঘামটুকু মুছে অথৈয়ের কপালে পরে থাকা চুলগুলো কানের পিছনে গুছে দিলো রুদ্রিক।সবার সামনে রুদ্রিকের এহেন কান্ডে লজ্জা পেলো অথৈ। ফর্সা গালে লালাভ আভা ছড়িয়ে পরল।তা দেখে মৃদ্যু হাসি ফুটে উঠল রুদ্রিকের ঠোঁটের কোণে।পিহু তা দেখে হৈ হৈ করে উঠল,’ বাহ বাহ।কি সুন্দর প্রেম।আহা,কারো নজর না লাগুক।’

অথৈ যেন এতে আরও লজ্জায় পরল।ছটফট করে দ্রুত সরে গেল রুদ্রিকের কাছ থেকে।এদিকে ইহান চিন্তিত স্বরে বলে,’ কিরে বোন?কি হয়েছে তোর?শরীর ঠিক আছে?’

ভাইয়ের আদুরে গলায় অথৈ যেন আহ্লাদে গদগদ হয়ে গেল।দু হাত বাড়িয়ে চলে গেল ইহানের কাছে।ইহানও আগলে নিলো বোনকে।অথৈ বাচ্চাদের মতো করে বলে,’ ভাইয়া আমার ভালো লাগছে না।বাড়ি থেকে ভার্সিটি আর ভার্সিটি থেকে বাড়ি।এসব করতে করতে আমি ক্লান্ত হয়ে পরেছি।আমার অসহ্য লাগে এখন সবকিছু।’

ইহান মৃদ্যু হেসে বলে,’ হুঁ! তা এখন কি কর‍তে হবে আমাকে?’

ইহানকে ছেড়ে দিলো অথৈ।হাসিমুখে বলে,’ ভাইয়া প্লিজ আমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবি?ইনফেক্ট রুদ্রিক,তুই, সাফাত ভাইয়া,নীল ভাইয়া,অনিক ভাইয়া,মারিয়া,জেনি,সিয়া আপু।আর রিধি,প্রিয়ান, পিহু, আহিদ আমরা সবাই মিলে কোথায় কয়েকদিনের জন্যে ট্যুরে যাই।কি বলিস ভাইয়া?প্লিজ ভাইয়া।’

ইহানের বোনের আবদার ফেলতে পারছে না।আবার আর মাত্র দেঢ় মাসের মতো সময় আছে ওদের ইয়ার ফাইনাল এক্সামের।ইহান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।অথৈয়ের হাসি মুখ দেখে তা যেন আরও কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে ওকে না বলার জন্যে।ইহান ধীর আওয়াজে বলে,’ শোন বোন।তোর আবদার তো আমি কোনোটাই কোনোদিন ফেলেনি।তুই এক কাজ কর রিধি,পিহু,প্রিয়ান আর আহিদদের সাথে তুই চলে যা।তোর যেখানে যেতে ইচ্ছে করে।বাট আমি আর রুদ্রিক বাকিরা যেতে পারবো না।আর মাত্র কয়েকদিন আছে ইয়ার ফাইনালের। এখন ট্যুরে যাবো কিভাবে?’

অথৈ কাঁদো স্বরে বলে,’ মাত্র তিন চারদিনের জন্যে ট্যুরে গেলে কি হবে ভাইয়া?প্লিজ চলো না।এমন করছিস কেন?’

‘ কিন্তু অথৈ তোর এই আবদারের কারনে তো অন্যদের পড়ায় সমস্যা হবে।’

অথৈ ইহানের থেকে সরে আসল।রুদ্রিককে মুখ ভার করে বলে,’ আপনার কি ট্যুরে যেতে কোনো প্রবলেম আছে?’

রুদ্রিক দুহাত দ্বারা চুলে ব্রাশ করছিল।অথৈয়ের কথায় বলে,’ আমার কোনো সমস্যা নেই।তোমার জন্যে আমি ওলওয়েজ ফ্রি।’

রুদ্রিকের কথায় সবাই মুখ টিপে হাসল।অথৈ ‘ ধুর!’ বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।এই লোক শুধু তাকে লজ্জায় ফেলার ধান্দায় থাকে।রুদ্রিক মুচঁকি হাসল।অথৈ সাফাত,নীল,অনিক,সিয়া,মারিয়া,জেনি ওদের সবাইকে একই প্রশ্ন করল।তারাও বলল দু তিনদিনের জন্যে তাদের কোনো সমস্যা নেই।অবশ্য অন্যসময় জেনি হলে এতো সহজে রাজি হতো না।তবে ওইযে রুদ্রিক যাবে। তাই সেও রাজি হয়ে গিয়েছে কোনো ভণিতা ছাড়া।সবার সম্মতি পেয়ে অথৈ ইহানকে উদ্দেশ্য করে বলে,’ দেখছিস ভাইয়া।সবাই রাজি।শুধু তুই-ই এমন করছিস।’

