#তোর_পরশে_প্রেম
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২০
পুতুল বাসায় আসতেই নিলুফা বেগম আর সুফিয়া বেগম নিজের সাথে নিয়ে গেলো৷
‘কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? আমাকে ড্রেস চেঞ্জ করতে হবে।
‘নিলুফা বেগম পুতুলের দিকে পেটিকোট আর ব্লাউজ এগিয়ে দিয়ে বলে, যাও চেঞ্জ করে আসো৷
‘বড় আম্মু, আমি আর শাড়ী!
‘হু ‘তুমি আর শাড়ি।
‘আমি শাড়ী সামলাতে পারবো না।
‘তোকে সামলাতে হবে না। কথা কম যা চেঞ্জ করে আয়।
‘পুতুল চেঞ্জ করে এসে শরীরে ওড়না প্যাচিয়ে রাখলো।
‘সুফিয়া বেগম বলে,ভাবি আমার মেয়েটা, সেই বাচ্চা মেয়েটা আজ এতো বড় হয়ে গেছে!
‘তোর বাচ্চা মেয়েটা এখন আমার বাচ্চা ছেলেটার বউ। আমার অনেক সখের পুতের বউ। আজকে আমার ছেলের বউকে আমি মন মত সাজাবো।
‘জুলিয়া দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে। নিজের ভুলের জন্য সবার কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।
নিলুফা বেগম বললেন বাহিরে না দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে আসো। আমরা নিজের মানুষ আর সন্তানরা ভুল করবে তাই বলে তাদের পর তো করে দেয়া যাবে না।
‘জুলিয়া ভেতরে এসে নিলুফা বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে, সরি ফুপ্পি।
‘আজকে আনন্দের দিন তাই শুধু আনন্দ করবে। কোন সরি টরি না৷ এবার তোমার ছোট জা’ কে বউ সাজাতে সাহায্য করো।
‘তিনজন মিলে পুতুলকে সুন্দর করে বউ সাজিয়ে দিলো।
জুলিয়া পুতুলকে পরশের রুমে দিয়ে গেলো।
‘পুতুল আশেপাশে তাকিয়ে অবাক। নেচে নেচে বলে পুতুল তোর বাসর ঘর একদম ড্রীমের মত সাজিয়েছে।দিল খুস কার দিয়া। বিয়ে না হলে তো এতো সুন্দর বাসর ঘর তোর জন্য কেউ সাজাতো না! আহারে আহারে বিয়ে হওয়ার পর আমি পেলাম সাজানো বাসর ঘর। তোমরা দেখো গো আসিয়া পুতুলুর বিয়ে হইছে হঠাৎ করিয়া।
পুতুল নিজের ফোনে একের পর এক পিক তুলছেই।
কতক্ষণ পর নিজের মোবাইলে গান ছাড়লো…
তোমরা দেখ গো আসিয়া কমলায় নিত্য করে থমকিয়া থমকিয়া….
এগো কমলায় নিত্য করে থমকিয়া, থমকিয়ারে কমলায় নিত্য করে থমকিয়া, থমকিয়া।
পাড়া-পড়শী যত নারী আইলা সবে সারি সারি…
এ গো সোহাগ ও চন্দন ও দিলা ছিটাইয়া ছিটাইয়া গো কমলায় নিত্য করে থমকিয়া থমকিয়া।
পরশ রুমে ঢুকে পুতুলের নাচ থেকে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে।
“হঠাৎ পুতুলের চোখ পরশের দিকে পরায় পুতুল বলে,এই তুমি নাচবে না?
‘আমি কেন নাচবো? আমি সুস্থ মানুষ মেন্টাল না।
‘তুমি কি আমাকে পাগল বলছো?
‘উঁহু তোকে পাগল বলতে পারি? তোর আজ বিয়ে হয়েছে কই তুই বড় করে ঘোমটা দিয়ে বসে থাকবি, তোর হ্যাসবেন্ড এসে ঘোমটা তুলে তোর লজ্জা রাঙা মুখ দেখবে তা-না তুই ধেই ধেই করে নাচছিস! আসলে পাগল আমি।
‘ওহহ সরি ভাইয়া আমার মনে ছিলো না।
‘কি কইলি?
