#এক_মুঠো_প্রণয়
#পর্ব_৩২
লেখনীতেঃ একান্তিকা নাথ
আজ মেহেরাজ বাসায়ই থেকে গেল। নাস্তা করে গোসল সেরে ভেজা চুল নিয়ে বের হয়ে জ্যোতির সম্মুখে এসে দাঁড়াল।পরনে কালো রংয়ের একটা টাউজার থাকলেও বক্ষ উম্মুক্ত।ফোঁটা ফোঁটা পানি এখনো লেপ্টে আছে ফর্সা, লোমহীন বুকে । জ্যোতি একনজর সেদিক পানে তাকিয়েই দ্রুত নজর সরাল৷ বিছানায় হেলান দেওয়া ছেড়ে সোজা হয়ে বসল এবার। মুখচোখ কুঁচকে ওয়াশরুমের দরজার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার তাকাল রুমের দরজার দিকে। মেহুকে ডাক দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই ইতস্থত করে মেহেরাজকএ বলে উঠল,
” আজ কি আপনি ছুটি নিয়েছেন মেহেরাজ ভাই?যাবেন না? ”
মেহেরাজ এবারে একদম খাটের কিনারায় ঘেষে দাঁড়াল। জ্যোতির দিক একনজর তাকিয়ে নিজের ভেজা চুলগুলোতে হাত দিয়ে ঝাড়া দিল৷ সঙ্গে সঙ্গেই পানির ছিটে এসে পড়ল জ্যোতির চোখ মুখে।জ্যোতি চোখ তুলে মেহেরাজের দিকে তাকাতেই মেহেরাজের ভ্রু উঁচু করল। জিজ্ঞেস করল,
” না গেলে তোর কোন অসুবিধা হবে? ”
জ্যোতি সূক্ষ্ম চাহনীতে চেয়ে শুধাল,
“অসুবিধা কেন হবে?আপনার বাসা আপনি থাকবেন। আমার কেন অসুবিধা হবে ? ”
মেহেরাজ ত্যাড়া কন্ঠে শুধাল,
” তাহলে এভাবে মুখচোখ কুঁচকে আছিস কেন?”
নিরস কন্ঠে উত্তর আসল,
” কিছু নয়। ”
মেহেরাজ তাকাল।গম্ভীর স্বরে বল উঠল,
” অসুবিধা না হলেও তুই যে খুশি নোস তা বুঝা যাচ্ছে জ্যোতি।”
” তেমন কিছু নয়। ”
মেহেরাজ ভ্রু নাচিয়ে শুধাল,
” তাহলে কেমন? তুই কি খুশি হবি খুব? ”
জ্যোতি উত্তর দিল না। চুপচাপ বসে থাকল আগের ন্যায়। মেহেরাজ এবারে দু পা এগিয়ে নিজের হাতে টিশার্টটা নিল। পরতে যাবে ঠিক তখনই জ্যোতি বলল,
” মেহু আপুকে ডেকে দিতে পারবেন? প্রয়োজন আছে একটু।”
মেহেরাজ কপাল কুঁচকাল। পরমুহুর্তেই কিছু একটা বুঝে উঠতেই কপালের ভাজ মিলিয়ে গেল।হাতের টিশার্টটা বিছানার এককোণে রেখে পা এগিয়ে জ্যোতির সামনে এসে দাঁড়াল। বেশ খানিকটক ঝুঁকে জ্যোতির মুখপানে তাকাল। ভেজা চুলগুলো জ্যোতির কপালে ঠেকাতেই দুয়েকফোঁটা পানি গড়িয়ে গেল জ্যোতির কপালে। ফিসফিসিয়ে বলল,
” মেহু কি তোকে ওয়াশরুম পর্যন্ত কোলে করে নিয়ে যেতে পারবে?মেহুর থেকে ভালো সাহায্য আমি করতে পারব।
বুঝলি?”
