Mr_Calculus (পর্ব – ১)

0
1069

#Mr_Calculus (পর্ব – ১)

পুষ্প স্কুটি নিয়ে তার ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে থামল। সেকেন্ড ইয়ারের সবচেয়ে দুষ্টু ছেলে-মেয়ের দলটা সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। ক্যাম্পাসে ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাস শুরু হয়েছে। সিনিয়ররা নতুনদের সুযোগ বুঝে র‍্যাগ দিচ্ছে। সামনে দাঁড়ানো ছেলে-মেয়েগুলো সেই দুরভিসন্ধি নিয়েই এখানে জটলা পাকিয়ে বসে আছে বলে মনে হচ্ছে। পুষ্প স্কুটি থেকে নেমে হেলমেট খুলে রেখে সামনে দাঁড়ানো ছেলে-মেয়েগুলোর দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। সবাই ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। পুষ্প এমনিতেই সুন্দরী, স্মার্ট তবে আজ তাকে শাড়িতে অনেক বেশিই সুন্দর লাগছে। ঠিক তখনই পুষ্পর সামনে দিয়ে একটা ছেলে কোনো দিকে না তাকিয়ে হনহন করে হেঁটে যাচ্ছিল। পুষ্প তাকে থামাল-

“এই ছেলে, দাঁড়াও।”

ছেলেটা থমকে দাঁড়িয়ে গেল। পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলল- আমাকে বলছেন?

-আশ্চর্য, তোমাকেই তো বলছি। আদব কায়দা কী কিছুই শেখোনি? শিক্ষকের সামনে দিয়ে এভাবে হনহনিয়ে হেঁটে যাচ্ছ?

রিফাত অপ্রস্তুত হলো। সে সামনে দাঁড়ানো নিজেকে শিক্ষক বলে দাবি করা মেয়েটাকে ভালো করে খেয়াল করল। হালকা বেগুনী রঙের শাড়ি পরা, রেশমের মত সিল্কি খোলা চুল কাধ থেকে সামান্য নেমে এসেছে। ডান হাতে credence এর ঘড়ি, সাথে ম্যাচিং ব্যাগ। প্রথম দর্শনেই আটকে যাবার মত। কিন্তু ভার্সিটির শিক্ষক এত পিচ্চি! চোখের কালো ফ্রেমের বেমানান চশমাটার কারণে হয়ত একে শিক্ষক বলা যায় নয়ত একে বড়জোর থার্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট হিসেবে মানায়। আজকাল মেয়েরা ফিটনেস সম্পর্কে এত বেশি সচেতন যে, মনের মত এদের বয়সও বোঝার কোনো কায়দা নেই! তাই সে বিনয়ের সাথে বলল- সরি ম্যাম, স্লামালেকুম।

-“স্লামালেকুম!!!” এটা কী?এইরকম সালাম কোথা থেকে শিখেছ? সঠিক উচ্চারণে সালাম দাও।

-আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

-হুম। ফার্স্ট ইয়ার? দেখে তো মনে হচ্ছে পড়াশোনা শেষ করে ফেলেছ। এই বুড়ো বয়সে আবার পড়তে এসেছ কেন?

-ম্যাম আপনি আসলে…

পুষ্প রিফাতের কথা শেষ করতে দিল না। বলল- ভুল করছি? একে তো আদব-কায়দা বাসায় রেখে বুড়ো বয়সে পড়তে এসেছ তার উপর আমারই ভুল ধরছ! নাম কী তোমার?

-রিফাত। ম্যাম আপনি তো…

-কী? আমি কী?

-ম্যাম আমি এখানে…

-পড়তে এসেছ। পড়তেই যখন এসেছ সাথে করে আদব-কায়দাটা নিয়ে আসোনি কেন? ওটা কী ট্রাংকে ভরে খাটের তলায় রেখে দেয়ার জিনিস?

