💕ভালোবাসি💕 (দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প) Samira Afrin Samia #নিপা পর্বঃ ৫

💕ভালোবাসি💕
(দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প)
Samira Afrin Samia
#নিপা
পর্বঃ ৫

মিষ্টি – এই তুষার কি করছ ওখানে। কেক কাটবা না নাকি?
—মিষ্টি আবির আর তুষারের কাছে এসে তুষারের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল।
আবির – আমিও এখানে আছি। আমাকে তো কেউ দেখেই না। আমার হাত ধরে নিয়ে যাবে তো দূর আমাকে তো কেউ মুখে ও বলে না। এত অবহেলা সহ্য হয় না।
তুষার – তোর ড্রামা রাখ আর চল কেক কাটব এখন।
আবির – মিষ্টি আমাকেও একটু মিষ্টি করে বলো না। চলো আবির কেক কাটতে যাবা তুষারের সাথে।
মিষ্টি – ওহ আপনাকে তো বলতেই ভুলে গেছি। আচ্ছা আবির ভাইয়া আপনি ও চলেন তুষারের সাথে কেক কাটতে।
আবির – ভাইয়া? এই মেয়ে আমি তোমার ভাইয়া না। তুমি চাইলে আমার নাম ধরে ডাকতে পারো।আর যদি নাম ধরে ডাকতে লজ্জা লাগে তাহলে ওগো হেগো বলে ও ডাকতে পারো আমি মাইন্ড করবো না।
মিষ্টি – ওগো,হেগো?
আবির – হুম গো
মিষ্টি – বজ্জাত পুলা আজ যদি তুষারের র্বাথডে না হতো তাহলে তোর ওগো হেগো বের করতাম। চুপচাপ কেক কাটতে চলে আয় না হলে এমন হাল করবো ইজ্জত নিয়ে বাসায় ফিরতে পারবি না। তুষার এমন ফালতু পুলাপাইনের সাথে ফ্রেন্ডশিপ যে কেন করো আল্লাহ ই জানে।
আবির –
তুষার – মিষ্টি ও তোর বড় এসব কি বলছিস তুই। বড়দের সম্মান দিতে শিখস নাই। এক থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব দিন দিন অসভ্য হচ্ছিস শুধু। কার সাথে কি ভাবে কথা বলতে হয় তা ও জানা নেই।
মিষ্টি – তুমি আমাকে এভাবে বকাবকি করলে।আমি আর থাকব না। এখুনি বাসায় চলে যাবো।
— মিষ্টি একটু নাকি কান্না করে চলে আসতে লাগল। মিষ্টির রাগ করে চলে যাওয়া দেখে আবির উল্টো তুষারকে বকতে লাগল।
আবির – এটা ঠিক করলি না তুই আমার মিষ্টি সোনা কে কাঁদিয়ে দিলি।আজ তোর জন্মদিনে অভিশাপ দিচ্ছি তোর বউ কলো হবে, মোটা হবে, তোকে লাথি দিয়ে বেড থেকে ফেলে দিবে, তোকে না খাইয়ে রাখবে,,, আরো তোর বউ যা এখন আর বললাম না। আগে আমার মিষ্টি পাখির কাছে যাই। ইশশ মেয়েটা কান্না করতে করতে চলে গেল।
মিষ্টি,,, ও মিষ্টি,, মিষ্টি পাখি আমি আসছি তোমার চোখের পানি মুছে দিতে।
— আবির তুষারের দিকে তাকিয়ে মেয়েদের মত মুখ ভেংচি দিয়ে মিষ্টির কাছে যেতে লাগল।
