শুধু_তোমায়_ঘিরে #লেখিকাঃসীমা part 2

0
633

#শুধু_তোমায়_ঘিরে
#লেখিকাঃসীমা
part 2

–আনিশা তুই শয়তানটার কথা শুনবি না।
–জান ১ ঘন্টা সময় দিলাম যা করার তাড়াতাড়ি করো।
আনিশা ফ্লোরে বসে পড়ে।কি করবে ও কিছুই বুজতে পারছে না।রিয়াদের কোনো গ্যারান্টি নেই ও যা ইচ্ছা মন করতে পারে।
আনিশা ভেবে চিন্তে ঠিক করলো কেস তুলে নিবে, বর্ষার কিছু হতে দিবেনা।
আনিশা ওর মায়ের কাছে গিয়ে বলে,
—মা টিউশনিতে যেতে হবে।
—এখন?(অবাক হয়ে)
—হ্যা মা সামনে পরীক্ষা তো তাই তাড়াতাড়ি গিয়ে পড়াতে হবে।
—ঠিক আছে যা তবে সাবধানে যাবি।মিমিকে তুই কি আবার টাকা দিয়েছিস?
—মা আমি মিথ্যা কথা বলব না আপুকে দশ হাজার টাকা দিয়েছি।
—কষ্ট করে টাকা জমিয়ে ওদের দিস একবারো কি ওদের সেটা বোঝে?
—মা বাদ দাও না।আমি যাচ্ছি।
—তাড়াতাড়ি ফিরে আসিস আজ তোকে দেখতে আসবে।
—ঠিক আছে মা আসি।
আনিশা ওর মাকে প্রথম মিথ্যা কথা বলল।নিজের কাছে আনিশা ধিক্কার দিচ্ছে।বাড়ি থেকে বেরিয়ে পুলিশ স্টেশনে যায়।সেখানে দেখে কমিশনার কোথাও যাওয়ার জন্য বেরুচ্ছে।
আনিশাকে দেখে কমিশনার বললেন,
—আরে আপনি কি মনে করে?
—আমি কেস তুলে নিতে চাই।
—এখন সেটা আর বললে হবে না আমরা রিয়াদ চৌধুরীকে এরেস্ট করতে যাচ্ছি।
—প্লিজ কেসটা তুলে নিন।আমার বান্ধবীকে রিয়াদ তুলে নিয়ে গেছে।
—কি?
—হুম রিয়াদ বলেছে এক ঘন্টার মধ্যে কেস তুলে না নিলে বর্ষার ক্ষতি করবে প্লিজ কেসটা তুলে নিন।(কাঁদতে কাঁদতে)
—আমরা বর্ষাকে বাচাবো কিন্তু কেস তুলে নিতে পারব না।
আনিশা ধপ করে ফ্লোরে বসে কমিশনারের পা জড়িয়ে ধরে।
—আমি বর্ষার কোনো ক্ষতি চাইনা।আপনি কেস তুলে নিন।
—আপনি উঠুন আমি কেস তুলে নিবো আপনি বড় ভুল করলেন কেসটা তুলে নিয়ে।
—আমি আমার কথা ভাবিনা বর্ষার কিছু হলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবনা।
কমিশনার কেসটা তুলে নিলে আনিশা ধন্যবাদ জানায়।পুলিশ স্টেশনে বাইরে আসতে আনিশার ফোন বেজে ওঠে।আনিশা দেখে সেই নাম্বারটায় যেটা দিয়ে রিয়াদ ফোন দিয়েছিলো।
—আমি কেস তুলে নিয়েছি আপনি প্লিজ বর্ষাকে ছেড়ে দিন।
—আরে এত উতলা হচ্ছো কেনো?আমি জানি তুমি কেসটা তুলে নিয়েছো আর কি জানো তো বর্ষার সাথে আমার কিছু পুরোনো হিসাব বাকি আছে।সেসব মিটিয়ে আমি নিজে ওকে বাড়িতে দিয়ে আসব।
—আপনি ওর কোনো ক্ষতি করবেন না।ওকে ছেড়ে দিন।
—ওকে ছেড়ে দিবো? ওর জন্য তুমি আমার নামে কেস করেছো এত সহজে ছাড়ব?