এই জায়গায় এসে রিফাত অধৈর্য্য হয়ে গেল। কী শুরু করল এই পিচ্চি? তাকে কিছু বলতে তো দিবে? নিজেই প্রশ্ন করছে আবার নিজেই নিজের মত করে উত্তর সাজিয়ে নিচ্ছে এটা কোনো কথা? ভার্সিটির শিক্ষক হয়ে এত immature আচরণ! সে আর কোনো কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।

তখন সামনে দাঁড়ানো ছেলে-মেয়েগুলো এগিয়ে এলো। তাদের মধ্যে লম্বা চুলের একটা ছেলে বলল- wow Ma’am, looking gorgeous.

পুষ্প তখন হেসে বলল- thank you.

হাতে কালো রঙের চুড়ি টাইপ কিছু জিনিস পরা আরেকটা ছেলে বলে উঠল “ম্যাম আপনাকে দেখলে আমার আফসোস হয়… শিক্ষক না হয়ে ছাত্র হবার আফসোস…”

পুষ্প এবারও হেসে গড়িয়ে গেল। বলল- ছেলে এমন কথা বলো না যেটাতে শিক্ষকেরও একই আফসোস হতে পারে।

ছেলেমেয়েগুলো তখন সবাই হাসতে লাগল। রিফাত এসব দেখে ভাবছে “আশ্চর্য, আমাকে আদব কায়দা শেখাচ্ছে অথচ এরা এসব কী করছে!” এমন সময় লম্বা চুলের ছেলেটা রিফাতের দিকে তাকিয়ে পুষ্পকে বলল-

-ম্যাম কোন সমস্যা?

-না, তেমন কিছু না… ফার্স্ট ইয়ার তো, ভার্সিটির আদব কায়দা শেখানো দরকার।

হাতে চুড়ি পরা ছেলেটা রিফাতকে উদ্দেশ্য করে বলল- কী ছোট ভাই, ভার্সিটি এসেই নিজেকে উড়োজাহাজ ভাবতে শুরু করে দিয়েছ? জানো উনি কে? উনি এই ডিপার্টমেন্টের হেড।

রিফাত বিস্ময়ের সাথে বলল- ডিপার্টমেন্ট হেড! যেহেতু তারা ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে তাই জিজ্ঞেস করল- ম্যাথ ডিপার্টমেন্টের হেড?

ছেলেটা বলল- হুম। পীথাগোরাসের জটিল উপপাদ্য ইনি। যার সৌন্দর্য কোনো সমীকরণে আনা যায় না। ঐ যে মহসীন হল দেখতে পাচ্ছ? ওখানে ৪২০ নাম্বার রুমে আজ সকাল থেকে নবীনদের বরণ করার জন্য প্রীতি অনুষ্ঠান চলছে। তারপর রিফাতের কাধে হাত রেখে বলল- চলো সেখানে, তোমাকেও অংশগ্রহণ করতে হবে।

-ভাইয়া আমাকে যদি দয়া করে একটু ৫টা মিনিট সময় দিতেন… আমি শুধু একজন স্যারের সঙ্গে দেখা করে আসব?

-কোন স্যার?

-ইয়ে… নামটা তো ভুলে গেলাম… বুঝতেই পারছেন আমি নতুন তাই স্যারের নাম এখনো আয়ত্তে আসেনি। স্যার বলেছিল ডিপার্টমেন্টে এসে যেন ওনাকে ফোন দেই তাহলেই হবে।

একটা মেয়ে তখন বলে উঠল- গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতে গিয়েও কী বলো যে, জাআয়ায়া…ন তোমার নামটা যেন কি….?

এটা শুনে সবাই হা হা হা করে হাসতে লাগল।

রিফাত মেয়েটাকে ভালো করে খেয়াল করল, সে কোন ব্যাখ্যায় না গিয়ে বলল- আপনারা যদি অনুমতি দেন তো আমি যাই? আপনারা তো এখানেই আছেন… আমাকে ধোলাই করার… না মানে আদব শেখানোর অনেক সুযোগ পাবেন।

ঠিক আছে যাও। আমরা এখানেই আছি।

রিফাত তখন পুষ্পর দিকে ভালো করে তাকাল তারপর বলল- ম্যাম আমি আসলেই দুঃখিত। আর কখনো ভুল হবে না। ম্যাম, আপনার নামটা জানা হয়নি… যদি জানাতেন?

