অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
৪৫|
পারফিউম হাতে বেলী দাঁড়িয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে। তার ছোটছোট চোখ দরজার দিক। তৃষ্ণা মাত্র রুমে ঢুকেই দরজা লক করে ফেলেছে। বাহির থেকে আবিদের আওয়াজ আসছে,
–” ভাই এটা মোটেও ঠিক না। ”
আয়ুশের আওয়াজ ও শোনা গেলো,
–” কার্ড না দিলে কিন্ত ভালো হচ্ছেনা। ”
শক্ত হয়ে থাকা বেলী, আঁড়চোখে হাতের পারফিউমের দিক তাকালো। এটা হঠাৎ পরে যায় ড্রেসিংটেবিল হতে। অনেকক্ষণ যাবত লক্ষ্য করেছে। তৃষ্ণা আসছে না দেখে, সে ভাবলো দ্রুত উঠিয়ে রেখে, আবার দ্রুত নিজ যায়গায় চলে আসবে। পারফিউম তুলতে গিয়েই, তৃষ্ণা চলে এসেছে। এবং সে বেলীর দিক ডান ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে। বেলী আরও শক্ত হয়ে রইলো। তৃষ্ণা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে হঠাৎ বলল,
–” গরম লাগছেনা প্রচন্ড? ”
বলতে বলতে সে পাঞ্জাবি খুলে ফেলল। তারপর পারফিউমটা বেলীর হাত থেকে নিয়ে, বেলীর সামনে ধপ মেরে সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়লো। পারফিউম খুলে সেটা স্প্রে করে বিছানায় ফেলে দিলো। সে আবার বেলীর দিক নজর দিল। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি’তে বেলী নেতিয়ে। ভয়ংকর ভাবে তার হাটু কাঁপুনি দিচ্ছে। বুক তীব্রতায় ধুকপুক করছে। এই অনুভূতি খুবই তীব্র। এতো তীব্র যে বেলী কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা। আঁড়চোখে তাকানোর সাহস ও আজ হচ্ছেনা। সে অনুভব করলো তৃষ্ণা তার বরাবর আসছে। তাড়াহুড়ো না। খুব ধীরে এগিয়ে আসছে। বেলী অজান্তে কিছুটা পেছালো। তার পা নিজ গতি অবলম্বন করছে। হঠাৎ থুতনিতে স্পর্শ পেয়ে বেলী চোখ আরও তীব্র ভাবে বুঝে ফেলল। তৃষ্ণা তার চেহরা উঁচু করে ধরেছে। পরপরই সে তৃষ্ণার ঠোঁটের ছোঁয়া পেলো তার নাকের বাম পাশে। নাকফুলের উপর। দ্রুত চোখ খুলতেই তার চোখ তৃষ্ণার চোখে আঁটকে। তার ঠোঁট এখনও বেলীর নাকফুল ছুঁয়ে। বেলী না পারছে চোখ ফেরাতে না পারছে বন্ধ করতে আর না পারছে স্বাস নিতে। তৃষ্ণা বেলীর গালে স্লাইড করছে। তার ধীর আওয়াজ,
–” জীবন এখন পরিপূর্ণ। অপরিপূর্ণতার সব পূর্নতা পেয়েছে। ”
তার ঠোঁট বেলীর মুখে বিচরণ করতে লাগলো। বেলী মুখ ঘোরাতে চাইলে, তৃষ্ণা তার দু’গাল আলতো ভাবে ধরে রাখে নিজের দিক। তৃষ্ণার ঠোঁট বেলীর ঠোঁট বরাবর এসে থেমে যায়। আবারও তার ধীর কন্ঠ,
