💕ভালোবাসি💕 (দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প) Samira Afrin Samia #নিপা পর্বঃ ৮

💕ভালোবাসি💕
(দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প)
Samira Afrin Samia
#নিপা
পর্বঃ ৮

তুষার মিষ্টি কে বলে গেছে রেডি হয়ে থাকতে বিকালে মিষ্টি কে নিয়ে বের হবে।
মিষ্টি – আজ শাড়ি পড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু আমি তো শাড়ি পড়তে পারি না। আম্মু কে বলি।
আম্মু,, আম্মু,,,,,, আম্মু কই তুমি?
তুষার – ষাঁড়নীর মত চেঁচাস না আন্টি আমাদের বাসায় গেছে।
মিষ্টি – আম্মু কে একটু ডেকে দাও তো দরকার আছে।
তুষার – তুই এখন ডাকতে ডাকতে মারা গেলে ও আন্টি আসবে না। আন্টি আম্মুর সাথে রিপা আপুর বাবু দেখতে যাবে।
মিষ্টি – আমি ও যাব।আমি রিপা আপুর বাবু কে এখনও দেখিনি।
তুষার – কই যাবি তুই?
আমি বলছিলাম না আজ তোকে নিয়ে বের হবো?
মিষ্টি –
তুষার – আন্টি কে ডাকছিলি কেন?
মিষ্টি – শাড়ি পড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আম্মু নেই এখন আমাকে কে শাড়ি পড়িয়ে দিবে?
তুষার – শাড়ি পড়তে হবে না অন্য কিছু পড়ে নে।লেট হয়ে গেলে জান্নাত রাগ করবে।
মিষ্টি – জানু রাগ করবে কেন?
তুষার – আরে মাথা মোটা জান্নাত আমাদের জন্য শপিং মলে ওয়েট করতেছে।
মিষ্টি – তোমরা শপিং করতে যাবে তাহলে আমাকে যেতে বললা কেন?
তোমাদের মাঝে আমি কি করবো?
তুষার – আমি বলছি তাই তুই আমাদের সাথে যাবি।কোন কথা না।
দে আমি শাড়ি পড়িয়ে দেই।
মিষ্টি – তুমি শাড়ি পড়াতে পারো নাকি?
তুষার – আমি কি তোর মত মাথা মোটা। আমি সব কিছুতেই পারফেক্ট।
— মিষ্টি কিছু বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। জান্নাত ও ওদের সাথে যাবে এই কথা শুনার পর থেকেই মিষ্টির কেমন যেন লাগছে। অনুভূতি টা কি রাগ,অভিমান নাকি হিংসে মিষ্টি তা নিজেও বলতে পারছে না। মিষ্টি কে চুপ থাকতে দেখে তুষার বললো।

কিরে গাধার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেন। কোন শাড়ি পড়বি ওটা নিয়ে আয় আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।
মিষ্টি – আমি শাড়ি পড়বো না।
তুষার – কেন? একটু আগে না বললি শাড়ি পড়বি।
মিষ্টি – তুমি শাড়ি পড়ালে আমার লজ্জা লাগবে।
— এটা বলে মিষ্টি মাথা নিচু করে নিল।ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে মিষ্টি। তুষার মিষ্টির দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো মিষ্টি লজ্জা পাচ্ছে। তুষার মনে মনে ভাবছে সেই ছোট মিষ্টি টা কবে এত বড় হয়ে গেল। এখন তো দেখছি পিচ্চি টা কথায় কথায় লজ্জা পায়।
তুষার – ওরে আমার লজ্জাবতী লতা রে। একটা থাপ্পড় দিব এত পিচ্চি মেয়ে তার আবার লজ্জা।ওই তুই কবে থেকে লজ্জা পেতে শুরু করলি রে?
মিষ্টি –