পুষ্প বলল- “সৈয়দা দুরদানা মুজতাবির উলফাত আরা”।

রিফাত চোখ বড় বড় করে ফেলল। তারপর মুচকি হেসে বলল- সুন্দর নাম।

-কি নাম বলেছি বলো?

রিফাত এই প্রশ্নটাই আশা করেছিল। সে ঝটপট উত্তর দিল “দুর্দান্ত মুজাহিদ উল্লুকারা”

পুষ্পর চোখ মুখ লাল হয়ে গেল। সে বুঝতে পেরেছে এই ছেলে দেখতে যেমনই হোক ভয়ংকর বুদ্ধি রাখে মাথায়। সে রাগের সাথে বলল- ভেরি স্মার্ট! তবে শিক্ষকের সাথে স্মার্টনেস নয় আদব দেখাতে হয়। আশা করছি সেটা তোমাকে এই ক্যাম্পাস ভালো করে শেখাতে পারবে। তারপর ছেলেমেদের দলটাকে বলল- ঘুরে এলে ভালো করে একে শিখিয়ে পড়িয়ে দেবে সব কিছু। রিফাত ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেল।

প্রফেসর আমানত উল্লাহ খানের অফিস কক্ষে বসে আছে রিফাত। প্রফেসর সাহেব হাতের কাজটা শেষ করে বলল-

-তুমি এতক্ষণে এসেছ?

-তার আগে বল তোমার ডিপার্টমেন্টের হেড কী দুইটা?

-ডিপার্টমেন্ট হেড আবার দুইটা কী করে হয়!

-তাহলে হেড হিসেবে তোমার চাকরি চলে গেছে! কবে হল এসব? কিছুই তো জানালে না!

-কী যা তা বলছ এসব?

-যা তা বলব কেন? যা শুনে এসেছি তাই বলছি।

আমানত উল্লাহ খান চোখ সরু করে বললেন- কী শুনে এসেছ?

-মাত্রই নিচে একটা মেয়ে নিজেকে এই ডিপার্টমেন্টের হেড বলে আমার কাছে দাবি করেছে এবং এখানকার ছাত্রছাত্রীরাও একই কথা বলেছে।

-বল কী! কোন মেয়ে?

-নিজের নাম সে বলেনি, তবে… রিফাত তখন উঠে গিয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে বাইরে উঁকি দিয়ে বলল- ঐ তো, ঐ মেয়েটা।

আমানত উল্লাহ খান উঠে গিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখল সেকেন্ড ইয়ারের ছেলেমেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে। বলল- এরা তো সব সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে। কোন মেয়েটা তোমাকে এসব বলেছে?

-ঐ যে শাড়ি পরা যে মেয়েটা।

-আরে ও তো পুষ্প, স্টুডেন্ট। ও কেন এসব বলবে?

-বলেছে কারণ ও ভেবেছে আমি এখানে নতুন ভর্তি হয়েছি, তাই আমাকে একটু র‍্যাগ দেয়া দরকার।

আমানত উল্লাহ খান হো হো করে হেসে ফেললেন। বললেন- এই মেয়েটা খুব দস্যি। কিন্তু তুমি ওদের বলনি যে, তুমি জানো ডিপার্টমেন্ট হেড কে?

-নাহ। বাচ্চা মানুষ… মজা নিতে চাচ্ছিল সেটা নষ্ট হতে দিতে ইচ্ছে করছিল না।

-আচ্ছা… কিন্তু তোমার মত একটা দামড়া ছেলেকে ফার্স্ট ইয়ার কী করে ভাবল?

-তাহলে বোঝ তোমার স্টুডেন্টরা কী পরিমাণ ষ্টুপিড!

-হা হা হা…

-বাবা, আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।

-কী সিদ্ধান্ত?

