💕ভালোবাসি💕 (দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প) Samira Afrin Samia #নিপা পর্বঃ ৭

💕ভালোবাসি💕
(দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প)
Samira Afrin Samia
#নিপা
পর্বঃ ৭

মিষ্টি – না না নাহহহহ আমি কিছু জানি না আজকে আমাকে বাইক চালানো শিখাতে ই হবে। আজ যদি তুমি আমাকে বাইক চালানো না শিখাও তাহলে আমি তোমার সাথে জানুর রিলেশন করিয়ে দিব না। আর জানু কে তোমার আগের গফ গুলোর কথা বলে দিব।আর তুমি যে ঐ দিন তোমার ফ্রেন্ডের সাথে বাজি ধরে সিগারেট খাইছিলা তা আন্টি কে বলে দিব।
তুষার – ওই থাম কুত্তি। আমার আগের গফ মানে।আমি আগে কি আরও রিলেশন করছি?
মিষ্টি – করো নাই?
তুষার – করছি?
মিষ্টি – রিলেশন না করলে ঐ দিন কফি শপের ওই মেয়েটা কে ছিল?
তুষার – ওটা আমার গফ এই কথা তোকে কে বলছে।আমি কোনো দিন বলছি ওই মেয়ে আমার গফ ছিল? বেশি বুঝিস মাথার উপর থেকে তুলে একটা আছাড় মারব।
মিষ্টি – আমাকে বকা দিলে কিন্তু এখুনি গিয়ে আন্টি কে তোমার সিগারেট খাওয়ার কথা বলে দিব।
তুষার – ব্ল্যাকমেইল কি ভাবে করতে হয় তা কেউ তোর কাছ থেকে শিখুক।
মিষ্টি – আমাকে বাইক চালানো শিখাবা নাকি না?
তুষার – আমার একটাই বাইক। এটা ভাঙ্গলে কিন্তু আব্বু আমাকে আর বাইক কিনে দিবে না।
মিষ্টি – আরে আমি তোমার বাইক ভাঙ্গব না তো। শুধু একটু চালাব।
তুষার – হুম জানি তো।।। আল্লাহ ই জানে আজ আমার বাইকের কপালে কি লিখা আছে?
মিষ্টি – কি হলো হা করে দাঁড়িয়ে না থেকে পেছন থেকে বাইক টা ধরো।
তুষার – দুই মিনিট দাড়া শেষ বারের মত আমার বাইক টা কে সুস্থ অবস্থায় দেখে নেই।এর পর আমার বাইক কোন হসপিটালে থাকবে তা আল্লাহ ই জানে।
মিষ্টি – আরে চিন্তা করো না। আমি বাইক চালাতে পারব তো।
তুষার – আগে কোনো দিন ও চালাইছিস?
মিষ্টি – না। কিন্তু আমি সাইকেল চালাতে পারি।
তুষার – সাইকেল আর বাইক কি এক?
মিষ্টি – এত কথা না বলে এখন আমাকে বাইক চালানো শিখাও তো।
.
.
.
.
কিছুক্ষণ পর…….,,,,

আ,,,,আ,,,,,আ,,হ,,,আহহহহহ,,,,,,,,,,,,

মিষ্টি – কি হলো কিছুই মনে নেই। সঠিক বলতে পারবো না কি হয়েছিল।
চোখ খুলে আমি নিজেকে হসপিটাল এর বেডে দেখলাম। আম্মু আব্বু আন্টি আঙ্কেল তুষার সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আম্মু আর তুষারের ফেস দেখে বুঝতে পারলাম কিছু একটা তো হয়েছে। আর যা হয়েছে তা বড় কোন কিছুই হয়েছে।তুষার তো আমাকে চোখ দিয়েই গিলে খাবে মনে হচ্ছে। আম্মু ও তো কেমন করে তাকিয়ে আছে।এখন আমাকে বাঁচতে হলে একটু ড্রামা করতে হবে। একটু না অনেকটাই ড্রামা করা লাগবে। তা না হলে আম্মু আর তুষার আমার চাটনি বানিয়ে তেঁতুলের সাথে খাবে। (মনে মনে)

