আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ #পর্ব১৯ #Raiha_Zubair_Ripti

0
249

#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ
#পর্ব১৯
#Raiha_Zubair_Ripti

-“ আয়েশা তোমার মেয়ের পরিবর্তন গুলো কি লক্ষ করছো?

আয়েশা রহমান স্বামীর কথা শুনে কাপড় গুছানো বাদ দিয়ে বলে-
-“ কেমন পরিবর্তন?
-“ এই যে আজ ওর মধ্যে পরিবর্তন দেখলাম। হুটহাট রেগে যাচ্ছে।
-“ নিশ্চয়ই রাগার মতো কোনো ঘটনা ঘটেছে তাই রেগে গেছে।
-“ হতে পারে।
-“ আচ্ছা তুমি অধরার জন্য ছেলে দেখছো না কেনো? আমাদের তো বয়স কম হচ্ছে না।

আশরাফুল তপ্ত শ্বাস ফেললো।
-“ তোমার মেয়েকে তো চিনো। বিয়ের কথা বললে কিভাবে রেগে যায়।
-“ এভাবে জীবন চলে না। মেয়েটার কি সাধ-আহ্লাদ নেই মনে? ওর কি ইচ্ছে হয় না দ্বিতীয় বার আবার সব টা নতুন ভাবে শুরু করতে?
-“ থাক বাদ দাও। জোর করে কিছু করতে হবে না। ওর ইচ্ছে হলে ও নিজে থেকেই বলবে।
-“ শাফিন মা-রা গেছে এক বছর হয়ে গেলো। রঙিন শাড়ি তো দূরে থাক রঙিন কোনো পোষাকই তোমার মেয়ে পড়ে নি। সেই একই পোষাক সাদা শাড়ি। মানে সে বিধবা এটা তাকে প্রমান সহকারে মানুষ কে দেখাতে হবে?
-“ আস্তে বলো শুনতে পাবে তো।
-“ শুনতে পাক। তুমি ছেলে দেখবা ওর এবার বিয়েতে রাজি হতেই হবে।

কথাটা বলে আয়েশা রহমান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আশরাফুল রহমান চোখের চশমা টা খুলে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

অধরা মাথা চেপে বসে আছে। অযথা রাগ কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছে না। ফ্লোরে থাকা ফোনটার দিকে তাকিয়ে এখন নিজেকে কয়েকটা চড় দিতে ইচ্ছে করছে। নিজের রাগ কন্ট্রোল কেনো হচ্ছে না। অধরা ফ্লোর থেকে ফোনটা উঠিয়ে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে। চুল গুলো কে ঠিক করে বলে-
-“ অধরা কন্ট্রোল ইউর সেলফ। তুমি এমন নও। নিজেকে অন্য রূপে প্রকাশ করা মানায় না। দ্বিতীয় বার আর এমন ভুল করবে না,মাইন্ড ইট।

কথাটা বলে অধরা ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।

চিত্রা নিজের রুমে শুয়ে রিমি কে নিয়ে। এটা ওটা বলে রিমিকে হাসাচ্ছে। হঠাৎ মুঠোফোন টা বেজে উঠায় ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে তুষারের নম্বর। মুহুর্তে অজান্তে মুখের হাসি চওড়া হলো। ফোনটা রিসিভ করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে-
-“ অনেক দিন ধরে দেখি না তোমায় প্রেয়সী ভিডিও কল দিচ্ছি রিসিভ করো।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। কল তো দিয়েছে তাহলে ভিডিও কল দিলেই তো হতো।আর অনেক দিন ধরে দেখে না মানে আজ সকালেই তো এক সাথে ফিরলো তারা ঢাকা।
-“ আশ্চর্য কল তো দিয়েছেনই তাহলে একেবারে ভিডিও কলই দিতেন। অডিও কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিচ্ছেন কেনো?
-“ অনুমতি নেওয়া ভালো।
-“ ওরে আমার শ্রদ্ধেয় পুরুষ।
-“ শ্রদ্ধেয় সাথে শুদ্ধ পুরুষ ও বটে। কথা কম বলে ফোন দিচ্ছি রিসিভ করো।