★★★
শপিং মলে,,,,,,,,,,
তুষার – অনেকক্ষণ ধরে দেখছি মিষ্টি এক জোড়া চুড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু কিছুই বলছে না।
মিষ্টি – চুরি গুলো অনেক সুন্দর তাও আবার নীল রং এর। চুড়ি গুলো হাতে নিতে যাব ঠিক তখনই জানু চুড়ি গুলো নিয়ে গেল।
জান্নাত – তুষার দেখো চুড়ি গুলো কত সুন্দর মিষ্টি দেখ।আমি এগুলো নেই?
মিষ্টি – হুম অনেক সুন্দর। এগুলো তোকে অনেক মানাবে।
জান্নাত – আচ্ছা ভাইয়া এরকম আর এক জোড়া চুড়ি দিন তো।
দোকানের ছেলেটা – আপু এমন চুড়ি এই এক জোড়া ই ছিল।আর নেই।
জান্নাত – আর নেই? আচ্ছা তাহলে আমি এগুলো নিব না।
মিষ্টি – কেন নিবি না?
জান্নাত – তুই নিবি না আমি কি একা নিব? দেখলি তো এমন এই এক জোড়া চুড়ি ই আছে। আমি নিলে তোর ও নিতে হবে।
মিষ্টি – তুই এগুলো নে।আমি নাহয় অন্য এক জোড়া নিয়ে নিব।আর এগুলো আমার কাছে এতটা ও ভালো লাগে নি।
তুষার – এটা কি হলো?
চুড়ি গুলো তো মিষ্টি নিতে যাচ্ছিল।কিন্তু জান্নাত নেওয়া তে মিষ্টি ওকে দিয়ে দিল কেন?
এমনিতে তো কাউকে কিছু দেয় না যা পছন্দ হয় তা ঝগড়া করে হলেও নিয়ে নেয়।( মনে মনে)

—শপিং শেষ করে তুষার মিষ্টি আর জান্নাত কে বাসায় চলে যেতে বললো।
তুষার – মিষ্টি তুই আর জান্নাত যা। আমার একটা কাজ আছে। ওটা করে আমি যাব।

–রাতে মিষ্টি ওর রুমে বসে আছে। আর বসে বসে ভাবছে
মিষ্টি – আজ কাল কি হয়ছে আমার।এমন লাগে কেন। আমি কি হিংসুটে হয়ে যাচ্ছি?
তুষার – কোন ভাবনার সাগরে ডুবে গেলি?
— তুষারের কথা শুনে মিষ্টি তার ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলো। মিষ্টি তার ভাবনায় এতোটা ই ডুবে ছিল। যে তুষার কখন এসে ওর পাশে বসলো ওর টের ই পেল না।
মিষ্টি – ভাবনার সাগরে ডুববো কেন?
তুষার – আমি কি জানি?
মিষ্টি – কি হয়েছে বলো?
তুষার – কিছুই হয়নি।
মিষ্টি – তুমি কখন আসলে। আর তোমার হাতে এগুলো কি?
তুষার – আপনি যখন গভীর মনযোগ দিয়ে কিছু ভাবছিলেন আমি তখনই আসছি।কিন্তু আপনি আমাকে দেখতেই পাননি।
মিষ্টি – ধুর।
তুষার – এই নে এগুলো তোর জন্য।
মিষ্টি – কি এগুলো?
তুষার – তুই নিজেই দেখ কি এগুলো।
— মিষ্টি তুষারের হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে খুলে দেখল এক জোড়া চুড়ি।
মিষ্টি – এটা তো ওই চুড়ি গুলো যা শপিং মলে দেখছিলাম। এটা কি আমার জন্য?
তুষার – না এটা তোর জন্য না। এটা তো মিষ্টি নামের দু’পায়ের একটা গাধীর জন্য।
মিষ্টি – কিন্তু এমন চুড়ি তো এক জোড়া ই ছিল। তাহলে এগুলো কোথা থেকে?
তুষার – অনেক দোকান খুঁজার পর পাইছি।ওই চুড়ি গুলো তোর ভালো লাগছিল পরেও তুই ওগুলো জান্নাত কে দিয়ে দিলি।
মিষ্টি – আচ্ছা তুমি জানলা কি করে ওই চুড়ি গুলো আমার ভালো লাগছিল?
তুষার – তোর ভালো লাগা খারাপ লাগা সব আমি জানি। তোর বলে দিতে হবে না। তোর একটা জিনিস ভালো লাগছে আর তা আমি এনে দিব না?
পৃথিবীর যে কোন জায়গা থেকে হলেও এনে দিতাম। এই চুড়ি গুলো তো কয়েক দোকান খোঁজার পরই পেয়ে গেলাম।
মিষ্টি – আমার ভালো লাগা খারাপ লাগা তুমি সব থেকে
ভালো করে জানো এটা আমি জানি। কিন্তু আমার না বলাতে ও যে জেনে যাবে তা জানতাম না। চুড়ি গুলো সত্যিই অনেক ভালো লাগছিল।
তুষার – একটা কথা বল তো।
মিষ্টি – হুম
তুষার – তোর যা ভালো লাগে তা তুই যে ভাবেই হোক নিয়ে ছাড়িস। তাহলে আজ এই চুড়ি গুলো কেন নিলি না?
মিষ্টি – চুড়ি গুলো তো জানুর ও অনেক ভালো লাগছিল। আর দোকানে তো এমন আর কোন চুড়ি ই ছিল না। জানু আমার কথা ভেবে চুড়ি গুলো নিতে চাচ্ছিল না। তখন ওই চুড়ি গুলো আমি জানুর কাছ থেকে কি করে নিয়ে আসতাম তুমি ই বলো?
মিষ্টি – হুম ওর ও ভালো লাগছিল। কিন্তু তুই তো আগে দেখছিলি।আর জান্নাতের যা ভালো লাগবে তা সব কি তুই তাকে দিতে পারবি?
মিষ্টি – আমার দেওয়ার মতো সাধ্য থাকলে আমি ঠিক ই দিব।আমার ফ্রেন্ডদের জন্য আমি সব করতে পারি। ওদের খুশি মানেই আমার খুশি।
— তুষার মিষ্টির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর ভাবছে।
তুষার – কি বলবো মেয়েটা কে?
বাহির থেকে যেমন দুষ্টু, চঞ্চল,ঝগড়ুটে মনের দিক থেকে ঠিক ততটাই ভালো। (মনে মনে)
এখন আমি যাই।
মিষ্টি – হুম। যাওয়ার সময় আম্মু কে বলে যেও।
তুষার – আচ্ছা।