ইহান বোঝানোর জন্যে বলল,’কিন্তু তারা রাজি হচ্ছে সেটা না।এইভাবে এক্সাম সামনে আর ওরা ঘুরতে যাবে।ওদের ফ্যামিলি থেকে সমস্যা হবে।’

অথৈ বিরক্তিতে মাটিতে ‘ ধ্যাৎ ‘ বলে আঘাত করল পা দ্বারা।ভেজা কণ্ঠে বলে,’ তোর শুধু এই সমস্যা, সেই সমস্যা।আমি যাবোই না। এইবার খুশি তো তুই।’

এই বলে অথৈ রাগে হন হন ভার্সিটি থেকে চলে গেলো।বোনের রাগ দেখে ইহান কি করবে বুঝতে পারছে না।সাফাত ইহানকে বলল,’ শুধু শুধু বেচারিকে রাগিয়ে দিলি।কি এমন হতো দু তিন দিনে?’

নীল আর অনিকও সহমত হলো।সিয়া বলে,’ এক্সামের দেঢ় মাস বাকি আছে এখনও।আর আমরা পড়ালেখায় এতোটাও খারাপ না যে দু তিনদিন না পড়লে আমরা এক্সামে খারাপ করব।এমনিতেও আমরাও গত একবছর যাবত কোথাও ঘুরতে যাই না।’

মারিয়া বলে,’ হ্যা রে ইহান সিয়া ঠিকই বলছে।’

রুদ্রিক পকেটে হাত গুছে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।ঠান্ডা স্বরে বলে,’ আমি তোর উপরেই সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম।তবে এটুকু শুনে রাখ ওর মন খারাপ আমার সহ্য হয় না।’

রুদ্রিক চলে গেল।রুদ্রিক চাইলেই ইহানের অনুমতি না নিয়েই পারতো।তবে একজন বোন যেহেতু তার ভাইয়ের কাছে আবদার করেছে তাই সে আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলেনি।তবে অথৈয়ের মন খারাপ তার সহ্য হচ্ছে না। মেয়েটা কোথায় গেলো কে জানে?রুদ্রিক পার্কিং থেকে বাইক নিয়ে বাইকে উঠে সোজা চলে গেল।তবে বেশি দূর না যেতেই দেখে অথৈ মুখ ফুলিয়ে একা একা হাটছে।রুদ্রিক ওর সামনে বাইক থামালো।তারপর বাইক থেকে নেমে ওর সামনে দাঁড়াতেই অথৈ বিরক্ত হয়ে বলে,’ কি সমস্যা আপনি এখানে এসেছেন কেন?’

রুদ্রিক আলতো হেসে বলে,’ আমার একমাত্র বউয়ের মন খারাপ।এটা কি আমি সহ্য করতে পারি বলো?তাই তো তার মন ভালো করতে চলে আসলাম।চলো?’

রুদ্রিক অথৈয়ের হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে যেতে লাগল।অথৈ ওর সাথে যেতে যেতে প্রশ্ন করল, ‘ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?’
‘ আমার সাথে চাচ্ছো এটাই কি যথেষ্ট নাহ?বিশ্বাস নেই আমার উপর?’

অথৈ একটুও হকচকালো না।সরল গলায় বলে,’ নিজের থেকেও বেশি।’

রুদ্রিক প্রশান্তির হাসি দিলো।বলল,’ তাহলে চলো।’

রুদ্রিক বাইকে উঠে বসল।পর পর অথৈও উঠল।পিছন থেকে রুদ্রিককে জড়িয়ে ধরতে রুদ্রিক বিস্তর হেসে বাইক স্টার্ট দিলো।পথিমধ্যে আর কথা হলো না ওদের মধ্যে।রুদ্রিক একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে বাইক থামালো।পর পর বাইকের হর্ণ সজোড়ে বাজালো।হর্ণের আওয়াজ পেতেই বাড়ির দারোয়ান দারোয়ান সজাগ হয়ে উঠল।মূলত দারোয়ান ঘুমোচ্ছিলো।দারোয়ান সজাগ হয়ে ওদের দিকে তাকাতেই।রুদ্রিককে দেখেই কেমন বিচলিত ভঙিতে উঠে দাঁড়ালো।আমতা আমতা করে বলে,’ রুদ্রিক বাবা আসলে আমি যে কেমনে ঘুমায় গেছিলাম টের পাই নাই।চোখটা লাইগা আইছিলো একটু।’