কথাটা বলে তুষার ফোন কেটে দিয়ে ভিডিও কল দেয়। চিত্রা কল টা রিসিভ করে ফোনটা মুখের সামনে ধরে। তুষার চিত্রার ফেইস টা দেখে বুকে হাত দিয়ে বলে-
-“ হায় রে দেখো বুকের ধুকপুকানি টা তোমায় দেখা মাত্রই থেমে গেলো।

চিত্রা বিছানায় বসা রিমিকে কোলে নিয়ে বলে-
-“ একদম ফালতু কথা বলবেন না।
-“ আমি মোটেও ফালতু কথা বলি নি। সত্যি বুকটা লাফাচ্ছিল, হৃদপিণ্ডটা হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি মে’রে মে’রে বলছিল চিত্রা কে দেখবো। আর আমিও ভালো মানুষ তাই তার কথাটা রাখলাম।

তুষারের কথা শুনে চিত্রা হেসে উঠে। রিমি হাত বাড়িয়ে চিত্রার হাত থেকে ফোন টা নিয়ে নেয়। তুষারের কপালে দু ভাজ পড়ে।
-” এই যে পাকা বুড়ি ফোন নিলে কেনো,তোমার ফুপি কে দেখতে দাও মন প্রাণ ভরে।

চিত্রা রিমির থেকে ফোন টা নিয়ে ফের মুখের সামনে ধরে বলে-
-” দেখা শেষ?হৃদপিণ্ডটা এখন শান্ত হয়েছে?
-“ হ্যাঁ কিছুটা তবে এখনও হালকা লাফাচ্ছে।
-“এখনও লাফাচ্ছে কেনো?
-“ কারন চিত্রা কে তুষার ছুঁতে পারছে না তাই।
-“শুধু ছোঁয়াছুঁয়ির কথা বলেন।
-“বিয়ের পর প্রেম কাব্য ও শোনাবো।
-“ রাখেন ফোন।
-“ না রাখবো না।
-“ কেনো?
-“ ইচ্ছে করছে না তাই।
-“ কখন ইচ্ছে করবে?
-“ জানি না।
-“ তে আপনি কি জানেন।
-“ আপাতত চিত্রা ছাড়া কিছুই বুঝতেছি না।

চিত্রা চুপ রইলো। তুষারকে ভালো করে লক্ষ করতেই দেখলো লোকটা এই রাতে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে শরীরে একটা ব্লাক টি-শার্ট পড়ে।
-“ আপনি এই রাতে ছাঁদে কেনো?
-“ এমনি হাঁটতে আসছি।
-“ তো শীতের পোষাক কোথায় শরীরে?
-“ শীত নেই।
-“ চর্বি বেশি শরীরে।
-“ নো।
-“ তাহলে শীত কেনো করবে না। আমি রুমের মধ্যে তবুও দেখেন চাদর জড়িয়ে আছি।
-“ কারন তুমি চিত্রা আর আমি তুষার। আমার নামের মাঝেই আছে প্রুফ। আর শোনো একটা কথা।
-“ হু বলুন।
-“ কাল মা যাবে তোমাদের বাসায়।
-“ ফুপি আসবে দারুন হবে।
-“ হ্যাঁ তোমার আর আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলতে।
-“ আপনিও আসবেন?
-“ না তবে তুমি চাইলে আসবো।
-“ থাক আসা লাগবে না। বাই।
-“ আচ্ছা শুভ রাত্রি।

চিত্রা ফোন কেটে দেয়। বিয়ে কথাটা ভাবতেই শরীরে কেমন একটা অনুভূতি হলো। রিমিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়লো।

———————–

-“ সাহেল আমি চাইছি চিত্রা কে অতি শীগ্রই তুষারের বউ করে নিতে।

তানিয়া বেগমের কথা শুনে রাসেল আহমেদ সাহেল আহমেদ তানিয়ার দিকে তাকায়। রাফি অধৈর্য্য হয়ে বসে আছে কখন তার আর তৃষ্ণার বিয়ের কথা বলবে সেটা শোনার জন্য।
-“ আমাদের কোনো সমস্যা নেই আপা।