–” নাকফুল পরলে তোকে এতটা আমার লাগবে জানলে, আরও বছর আগে পরিয়ে দিতাম। বউ রুপে এতো সুন্দর লাগবে জানলে আরও আগে বউ বানিয়ে ফেলতাম। ”
নিজের সাথে লড়াই করে বেলী চোখ খুলল। তার চাহনি তৃষ্ণার সাথে মিশতেই, তৃষ্ণার ঠোঁট তার ঠোঁটে দ্রুত স্পর্শ করে। বেলীর সাহস করে মাত্র খোলা চোখ জোড়া, আবারও বন্ধ হয়ে যায় তীব্র ভাবে। সে শুধু অনুভব করে তৃষ্ণার ঘনিষ্ঠ স্পর্শ, তার দ্রুততম শ্বাস, অস্থির আচরণ। বেলীর ঠোঁট হতে তৃষ্ণার ঠোঁট সরতেই, বেলী দ্রুত কিছুটা সরে দাঁড়ায়। তার কাঁপা-কাঁপি স্পষ্ট দেখার মতো। তার দ্রুত শ্বাস নেওয়ার প্রচেষ্টা। কিন্তু তৃষ্ণা তাকে সময় দেয়নি। হঠাৎ পাজাকোলে তুলে ফেলে। পরপরই বেলী নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলো। পরিহিত ওড়নাটাও সরে যাচ্ছে। বেলী আর নিতে না পেরে, ছোট কন্ঠে বলল,
–” আ..আপনি, ”
দেখা গেলো তৃষ্ণা তাকে থামিয়ে দিয়েছে। বড়বড় নিশ্বাস নিতে নিতে তার আওয়াজ,
–” অপেক্ষা করতে বলবিনা৷ প্লিজ। ”
বেলী আর কিছুই বলতে পারলো না। শক্ত মন নিয়ে সে তৃষ্ণার লালচে চোখের দিক তাকিয়ে। এমন অস্থির সে তৃষ্ণাকে কখনও দেখেনি। কখনও না। এ জেনো এক অন্য তৃষ্ণা। তৃষ্ণার উদাসীন ঠোঁট জোড়া বেলীর গলায় ঝড় বইয়ে দিচ্ছে। তার ব্যাকুল কন্ঠ,
–” বেলী তোকে অনেক সুন্দর লাগছে। অদ্ভুত সুন্দর। তোর পেট, তিল, গলা, ঘাড় ”
বলতে তার ঠোঁট সেখানে পৌঁছে যাচ্ছে। তীব্র অনুভুতির এই ঝড়ে বেলী নেতিয়ে। তৃষ্ণার অতিরিক্ত চাওয়ার পরিসীমা যে প্রচুর। তার এই চাওয়ার আকাঙ্খায় বেলী ডুবে। অনুভূতির সাগরে বেলী ভেসে। তার ভাবনাচিন্তা অনুভূতির সাথে মিশে।
ভোরের আজান শোনা যাচ্ছে স্পষ্ট। বারান্দার পর্দা সরিয়ে দেওয়ার ফলে, অন্ধকারে মিশ্রিত হালকা আলো ঘরে প্রবেশ করছে। বিছানায় ঘুমিয়ে রয়েছে তৃষ্ণা। তার উদোম শরীর দৃশ্যমান। আওলানো চুলগুলো দিয়ে কপাল ঢেকে। বেলী বেশকিছুক্ষন পর বাথরুম হতে বেরোলো। খুবই কষ্টে শাড়ি পরেছে সে। তার ধীরে চলাচল স্পষ্ট জাহির করছে, তার আপাতত হাঁটতে একদম ইচ্ছে হচ্ছেনা। তারপরও তার ওভাবে থাকতে আরও ইচ্ছে হচ্ছিলোনা। সারারাত তার ঘুম তো হয়নি। যাও একটু ঘুমাতে পেরেছিলো। পরপরই ঘুম ভেঙেছে আজানে৷ আজান বেলী সদা শুনতে পায়। আজানের জন্য তার ঘুম দ্রুত ভেঙে যায়৷ চুল মুছতে মুছতে