Mr. Calculus (পর্ব – ৫)
পুষ্প আর রিফাতকে আলাদা করে কথা বলার জন্য ছাদে পাঠানো হয়েছে। পুষ্প নিজেই চাচ্ছিল কথা বলতে সেটা তার ছোট বোন পাপড়িকে জানাতেই তাদের ছাদে পাঠানো হয়েছে।
রিফাত খুব ফুরফুরে মেজাজে আছে। আর পুষ্পর ভেতর কী চলছে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। তবে সে যে বিরক্ত সেটা বোঝা যাচ্ছে। বিরক্তির কারণেই হয়ত কোথা থেকে কথা শুরু করবে বুঝে উঠতে পারছে না। রিফাতই তখন বলল-
-আর কতক্ষন এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে দেখে যাবে?
-পুষ্প রাগ সংবরণ করে বলল, আপনার কথাতেই বোঝা যাচ্ছে কে কার দিকে তাকিয়ে থাকছে।
-তাই নাকি? তাহলে সূত্রে ফেলে প্রমাণ করে দেখাও?
-এটা আপনার ক্লাস না যে অংক করতে বসে যাব।
-হুম… না পারলে এমন অনেক অজুহাত তৈরি করা যায়। পড়াশোনা করছতো নাকি সব ছেড়ে দিয়েছ?
-চূড়ান্ত মেজাজ খারপ হচ্ছে পুষ্পর। সে কিছু বলতেই যাচ্ছিল কিন্তু রিফাত তাকে সুযোগ না দিয়ে বলল-
-এ বিষয়ে এ্যাসাইনমেন্ট করতে দিয়ে যাব নাকি ২/৪ টা?
-আপনি আমার পেছনে লেগেছেন কেন বলুন তো? কেউ আপনাকে পাত্তা দেয় না বলে আপনি আমাকে এভাবে এ্যাটাক করবেন?
-ঠিক কতজন পাত্তা দিচ্ছে না তার হিসেব তুমি লাস্ট যে এ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিলে সেটা দিয়েই তাহলে শুরু করি?
-যেখান থেকে ইচ্ছে হিসেব শুরু করুন। কিন্তু একটা কথা কান খুলে শুনে রাখুন আপনি যে উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছেন সেটা সফল হচ্ছে না।
– ছাদে তো তুমিই ডেকে পাঠালে! আমি উদ্দেশ্য নিয়ে আসব কী করে?
-ছাদে আসার কথা বলিনি। বাসায় আসার কথা বলেছি।
-বাসায় কী উদ্দেশ্যে এসেছি?
-আপনারা বাবা ছেলে দুটোই একরকম, না?
-কী রকম?
-কথা গোল গোল ঘুরিয়ে পিরামিড তৈরি করে ফেলেন।
-কেউ যদি নিজেই কিছু না বোঝে সেটা তার কাছে পিরামিড বলেই মনে হবে।
-আমি এত কথায় যেতে পারব না।
-তাহলে কোথায় যেতে পারবে?
-উফফ… শুনুন আমি কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করব না। আপনাদের এখানে আসার উদ্দেশ্য কোনভাবেই সফল হবে না। বুঝেছেন?
-রিফাত তখন দুম করে পুষ্পর একদম কাছে সামনা-সামনি হয়ে দাঁড়ায়। যতটা কাছে দাঁড়ালে হার্টবিট শোনা যায় ততটা কাছে। পুষ্প অপ্রস্তুত হয়ে যায়… সে কাজল টানা বড় বড় চোখে রিফাতের দিকে তাকায়। রিফাত তখন পুষ্পর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে- তুমি এত বোকা কেন? ভালোবাসার মানুষটাকে খোঁচাতে সবাই ভালোবাসে এটাও বোঝ না? যেদিন যে মুহূর্ত থেকে তুমি আমাকে “Mr. Calculus” ডেকেছ সেদিন সেই মুহূর্ত থেকে আমি তোমাকে “মিসেস” ডাকতে শুরু করেছি। ভার্সিটিতে শুধুমাত্র তোমার জন্য গেস্ট টিচার হিসেবে জয়েন করেছিলাম। এক মুহূর্তের জন্য হলেও তোমাকে কাছে পাবার জন্য রোজ এ্যাসাইনমেন্ট করতে দিয়েছি। এরপরও কিছু বোঝ না?