রুদ্রিক বাইক থেকে নামতেই অথৈও নেমে দাঁড়ালো।রুদ্রিক অথৈয়ের হাত ধরে দারোয়ানের দিকে এগিয়ে গেল।অথৈ তাকে সালাম দিলো।তিনিও হাসিমুখে সালামের জবাব দিলেন।রুদ্রিক দারোয়ানের কাধে হাত রেখে নরম গলায় বলে উঠে,’ চাচা আপনার শরীরটা ভালো না দেখেই বোঝা যাচ্ছে।আমি ভার্সিটি যাওয়ার সময় আপনাকে বলে গিয়েছিলাম বাড়ি চলে যেতে আর যাওয়ার সময় ডাক্তার দেখিয়ে যেতে।কিন্তু আপনি যাননি।কেন যাননি?’

দারোয়ান চাচা মুখটা কাচুমাচু করে ফেললেন।কোনরকম বললেন,’ অতোটাও খারাপ না আমার শইল।আইজকার দিনডা কাম কইরা হের ফর কাইল যাওয়ার কথা ভাবছিলাম।’

রুদ্রিক পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে সেখান থেকে দুটো এক হাজার টাকা নোট বের করে দারোয়ান চাচার হাতে গুজে দিলেন।কোমল কণ্ঠে বলেন,’ আজ আর করা লাগবে না আপনার কিছু।এই যে টাকাটা দিলাম এটা দিয়ে ডাক্তার দেখিয়ে নিবেন।এখন যান আপনি।নাকি আমি পৌছে দিবো চাচা?’

দারোয়ান চাচা যেন রুদ্রিকের এতো নরম ব্যবহারের আবেগে আপ্লুত হয়ে পরলেন।চোখে জল এসে পরেছে উনার।তিনি ভেজা গলায় বলেন,’ ধন্যবাদ বাবা।আপনে অনেক ভালো।’

রুদ্রিক তার কান্না দেখে বলে,’ আহা, কাঁদছেন কেন আপনি?’

দারোয়ান চাচা চোখ মুছলেন।এইবার সরাসরি তাকালেন অথৈয়ের দিকে। প্রশ্ন করলেন,’ এইটা কে রুদ্রিক বাবা?’

রুদ্রিক অথৈকে নিজের আরেকটু কাছে টেনে নিয়ে বলে,’ এ হলো আপনাদের ছোটো বউ মা চাচা।’

তিনি অবাক হলেন। পরক্ষণে চওড়া হেসে বলেন,’ মাশা-আল্লাহ! মাশা-আল্লাহ! দুজনরেই অনেক সুন্দর মানায়ছে বাবা।সুখে থাকো তোমরা।দোয়া করি বাবা।’

রুদ্রিক একপলক তাকালো অথৈয়ের দিকে।তারপর দুষ্টু হেসে বলে,’ চাচা এই দোয়াও করেন।বাড়ির বউ যেন জলদি বাড়িতে নিয়ে আসতে পারি।এবং ঠিক তার একবছর পর আপনাকে দাদু ডাক শোনাতেও পারি।’

অথৈ চোখ বড় বড় করে তাকালো রুদ্রিকের এহেন কথায়।এদিকে চাচা বলেন,’ হো বাবা দোয়া করলাম।জলদি বউ মারে বাড়িতে নিয়া আসো। আমরাও আর দাদু ডাক শুনতে পারমু তাড়াতাড়ি এইটা তো ভালা কথা।’

অথৈ লজ্জায় হতভম্ব।এই লোক তাকে এইভাবে ক্ষণে ক্ষণে লজ্জা ফেলে দেয়। অথৈ চাচার অগোচরে রুদ্রিকের পিঠে চিমটে কাটল।রুদ্রিক চাচার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির ভীতরে প্রবেশ করল।তারপর ড্রাইভারকে বাহির থেকে বাইক আনতে বলে দিলো।ড্রাইভার যেতেই রুদ্রিক হঠাৎই বলে উঠল,’ এইভাবে ইঁদুরের মতো আমায় চিমটে কাটলে আমার কিছুই হবে না।অবশ্য এরকম কিছু করার যদি উদ্দেশ্যেই থাকে।তাহলে সোঁজা কামড় দিয়ে দিও।এতে মাইন্ড করবো না আমি।চাইলে এখনিই চলো আমার রুমে।কেউ দেখবে না। এই সুযোগে তোমার এই আদুরে ঠোঁটজোড়ার একটু স্পর্শ পাবো আমি।’

অথৈয়ের শ্বাস ঘণ হয়ে আসল।কিসব বলছে রুদ্রিক।অথৈয়ের মন চাচ্ছে সে মাটি খুঁরে মাটির ভীতর ঢুকে যেতে।লোকটা এমন লাগামহীন কথাবার্তা বলে।অথৈকে লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠতে দেখে রুদ্রিক মুগ্ধ চোখে তা অবলোকন করল।এই মেয়েটাকে এতো আদুরে লাগে কেন তার?মন চায় আদুরে আদুরে ভড়িয়ে তুলতে মেয়েটাকে।রুদ্রিক জোড়ে শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিলো।নাহ,নিষিদ্ধ অনুভূতিদের নিয়ন্ত্রণ হারা করা যাবে না।রুদ্রিক কথা ঘুরানোর জন্যে বলে,’ অথৈ? প্রথমবার শশুড়বাড়ি এসে কেমন লাগছে?’