—দোহাই আপনার বর্ষাকে ছেড়ে দিন।
—এক শর্তে ছেড়ে দিবো।
—আমি আপনার সব শর্তে রাজি বর্ষাকে ছেড়ে দিন।
—মনে থাকে যেনো।
রিয়াদ ফোন কেটে দেয়।আনিশা বাড়িতে এসে চিন্তা করতে থাকে। রিয়াদ ওর ক্ষতি কি করলো?সারাদিন ধরে বর্ষার ফোনে ট্রাই করলো আনিশা কিন্তু ওর ফোন বন্ধ।বর্ষার বাড়ির ঠিকানাও আনিশা জানে না যে ওদের বাড়িতে যাবে।একা একা রুমে কাঁদতে থাকে।আনিশার মা আনিশার কান্নার আওয়াজ পেয়ে রুমে আসে।
—আনিশা রুম অন্ধকার কেনো?
আনিশার মা লাইট জ্বালিয়ে দেয়।তিনি দেখেন আনিশা ফ্লোরে বসে কাঁদছে।
—আনিশা কি হয়েছে তোর বল মা?
—মা রিয়াদ বর্ষাকে ধরে নিয়ে গেছে।
—কি হয়েছে বুঝিয়ে বল?
আনিশা ওর মাকে সব খুলে বললো।
—আল্লাহর উপর ভরসা রাখ মা আমরা কারো কোনো ক্ষতি নি।সব ঠিক হয়ে যাবে।
আনিশা ওর মায়ের বুকে মাথা রেখে কাঁদতে থাকে।এমন সময় বর্ষা ফোন করে আনিশাকে।আনিশা তাড়াতাড়ি করে ফোন রিসিভ করে।
—হ্যালো বর্ষা তুই ঠিক আছিস তো?রিয়াদ তোর কোনো ক্ষতি করেনি তো?তোর ফোন বন্ধ কেনো?
—কুল আনিশা একসাথে এত প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিবো।
—একসাথে বল।
—ঠিক আছে বলছি আমি ঠিক আছি রিয়াদ আমার কোনো ক্ষতি করেনি।ফোনে চার্জ ছিলো না বলে তোকে ফোন করতে পারি নি।
—সত্যি কথা বলছিস তো?
—হুম রিয়াদ ভাই প্রথমে তোকে ফোন করার পর আমাকে ওনাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।ওনার মায়ের সাথে বসে আমি আড্ডা দিয়েছি।
—আমার খুব চিন্তা হচ্ছিলো রে?
—জানি রিয়াদ ভাইয়ের পরিবার খুব ভালো জানিস আমাকে নিজের মেয়ের মত আদর যত্ন করেছে।
—হয়েছে ঐ গুন্ডাটার গুনগান গাইতে হবে না।বাই।
—বাই।
আনিশা ফোন রেখে ওর মায়ের দিকে তাকালো।
—-মা সব ঠিক আছে।
—তুই রেডি হয়েনে ছেলেপক্ষ তোকে দেখতে আসবে।পছন্দ হলে পরশুদিন তোর বিয়ে।
—ঠিক আছে মা।তুমি যাও আমি রেডি হয়ে আসছি।বাবা কি এসেছে?
—হ্যা আজ পুরো বাজার সহ সাথে তুলে ধরে এসেছে।তুই ঝটপট রেডি হয়েনে।
আনিশার মা বাইরে গেলে আনিশা আলমারি থেকে একটা নীল রঙের শাড়ি বের করে।তার সাথে ম্যাচিং করে সব পড়ে।মুখে হালকা সাজ দেয়।আনিশার মা আবার আনিশাকে ডাকতে আসে।আনিশা দেখে তিনি খুশি হন।
—মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে আমার মেয়েকে।
—মা ওসব কথা বলোনা আমার লজ্জা করছে।
—সত্যিরে মা সুন্দর লাগছে চল ওরা এসে গেছে।
আনিশাকে নিয়ে ওর মা মেহমানদের সামনে যায়।আনিশার বাবা ওদের সাথে গল্প করছে।আনিশা দেখলো ছেলেটার সাথে একটি মহিলা এসেছে।মহিলাটার বয়স ৪৫ বছর হবে আর ছেলেটার ২৬।মোটামুটি ভালো বলা চলে।আনিশার দিকে ছেলেটা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।আনিশার মা ছেলেটার সামনে আনিশাকে বসিয়ে দেয়।মহিলাটা বলে,
—মাশাল্লাহ আপনাদের মেয়েতো খুব সুন্দর। মা তোমার নাম কি?