-রিফাতের এমন সহজ স্বীকারোক্তিতে পুষ্প অবাক হয়, কী বলবে ভেবে পেল না। সে ভেবেছিল প্রথম দিন ভুল করে র্যাগ দেবার কারণে রিফাত শুধুই জ্বালাতনের উদ্দেশ্যে তার সাথে এমন করত। কিন্তু সেটা যে প্রতিশোধ নয় ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল সেটা তো সে কখনো তলিয়ে দেখেনি! সে তখন একটু পেছাতে চাইল আর অমনি শাড়ির আঁচলে পা বেঁধে পড়ে যাচ্ছিল… রিফাত তাকে ধরে ফেলে কানের কাছে ফিসফিস করে রবি ঠাকুরের দুলাইন কবিতা আবৃত্তি করল-
“প্রহর শেষের আলোয় রাঙা সেদিন চৈত্র মাস,
তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।”
পুষ্পর চোখে তখন দিশেহারাভাব স্পষ্ট। “এভাবে আচঁলে বেঁধে না পড়ে আমার প্রেমে পড়তে পারো না?” বলে রিফাত পুষ্পর কাছ থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলল- আমাদের নিচে যাওয়া উচিত, সবাই অপেক্ষা করছে।
পুষ্প কোন কথা বলল না, চুপচাপ সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেল।
দুজনে সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবে আর তখনই আড়াল থেকে পুষ্পর ছোট বোন বের হয়ে বলল-
-এই তোমরা কী একটু জোরে কথা বলতে পারো না? ঝগড়াগুলো তো সবই শুনলাম শুধু রোমান্টিক মোমেন্টে কী হল তার কিছুই শুনতে পেলাম না! এটা কোন কথা?
রিফাত মুচকি হেসে বলল- তুমি তাহলে এখানে না দাঁড়িয়ে আমাদের কাছে গিয়ে বসে থাকলেই তো পারতে? পুষ্প তখন চোখ পাকিয়ে পাপড়িকে বলল-
-খুব পাকা হয়ে গেছ। কান ছিঁড়ে ফেলব একদম। এখানে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন?
-কেন আবার? তোমরা কী বলো সেটা শুনতেই এখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। নিচে গিয়ে রিপোর্ট করতে হবে না, ভালো কথা তোমরা “হ্যাঁ” বলেছ না কী “না”?
রিফাত দু:খিত হবার ভান করে বলল- সব তো শুনতে পাওনি নিচে গিয়ে কী রিপোর্ট করবে এখন?
পাপড়ি চিন্তিত গলায় বলল- সেটাই তো ভাবছি… মিশন তো ফিশি রয়ে গেল!
পুষ্প পাপড়ির হাত ধরে ” রিপোর্ট করাচ্ছি তোকে” বলে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গেল। রিফাত ড্রইংরুমে চলে গেল যেখানে সবাই বসে আছে। তার বুকের ভেতর কী একটু ভয় কাজ করছে? পুষ্প কী বলবে? তার ধারণা পুষ্প “না” বলতে পারবে না। ছাদে তার চাহনি অন্তত তাই বলছিল… রিফাত এতদিন পুষ্পর সাথে যা কিছু করেছে তা শুধুমাত্র ওর এটেনশন পাবার জন্য। পুষ্প হয়ত মনে মনে ওকে খুব পাজি ভাবছে। ভুলটা ভাঙা দরকার।