-“বিয়ে করব।”

আমানত উল্লাহ খান চশমার ফাক দিয়ে চোখ উঁচু করে ছেলের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর বলল- বাহ্… গুড, সিদ্ধান্তটা কী পুষ্পকে দেখে নিয়েছ?

-হ্যাঁ। আর একটা কথা…

-কী?

-আমি তোমার প্রস্তাবে রাজি। এখানে প্রফেসর হিসেবে জয়েন করতে চাই, আজই। তবে খুব বেশি দিনের জন্য না। মাত্র কিছুদিনের জন্য, গেস্ট টিচার হিসেবে।

-তুমি তাহলে ছাত্রীর সাথে ফ্লার্ট করার আশায় এখানে জয়েন করতে চাইছ?

-সেটা কী আমাকে “হ্যাঁ” বলেই বোঝাতে হবে?

-না। তবে ডিপার্টমেন্ট হেড হিসেবে আমি আমার দায়িত্বশীলতা থেকে এইরকম একজন ছেলেকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারি না যার উদ্দেশ্য ছাত্রী পটানো।

-তাহলে ডিপার্টমেন্ট হেড হিসেবে না ভেবে বাবা হিসেবে ভাবো?

-যে হিসেবেই ভাবি না কেন নালিশ তো আমার কাছেই আসবে।

-তুমি কী তোমার ছেলেকে এতটাই বোকা ভাবো?

-না। তবে আমার মত স্মার্ট হতে তোমাকে একটু হলেও পিছিয়ে থাকতে হবে। কারণ “অভিজ্ঞতা” বলে একটা শব্দ আছে যেটায় তুমি আমাকে কখনো পেছনে ফেলতে পারবে না।

-হুম… তাহলে আমার অভিজ্ঞ বাবা, আমি কী করব সেটা তুমিই বলে দাও?

-কী করবে মানে? আজ তোমার জয়েন করার কথা সেটা কনফার্ম করে যাবে।

-রোজ নালিশ শুনতে হবে কিন্তু।

-বাবা হিসেবে “নালিশ” শোনার অভিজ্ঞতা তুমি কখনো হতে দাওনি। সে কারণেই তোমাকে সুযোগ দিচ্ছি। দেখি আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি কতটা বাড়ে এবং কেমন করে বাড়ে?

-বাবা, তুমি কী জানো তুমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাবা?

-জানি, এমনি এমনি কী আর নালিশের ঝুলিটা খালি রয়ে গেছে?

-ও… ক্রেডিট তাহলে সবটাই তোমার, তোমার ছেলেমেয়েদের কিছু না?

-সন্তানের ক্রেডিট বাবাকেই নিতে হয়। এবার কথা না বাড়িয়ে সাইন করে ফেল।

রিফাত জয়েনিং লেটারে সাইন করে ফেলল। আমানত উল্লাহ সাহেব তখন দপ্তরিকে ডেকে বললেন-

-শরীফ, সেকেন্ড ইয়ারের পুষ্প মেয়েটাকে আসতে বল, এক্ষুনি।

শরীফ “জি স্যার” বলে চলে গেল।

রিফাত তখন চোখ বড় করে বলল- পুষ্পকে ডাকলে কেন এখন?

আমানত উল্লাহ খান মুচকি হেসে বলল- প্রথম দিনেই আমার ছেলের পেছনে লেগেছে, আমি ওকে ছেড়ে দিব নাকি? তাছাড়া, তোমার প্রেমের প্রথম মুহূর্তটা আমি মিস করতে চাই না।

-এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না বাবা।

-ঘরে হোক বা অফিসে তুমি আমার আন্ডারে আছ, সো আমি যেটা বলব সেটাই হবে। ভার্সিটির সীমানার বাইরে গেলে তখন আমি হস্তক্ষেপ করছি না।

-তুমি দেখছি আমাকে শান্তিতে প্রেমটাও করতে দেবে না!