আমি কোথায়?
তোমরা কে?
আমাকে এখানে নিয়ে আসছ কেন?
কি হয়েছে আমার?
মিষ্টির আম্মু – চুপ। আর একটা কথা বললে থাপ্পড় দিয়ে সব কয়টা দাঁত ফেলে দিব। ছেলেটার বাইক ভেঙ্গে এখন আবার নাটক করা হচ্ছে। তোর এসব ড্রামা কেউ বুঝতে না পারলেও আমি ঠিকই বুঝবো।তুই যে কত বড় ড্রামাবাজ মেয়ে তা আমার থেকে ভালো কেউ জানবে না। ফাজিল মেয়ে শেষ মেষ ছেলেটার বাইকের উপর নজর দিলি কেন?
মিষ্টি – আম্মু এসব কাকে বলছে? আমাকে নাকি অন্য কাউকে?,,, এমন একটা ভাব নিয়ে মনযোগ দিয়ে আম্মুর কথা গুলো শুনছি। মাঝে মাঝে আম্মুর কথা গুলো শুনে মনে হয় আমি আম্মুর আসল মেয়ে না। এমন মনে হয় যেন ছোট বেলায় আম্মুকে থুক্কু আমাকে কোনো মেলা থেকে কুড়িয়ে আনছে। সত্যিই কি আমি আম্মুর নিজের মেয়ে না?
যদি নিজের মেয়ে হতাম তাহলে ওই ষাঁড় টার একটা বাইকের জন্য আমাকে এমন ভাবে এত গুলো কথা শুনাত?
আমি না চাইতে ও ষাঁড় টার দিকে আমার চোখ চলে গেল। ষাঁড় টা চোখ দুটো আগুনের ঘোলা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি শুধু তুষারের দিকে তাকিয়ে ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বত্রিশ দাঁত বের করে একটা হাসি দিলাম।
তুষারের আম্মু – এভাবে মেয়েটা কে বকছিস কেন? দোষ কি শুধু তোর মেয়ের একার।আমার ছেলের কি কোন দোষ নেই?
ও মিষ্টি কে বাইক চালাতে দিল কেন?
মিষ্টি না হয় ছোট তাই বাইক চালানো জন্য জিত করেছে। ও মিষ্টি কে না করতে পারল না। ওর জন্যই ওর বাইকের এই অবস্থা এতে মিষ্টির কোন দোষ নেই।
তুষার – আম্মু আমি না করলে কি তোমার আদরের মিষ্টি আমার কথা শুনে? আমার বাইক ভেঙ্গে এখন তো সব দোষ আমারই হবে। তোমাদের মিষ্টি তো দুধে ধুঁয়া তুলসি পাতা।
তুষারের আম্মু – তুই চুপ কর। তোর কোন কথা আমি শুনতে চাই না।
মিষ্টি – ইশশশ আন্টি তুমি কত ভালো গো।তুমি আমার এই খারুস আম্মুর থেকে অনেক ভালো।আমাকে কত ভালোবাসো।এই দুনিয়াতে তুমিই আমার এক মাত্র আপন জন। (মনে মনে)