পুষ্প তার ঘরে গিয়ে বিছানার উপর বসে পড়ল। তার মাথায় রিফাতের কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে। রিফাতকে নিয়ে তার মনে ২০মিনিট আগেও যে ধারণা ছিল সেটা এখন সম্পূর্ণই পাল্টে গেছে। আশ্চর্যের বিষয় রিফাতের প্রতি তার আর কোন রাগ বা বিরক্তি কাজ করছে না! বরং রিফাতের বলা কথাগুলো ভাবতে ভালো লাগছে। কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে এমন হতে পারে? সে কী এখন “হ্যাঁ” বলে দেবে? “না” বলবেই বা কোন যুক্তিতে? কী এক যন্ত্রণায় ফেঁসে গেল সে? এমন সময় তার মা এসে বলল-
-রিফাতের সাথে কথা বলে কেমন লাগল? আমার তো ওকে খুবই ভালো লেগেছে। সবচেয়ে বড় কথা পরিবারের সবাই বেশ ভালো মনে হল। আমানত উল্লাহ সাহেব বেশ কিছুদিন আগেই প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, পরে নিজেই যোগাযোগ করে জানিয়েছেন তোকে তার ছেলের খুব পছন্দ, সাথে বাড়ির সবারও। আমরা যেন খোঁজ খবর নেই। ভালো লাগলে সরাসরি দেখাদেখি করে বিয়ে ফাইনাল করে ফেলবে একেবারে। তোর বাবা তখন ওদের সম্পর্কে অনেক খোঁজ খবর নিয়েছে। ছেলে মাশা-আল্লাহ, কোন বাজে অভ্যাস নেই। আর ওর বাবাকে তো তুই নিজেও ভালো করে চিনিস। ওরা এখন দিন তারিখ পাকা করে যেতে চাচ্ছে। তুই কী বলিস?
-মায়ের কথা শুনে পুষ্পর সিদ্ধান্ত নেয়াটা সহজ হয়ে গেল। তার মনে আর কোন দ্বিধা রইল না। সে শান্তস্বরে বলল-
-আমি আর কী বলব… তোমাদের যা ভালো মনেহয়…
-পলিন সাথে সাথে “আলহামদুলিল্লাহ” বলে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। আমি যাই সবাইকে জানাই তাহলে, বলে উঠে গেলেন তিনি।
পুষ্প “হ্যাঁ” বলেছে শুনে রিফাত বুকের ভেতর আটকে রাখা নি:শ্বাসটা শব্দ করে ছেড়ে দিল। তারপর পুরো এক গ্লাস পানি খেয়ে শুকিয়ে আসা গলা শীতল করে নিল। যেটা তার পরিবারের কারো দৃষ্টি এড়াতে পারল না।
বরকত উল্লাহ সাহেব তখন পুষ্পকে এখানে নিয়ে আসতে বললেন। পুষ্প এলে তিনি একটা আংটি বের করে তার সহধর্মিণীকে বললেন, “এটা পুষ্পকে পরিয়ে দাও”
বড় চাচী আংটি পরিয়ে দিয়ে বললেন- “তোমাদের দুইজনের জন্য অনেক দোয়া রইল আল্লাহর কাছে। সব সময় একসাথে থাকো, ভালো থাকো।” তারপর সবাই মিলে তখন বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলল।
পুষ্পর মা বাবা দুজনেই খেয়াল করল রিফাতের বাবা-মা তার বড় ভাই ভাবিকে খুবই সম্মান করে। তাদের কথা মূল্যায়ন করে সব কিছু বলছে। আবার রিফাতকেও তার বাবার মতই দেখা গেল। তারা মনে মনে খুশি হল এটা দেখে। যে পরিবারে বড়দের সম্মান করা হয় সে পরিবার আসলে বরকতময় পরিবার হয়।
পলিন রাতের খাবারের আয়োজন করে রেখেছিলেন। সবাই মিলে খেতে বসলেও পুষ্প সেখানে আসেনি। রিফাত মনে মনে একটু আহত হল। রেহানা সেটা বুঝতে পেরে বললেন-
-বিয়ের কথা চলাকালীন মেয়েরা খুব লাজুক অবস্থায় থাকে, সেকারণে পুষ্প হয়ত আমাদের সাথে খেতে আসেনি। রিয়ানা তুই নাহয় খাবার নিয়ে ওর ঘরে চলে যা। আমরা সবাই এখানে খাব আর ও একা বসে থাকবে সেটা ভালো দেখায় না। আজ থেকেই তো পুষ্প আমার পরিবারের রেস্পন্সিবলিটি।
