💕ভালোবাসি💕 (দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প) Samira Afrin Samia #নিপা পর্বঃ ১০

💕ভালোবাসি💕
(দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প)
Samira Afrin Samia
#নিপা
পর্বঃ ১০

দুই দিন পর,,,,,,,,
মিষ্টি – আম্মু কই তুমি। তোমার যে এখন কি হয়েছে আল্লাহ ই জানে দুই মিনিট ও বাসায় থাকো না।
আম্মু,,,,, আম্মু,,,,
মিষ্টির আব্বু – কি এত চিৎকার করে গলা নষ্ট করছিস তোর আম্মু বাসায় থাকলে তো শুনবে। দেখ গিয়ে হয়ত বেস্টুর সাথে বসে গল্প করছে।
মিষ্টি – ইশশ আর ভাল্লাগে না। এখন আবার তুষারের বাসায় যাওয়া লাগবে।
— মিষ্টি তুষারদের বাসায় এসে দেখে তুষারের আম্মু কিচেনে রান্না করছে
তুষারের আম্মু – মিষ্টি তুই এখন আসলি??
মিষ্টি – হুম,,, আম্মু কই গো আন্টি।কখন থেকে ডাকছি ?
তুষারের আম্মু – তুষারের রুমে গিয়ে দেখ।
— মিষ্টি তুষারের রুমের সামনে গিয়ে দরজার সামনে থেকে উঁকি দিয়ে রুমে ভেতর দেখলো।মিষ্টির আম্মু তুষারের মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে।
মিষ্টি – কি হলো ষাঁড় টা শুয়ে আছে কেন?( মনে মনে)
আম্মু তুমি এখানে কি করো?
মিষ্টির আম্মু – দেখ না দুই দিন ধরে তুষারের জ্বর। একটুর জন্য ও জ্বর কমছে না। ছেলেটা কিছু খাচ্ছে ও না।
মিষ্টি – (দুই দিন ধরে তুষারের জ্বর আর আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। আমি কিছুই জানি না। তুষার আমার দিকে তাকাচ্ছে না কেন ও কি আমার উপর রাগ করে আছে?)
আম্মু তোমাকে আব্বু ডাকছিল।
মিষ্টির আম্মু -ওহ,,,, তুই একটু তুষারের মাথায় জলপট্টি দিয়ে দে।আমি যাই।
মিষ্টি – আচ্ছা
— মিষ্টির আম্মু চলে গেল। মিষ্টি তুষারের মাথায় জলপট্টি দিতে গেলে
তুষার – থাক তোর জলপট্টি করে দিতে হবে না শুধু শুধু কেন কষ্ট করবি। আমি ঠিক আছি তুই ও যা।
মিষ্টি -( ঠিকই বুঝতে পারছিলাম মহারাজ আমার উপর রাগ করছেন।জলপট্টি হাতে নিয়ে তুষারের কপালে দিলাম।কপালে হাত দিয়ে দেখি অনেক জ্বর)
ও মা তোমার তো অনেক জ্বর। ঔষধ খাইছ?
সব আমার জন্য। আমার বকা শুনেই তোমার জ্বর আসছে। আমি তোমাকে না বকলে তোমার জ্বর আসতো না। এখন যদি আম্মু জানতে পারে আমার জন্য তোমার জ্বর আসছে তাহলে তো আমাকে বাসা থেকেই বের করে দিবে। তখন আমি কোথায় যাবো?
–মিষ্টির এরকম উল্টা পাল্টা কথা শুনে তুষারের মিষ্টির উপর যতো রাগ অভিমান ছিল সব চলে গেছে। তুষার আনমনে ই হেসে উঠলো।
তুষার – ( মেয়েটা পুরো পাগল ওর জন্য নাকি আমার জ্বর আসছে। ও না বকা দিলে নাকি আমার জ্বর আসতো না। আচ্ছা কারো বকা শুনে কি কোন দিনও কারো জ্বর আসছে?ওর উপর রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারি না। আর কার উপর ই বা রাগ করবো পাগলী টা কি বুঝে যে তার উপর কেউ রেগে আছে।পরেও একটু অভিমান নিয়ে,,,, )
আমার জ্বর আসছে তা নিয়ে তোর কোন মাথা ব্যথ্যা নেই। তোকে বাসা থেকে বের করে দিলে কোথায় থাকবি তা নিয়ে দেখছি তোর অনেক মাথা ব্যথ্যা।
মিষ্টি – বাসা থেকে বের করে দিলে আমাকে তোমাদের বাসায় থাকতে দিবা?
— তুষার এবার না হেসে পারলো না। জোরে জোরে শব্দ করে হেসে দিল
তুষার – ধুর পাগলী তোকে বাসা থেকে বের করে দিবে কেন?
