অতিরিক্ত চাওয়া { ২ }
৪৭|
সকলে চলে যাচ্ছে। বেলীও যেতে নিচ্ছিলো, কিন্তু তৃষ্ণার আওয়াজ,
— তুই থাক। ‘
বেলী অসহায় চোখে দেখলো সবাই হাসাহাসি করে চলে যাচ্ছে।
বেলী ফিসফিসিয়ে বলল,
— প্লিজ। ‘
তৃষ্ণা যেমন শুনেও শুনলো না। সে বেশ আরামসে বেলীকে ঝাপটে ধরলো। রাতের উষ্ণতা তাদের ঘিরে। আকাশের চাঁদ যেমন তাদের দিক তাকিয়ে। গুড়িগুড়ি তারা গুলো আকাশ ভরে। দূরদূরান্তে অদ্ভুত ভালোলাগা ছড়িয়ে। বেলী আবারও ছোটার চেষ্টা করলো,
— ছাড়ুন মা ডেকেছিল। ‘
— ডাকেনি। ‘
— আমি শুনেছি। ‘
— আমি শুনিনি। ‘
বেলী ছোট শ্বাস ফেলল। এই লোক তাকে ছাড়বে না। সবাই ড্রয়িংরুমে আর তাকে ছাঁদে আটকে রাখা হয়েছে। মানে, বেলীকে লজ্জায় না ফেললে এই লোকের দিন চলেনা। অগ্যত তৃষ্ণার শীতল হাতের অনুভব, আর বাহারী আবহাওয়ায় বেলীর চোখ বুঝে আসছে। জীবন’টা কেমন অতি সুন্দর মনে হচ্ছে। ভাললাগা শরীর ছুঁয়ে দিচ্ছে। প্রশান্তিতে বুক ভরে আসছে। বেলীর ইচ্ছে করলো, ঘুরে তৃষ্ণাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে। অথচ, লজ্জায় সে পারছেনা। এই লোককে বেলী কতটা ভালবাসে, এই জীবনে তার আর বলা হবেনা। কারণ সে ভালবাসি কথাটা ঠোঁটে উচ্চারণ করতে পারেনা। অথচ লজ্জায় লাল-নীল হয়ে মনেমনে হাজার বার বলে ফেলে।
তৃষ্ণা নিজেই বেলীকে সামনে ঘুরিয়ে জড়িয়ে ধরলো। বেলীর চুলে হাত বোলাতে বোলাতে বলল,
— ছোট বয়সের তোকে বিয়ে করে ফেললাম। বড় হয়ে আবার আমাকে পছন্দ করা বন্ধ করে দিবিনা তো? দেখা যাবে বলবি, আপনি আমার টাইপ না। বা বলবি আপনার আর আমার বয়সে যাচ্ছেনা। ‘
আবেগি বেলীর চোখ পানিতে ভিজে আসলো। তৃষ্ণা সত্যি এমন ভাবে? সে কি জানে, তার মতো বেলী এই জীবনে আর কাউকে পাবেনা। সে কি জানে, তার মতো আর কেউ হতে পারবেনা। সে যে ভিন্ন। অতি ভিন্ন। বেলী তো অসাধারণ ভাগ্য নিয়ে এসেছে বিদায় তৃষ্ণাকে পাওয়া।
তৃষ্ণা বেলীর পিঠে আদুরে ভাবে থাপড়ে বলল,
— মজা করছি আমি। ‘
বেলী গভীর ভাবে তৃষ্ণার বুকে মুখ গুঁজে দিলো। মিনমিনে বলল,
— আপনার মতো কেউ নেই। ‘
তৃষ্ণা শুনেও না শোনার ভান করলো,
— কি বললি? ‘
বেলী চুপ মেরে গেলো। তৃষ্ণা শব্দ করে হেসে ফেলল।
দিনগুলো নদীর স্রোতের মতো চলে যেতে লাগলো। পরিবর্তনশীলতায় সব ছুঁয়ে দিতে লাগলো। চেনাজানা মানুষজন পরিবর্তনের খাতায় নাম উঠাতে ব্যস্ত। ভালবাসা গুলো কেমন ব্যস্ততায় ডুবে যেতে লাগলো। আর বেলী অদ্ভুত ভাবে অনুভূতির খেলায় বড় হতে লাগলো।
______ বছরের পর বছর _______
ধবধবে সাদা পর্দা ভেদ করে আসছে, সূর্যের কিরণ। মুহুর্তেই অন্ধকার রুম আলোতে ঝলমলে। বেলী চোখ পিটপিট করলো। সভাব বসে সে প্রতিদিনের মতো, বিছানায় হাত বোলালো। কারো উপস্থিতি না পেয়ে, চোখ খুলে ফেলল। তার মনে পড়লো তৃষ্ণা নেই। সে তিনদিন যাবত ঢাকা। সে খুবই ব্যস্ত। নিজের বউ থেকেও কাজ প্রিয়। অগ্যত বেলী ফোন খুঁজে কল লাগালো। দু তিনবার রিং হতেই, ওপাশ থেকে রিসিভ হলো। বেলী ভারী কন্ঠে প্রশ্ন করলো,
— সয়তান, আমার জামাইর ফোন কেন ধরছোয়া। ‘
আবিদ দুষ্টু স্বরে বলল,
— আহ, বেবি এই না কানেকশন। শ্বাস শুনেই আমায় চিনে ফেললে। তাই আমি বলি, ভাইকে ছেড়ে আমায় ধর। ‘