-প্রফেসর সাহেব মুচকি হাসতে লাগলেন আর রিফাত অপ্রস্তুত হয়ে বসে রইল। একটু পরই পুষ্প দরজায় দাঁড়িয়ে বলল- স্যার আসব?

আমানত উল্লাহ খান বললেন- এসো পুষ্প।

পুষ্প ভেতরে ঢুকলে স্যার তাকে বসতে বললেন। পুষ্প বসতে যেতেই রিফাতের দিকে চোখ পড়ে গেল। সে মনে মনে বলল- “এই হাদাটা এখানে বসে আছে কী করতে? পুরা ধরা খেয়ে গেলাম মনে হচ্ছে! পুরো ডিপার্টমেন্টের মধ্যে গাধাটাকে এখানেই আসতে হল?”

আমানত উল্লাহ খান তখন পুষ্পকে পড়াশোনা জাতীয় কিছু কথা বলে বললেন- পুষ্প, পরিচয় করিয়ে দেই, ইনি তোমাদের ডিপার্টমেন্টে নতুন জয়েন করেছেন, প্রফেসর রিফাত খান। এখন থেকে তোমাদের calculus পড়াবেন।

পুষ্প চোখ বড় বড় করে রিফাতের দিকে তাকাল আর রিফাত তখন মুচকি একটা হাসি দিল।

পুষ্পর রীতিমত ঘাম ছুটে গেল… শুকনো একটা ঢোক গিলে মনে মনে ভাবল- সর্বনাশ! সে করেছে কী? স্টুডেন্ট ভেবে স্যারকে র‍্যাগ দিতে গেছে! স্যারই যদি হবি তাহলে এত চিকনা চাকনা সুদর্শন হবার দকার কী ছিল? আর নতুন স্যারকে আজই জয়েন করতে হল? আর সবচেয়ে বড় কথা ব্যাটা তো ভারি বদ। সব জেনেও কেমন চুপ ছিল! এইজন্যই মুচকি মুচকি হাসছিল তখন। উফফফ পুষ্প তুই এত বড় বোকামি কী করে করলি? এই রকম একটা লোককে ফার্স্ট ইয়ার কী করে ধরে নিলাম! আর আমার বন্ধুগুলাও সব একেকটা হাদা আর কানা। ওদের কারো চোখেই পড়ল না! তখনই সন্দেহ হয়েছিল, এই লোক দেখতে যত বোকা বোকা আসলে ভেতরে ভেতরে মহা ফাজিল। তাই হল… কিন্তু কী হবে এখন? স্যার কী তাকে ছেড়ে দিবে? আর তাকেই একেবারে ডেকে এনে এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার কী হল? নিশ্চই ব্যাটা সব বলে দিয়েছে তাই অপদস্ত করতেই ডেকে আনা আর কী…

রিফাত তখন পুষ্পর দিকে তাকিয়ে বলল- পুষ্প, আপনি ঠিক আছেন তো? আপনাকে একটু নার্ভাস দেখাচ্ছে।

পুষ্প রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলল- ঠিক নেই কিছু। না, মানে কিছু হয়নি। না না আসলে… উফফ… কিছু না!

আমানত উল্লাহ খান তখন বললেন- কী বলছ এসব? হ্যাঁ, না… কী এসব? কি হয়েছে তোমার? এমন এবসেন্ট মাইন্ডে আছ কেন?

পুষ্প অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল… কী বলবে সে? আস্তে করে বলল- পানি খাব স্যার।

রিফাত মুচকি হেসে টেবিলের উপর ঢেকে রাখা পানি ভর্তি গ্লাসটা পুষ্পর দিকে এগিয়ে দিল। পুষ্প গ্লাস হাতে নিতেই রিফাত বলল- আপনি মনে হচ্ছে কোন কিছু নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। চিন্তিত হবার কিছু নেই, মানুষ মাত্রই ভুল। আজকালকার বাচ্চারা একটু বেশিই ভুল করে আর সুন্দরী মেয়েরা তো এসব ব্যাপারে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে থাকে, ব্যাপার না।

পুষ্পর মুখ অপমান আর রাগে লাল হয়ে গেল! সেটা দেখে পিতা পুত্র দুজনই খুব মজা পেল।

রিফাত বলল- পুষ্প, আপনার বন্ধুরা আমাকে দাওয়াত দিয়েছিল যেন কোথায়? কক্ষ নাম্বারটা কিন্তু দারুণ! কখন আসতে হবে?