সাহেল আহমেদের কথা শুনে স্বস্তি পায় তানিয়া বেগম।
-“ তাহলে সামনের মাসে একটা ডেট ফিক্সড করি?
-“ যেটা ভালো হয় করো।
-“ সামনের মাসের পনেরো তারিখ তাহলে ফিক্সড করি। এর আগে তো ভোটাভুটি হবে। দশ তারিখের আগে ডেট ঠিক না করাই ভালো।পনেরো তারিখ ই ঠিক হবে।
-“ বেশ তবে তাই হোক।

চয়নিকা বেগম মিষ্টির প্লেট এনে তাদের সামনে রাখে। সবাই এক এক করে মিষ্টি নেয়। রাফি একটা মিষ্টি তুলে মুখে নিতে নিতে বলে-
-” ফুপি ব্রোর টা তো বললে এবার আমার টা তো বলো।

তানিয়া বেগম কেবলই মিষ্টি মুখে নিতে যাচ্ছিল। রাফির কথা শুনে মিষ্টি টা আর খাওয়া হলো না। হাতে রেখেই বলে-
-“ আপাতত বিয়ে হচ্ছে না তোর আর তৃষ্ণার।
মুহুর্তে রাফির মুখ চুপসে যায় বেলুনের মতো।
-“ বিয়ে হচ্ছে না মানে?
-“ মানে কয়েক মাস পর হবে। এরমধ্যে তুই প্রতিষ্ঠিত হ ভালো করে। তোর ফুপা এখনই তৃষ্ণা কে দিবে না।
-“ চিতা কে নিতে পারলে তৃষ্ণা কে দিতে পারবে না কেনো? দেখো ফুপি আমার বোন কে তোমার ছেলের জন্য নিতে হলে তোমার ছেলের বোন কেও আমায় দিতে হবে।

রাসেল আহমেদ ছেলের এমন কথা শুনে হা হয়ে যায়। ছেলেকে ঝাড়ি দিয়ে শুধায়-
-“ এই রাফি তোর ফুপি তো ঠিকই বলেছে। কয়েক মাস যাক তারপর না হয়…..
-“ তারপর এরপর কোনোপর ই আমি মানবো না বাবা। ব্রোর বিয়ে হলে আমি ও করবো বিয়ে।

রাফি তার বাবা কে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে কথাটা বলে উঠে। রিয়া রাফির কথা শুনে বলে-
-“ ভাইয়া এমন করছেন কেনো? সবাই তো বললো কয়েক মাস পর আপনার আর তৃষ্ণার বিয়ে হবে।
এক সাথে দু বিয়ে হলে তো আমরা মজাই করতে পারবো না। এর থেকে সময় নিয়ে হলে এনজয় করা যাবে অনেক বিয়েতে।
-“ না ভাবি বিয়েতে মজা করা লাগবে না। জাস্ট উকিল আনিয়ে বিয়ে পড়ায় দেন আমার আর তৃষ্ণার।

রাসেল আহমেদ এবার রেগে উঠলেন।
-“ এই তুই এতো বিয়ে পাগল হইছিস ক্যান?
-“ বিয়ের বয়স পাড় করছি বাবা বিয়ে পাগল হবো না? এটা কেমন কথা।
-“ মুখে লাগাম টান অসভ্য ছেলো।
-“ আমি সভ্যই বা ছিলাম কবে। ফুপি দেখো আমি একটা কথা বলছি তুমি ফুপা কে কনভিন্স করবে কিভাবে করবে তা জানি না বাট করবে। আমার তৃষ্ণার বিয়ে টা যেনো তাড়াতাড়ি মানে ব্রো এর বিয়ের কয়েক দিন পরই দিয়ে দেয়।

তানিয়া বেগম আহাম্মক হয়ে গেলো ভাইপোর কথা শুনে। এ ছেলে গুরুজন ও মানছে না।

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here