বেলী কানে ফোন গুঁজে ওয়াস্রুম ঢুকলো। ব্রাশে টুথপেষ্ট নিতে নিতে বলল,
— সে কই? ‘
— ভাই আকবরের সাথে কথা বলছে। ‘
— ফিরছেন কবে আপনারা জনাব? ‘
— আজ ফিরতে পারি। ‘
— শিয়র? ‘
— ৯৯ পারসেন্ট। ‘
বেলী তৎক্ষনাৎ খুশিতে গদগদ। সে কল কেঁটে দ্রুত রেডি হয়ে ড্রয়িংরুম পৌঁছাল। জয়া প্রশ্ন করছে,
— বেলী, তৃষের সাথে কথা হয়েছে? ‘
— না মা। আবিদ ভাইর সাথে হয়েছে। সে বলল আজ ফিরবে। ‘
— আলহামদুলিল্লাহ। আজ ভার্সিটি যাবিনা? ‘
বেলী জয়ার জন্য একগ্লাস পানি এগিয়ে দিলো,
— হ্যাঁ, এইতো যাচ্ছি। তৃষা উঠেছে? ‘
অঞ্জলি রান্নাঘর থেকে জবাব দিচ্ছে,
— উঠছে না। কতবার ডাকলাম। বলছে আজ ভাইরা আসবে স্কুল যাবোনা। ‘
— লিমন উঠেছে? ‘
— না, তার বাবার সাথে ঘুমুচ্ছে৷ ও উঠলে আমি কি আর রান্নাঘরে থাকতে পারতাম। সারারাত ঘুমোতে দেয়নি এভাবেই। বারবার প্রশ্ন করছে তৃষ বাবা কোথায়, তৃষ বাবা কোথায়। ওর আব্বু তৃষের সাথে কথা বলিয়েছে, তারপর সে ঘুমিয়েছে। তার আগ পর্যন্ত তো জ্বালাতন আছেই। ‘
বেলী সাইডব্যাগ নিয়ে বেরোতে বেরোতে বলল,
— আমি যাচ্ছি। তৃষাকে উঠিয়ে দিও ভাবী। ‘
ভার্সিটির সামনে পৌঁছাতেই বেলী স্পষ্ট শীলাকে দেখতে পাচ্ছে। সে তার বয়ফ্রেন্ড ওনিমের সাথে দাঁড়িয়ে। হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন শীলার এটা নতুন বয়ফ্রেন্ড। এইতো সাত মাস চলছে রিলশনের। এক্সের সাথে এক বড় ব্রেক-আপ এর পর এটা তার দ্বিতীয় রিলেশন।
বেলী টমটম এর ভাড়া মিটিয়ে তাদের দিক এগোলো। প্রতিদিনের মতো এবারও ওনিম বলছে,
— বড়লোকের বউ আজও টমটমে৷ ‘
বেলী চোখ পিটপিট করলো। প্রথম প্রথম তো তাকে গাড়ি করে আসতে হতো। তৃষ্ণার কথা ছিলো এমন, ‘ ড্রাইভার দিয়ে আসবে, আবার নিয়ে আসবে। কোথাও যাওয়া চলবেনা। ‘ অথচ বেলীর লজ্জা করতো। সকলেই ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকতো। তাই সে অতি বিনিময় করে তৃষ্ণাকে রাজি করিয়েছে। কিন্তু একা আসতে আবার তার ভয় হয়৷ কে না কে কখন পিছু নিয়ে ফেলে আল্লাহ মালুম। এভাবেও, এই নিয়ে দুই ছেলে’কে মারাত্মক পিটিয়েছে তৃষ্ণা। কারণ একটাই তারা বেলীকে প্রোপজ করেছে। শুধু প্রোপোজে থামেনা। পিছু ঘুরঘুর করে। মানে সবদিক দিয়ে বেলীর জ্বালা। এইযে এখন ভার্সিটির কিছুটা দূরে, দলবল নিয়ে দাঁড়িয়ে মাদবরের নাতি। এটাকে বেলী সরাসরি বলেছে সে বিবাহিত। অথচ এর কানে বাতাস যাচ্ছেই না। এটা একদম মানতে নারাজ। এটাও থামবে মা’র খেয়ে। উফ।
শীলা ধীর আওয়াজে বলল,
— এই বলদ নিশ্চয়ই জানে না তুই কার বউ। জানলে এই পাখা এভাবে উড়তো না। ‘
বেলী দ্রুত গেইট দিয়ে ঢুকছে,
— আজ সে আসছে। নিশ্চয়ই আমায় নিতে আসবে। এমন কিছু দেখলে আবারও আমাকে মাস খানিক ভার্সিটি আসতে দিবেনা। ‘
শীলা করুন চোখ করলো।
— আসলেই তোর অনেক কষ্ট। ‘
বেলী হেসে ফেলল। কষ্ট? সে তো সুখেই আছে।
চলবে
নাবিলা ইষ্ক
প্রমিজের জন্য বাঁধা পরে গেলাম। 😪 কারণ আজ স্যার পড়াতে এসেছেন। অনেক পড়া। তাই আমি লিখেছি এতটুকু দ্রুত। আবারও কাল পরশু আপলোড দেব। আর যারা আমার গল্পটা এখনও পড়ছেন, তাদের অপরিসীম ভালবাসা। সত্যি অপরিসীম ভালবাসা 🥺। আপনাদের মন আসলেই অনেক বড়। হ্যাঁ সত্যি।