সে ড্রেসিংের সামনে এলো। খুলে যাওয়া চুরি আর কানের দুল আবার পরে ফেলল। জয়া নিজে তাকে পরিয়ে দিয়েছে। বলেছে এগুলো নতুন বউয়ের চিহ্ন। পরে থাকতে হবে। চুল মুছা শেষ হতে তাওয়াল ভালোভাবে বারান্দায় মেলে দিলো। তারপর ধীরে তৃষ্ণার মাথার সাইডে বসলো। খুবই ক্লান্ত লাগছে তার। মাথাটা ধরে আসছে। ঘুমও আসছেনা। বাহিরে যাবে কিভাবে আজ? সেটাও ভাবার বিষয়। লজ্জায় বেলী আজ রুম ত্যাগ করতে পারবে নাকি সন্দেহ। ভাবনায় ছেঁদ পরে তৃষ্ণার স্পর্শে৷ সে হঠাৎ বেলীকে টেনে নিজের সাথে শুইয়ে দেয়। তার গভীর ঘুম কন্ঠ,
–” আমাকে পাগল করে দম নিবি। হু? ”
বলতে বলতে সে বেলীর কপালে চুমু খেলো। শক্ত করে বেলীর কোমর জড়িয়ে, মুখ তার বেলীর ভেঁজা চুল ছোঁয়াচ্ছে।
–” খিদে পেয়েছে? ”
বেলী অস্ফুট স্বরে বলল,
–” উঁহু। ”
–” পায়নি কেন? ”
বেলী চুপ রইলো। তৃষ্ণা নিভুনিভু চোখে আবারও তাকালো,
–” ঘুমা। ”
বলতে বলতে সে বেলীকে, আদুরে ভাবে নিজের বুকে টেনে নিলো। ধীরে বেলীর মাথায় হাত বোলাতে লাগলো। এবার সত্যি বেলীর ঘুম পাচ্ছে। চোখ গুলো বুঝে আসছে৷
দরজারর শব্দে বেলী লাফ মেরে উঠে দাঁড়ালো। তৃষ্ণা আরামে ঘুমোচ্ছে। বেলী লজ্জায় দরজা খুলতে যেতে পারছেনা। আবারও দরজার আওয়াজ আসলো। এবার বেলী দ্রুত শাড়ি ঠিক করল। চুল ঠিক করে মাথায় কাপড় দিল। তারপর ধীরে এগিয়ে গেলো দরজা খুলতে। অঞ্জলি দাঁড়িয়ে। হাতে নতুন শাড়ি। সে সেটা বেলীর হাতে দিলো। তারপর বেলীকে ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
–” ব্যাথা হচ্ছে তো। একটা পেইনকিলার নিতে হবে। ”
বেলী লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। অঞ্জলি হাসলো,
–” ওই বেয়াদব ঘুমাচ্ছে যে? ”
বেলী নিচু কন্ঠে বলল,
–” জ্বি। ”
–” ও উঠতে দেরি। মাত্র আটটা। ও উঠতে উঠতে বেলা শেষ। মা শা আল্লাহ। সুন্দর শাড়ি পরতে জানো দেখছি। যাও এটা পরে নেও। তারপর আমার রুমে নিয়ে যাবো। তোমার মাথা মালিশ করে দিবো দেখবে অনেকটা ভালো লাগবে। আররে চিন্তা করিয়ো না, তোমার ভাইয়া নেই। সে আবার আব্বুর সাথে বাজারে গিয়েছে। আজকে মেহমান আসবে প্রচুর। তুমি যাও। ”
বেলী শাড়ি নিয়ে আবার বাথরুম ঢুকলো। শাড়ি পরে বেরোতে অনেকক্ষন লেগে গেলো। বেরিয়ে দেখলো অঞ্জলি তখনও দাঁড়িয়ে তার জন্য। বেলী দ্রুত পায়ে শাড়ি গুঁছিয়ে রেখে, অঞ্জলির সাথে চলল। আজ তাকে অনেক ভুগতে হবে লজ্জা।
চলবে