কথাটা বলেই একহাত জ্যোতির কোমড়ে নিয়ে ঠেকাল খুব দ্রুত। এক মুহুর্তও অপেক্ষা না করে জ্যোতির একটা হাত নিজের কাঁধে রাখল।তারপর হাত দিয়ে শক্ত করে কোমড় আঁকড়ে ধরে কোলে তুলল জ্যোতিকে।মুহুর্তেই ভেজা উম্মুক্ত বুকের শীতল স্পর্ষে কেঁপে উঠল জ্যোতি। শরীরের লোমকূপ জুড়ে শিহরন বইল খুব দ্রুত। বার কয়েক ঘনঘন শ্বাস টেনেই অস্বস্তিতে মুখ কালো করল। মেহেরাজ চাপা হাসল৷ পরমুহুর্তেই স্বাভাবিক মুখ করে মৃদু আওয়াজে বলে উঠল,
” কি আশ্চর্য! এমন করার কি আছে? কিছু করেছি আমি?”
জ্যোতি তাকাল না। বিনিময়ে কোন উত্তর ও দিল না৷ হাত চেপে ধরে রাখল মেহেরাজের কাঁধের অংশটুকু। কিয়ৎক্ষন পর ওয়াশরুমের দরজার সামনেই নামিয়ে দিল মেহেরাজ। ফিসফিসিয়ে বলল,
” বাকিটুকু তুই এই ভাঙ্গা পা নিয়েই যা। ”
জ্যোতি পাশ ফিরে তাকাতেই মেহেরাজের মুখে সূক্ষ্ম হাসির রেশ দেখতে পেল। মুহুর্তেই কেমন এক লজ্জ্বা আর অস্বস্তিময় অনুভূতি অনুভব হলো।এভাবে মেহেরাজের কোলে উঠে সাহায্য নেওয়াটা বোধহয় আসলে তার বোকামো হলো ভেবে মনে মনে বারকয়েক ঝেড়ে নিল নিজেকে। নিরস মুখে বলে উঠল,
” ধন্যবাদ মেহেরাজ ভাই। ”
মেহেরাজ তাকাল। অন্যমনস্ক ভাবে মুখ ফসকেই বলে উঠল,
” তোকেও ধন্যবাদ।”
জ্যোতি সূক্ষ্ম চাহনীতে চাইল। প্রশ্ন ছুড়ল ক্ষনিকেই,
” কেন? ”
মেহেরাজ অপ্রস্তুত হলো। সেই অপ্রস্তুত ভাব আড়াল করতেই গম্ভীর কন্ঠে শুধাল,
” কিছু নয়। তুই যা, আমি মেহুকে পাঠাচ্ছি।”
কথাটুকু বলেই আর দাঁড়াল না মেহেরাজ। বিছানার উপর থেকে নিজের টিশার্টটা নিয়ে দ্রুত গায়ে জড়াল।তারপর খুব দ্রুতই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।মেহুর রুমে গিয়ে মেহুকে জ্যোতির কাছে পাঠিয়েই বাসা ছেড়ে বের হলো।
.
মেহেরাজ বাসায় ফিরল কিছুটা সময় পরই৷জ্যোতিকে আর মেহুকে একসাথে বিছনায় বসে থাকতে দেখে মৃদু হাসল৷ এগিয়ে এসেই শুধাল,
” কি করছিস তোরা?”
মেহু হাসল ঠোঁট চওড়া করে৷ বলে উঠল খুব দ্রুত,
” তুমি না আজ বাসায় থাকছো ভাইয়া? তো হঠাৎ বেরিয়ে কোথায় গেলে?”
মেহেরাজ উত্তরে বলল,
” তেমন কোথাও নয়। এখানে একজন জুনিয়র ভাই আছে। তাই ভাবলাম, দেখা করে আসি। ”
” ভালো করেছো।”
মেহেরাজ হাসল বিনিময়ে। বলল,
” মেহু? বেলিফুলের মালা লাগবে তোর?”