—জি আনিশা রহমান।
—খুব ভালো নাম।আজিজ রহমান আপনার মেয়েকে আমাদের পছন্দ হয়েছে।পরশুদিন বিয়ে ওদের।
—আলহামদুলিল্লাহ আমরাও রাজি এ বিয়েতে।
—মেয়ের মতামত নিবেন না?
—আমার মেয়ে আমরা যা বলবো তাই করবে।
—এমন মেয়ে এখন ভাগ্য গুনে মেলে রোহান(ছেলেটাকে)তোমরা আলাদা ভাবে কথা বলবে?
—দরকার নেই মা আমি রাজি আছি।
—তাহলে বেয়াই সাহেব ওই কথা রইল পরশুদিনে বিয়ে হবে।অবশ্য আজকে যদি আপনাদের মেয়ের বিয়ে দিতে চান তবেও আমাদের আপত্তি নেই।
—না বেয়াইন সাহেবা আমাদের ছোটো মেয়ে একটু অনুষ্ঠান করবো।আপনাদের দাবি দাওয়া থাকলে বলুন।
—আমরা যৌতুক নিবো না তবে আপনাদের জামাইকে একটা বাইক,ঘর সাজার জন্য টিভি ফ্রিজ দিবেন।আর আপনার মেয়েকে দশ ভরি স্বর্ণের গহনা দিবেন উপহার হিসেবে।
—আমরা চেষ্টা করবো।
—আসি আজ।
ছেলেপক্ষ চলে গেলে আনিশার বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।এত টাকা এখন কোথায় পাবে?আনিশার মা আনিশাকে রুমে পাঠিয়ে দেয়।আনিশা রুমে গেলে আনিশার মা আনিশার বাবাকে প্রশ্ন করে,
—এত কি ভাবছো?
—ভাবছি এত টাকা কোথায় পাবো?
—ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনো।বাকিটা ধার করে…
—সেটা সম্ভব না মিমি চিটিং করে সব টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়েছে।আজ ও আমাকে বাড়ির বাইরে দেখতে পেয়ে বলে,”বাবা কাগজে তোমার সই লাগবে”আমি দেখি কয়েকটা কাগজ পড়তে চাইলে মিমি বলে আমি ওকে নাকি বিশ্বাস করিনা।পরে ব্যাংকে গেলাম টাকা তুলতে গিয়ে শুনি মিমি সব টাকা তুলে নিয়েছে।
আনিশার বাবা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন।
—আমাদের এই বাড়িটা বিক্রি করে টাকা জোগার করো। রিয়াদ ছেলেটার সাথে বিয়ে হলে আমার মেয়েটা জ্যান্ত লাশ হয়ে যাবে।
আনিশা ওর বাবা মায়ের কথা আড়াল থেকে শুনে নেয়।তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে।
—হে আল্লাহ কেনো এ সমাজে যৌতুক প্রথা আসলো। আমার মা বাবার মত কতো না জানি বাবা মা কাঁদে। আমার মত মেয়েদের বিয়ে হতে চেয়ে ভেঙ্গে যায়।আল্লাহ তুমি আমাকে পথ দেখাও।
বাইরে ভাঙচুরের শব্দ শুনে আনিশা বাইরে গিয়ে দেখে রিয়াদ আর ওর লোকজন ভাঙচুর করছে।আনিশাকে দেখে রিয়াদ আনিশার চুলের মুঠি ধরে।
—খুব শখ না অন্যের বউ হওয়ার? তোকে না বলেছি আমি তোকে বিয়ে করবো।কান খুলে শুনে রাখ আমি ছাড়া তোকে কেউ বিয়ে করতে পারবে না।
রিয়াদ আনিশাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।আনিশার বাবা মা আনিশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here