রেহানা ইসলামের কথা শুনে পলিনের মন ভালো লাগায় ভরে উঠল। মেয়ের জন্য তারা শুধু উপযুক্ত পাত্রই না, ভালো পরিবারও পেয়েছেন। সে খাবার বেড়ে রিয়ানার সাথে পাপড়িকেও পাঠিয়ে দিলেন পুষ্পর ঘরে। পাপড়ি আর রিয়ানা কাছাকাছি বয়সের তাই দুজনের মিলেছে ভালো।
খাওয়া শেষ হলে তানিয়া তখন বলে উঠল-
-আমাদের তো যাবার সময় হয়ে আসছে তাই আমরা নাহয় পুষ্পর সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে আসি। ওর সাথে আমার তো এখনো তেমন আলাপ হল না।
পলিন বলল- হ্যাঁ হ্যাঁ যাও, ভেতরে যাও। তারপর পাপড়িকে ডেকে ওদের পুষ্পর ঘরে নিয়ে যেতে বললেন। রিফাত মনে মনে খুব খুশি হল, এমন একটা ভাবি পাওয়াটাও ভাগ্য। সে উঠতে যাবে আর তখনই রাইয়ান তার হাতে কিছু একটা গুঁজে দিয়ে কানে কানে বলল-
-আজ থেকে পুষ্পর সাথে অফিসিয়ালি বাঁধা পড়ে গেলি, কিছু দিতে হবেনা আজকের জন্য তাকে? নয়ত দিনটা স্মরণীয় থাকবে কী করে? রিফাত অবাক হয়ে গেল… তার শান্তশিষ্ট ভাইটা ভেতরে ভেতরে এত চমৎকার কেন? সে নিজেও তো এতটা ভাবতে পারত না! তার ইচ্ছে হচ্ছিল ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কিন্তু সবাই বসে আছে দেখে আবেগটা সামলে নিয়ে ফিসফিস করে বলল-
-কী আছে এতে?
-ডায়মন্ডের একটা pendant আছে। রিফাত “লাভ ইউ ভাইয়া” বলে ওঠে।
-পুষ্পকে আবার বলে দিস না এটা আমি দিয়েছি। কিছু জিনিস না জানানোই ভালো।
-রিফাতের চোখে পানি এসে যাবার উপক্রম হল। তার ভাইয়া এত ভালো কেন? এইজন্যই বড় ভাইয়ের আসনটা পিতার জায়গায় হয়। সে ভাবির সাথে ভেতরে চলে গেল।
পুষ্প তার ঘরে বিছানার এক কোনে ফোন হাতে নিয়ে বসে আছে। পাপড়ি এমন সময় রিফাত, তানিয়া আর রিয়ানাকে নিয়ে ঘরে ঢুকল। পুষ্প ব্যস্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায়।
সেটা দেখে তানিয়া বলল- “আরে ব্যস্ত হচ্ছ কেন? আমরা তোমার সাথে গল্প করতেই এসেছি, বসো।
পুষ্প আড়চোখে রিফাতের দিকে তাকাতেই দেখে ও ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। পুষ্প চোখ বন্ধ করে ফেলল… ইসস ধরা পড়ে গেল! তানিয়া তখন গল্প করতে শুরু করে দিল-
-তোমার ঘরটা তো বেশ সুন্দর! আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
-ধন্যবাদ।
-জানো, বাবা যে তোমাকে রিফাতের বউ হিসেবে পছন্দ করে রেখেছে সেটা তো আমরা কেউ জানতামই না। কাল আমাদের হুট করে বলল কোথাও বেড়াতে নিয়ে যাবে। তারপর শুনলাম কোথায় আর কেন যাচ্ছি? তবে এটা ঠিক বাবার পছন্দ আছে। আর আমার দেবর কিন্তু মাশা-আল্লাহ চমৎকার একটা ছেলে। তুমি হয়ত হুট করেই সেটা বুঝবে না। কিছুদিন গেলে ঠিকই বুঝে যাবে। এরা দুই ভাই-ই ভীষণ ভালো। পাশ থেকে রিয়ানা বলে উঠল- আর আমি?