মেহুর মুখ চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল এক মুহুর্তেই।চকচকে চোখে তাকিয়ে মুহুর্তেই বলে উঠল,
” কোথায়? দাও জলদি। ”
মেহেরাজ আবারও হাসল। একহাতে এগিয়ে দুটো বেলিফুলের মালা এগিয়ে দিল মেহুর দিকে। ঠোঁট চওড়া করে বলল,
” আমি জানি, আমার বোন বেলিফুলের মালা কতোটা পছন্দ করে। তবে এটা আমি নই, অন্য কেউ পাঠিয়েছে। ”
মেহু ভ্রু কুঁচকে নিল। প্রশ্ন ছুড়ল,
” কে সে?”
” তোর চেনা। কিন্তু সে তার পরিচয় বলতে নিষেধ করেছে। ”
মেহু থমকাল। কিছু বলতে গিয়েও বলল না। আবার পরমুহুর্তেই হেসে বলে উঠল,
” তাকে আমার তরফ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিও ভাইয়া। সত্যিই অনেক পছন্দ করি। তাই পরিচয় না জানালেও নিয়ে নিচ্ছি। ”
কথাটুকু বলেই মেহু হেসে বেরিয়ে গেল ঘর ছেড়ে। বিনিময়ে মেহেরাজ ও হাসল। পরক্ষনে মুখ ফিরিয়ে জ্যোতির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকাল। নিরস গলায় বলে উঠল,
” কতদিন হলো চুল আঁছড়াস না তুই?কি অগোছাল হয়ে আছে তোর চুল!”
জ্যোতি অবাক হলো।কিছুটা সময় আগেই চুল বেঁধেছে সে। খোপা করে মাথায় ওড়না দিয়ে বসে ছিল এতক্ষন।হঠাৎ এমন প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“অগোছাল? কিছুক্ষন আগেই চুল বেঁধেছি মেহেরাজ ভাই।”
মেহেরাজ এগিয়ে এল। হাত দিয়ে জ্যোতির মাথা থেকে ওড়নাটা সরিয়েই মুখ চোখ কুঁচকে নিল। এমন ভাব করল যেন জ্যোতির চুলের অবস্থা বিচ্ছিরি থেকেও বিচ্ছিরি অবস্থা। চাপাস্বরে বলল,
” তোর চুল দেখে তো তা মনে হচ্ছে না তা। ”
জ্যোতি পুনরায় অবাক হলো। হাত দিয়ে চুলে হাত রাখল মুহুর্তেই। খোঁপা করা চুলগুলো মোটেও তার কাছে অগোছাল বোধ হলো না। স্পষ্ট স্বরে বলল,
“আপনি কি মিথ্যে বলছেন মেহেরাজ ভাই?”
মেহেরাজ মুখ চোখ গম্ভীর করল। হাত দিয়ে জ্যোতির খোঁপা করা চুল খুলে দিতে দিতেই ধমকের সুরে বলে উঠল,
” তোর কি মনে হচ্ছে? আমি মিথ্যে কথা বলি? আমি মিথ্যুক?”
” তা বলিনি। ”
আবারো ধমকের সুরে বলল মেহেরাজ,
” তাহলে কি বলেছিস? ”
জ্যোতি উত্তর দিল না এবার। থমথমে মুখ করে বসে থাকল কেবল। মেহেরাজ অন্যপাশ ফিরে আড়ালে হাসল। বুক টানটান করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়েই আদেশের সুরে বলল,
” সোজা হয়ে বস। তোর চুল সুন্দর করে বেঁধে দিব। ”
জ্যোতি যেমন ভাবে বসা তেমন ভাবেই থাকল। কয়েক পলক তাকিয়ে ছোট্ট শ্বাস ফেলে বলল,
” আমি পারব মেহেরাজ ভাই।আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।”