তুষার – যা বাবা আমি এমন কি করলাম। যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চুর।আবির টা আস্ত একটা পাগল। মেয়েদের মত আমাকে কতগুলো অভিশাপ দিয়ে গেল তাও আবার আমার বউকে নিয়ে। আবির কি সত্যিই মিষ্টি কে ভালোবাসে নাকি এসব ওর পাগলামি?
— তুষার একা একাই হাসতে লাগল। এদিকে আবির মিষ্টির কাছে এসে দেখে মিষ্টি চুপচাপ বসে আইসক্রিম খাচ্ছে। আবির মিষ্টির পাশে গিয়ে বসলো।
আবির – মিষ্টি
মিষ্টি – আমি আপনার সাথে কথা বলব না।আপনার জন্য তুষার আমাকে এতগুলো বকা দিছে।
আবির – আমি তো কিছু করিনি। তুষার শুধু শুধু তোমাকে বকা দিছে। সত্যিই ও একটা ষাঁড়।
— তুষারকে ষাঁড় বলাতে মিষ্টি একটু আহ্লাদি সুরে বলতে লাগল।
মিষ্টি – আপনার কাছে ও মনে হয় ও একটা ষাঁড়?
আবির – মনে হওয়ার কি আছে। ও তো একটা ষাঁড় ই।ষাঁড় না হলে কি তোমার মত এত মিষ্টি একটা মেয়েকে বকা দিত?
মিষ্টি – সত্যি ই ওটা একটা বজ্জাত ষাঁড়। সারাক্ষণ শুধু আমাকে বকাবকি করে। আমার সাথে একটু ও ভালো করে কথা বলে না।
আবির – আচ্ছা তুমি তুষারের জন্য কেমন ফিল করো।মানে ওর জন্য কি তুমি অন্য রকম কিছু ফিল করো?
মিষ্টি – অন্য রকম বলতে?
আবির – আরে কি করে বুঝায় তোমাকে?
—আবিরের কথা বলা শেষ হওয়ার আগেই তুষার এসে মিষ্টির হাত ধরে ওকে নিয়ে গেল।
মিষ্টি – আমাকে এভাবে নিয়ে আসলা কেন?
তুষার – আবিরের সাথে তোর এত কিসের কথা?
মিষ্টি – আমি তোমার সাথে কথা বলব না। তুমি আমাকে শুধু শুধু বকা দিছ।
তুষার – তুই কেন বুঝিস না। তোকে বকা দিতে আমার ও তো ভালো লাগে না। আমি ইচ্ছে করে তোকে বকা দিতে চাই নি।প্লিজ রাগ করিস না আমার উপর।
মিষ্টি – সত্যি আর কোনো দিন ও বকা দিবা না তো?
তুষার – হুম আর কোনো দিন ও তোকে বকা দিব না। কিন্তু তুই আবিরের সাথে এত কথা বলবি না।
মিষ্টি – কেন?
তুষার – কেন কি? আমি বলতে না করছি তাই বলবি না। মনে থাকে যেন।
মিষ্টি – হুম
তুষার – এখন চল কেক কাটব।
— কেক কেটে সবাই অনেকক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার বাসায় চলে গেল। মিষ্টি আর তুষারের দিন গুলো বরাবরের মতই ছোট ছোট দুষ্টুমি,রাগ, ঝগড়া, মান অভিমান নিয়ে কাটতে থাকল।আবির মাঝে মাঝে মিষ্টিকে নিয়ে তুষারের সাথে কথা বলে কিন্তু তুষার আবিরের কোন কথায় পাত্তা দেয় না। তুষার ভাবে আবির হয়ত ফান করে। মিষ্টি কে শুধু ওর ভালো লাগে ও মিষ্টি কে ভালোবাসে না। অনেকেই ভালো লাগা আর ভালোবাসার মাঝে বুঝতে ভুল করে রিলেশনে জরিয়ে যায়।যার কারনে ওই সব রিলেশন গুলো বেশি দিন টিকিয়ে রাখতে পারে না। ভুল রিলেশনে জরিয়ে অনেক ছেলে মেয়ের জীবন নষ্ট হচ্ছে।