-আরে তুমি তো স্পেশাল। ননদ যে এমন লক্ষ্মী হতে পারে সেটা রিয়ানাকে না দেখলে আমি বিশ্বাস করতাম না। আমার তো ওকে নিয়ে অনেক ভয় ছিল… একমাত্র মেয়ে, নিশ্চই আহ্লাদী আর একরোখা হবে। আমার জীবন তেজপাতা করে ছাড়বে। কিন্তু খুব দ্রুতই রিয়ানা আমার সেই ভুল ভেঙে দিয়েছে। এখন তো মনেহয় ও একটু পাজি হলেই মনেহয় ভালো হত। শ্বশুরবাড়িটাকে তখন শ্বশুরবাড়ি বলেই মনে হত। শ্বশুরবাড়িতে নিজের বাড়ির ফিলিংস হলে ভালো লাগে বলো?
-পুষ্প তানিয়ার কথা শুনে হাসল কিছু বলল না। তানিয়া আরও কিছুক্ষণ গল্প করল। গল্পের ফাঁকে রিফাতকে খেয়াল করছিল, ও কেমন উসখুস করছে। মনেহয় পুষ্পকে একা চাচ্ছে। তানিয়া তখন বলল- রিয়ানা চলো উঠি, সবাই কী করছে গিয়ে দেখি। অনেক্ষণ তো গল্প করলাম এখানে। সবাই উঠে যাচ্ছিল তানিয়া তখন রিফাতকে থামিয়ে বলল-
-তুমি নাহয় আর একটু থাকো এখানে। ভাবির কথায় রিফাত যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। সে এটাই চাচ্ছিল নয়ত ভাইয়ার দেয়া গিফট দিত কী করে?
সবাই চলে যাচ্ছিল, দরজার কাছে গিয়ে পাপড়ি বলল- আমি কিন্তু দরজার পাশেই আছি। তখন অনেক কিছু মিস করেছিলাম এখন আর তা করছি না। বলে সে রিয়ানার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিল।
রিফাত বলল- এখন তো আর রিপোর্ট করার বিষয় নেই তাহলে আমাদের কথা শুনবে কেন? নাকি বিশেষ কেউ আছে যাকে তুমি এখান থেকে শিখে তাকে শেখাবে?
-“এভাবে সরাসরি বোল্ড না করলেও পারতেন।” বলে রিয়ানাকে নিয়ে পাপড়ি চলে যায়।
পুষ্পর ঘরটা অনেক বড়, ঘরের একপাশে পাখির বাসার মত একটা দোলনা ঝুলানো আছে। পুষ্পর বোধহয় গাছ খুব পছন্দ। ঘরে ছোট ছোট বেশ কিছু ইন্ডোর প্লান্ট দেখা যাচ্ছে। সব জায়গায় ছোট ছোট সবুজ… দেখতে ভালো লাগছে। এখন থেকে গাছ সম্পর্কে তাকেও জানতে হবে। সে পুষ্পর দিকে তাকাল, দেখল পুষ্প তার হাতের আঙুলে পরা আংটিটা আরেক হাতে ঘোরাচ্ছে। রিফাত তখন বলল-
-কেমন লাগছে মিসেস পীথাগোরাসের জটিল উপপাদ্য?
-পুষ্প মাথা না তুলেই বলল, বুঝতে পারছি না… কনফিউজড…
-হুট করেই সব হয়ে গেল তো তাই এমন লাগছে। ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি তো।
পুষ্প ফিসফিস করে বলল- আপনি আছেন বলেই তো যত বিপদ!
-কিছু বললে?
-নাহ্, কিছু না।
-দেখো, আমি আগে তোমার শিক্ষক ছিলাম এখন অন্য কিছু। দুটো চরিত্রকে এক করে ফেললে তুমি কনফিউজড হবে। আজ এই মুহূর্তের রিফাতকে নিয়ে ভাবতে থাকো কনফিউশন চলে যাবে।
-পুষ্প মুখ তুলে রিফাতের দিকে তাকাল, রিফাত এভাবেও বলতে পারে তার বিশ্বাস হচ্ছে না।
-খেয়েছ?