মেহেরাজ শুনল না কথাটা।কড়া স্বরে বলে উঠল,
” তোকে কি জিজ্ঞেস করেছি তুই পারবি কি পারবি না? ”
কথাটুকু বলেই জ্যোতির পাশেই বিছানায় বসল মেহেরাজ। হাত এগিয়ে জ্যোতির ছেড়ে দেওয়া চুলগুলোতে স্পর্শ করাল।চিরুনি দিয়ে না আঁচড়িয়েই অদক্ষ হাতে বেনুনি গাঁথল অতি সাবধানে। তারপর বেনুনির শেষ প্রান্তের দিকে পেঁচিয়ে দিল একটা বেলি ফুলের মালা। অস্ফুট স্বরে বলল,
” পার্ফেক্ট! ”
কথাটা বলে উঠে যেতে নিয়েই আবার বসে গেল। জ্যোতির কানের কাছে মুখ নিয়েই ভরাট কন্ঠে বলল,
” এই মালাটা আমার আনা। চুল বাঁধা যেমনই হোক, মালাটা যদি খুলে নিয়েছিস তো ঠাস করে দোতালা থেকে নিচে ফেলে দিয়ে হাত, পা, কোমড় ভাঙ্গার ব্যবস্থা করে দেব কিন্তু ফ্রিতে।”
জ্যোতি নিশ্চুপ।চোখজোড়া বড় করে মেহেরাজের দিকে তাকাতেই মেহেরাজ বাঁকা হাসল। বসা ছেড়ে উঠে যেতেই চোখ পড়ল জ্যোতির পায়ে।তার দেওয়া নুপূর নেই দেখেই ভ্রু উঁচু করল সঙ্গে সঙ্গে। গম্ভীর স্বরে বলল,
” তোর পায়ে নুপূর নেই কেন জ্যোতি? ”
জ্যোতি অবাক হলো আবারও। নুপূর তো তার পায়ে এতদিনও ছিল না।বোধহয় মেহেরাজ খেয়াল করেনি এতগুলো দিন। পরমুহুর্তেই মনে পড়ল মেহেরাজের দেওয়া নুপূরের কথা।নুপূর গুলো সেদিনই সযত্নে তুলে রেখেছিল সে যেদিন মেহেরাজ পরিয়ে দিয়ে এসেছিল। শুধু নুপূর নয়, মেহেরাজের দেওয়া প্রত্যেকটা উপহারই সে তুলে রাখে। প্রিয় মানুষের উপহার ব্যবহার করলে যদি ফুরিয়ে যায়? তার থেকে ব্যবহার না করে সযত্নে, গোপনে তুলে রাখা ভালো নয়? অস্ফুট স্বরে বলল,
” নু্ ্পূর?”
মেহেরাজের কন্ঠ এবার কিছুটা দৃঢ় শোনাল। বলল,
” হ্যাঁ, শুনতে পাস না? ”
জ্যোতি গলা ঝাড়ল। তার পায়ে যে নুপূর নেই এটা বোধহয় মেহরাজ এতগুলো দিনে খেয়াল করেনি। তাই বলল,
” নুপূর তো আমি এতগুলো দিনও পরিনি । এই বাসায় আসার পরও ছিল না। আপনি বোধ হয় খেয়াল করেননি!”
মেহেরাজ মুখ টানটান হলো মুহুর্তেই। চোয়াল শক্ত হলো।দাঁতে দাঁত চেপে শীতল কন্ঠে রাগ নিয়ে বলে উঠল,
” তো ফেলে দিয়েছিস ওগুলো?আমি দিয়েছি বলেই তো খুলে নিয়েছিস তাই না? ”
জ্যোতি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজাল।উত্তর দিল,
“ফেলে দিইনি।”
মেহেরাজ এবারেও রাগ ঝেড়ে বলে উঠল,
” তো?যত্ন করে নিজের সাথে সবসময়ের জন্য রেখেও তো দিসনি। তার থেকে ফেলে দিতি।”
” ড্রয়ারে রেখেছিলাম। আসার সময় তো রিতুরা ব্যাগ গুঁছিয়ে দিয়েছিল। তাই আর নেওয়া হয়নি। ”
দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” আমি কি বলেছিলাম ড্রয়ারে তুলে রাখতে তোকে?”