আন্টি আমি তুষার কে না করছিলাম আমি বাইক চালাবো না। কিন্তু তুষারই জোর করলো আমাকে বাইক চালানোর জন্য।
মিষ্টির আম্মু – মিথ্যুক মেয়ে। আর কত মিথ্যা বলবি।নিজের মার সাথে তো সত্যি বলতে পারিস।
— মিষ্টি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তুষারের আম্মুর দিকে তাকালো
মিষ্টি – আন্টি।
তুষারের আম্মু – তুই শুধু শুধু মেয়েটা কে মিথ্যুক বলছিস কেন?
আমি জানি আমার মিষ্টি মা মিথ্যা বলে না।
— তুষার শুধু রাগে কটমট করছে। ওর চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। এখন যদি মিষ্টি কে একা পেত তাহলে তুষার মিষ্টির কি অবস্থা করত তা ও নিজেও জানে না।
একে তো ওর পছন্দের বাইক ভেঙ্গে ফেলছে তার উপর আবার মিথ্যে বলছে।
তুষার – মিথ্যুক মেয়ে তোকে হাতের কাছে পেয়ে নেই তোর চৌদ্দ গোষ্ঠীর নাম যদি না ভুলিয়ে দিছি তাহলে আমার নাম ও তুষার না।(মনে মনে)
মিষ্টি – আমি আর জীবনেও তোমার সামনে একা পড়লে তো চৌদ্দ গোষ্ঠীর নাম ভুলাবে।(মনে মনে)
তুষার -আমার সামনে না পড়ে যাবি কোথায় তুই।তোকে তো আমি দেখে নিব।আমি তোকে বাইক চালানোর জন্য জোর করছি তাই না? (মনে মনে)
মিষ্টি – আরে এমন একটু মিথ্যা না বললে তো আম্মু আব্বু বাসায় জায়গা দিত না। (মনে মনে)
তুষার – হুম তোকে হাতের কাছে পেলে ভালো করে মিথ্যা বলা শিখিয়ে দিব।(মনে মনে)
—মিষ্টির এমন মনে হচ্ছে যেন তুষার এই কথা গুলো মনে মনে বলছে না। মিষ্টি তুষারের মুখ দেখে ওর মনের সব কথা পড়ে নিচ্ছে। তুষারের রাগ দেখে মিষ্টি ভয় ও পাচ্ছে। কারণ তুষার যা বলে তাই করে।
মিষ্টি – আম্মু,,,,,,,,
মিষ্টির আম্মু – তুই একদম আমাকে আম্মু বলে ডাকবি না।
মিষ্টি – তাহলে আন্টি বলে ডাকি আম্মু?
মিষ্টির আম্মু – তোর লজ্জা বলতে কিছুই নেই তাই না?
মিষ্টি – আন্টিই,,,,,ই,,,
তুষারের আম্মু – দেখ আশা তুই যদি মিষ্টি কে আর কিছু বলছিস তাহলে কিন্তু তোর সাথে আমার অনেক ঝগড়া হবে।
— মিষ্টির আব্বু আর তুষারের আব্বু ডাক্তারের সাথে কথা বলতে গেছিল।ক্যাবিনে এসে দেখে মিষ্টির আম্মু আর তুষারের আম্মুর মাঝে প্রায় ঝগড়া বেঁধে গেছে। তুষার ওর আম্মু আর আন্টির ঝগড়া দেখে ক্যাবিন থেকে বের হতে নিচ্ছিল।
মিষ্টির আব্বু – তুষার তোমার বাইক আমি ঠিক করে দিব।তুমি চিন্তা করো না। কালকেই বাইক ঠিক হয়ে যাবে।
তুষারের আব্বু – আরে আপনার ঠিক করিয়ে দিতে হবে না। ওই তো একটু ই শুধু কাঁচ ভাঙ্গছে ঐটা আমি ই ঠিক করিয়ে দিব।
— কারো কোন কথা এখন তুষারের কানে যাচ্ছে না। ওর শুধু বার বার মিষ্টির দিকে চোখ চলে যাচ্ছে। মিষ্টি ও তুষার কে দেখে বত্রিশ দাঁতের একটা হাসি দিচ্ছে। যা দেখে তুষারের আরও বিরক্ত লাগছে।
তুষার – এখানে আর দুই মিনিট দাঁড়ালে এই মেয়েটাকে মাথার উপর থেকে তুলে একটা আছাড় মারব। তাই ভালো হবে আমি এখান থেকে চলে ই যাই। (মনে মনে)
আম্মু আমি বাসায় গেলাম।
মিষ্টি – আল্লাহ এই জীবনে আমায় যেন আর তুষারের সামনে পড়তে না হয়।(মনে মনে)
উফ আম্মু হাতে ধরবা না ব্যাথা লাগে।
মিষ্টির আম্মু – আরও বাইক চালানো শিখতে যা।
মিষ্টি – এটা কি আমার আম্মু। নাকি ছোট বেলায় মেলায় হারিয়ে যাওয়া আম্মুর জমজ বোন। আমার আম্মু আমাকে একটু ও ভালোবাসে না। আল্লাহ আমাকে তুলে নেও না কেন?