-হুম। রিয়ানা আর পাপড়ির সাথে খেয়েছি। রিয়ানা খুব চমৎকার মেয়ে।
-হুম। তবে ওর সাথে আমার খুব মার মার কাট কাট সম্পর্ক।
পুষ্প চোখ বড় বড় করে বলল- আপনি ছোট বোনের সাথে মারামারি করেন?
-অবশ্যই করি। ভাইবোনদের মাঝে মারামারি না হলে হবে নাকি? অবশ্য বউ এলে আলাদা কথা। তখন মারামারির পার্টনার বাড়বে তখন বোনের সাথে আগের মতই মারামারি করার যথেষ্ট সময় হবে কিনা সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।
-পুষ্প তাকিয়ে থেকে রিফাতকে বোঝার চেষ্টা করছে। এই ছেলে বেশ দুষ্টু তবে ভালো মনেরও। একটা মানুষের ভেতরে কত রঙ থাকে! অবশ্য জামাই হিসেবে তার এমন ছেলেই পছন্দ। শুধু সকাল বিকাল পড়াতে না বসালেই হয়!
-আমরা এখনো নিজেদের সম্পর্কে ভালো করে জানি না। তাই এখন থেকে তোমার ভালো লাগা, মন্দ লাগা, প্রয়োজন, ইচ্ছে সব কিছুই শেয়ার করার অভ্যাস করার চেষ্টা করো। তুমি নাহয় আমাকে তোমার ভালো লাগার চেয়ে মন্দ লাগা গুলোই বেশি বলো। ভালো লাগা গুলো আমিই খুঁজে নেব। আমারও তো জানা দরকার লাইফ পার্টনার হিসেবে আমি কেমন?
পুষ্প মনে মনে বলল- লাইফ পার্টনার হিসেবে ভালো হবেন বলেই মনে হচ্ছে কিন্তু স্যার হিসেবে যে জ্বালানোটা জ্বালিয়েছিলেন তার শোধ তো সুযোগ পেলেই নেব আমি।
-তুমি কিছু বলছ না?
-আপনার বাড়ির সবাই খুব ভালো।
-আমি?
-শিক্ষক হিসেবে “স্বৈরাচারী”, আর ছেলে হিসেবে “নাগা মরিচ”।
রিফাত শব্দ করে হাসল। বেশ ভালো বিশ্লেষণ করেছ তো। “এইজন্য তোমাকে পুরস্কৃত করা উচিত” বলে সে পকেট থেকে বক্সটা বের করে পুষ্পর দিকে বাড়িয়ে দেয়।
-কী এটা?
-তাবিজ, “নাগা বাবা” র দেয়া বশিকরন তাবিজ। এটা সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন নাগা বাবা।
পুষ্প সরু চোখে রিফাতের দিকে তাকিয়ে বলল- মানে?
-“মানে জানতে হলে বক্স খুলতে হবে। তারপরও কিছু বুঝতে না পারলে ফোন দিও, আসি।” বলে রিফাত পুষ্পর ঘর থেকে উঠে আসে। আর পুষ্প বক্সটা হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে বসে রইল।
রাত ১০টার পর রিফাতরা সবাই চলে যায়। ওরা চলে যাবার পর পুষ্প ফ্রেশ হয়ে এসেই রিফাতের দেয়া বক্সটা খোলে। এর ভেতর কিসের তাবিজ আছে সেটা দেখার কৌতুহলে সে অস্থির হয়ে আছে। বক্স খুলে দেখে ভেতরে একটা পাতলা চেইন আর সাথে নীল পাথরকে ঘিরে ছোট ছোট সাদা পাথর বসানো লতার সাথে প্যাঁচানো ফুলের একটা লকেট। হাতে নিয়ে সে বিস্মিত হল… এত সুন্দর! সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সেটা গলায় পরে ফেলল। দারুণ লাগছে তাকে। তারপর ভাবল, “এই তাবিজ তো আমি সব সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখব Mr. Calculus.”
দুই পক্ষের সম্পর্ক যখন জমে ক্ষীর তখন শুরু বিয়েবাড়ির জমজমাট হৈচৈ!