জ্যোতি গলা ঝাড়ল। স্বাভাবিক স্বরে বলতে লাগল,
” আমার মন বলেছিল। চোখের সামনে তো আমাদের জীবন থেকে অনেকেই ফুরিয়ে যায়, অনেকেই হারিয়ে যায়। তাদের উপহার গুলো নাহয় ফুরিয়ে নাই যাক? তাই রেখে দিয়েছি।ফুরিয়ে গেলে যদি দ্বিতীয়বার না পাই?শুধু আপনার ক্ষেত্রে নয়, দাদীর দেওয়া বাটন ফোনটাও তুলে রেখেছি আমি। ”
মেহেরাজের মুখের টানটান ভাবটা এবার মিলিয়ে গেল। রাগটা এবার কমে আসল। ঠোঁট গোল করে লম্বা শ্বাস ফেলে আর কিছু না বলেই হঠাৎ বেরিয়ে গেল।
.
মেহু মন খারাপের সময়টায় শাড়ি পরতে ভালোবাসে। ছোটবেলা থেকে মা বাবা ছাড়া বড় হওয়া মেয়ে হিসেবে অধিকাংশ সময়ই তাকে একা কাঁটাতে হয়েছে। সে একাকীত্বতেই মূলত সেই শাড়ি আর সাঁজগোজকে সঙ্গী করেছিল। আজও ব্যাতিক্রম হলো না। পরনে লাল টকটকে শাড়ি, চোখে গাঢ় কালো কাজল আর চুলে বেলিফুলের মালা। হাত ভর্তি লাল আর কালো রাঙ্গা কাঁচের চুড়ি। সে চুড়িরই রিনিঝিনি আওয়াজ করল জানালার ধারে বসে। অপর প্রান্তের জানালায় আজও ছোট বাচ্চাটা ঝুলে আছে।বয়স হয়তো আনুমানিক চার বা পাঁচবছর হবে। ড্যাবড্যাব করে তার দিকে তাকিয়েই আধো সুরে বলল,
” তুমি মেহু? ”
আকস্মিক মিষ্টি গলায় মেহু চমকাল। একনজর তাকিয়েই উত্তরে বলল,
” হ্যাঁ, তুমি কি করে জানলে? ”
বাচ্চাটা গম্ভীর ভাবে চাইল। বিনিময়ে বলল,
” বলা যাবে না। ”
মেহু পুনরায় চমকাল। এইটুকু বাচ্চার এমন গম্ভীর উত্তরে কিঞ্চিৎ বিস্মিত হলেও পরমুহুর্তেই বলল,
” তোমার নাম?”
” সানশাইন। ”
মেহু ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ভাবল। সাইনশাইন? সুন্দর নাম। পরমুহুর্তেই বলল,
” কে রাখল এই নাম?”
” মেঘ। ”
ছোট বাচ্চাটার কন্ঠে মেঘ শব্দটা যতোটা দৃঢ় শোনাল ততোটাই দৃঢ় ভাবে মেহুর মস্তিষ্কে পৌঁছাল। অস্ফুট স্বরে ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,
” মে ্ ঘ?”
বাচ্চাটা এবারে উত্তর দিল না। মেহু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করল বাচ্চাটাকে। চেহারাটা সেদিনকার সে যুবকের মতোই দেখতে। যুবকটির নাম আবিদ। ডাকনাম মেঘ। যুবকটির সাথে তার পরিচয় হয়েছিল কোন এক গ্রন্থাগারে সেই কিশোরী বয়সে।ছেলেটি তখন মেডিকেলে পড়ুয়া ছাত্র।তারপরের বার পরিচয় হয়েছিল একদম নতুনভাবে। তারই বান্ধবীর প্রেমিকের বন্ধু হিসেবে। বান্ধবী আর বান্ধবীর প্রেমিক প্রেমে মত্ত হতেই সে আর আবিদ নামক লোকটা অন্যপ্রান্তে এসে বসেছিল। তখন থেকেই টুকটাক কথোপকোথন, গল্প।প্রায়সই ঝগড়া আর একে অপরের পেঁছনে লেগে থাকা। কখনো সরাসরি দেখা হলে মেহুর চুল টানা অথবা পেঁছনে থেকেই মাথায় চাটি মারা। একবার বাদাম খাওয়ার পর বাদামের খোসা গুলো আড়াল করেই মেহুর ব্যাগে রেখে দিয়েছিল যুবকটি। মেহু সে বিষয়টা টের পেল একেবারে বাসায় পৌঁছে।আরো হরেক রকম কাহিনী আছে তাদের। এত এত কাহিনীর পরই ইন্টার্নী শেষে হঠাৎই আকস্মিকভাবে ছেলেটা হারিয়ে যায়।এরপর না তো মেহু কখনো খোঁজ করেছে ছেলেটার, আর না তো ছেলেটাও কোন খোঁজ নিয়েছে তার। মেহু ঠোঁট চওড়া করে কিঞ্চিৎ হাসল৷ বলল,
” মেঘ তোমার কি হয়? ”
বাচ্চাটা উত্তর দেওয়ার আগেই সেখানে উপস্থিত হলো মেঘ নামক যুবকটি। বলল,
” মেঘ ওর কি হয় তুমি জেনে কি করবে?”