‘সরি জামাই। শুনো এতো সুন্দর করে সাজানো দেখে নাচ চলে আসছে তাতে আমার কি দোষ? আর আমার লজ্জা লাগছে না আমি কি করবো? বিয়ে অন্য কারো,সাথে হলে কি আমার লজ্জা লাগতো পরশ ভাই? -থুক্কু মুক্কু জামাই, প্রাণের স্বামী, হাবি, সুইটু, হানি, জান।
‘বাসর ঘরের ফিলটাই মাটি করে দিলি।কি নিব্বি আমার কপালে জুটলো!
‘শোন তুমি রুম থেকে বের হও আমি ঘোমটা দিয়ে বসি। এবার আর নাচবো না।
‘থাক আর দরকার নেই।
‘দরকার নেই মানে? আলবাত দরকার আছে। সবাইকে বলবো না তুমি ঘোমটা তুলেছো আমাকে গিফট করেছো৷ যাও রুমের বাহিরে। বুড়ো হলে নাতি নাতিদের কি গল্প শোনাবো৷
‘বাসর করতে পারলাম না!সে নাতি নাতনিতে চলে গেছে বাহহহ। আগে তো ছেলে মেয়ে ডাউন দিতে হবে তারপর নাতি নাতনি।
‘কথা কম বলো রুমের বাহিরে যাও আমি লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করছি৷
‘পরশ বাহিরে যেয়ে বলে এবার আসবো?
‘আসো।
‘পরশ ধীর পায়ে পুতুলের কাছে যেয়ে বসলো, আস্তে করে ঘোমটা তুললো। মেরুন রংয়ের কাতান শাড়ী, শরীর জুড়ে আছে। সাথে স্বর্ণের অলংকার । পরশ অপলক দৃষ্টিতে পুতুলের দিকে তাকিয়ে আছে। নিজের পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা লকেট সহ চেইন বের করে পুতুলের গলায় পরিয়ে দিলো। পরশের হাত পুতুলের ঘাড়ে টাচ করতেই পুতুল কেমন কেঁপে উঠলো৷
পরশ পুতুলের গলার অন্য সব অলংকার খুলতে লাগলো, আস্তে আস্তে সব খুলে ফেললো।পরশ হুট করে পুতুলের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো।
‘এই কি করছো আমার শুঁড়শুঁড়ি লাগবে উঠো।
‘পরশ পুতুলের মাথায় হাত দিয়ে নিচু করে ধরে ঠোঁট, ঠোঁট মিলিয়ে দিলো। পুতুল পরশের পাঞ্জাবি খামচে ধরলো৷ পরশ পুতুলের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,আজ আমার স্পর্শ লেপ্টে যাবে তোর শরীরের প্রতিটি কোনায়। ভালোবাসায় সিক্ত করে তোকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবো উত্তাল প্রেমের জোয়ারে।ঠিক যেভাবে আমার পরশে তুই উন্মাদ হবি, আমিও তোর পরশের উন্মাদনায় হারিয়ে যেতে চাই। এরপর আমি বলবো #তোর_পরশে_প্রেম।
‘ধীরে ধীরে পরশের স্পর্শ গভীর থেক গভীর হতে লাগলো। রাতের নিরবতা সাথে দুজন মানব মানবীর শ্বাসের উর্ধ্ব গতির শব্দ মিলেমিশে একাকার। আজ জেনে দু’জনে হারিয়ে যাচ্ছে দু’জনের মাঝে।দুটি দেহো মিলেমিশে একাকার। এ যেনো ভালোবাসার পূর্ণতার মাধুর্য।
🌿জুলিয়া রুমে এসে দেখে পারাণ ঘুমিয়ে আছে। জুলিয়া আস্তে করে পরাণের পাশে শুয়ে পেছন থেকে পরাণকে জড়িয়ে ধরলো। পরাণের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,এই শুনছেন আমার না আপনার স্পর্শ পেতে ইচ্ছে করছে। আপনি জানেন আজ পর্যন্ত আমাকে কেউ স্পর্শ করেনি। এই যে গোলাপের মত ঠোঁট আজও শুকনো, কেউ চুমু খায়নি! আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন?জোড় করেও তো দুই চারটা চুমু খেতে পারতেন!