কিছু দিন পর মিষ্টিদের বাসায়,,,,,,,, ★★
মিষ্টি – ওই ষাঁড় আমার হাত ছাড় বলছি। আমি তোকে মাডার কেসে জেলে দিব।
তুষার – কি ভাবছিলি কোন দিন আমার সামনে পড়বি না। ঐ দিন আমার বাইক ভাঙ্গছস এখন আমি তোর হাত ভাঙ্গব।
— এই বলে তুষার মিষ্টির হাতে আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।
মিষ্টি – আল্লাহ গো।কেউ এই ষাঁড়ের হাত থেকে আমাকে বাঁচাও। এই ষাঁড় আমাকে মেরে ফেললো গো।আমার তো এখনও নাতি নাতনির মুখ ও দেখা হলো না এখনই আমাকে মেরে ফেলল।আমি কিন্তু জানুর সাথে তোমার রিলেশন করাব না।
তুষার – তোর হাত ছাড়তে পারি একটা শর্তে।
মিষ্টি – আমি সব শর্তে রাজি আগে আমার হাত ছাড়ো।
তুষার – সব না শুধু একটা শর্তে রাজি হলেই হবে।
মিষ্টি – হ আমি রাজি।
— তুষার মিষ্টির হাত ছেড়ে দিয়ে বেডে গিয়ে বসলো। মিষ্টি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে ফু দিচ্ছে আর বিরবির করে যেন কি বলছে।
তুষার – এদিকে আয়।
মিষ্টি – আল্লাহ আমার হাতটা প্রায় ভেঙ্গেই গেছিল।
কি বলো।
তুষার – তুই দু’দিনের ভিতর আমার সাথে জান্নাতের রিলেশন করিয়ে দিবি।মনে থাকে যেন। তা না হলে,,,,
মিষ্টি – থাক আর কষ্ট করে বলতে হবে না আমি বুঝে গেছি।
তুষার –

★ ★ ★ ★ ★ ★ ★ ★ ★ ★ ★ ★ ★

মিষ্টি – জানুকে পটাতে বেশি কষ্ট হয়নি। শুধু কয়েকটা মিথ্যা কথা বলতে হয়েছে।এছাড়া তুষার ছেলে হিসেবে কোন দিক দিয়েই খারাপ না। আর দেখতে ও মাশাল্লাহ। আমি ওকে খেপানোর জন্য ষাঁড় বলে ডাকি।কিন্তু ও কোন দিক দিয়ে ফিল্মের হিরোদের থেকে কম না। এই লম্বা তাল গাছের মতো, সাদা বকের মত সুন্দর, বাঁশের মত চিকন।জানুর সাথে অনেক মানাবে।
জানু ও তুষার কে ফাস্ট দেখেই লাইক করে ফেলছিল। যার কারনে জানুকে পটাতে তেমন ও সময় লাগেনি। তুষারের জন্য জানুর সাথে যা যা মিথ্যে বলতে হয়েছে omg কি আর বলবো। তুষারের যা যা প্রশংসা করছি।জানু না পটে যাবে কোথায়?

আবির – কিরে শালা কই থাকিস তুই?
তুষার – এই কয়দিন বাসায় ই ছিলাম। মিষ্টি ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছিল।
আবির – কি বলছিস তুই। আমার মিষ্টি পাখিটার এক্সিডেন্ট হয়েছিল আর তা তুই আমাকে জানাস নি?
তুষার – তোকে জানালে কি করতি তুই?
আবির – তুষার তুই কি চাস না মিষ্টি আমাকে ভালোবাসুক?
তুষার – আমি কেন চাইব না?
আবির – যখনই তোকে মিষ্টির কথা বলি তুই শুধু কথা এড়িয়ে যাস।আমার মনে হয় তুই আমাকে বিশ্বাস করিস না।
তুষার – আরে তেমন কিছু না। মিষ্টি কে নিয়ে আমার একটু চিন্তা হয়। ও অনেক দুষ্টু, মনের দিক দিয়ে এখনও ছোট বাচ্চা বললেই চলে।সবাই কে খুব সহজে বিশ্বাস করে ফেলে।আর তাই ও মানুষ চিনতে ভুল করে।আমি চাই না ও এসব রিলেশনে জড়িয়ে নিজের ফিউচার নষ্ট করুক বা কোন কষ্ট পাক।
আবির – তোর কি মনে হয় আমি মিষ্টি কে কষ্ট দিব?
তুষার – তা জানি না। কিন্তু আমি কোন দিন মিষ্টি কে একা ছাড়তে পারব না।
আবির – ওকে একা ছাড়তে কে বলছে শালা। বরং আমার সাথে মিষ্টির বিয়ে হলে তুই সারা জীবন মিষ্টির পাশে থাকতে পারবি।কারণ আমি তো তোকে আর হিংসে করতে পারব না।
তুষার – আচ্ছা মিষ্টি যদি তোর সাথে রিলেশনে যেতে চায় তাহলে আমার কোন প্রব্লেম নাই।

চলবে 💕