মেহু চোখ তুলে চাইল। আকস্মিক চমকালেও ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
” আমি অতো বোকা নাকি?ও না বললেও আমি জানি ও আপনার কি হয়।”
যুবকটি ভ্রু নাচিয়ে শুধাল,
” কি হয়?”
মেহু উত্তরে বলল,
” ছেলে।বাবার সাথে ছেলের নাম কিন্তু দারুণ মানিয়েছে। মেঘ- রোদ। সুন্দর না?”
মেঘ হাসল। দাম্ভিক স্বরে বুক টানটান করে বলল,
” সুন্দর না হলে কি করে হয়?আমিই তো রাখলাম নামটা। তাই না?”
মেহু মাথা নাড়াল। বলল,
” চার বছর আগে হঠাৎ উধাও হয়ে গেলেন কেন? ভুল না হলে আপনার বাচ্চার বয়স পাঁচ বছর তো হবে।রাইট? আপনি আপনার বাচ্চার কথাটা লুকালেন কেন? আর বাচ্চার মা কোথায়? আলাপ করিয়ে দিন । আমি আপনার নামে কিছু সুবক্তব্য দিই। ”
মেঘ ত্যাড়া কন্ঠে শুধাল,
” বাচ্চার মাকে দিয়ে তুমি কি করবে?”
” আপনার মাথা করব। ডেকে দিন না। ”
” বাচ্চার মা পাশে রুমে। ”
মেহু ভ্রু কুঁচকাল। বলল,
” পাশের রুমে কেন থাকবে? হিসেব মতো বর বউ একরুমে থাকবেন না আপনারা? ”
মেঘ নামক যুবকটি হঠাৎই কেঁশে উঠল। গলা ঝেড়ে বলল,
” সেসব বাদ দাও।তুমি বিয়ে করলে না কেন? মাঝখানে এতবছর পেরিয়ে গেল। ”
মেহু নিরস গলায় বলল,
” সুপাত্র পাচ্ছি না। ”
মেঘ নামক যুবকটি মাথা নাড়াল৷ ছোট বাচ্চাটাকে কোলে তুলে নিয়ে মুখে চমৎকার হাসি ঝুলিয়ে বলল,
” তাহলে খুঁজে নাও। পেয়ে গেলে বিয়েটা করে বাচ্চাকাচ্চার মা হয়ে যাও দ্রুত।”
কথাটুকু বলেই পেঁছন ঘুরল। কিয়ৎক্ষনের মধ্যে চলেও গেল। মেহু তাকিয়ে থাকল। আসলেই কি সুপাত্র পেলে বিয়েটা করে নিতে পারবে সে? সাঈদ নামক ব্যাক্তিকে ভুলে অন্য কারো নামে নিজের জীবন লিখে দিতে পারবে? আসলেই কি পারবে? বিষয়টা কি এতটুকুই সহজ?
#চলবে…
[ দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত। আবারো জানাচ্ছি, পরীক্ষা তাই মূলত গল্প দিত দেরি হচ্ছে।২২ তারিখ শেষ হয়ে যাবে পরীক্ষা।যারা জানেন না, রেগে যাবেন না দয়া করে।কেমন হয়েছে জানাবেন। আজকের পর্ব অগোছাল, ভুলে ভরা হতে পারে। ক্ষমা করবেন।]
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/