জুলিয়া ভেবেছিল পরাণ গভীর ঘুমে তাই এসব বলছিলো।
পরাণ আস্তে করে জুলিয়ার দিকে ঘুরে কোন কথা না বলেই জুলিয়ার ঠোঁটে আঁকড়ে ধরলো নিজের ঠোঁট দিয়ে।
জুলিয়া পরাণের শার্ট শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো। প্রায় পাঁচ মিনিট পর ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে জুলিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,এতো সুন্দর করে চুমু খেতে বলার পরও চুমু না খেলে পাপ হবে৷ জুলিয়ার হার্ট বিট ফাস্ট হচ্ছে।
‘আপনার এলোমেলো হার্ট বিট কিন্তু আমাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে মিসেস। যদি গভীর আদর দেই তাহলে কি খুব অন্যায় হবে?
জুলিয়া পরাণকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।
পরাণ জুলিয়াকে জড়িয়ে ধরলো। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,আজ তবে হোক স্বামী, স্ত্রী সম্পর্কের পূর্ণতা। তোমার দেহো জুড়ি ছড়িয়ে পড়ুক আমার স্পর্শের মাদকতা।
🌿 সুফিয়া বেগম বলেন, শোন তোমাকে একটা কথা জানানোর ছিলো।
‘পলাশ বেগম সুফিয়া বেগমের কোলে মাথা রেখে বলে,আমি জানি তুমি কি বলতে চাও৷ মাহমুদ সাহেব তোমার প্রাক্তন তাইতো?
‘হ্যাঁ এটাই।
‘সুফিয়া মানুষের অতীত থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তুমি আমার স্ত্রী হওয়ার আগে সে তোমার ছিলো কিন্তু আমার হওয়ার পর তুমি শুধু আমার। তোমার থেকে কখনো আমি কোন খারাপ আচরণ বা অবহেলা পাইনি তাই ওসব অতীত ঘেটে আমার লাভ নেই৷
‘তুমি সত্যি অনেক ভালো।তোমার মত জীবনসঙ্গী পেয়ে আমি ধন্য। মাহমুদের সাথে আমার পরিবার অন্যায় করেছে। তারপরও মাহমুদ আমার মেয়েকে এতো ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে। তাই আমি একবার ওর কাছে ক্ষমা চেতে চাই।
‘আচ্ছা আমরা দু’জনেই যাবো। এই সুযোগে হানিমুন সেরে ফেলবো কি বলো!
‘এই বয়সে এসেও তোমার রসিকতা গেলো না। এখন ওসবের বয়স আছে নাকি?
‘কি যে বলো!যত বয়স বাড়ে প্রেম তত মাখো মাখো হয়।আমার তো মনে হচ্ছে এই সেই পিচ্চি সুফিয়া যাকে প্রথমবার স্পর্শ করার পর কারেন্ট শকড খাওয়ার মত কেঁপে উঠেছিলো।
‘চুপ করো লজ্জা করে তো নাকি?
‘এই বয়সে তুমি লজ্জা পেতে পারো আর আমি রোমান্স করতে পারবো না?তা হবে না তা হবে না।হানিমুনে যাবো কক্সবাজার এটাই ফাইনাল৷
‘লজ্জা কই তোমার! মেয়ের হানিমুনে যাওয়ার সময় তোমার বুড়ো বয়সে ভীমরতি হয়েছে!
‘তুমি সাথে থাকলে বয়সের কথা ভুুলে যাই মাশুকা।
#চলবে
আসসালামু আলাইকুম। প্রিয় পাঠক/পাঠিকা আমরা লেখিকারাও মানুষ।আমাদেরও ব্যক্তি জীবন আছে ব্যস্ততা আছে, সুস্থতা অসুস্থতা আছে।তাই গল্প দেরি করে দিলে এমন বাজে মন্তব্য বা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।দরকার পরলে রানিং গল্প পড়বেন না, শেষ হলে পড়বেন। তবুও অভদ্র বা অশালীন আচরণ করবেন না।
“আপনার ব্যবহার আপনার ব্যক্তিত্ব বহন করে”