অথৈ চমকে তাকালো রুদ্রিকের দিকে।রুদ্রিক তাকে মির্জা ভিলায় নিয়ে এসেছে এটা ও ভাবতেই পারিনি।অথৈয়ের তনমনে তরতর করে নার্ভাসন্যাস এসে ভড় করল।ও উত্তিজিত কণ্ঠে বলে,’ আল্লাহ্? এটা কি করলেন আপনি?সবাই কি ভাববে রুদ্রিক?এইভাবে আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই বাড়িতে আনার আগেই এখানে চলে আসলাম।চলুন আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবেন।’

রুদ্রিক কোমল হাতে অথৈয়ের গাল স্পর্শ করল।উত্তেজিত অথৈকে শান্ত করার জন্যে বলে,’ রিলেক্স অথৈ। এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।আর তাছাড়া কে কি ভাবল এসব তোমার ভাবা লাগবে না।আর বাবা,বড়োভাইয়া,দাদু,ভাবি উনারা সবাই খুশি হবেন উলটো তোমাকে দেখে।’

অথৈ অসহায় গলায় বলে,’ কিন্তু তবুও এইভাবে হুট করে এখানে নিয়ে আসলেন।আমার ভীষণ লজ্জা লাগছে।’

রুদ্রিক বিরক্ত হলো অথৈয়ের কথায়।মেয়েটা বেশি বুঝে।রুদ্রিক গম্ভীর কণ্ঠে বলে,’ বেশি বুঝ তুমি।আর তাছাড়া আজ হোক আর কাল একদিন না একদিন তো রোজা ভাবির মতো এই বাড়িটা তোমারও হবে।’

অথৈ আরও কিছু বলবে তার আগেই রুদ্রিক ওকে থামিয়ে দিয়ে বলে,’ আর কোনো কথা নয় চলো।’

অথৈ চুপ হয়ে গেল।কি আর বলবে সে?মুখ ফুলিয়ে ফেলল।ওর নজর ঘুরিয়ে আশপাশ দেখল একটু।বাড়িটা বাহির থেকে ভীষণ সুন্দর দেখতে।বাড়ির বাগানে হরেকরকম ফুল গাছ।ঠিক যেমনটা রুদ্রিকদের কটেজটা ছিলো।ওর শাশুড়ি মায়ের যে ফুলের প্র‍তি ভীষণ ঝোক ছিলো তা বেশ বুঝতে পারছে অথৈ। তবে দূর থেকে দোলন চাঁপা ফুল গাছটা দেখে অথৈয়ের দৃষ্টিতে মুগ্ধতা ছড়িয়ে পরল।কি সুন্দর লাগছে দেখতে।সাদা সাদা দোলনচাঁপা ফুলগুলো কি সুন্দর স্নিগ্ধ আর কোমল লাগছে।অথৈয়ের একবার গিয়ে তা স্পর্শ করার অদম্য ইচ্ছা মনে জাগ্রত হলো।তবে তার আগেই রুদ্রিক ওর হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।তাই মনের ইচ্ছে মনের মাঝেই দমিয়ে রাখল অথৈকে।ভাবল সময় পেলে একা একা এসেই একবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখবে ফুলগুলোকে।সাদা ফুল বরাবরই ভীষণ পছন্দ অথৈয়ের।এদিকে রুদ্রিক বাড়ির কলিংবেল বাঁজিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো।একটু পরেই দরজা খোলার শব্দ হলো।অথৈ অস্থিরচিত্তে কাচুমাচু হয়ে আরও সেটে দাঁড়ালো রুদ্রিকের সাথে।তার ভীষণ ভয় লাগছে।এই প্রথম সে নিজ শশুড়বাড়িতে আসল। তাও হুট করে।চিন্তিত অথৈ জোড়োসোড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো চুপচাপ।

#চলবে__________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কাল দেয়নি তাই পুরো দু পর্ব একসাথে দিলাম।প্রতিদিন না দেওয়ার কারনে আমি দুঃখিত।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here