তুষার আর জান্নাতের রিলেশনের তিন মাস ★★★
—এখন কেনই যেন মিষ্টি তুষার আর জান্নাত কে এক সাথে দেখতে পারে না। ওদের এক সাথে দেখলে মিষ্টির খারাপ লাগে কষ্ট হয়। জান্নাত মিষ্টির বেস্টু পরেও কেন জান্নাত কে তুষারের সাথে দেখতে ভালো লাগে না।
মিষ্টি ক্লাসে বসে এমন অনেক কথা ভাবছে।
হঠাৎ করে জান্নাতের ডাকে মিষ্টির মনে হলো ও যে ক্লাসে বসে আছে।
জান্নাত – মিষ্টি আজ বিকেলে আমার সাথে একটু পার্কে যাবি?
মিষ্টি – কেন?
জান্নাত – আসলে আজ তুষারের সাথে পার্কে দেখা করার কথা।
— জান্নাতের মুখে তুষারের কথা শুনে মিষ্টি হঠাৎ করে রেগে গেল।
মিষ্টি – আমাকে বলিস কেন। তোরা যা। তোদের মাঝে আমি কাবাবে হাড্ডি হবো কেন?
— মিষ্টি এক দমে কথা গুলো বলে জান্নাত কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেল।
জান্নাত মিষ্টির চলে যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।
জান্নাত – এর আবার কি হলো?

————————————-
মিষ্টি – এখন আর আমি তুষারদের বাসায় তেমন যাই না। ওর সাথে দেখা হয় না এক সপ্তাহ হবে। তুষারের সাথে আগের মত কথা বলি না। বাসা থেকে ও এত বের হয় না।
আমি বুঝতে পারছি না আমার সাথে কি হচ্ছে এসব?