——————————————
তুষারের আম্মু – তোর আন্টি এসে বলে গেছে রাতে মিষ্টি কে একটু পড়াতে যেতে। ও নাকি কিছুই বুঝে না।
তুষার – আমি ওকে কি পড়াব ও কর্মাস নিয়ে পড়ে আর আমি সাইন্স নিয়ে পড়ছি।
তুষারের আম্মু – পরেও কিছু কিছু তো পড়াতে পারবি?
তুষার – হুম তা তো পারব ই।
আম্মু – তাহলে যা গিয়ে দেখ মেয়েটা কি বুঝে না। স্কুলে থাকতে তো অনেক ভালো রেজাল্ট করত।
তুষার – ভালো না ছাই। ওর রেজাল্ট তো আমি ছাড়া কেউ জানে না। জানলে বুঝতে পারতা ও কত ভালো স্টুডেন্ট।
আম্মু – কি হলো এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস।মিষ্টি কে পড়াতে যা।
তুষার – হুম যাচ্ছি তো।

— তুষার মিষ্টির রুমে এসে দেখে মিষ্টি কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে হাতে ফোন আর বই সামনে নিয়ে বসে আছে। তুষার মিষ্টির পিছনে গিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলো। কিন্তু মিষ্টির এই দিকে লহ্ম্য থাকলে তো। মিষ্টি তো মনের আনন্দে ফোনে ফেসবুকিং করেই যাচ্ছে।
তুষার – ওই বই নিয়ে বসে ফোনে কি?
— হঠাৎ করে তুষারের কথা শুনে মিষ্টি কিছুটা ভয় পেয়ে লাফিয়ে উঠল। মিষ্টি তুষারের দিকে তাকিয়ে বত্রিশ দাঁত বের করে একটা হাসি দিয়ে বললো।
মিষ্টি – তুমি এখানে। এসময়ে তুমি আমার রুমে কেন আসছ?
তুষার – আন্টি নাকি আম্মুকে গিয়ে বলে আসছে রাতে আমি তোকে পড়াতে আসতে।
মিষ্টি – তুমি আমাকে কি পড়াবা।
আমার সাবজেক্ট গুলা তুমি পারবা নাকি?
তুষার – পারব কি পারব না তা পরে আগে তুই বল। তুই কানে ইয়ার ফোন, হাতে ফোন আর সামনে বই নিয়ে কি করতে বসছিস?
মিষ্টি – পড়তে।
তুষার – কেমন যে পড়তে বসছিলা তা তো আমি দাঁড়িয়ে দেখলাম ই।
মিষ্টি – আরে তুমি আসা আগ পর্যন্ত পড়ছি।তার পর ফোন হাতে নিয়ে দেখি কত গুলা মেসেজ। এফ বি তে একটা ছেলে পাগল করে দিচ্ছে ওটাকেই একটু শায়েস্তা করছিলাম।
তুষার – তুই ছেলেটার সাথে কথা না বললে কি ছেলেটা তোকে ডিস্টার্ব করে?
মিষ্টি – আমি এই ছেলের সাথে কথা বলিনি তো। সত্যি বলছি।
তুষার – হুম ভালো।আর শুধু এই ছেলে কেন কোনো দিন যদি শুনি কোনো ছেলের সাথে কথা বলেছিস তাহলে আন্টি কে বলে তোর ফোন নিয়ে নিব।
মিষ্টি –
তুষার – এখন বল কি বুঝিস না। কোন সাবজেক্ট এ প্রব্লেম?
মিষ্টি – আমার তো সব সাবজেক্ট ই প্রব্লেম। কিছুই তো পারি না।
তুষার – ভালো করে না পড়লে প্রব্লেম তো থাকবেই।
মিষ্টি – এত পড়ে কি হবে একদিন তো মরে ই যাব।
এখন এই দুদিনের জীবনে এত না পড়ে স্বাদ বাচ্চা কাচ্চা নাতি নাতনি নিয়ে সুখে সংসার করব। তা না করে এতো কষ্ট করে পড়তে হবে। ভাল্লাগে আর
তুষার – চুপ বেয়াদব একটা থাপ্পড় দিব।এখনই সংসারের চিন্তা। লাইফে কি করবি তুই। তোর মত মেয়েরা স্টাডি কমপ্লিট করে জব করার কথা ভাবে। আর তুই তা না করে সংসার নিয়ে ভাবছিস।
মিষ্টি – আমি এত পড়তে পারব না। আর আমি কেন জব করবো।জব তো করবে আমার জামাই আমি ওর টাকায় বসে বসে খাব।
তুষার – মিষ্টিই..ই..ইই
মিষ্টি – আচ্ছা তুমি তো আমাকে পড়াতে আসছ তাই না?
তুষার – তোর কি মনে হয় আমি এখানে তোর ফালতু কথা গুলো শুনতে আসছি।
মিষ্টি – আচ্ছা তাহলে আমার একটা কোয়েশন ছিল।
ওটার আন্স দিবে?
তুষার – হুম বল কি কোয়েশন?
মিষ্টি – স্টুডেন্ট কাকে বলে?
তুষার – তোর ফালতু কোয়েশন আর তুই।
মিষ্টি – আমি জানতাম তুমি পারবা না।পারো না দেখে এসব বলছ যাতে করে তোমার আন্স দিতে না হয়।
তুষার – হুম আমি পারি না তুই ই বলে দে।
মিষ্টি – আচ্ছা আমি ই বলে দেই।যে এক ক্লাসে ফেল করে দুই – তিন বছর থাকে তাকেই স্টুডেন্ট বলে।
আচ্ছা তুমি কি কোনো ক্লাসে দুই বার ছিলা?
তুষার – না। তোর মাথায় এসব ফালতু কথা কে ডুকায় বল ত?
মিষ্টি – তার মানে তো তুমি এখন ও স্টুডেন্ট ই হতে পারলা না। শুধু শুধু কষ্ট পরে এত গুলা ক্লাস পাশ করে গেলা।
তুষার – প্লিজ মিষ্টি আমার মাথা গরম করবি না। তোর ফালতু পেচাল গুলো তোর কাছেই রাখ।
মিষ্টি – দিন দিন পড়া নামে নতুন প্যারা গুলো আমার একদমই ভালো লাগে না। আমাদের এক এক স্যার যদি নিদিষ্ট এক সাবজেক্ট পড়ায় বাকি গুলো না পারে তাহলে আমরা কেমন করে সব গুলো সাবজেক্ট পারব।
তুষার – স্যার রা সব গুলো সাবজেক্ট পড়ে ই নিদিষ্ট যে কোনো এক সাবজেক্ট এর স্যার হয়েছে। এমনি এমনি তো আর স্যার হয়নি।
মিষ্টি – হায় কষ্ট। আমার কষ্ট তুমি কি বুঝবা।পড়তে বসলে যে আমার ঘুম আসে, খোদা লাগে,এটা ওটা দুনিয়ার কত কাজের কথা মনে পড়ে তা কি তুমি জানো।আমার ফোন বাবু টা যে আমার দিকে অসহায় এর মত তাকিয়ে থাকে তা কি তুমি বুঝ। আমার কোনো খুজ খবর কি তুমি রাখ?

চলবে 💕