প্রোগ্রাম ক্যান্সেল স্যার। আসতে হবে না।

রিফাত হাসি চেপে বলল- সেকি! ক্যান্সেল হল কেন?

পুষ্প মনে মনে রাগ এবং দু:খ দুটো নিয়েই ফুসতে লাগল। রিফাত মুচকি হেসে বলল- ঠিক আছে পুষ্প, আপনি যান। প্রোগ্রাম আবার ফিক্সড হলে দাওয়াত দেবেন আমি আসব।

পুষ্প ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেল। পুষ্প চলে যেতেই পিতা পুত্র হাসতে লাগল। তারপর আমানত উল্লাহ খান হাসি থামিয়ে বললেন- হুম, স্টুডেন্টদের এভাবে ডিস্টার্ব করা যাবে না। মনে রাখতে হবে সেটা।

সেটা তোমাকেও মনে রাখতে হবে বাবা। কারণ এসব ব্যাপারে তুমি নিজেই আমাকে সাহায্য করছ।

তারপর বাবা ছেলে মিলে আরও বেশ কিছুক্ষণ গল্প করল। রিফাত চলে যাবার জন্য উঠল। নিচে আসতেই দেখল পুষ্প দাঁড়িয়ে আছে। তার চেহারা অন্ধকার। অপমানটা একটু বেশিই লেগেছে! বাবাটাও যে কী না… এভাবে ডেকে এনে অপদস্ত করার দরকার ছিল? রিফাত নিচে নামতেই পুষ্প এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলল-

-সরি স্যার… আমি আসলে বুঝতে পারিনি…

-ইটস ওকে। তবে একটা ব্যাপার ক্লিয়ার হল যে, মানুষকে বিভ্রান্ত করতে আমার নিজের কোন কষ্ট করার দরকার নেই। আচ্ছা আপনি একাই দু:খিত নাকি আপনার বন্ধুরাও?

-সবাই দু:খিত।

-তাহলে ওরা এখানে নেই কেন?

পুষ্প ওদের ডাকল। ওরা এসে সবাই একসাথে সরি বলল। রিফাত ওদের উদ্দেশ্যে বলল-

-ঠিক আছে, সরি হবার কিছু নেই। সামনে সব কিছু ভালো করে দেখে, জেনে, বুঝে নেবে। আর একটা কথা মনে রাখবে, যার লিডারশিপে কাজ করছ তাকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতে হবে এমন কোন কথা নেই। তারপর আড়চোখে পুষ্পর দিকে তাকাল, দেখল তার চোখমুখ আবার লাল হয়ে গেছে। সে মুচকি হেসে সবাইকে চলে যেতে বলল। সবাই তাকে ধন্যবাদ দিয়ে যাবার জন্য পা বাড়াতেই রিফাত পুষ্পকে বলল-

-পুষ্প দাঁড়াবে। সবাই তখন একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে চলে গেল। রিফাত পুষ্পর সামনে দাঁড়িয়ে বলল- “আজ থেকে আমার শিক্ষক জীবন শুরু হচ্ছে। আশা করছি কিছু শেখাতে পারব। নতুন অধ্যায় শুরু হতে যাচ্ছে তাই অভিনন্দন আপনাকে।” পুষ্প তখন চোখ বড় বড় করে রিফাতের দিকে তাকাল। রিফাত রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে চলে গেল। আর পুষ্প দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগল, এটা কী হল? তিনি যদি শিক্ষক হিসেবে নতুন জীবন শুরু করে তাহলে পুষ্পকে কেন তার জন্য অভিনন্দন জানাবে???

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here