বিকেলে আম্মুর অনেক বার বলাতে আন্টির সাথে দেখা করতে যাই।
আন্টি – কিরে মিষ্টি আমাদের এভাবে ভুলে গেলি কেন?
মিষ্টি – না আন্টি ভুলি নাই তো। একটু পড়ার চাপ বেশি হয়ে গেছে তাই বাসা থেকে বের হই না।
আন্টি – আচ্ছা এদিকে আয় আর বস এখানে তোর চুলে তেল দিয়ে দেই।
মিষ্টি – না আন্টি এসব তেল টেল আমি দেই না। আমার তেল দিলে কেমন কেমন লাগে।
আন্টি – বেশি কথা না বলে চুপচাপ বস দেখি।
মিষ্টি – না আন্টি।
আন্টি – এদিকে আসতে বলছি তো।
— তুষারের আম্মু মিষ্টির চুলে তেল দিয়ে দিচ্ছে আর মিষ্টি এটা সেটা কত কথা বলে যাচ্ছে। দুই তিন মিনিট চুপ থাকার মেয়ে মিষ্টি না। সারাক্ষণ ই বকবক করতেই থাকে।
মিষ্টি – আচ্ছা আন্টি তোমার আর আঙ্কেলের তো লাভ ম্যারেজ হয়েছিল তাই না?
আন্টি – হুম
মিষ্টি – তোমাদের লাভ স্টোরি একটু বলো না। কে আগে প্রোপজ করছিল। ফাস্ট কোথায় দেখা হয়ছিল।তুমি কি ভাবে বুঝলে তুমি যে আঙ্কেল কে লাভ করো।বলো না আন্টি।
আন্টি – আচ্ছা বাবা বলছি।
মিষ্টি – হুম
— মিষ্টি ওর আন্টির কাছ থেকে আন্টি আর আঙ্কেলের লাভ স্টোরির কথা শুনছে।
আন্টি – আমি যখন বুঝতে পারছি আমি তোর আঙ্কেল কে ভালোবাসি তখন আমি নিজেই তোর আঙ্কেল কে আমার মনের কথা বলে দেই।
মিষ্টি – তুমি যে আঙ্কেল কে ভালোবাস তা বুঝছো কি ভাবে?
আন্টি – আরে পাগলী মেয়ে ভালোবাসার অনুভূতি টাই এমন যেটা এমনিতেই বুঝা যায়।
মিষ্টি – আচ্ছা আন্টি আমি যদি কাউকে ভালোবাসি তা বুঝবো কি ভাবে?
আন্টি – তুই যখন কাউকে ভালোবাসবি তখন সব সময় তার কথাই ভাববি।ওই মানুষ টার ভালো দিক খারাপ দিক সব কিছুই তোর কাছে ভালো লাগবে। তার সাথে কাটানো প্রতি টা মুহূর্ত জীবনের সব থেকে ভালো ও সুন্দর মুহূর্ত বলে মনে হবে। তোর ভালোবাসার মানুষের সাথে অন্য কোন মেয়েকে দেখলে তোর ভালো লাগবে না। তুই চাইবি সে যাতে কোন মেয়ের সাথে কথা বলা তো দূর কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে ও না দেখে। আর ভালোবাসার মানুষ তোর সামনে আসলে তুই তাকে অনেক কিছু বলতে চাইবি কিন্তু কিছুই বলতে পারবি না।
— এভাবে আরও অনেক কথা হলো মিষ্টি আর তুষারের আম্মুর মাঝে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
মিষ্টি – আচ্ছা আন্টি এখন আমি যাই।
আন্টি – আর একটু বস তুষার আসলে ওর সাথে একবারে রাতের খাবার খেয়ে যাবি।
মিষ্টি – না আন্টি আজ যাই আজ এক দিন খাবো।

—তুষার রাতে বাসায় আসার পর তুষারের আম্মু তুষারকে মিষ্টি আসার কথা বললো।
তুষারের আম্মু – এখন আসলি আর একটু আগে আসলেই তো মিষ্টির সাথে দেখা হত।
— তুষার রুমে ছিল। মিষ্টির আসার কথা শুনে দরজার সামনে এসে র্শাট খুলতে খুলতে ওর আম্মু কে জিঙ্গেস করলো
তুষার – মিষ্টি আসছিল?
তুষারের আম্মু – হুম। এইতো একটু আগেই গেল।
তুষার – আমার কথা জিঙ্গেস করেনি?
তুষারের আম্মু – না তো। আমি বলছিলাম আর একটু বসে তোর সাথে রাতে খেয়ে যেতে। কিন্তু মিষ্টি বসলো না। আচ্ছা তোদের মাঝে কি আবার ও ঝগড়া হয়েছে?
তুষার – ঝগড়া হবে কেন আম্মু?
তুষারের আম্মু – কি জানি বাবা তোদের বেপার সেপার তোরা ই বুঝিস।কখন তোদের ঝগড়া হয় কখন তোরা ভালো থাকিস তা আল্লাহ আর তোরা ছাড়া কেউই বলতে পারবে না।
টেবিলে খাবার দিচ্ছি খেতে আয়।
— তুষারের আম্মু কিচেনের দিকে চলে গেল। তুষার র্শাট টা খুলে বেডের উপর রেখে টাওয়াল নিয়ে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে ড্রেসিনটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে আর ভাবছে।

চলবে 💕