মিষ্টি – (হায় মে মার যাওয়া,,কি সুন্দর হাসি)
আমার জন্য তোমার জ্বর আসছে তাই।
তুষার – তোর জন্য কেন জ্বর আসবে। সিজন চেঞ্জ হওয়ার জন্য জ্বর আসছে হয়ত। এতে তোর কোন দোষ নেই। তুই চিন্তা করিস না।
মিষ্টি – তোমার হাসি টা না অনেক সুন্দর।
তুষার – (বলে কি মেয়েটা। এভাবে সরাসরি কেউ
কারো প্রশংসা করে নাকি। আমার লজ্জা লাগে না বুঝি)
নজর দিবি না। এই হাসির উপর ই তো সব মেয়েরা ফিদাহ
মিষ্টি – (আঙ্কেলের বাচ্চা ষাঁড় টা কি বললো? মুড টা ই অফ করে দিল তোমার দিকে কোন মেয়ে তাকালে তার চোখ তুলে নিবো। ফইন্নি গুলার চুল ছিড়ে ফেলব।)
এতো প্যাচাল পারো কেন। তুমি না অসুস্থ। অসুস্থ মানুষের এত কিসের কথা? চুপচাপ শুয়ে থাকো।কোন কথা বলবা না। অসুস্থ বিছানায় শুয়ে আছে তার পর ও মুখ থেকে মেয়েদের কথা যায়না। লুচ্চা কোথাকার। আমি খাবার নিয়ে আসছি ততখন চুপ করে শুয়ে থাকো।
তুষার – হা করে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি।কোন সময় কি বলবে বা কি করবে তা কেউ ই বলতে পারবে না
— মিষ্টি রুম থেকে বের হয়ে কিচেনের দিকে যাচ্ছে আর বিরবির করে কত কিছুই না বলছে
মিষ্টি – সারাক্ষণ শুধু মেয়ে আর মেয়ে। মেয়েদের কথা ছাড়া যেন মুখে আর কোন কথাই নেই। লুচ্চা নাম্বার ওয়ান। লুচ্চা ওফ দ্যা ওয়ার্ল্ড। শালা লুচ্চা-420
তুষারের আম্মু – কিরে কাকে এতো লুচ্চা লুচ্চা বলছিস?
মিষ্টি – কই শুনলা লুচ্চা বলছি? আমি তো লুচি বলছি। এতো কথা না বলে খাবার দেও। তুষার যে সকাল থেকে
না খেয়ে আছে। তার কোন খেয়াল আছে তোমার? একমাত্র ছেলে তার ও খেয়াল রাখতে পারো না।
তুষারের আম্মু – আমি আমার ছেলের খেয়াল রাখতে পারি না?
মিষ্টি – পারো ই তো না। খেয়াল রাখলে কি আর জ্বর আসতো?
খাবার দেও আমি খাইয়ে দিয়ে যাবো। তোমার অবহেলার কারণে আজ ষাঁড় টা এতো চিকন। ভালো ভাবে খাওয়াও ই না।
— তুষারের আম্মু মিষ্টি কান্ড কারখানা দেখছে আর হাসতে। ভালোবাসা হাজার চেষ্টার পর ও লুকানো যায় না তা প্রকাশ পায় ই।
তুষারের আম্মু – তুই যে আমার ছেলেকে কতটা ভালোবাসিস তা তোকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।( মনে মনে)
মিষ্টি – কি হলো এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছ কেন?
তুষারের আম্মু – তোর দিকে তাকিয়ে হাসবো কেন? আমি ভাবছিলাম আমি তো ঠিক মতো তুষারের খেয়াল রাখতে পারি না। তাই তুষারের জন্য লাল টুকটুকে এটা বউ আনলে কেমন হবে?
— তুষারের বউ আনার কথা শুনে মিষ্টি রাগী দৃষ্টি নিয়ে তুষারের আম্মুর দিকে তাকালো
মিষ্টি – বউ???
তুষারের আম্মু – হুম বউ।বউ আনলে তুষারের ও ঠিক মত খেয়াল রাখবে। আমার ও একটু সেবা যত্ন করবে আর হ্যা তোর ও একটা কথা বলা আড্ডা দেওয়ার সাথী হবে।
মিষ্টি – বউ আনবা তাই না?
তুষারের খেয়াল রাখার জন্য আমি আছি বউ লাগবে না।আর হ্যা দরকার নাই আমার কথা বলা, আড্ডা দেওয়ার সাথী। দেখি কোন শাঁকচুন্নি কে আনো ওই টার পা ভেঙ্গে তেঁতুল গাছে ঝুলিয়ে রাখবো। কতো বড় হয়ছে তোমার ছেলে এখনই তার বউ আনতে হবে? যা ইচ্ছা করো আমার কি?
— মিষ্টি তুষারের জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে তুষারের রুমে চলে গেল। মিষ্টি চলে যাওয়ার সাথে সাথেই তুষারের আম্মু জোরে হেসে দিল।
তুষারের আম্মু – পাগলী মেয়ে তোকে ই আমার ঘরের বউ করে আনবো। তুই যে আমার ছেলেটা কে এতটা ভালোবাসিস তা আগে জানতাম না।
— মিষ্টি রাগে গজগজ করতে করতে খাবার নিয়ে তুষারের রুমে ঢুকলো।
তুষার – এতো রেগে আছিস কেন। কি হয়েছে আবার?
–মিষ্টি খাবার প্লেট টেবিলের উপর রেখে তুষারের একদম কাছে গিয়ে
মিষ্টি – আমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি রেগে আছি? আমি শুধু শুধু রাগবো কেন? যার যা ইচ্ছা করুক আমার কি?
তুষার – (মিষ্টির থেকে একটু পিছিয়ে গিয়ে) কে বললো তুই রেগে আছিস? আমি তো বলিনি। কে বলছে তাহলে? কেউ একজন তো নিশ্চয় বলেছে।
— মিষ্টি তুষারের পাশে বসে খাবার প্লেট হাতে নিয়ে তুষারের মুখের সামনে খাবার তুলে দিল
মিষ্টি – হা করো।
তুষার – আমায় দে আমি নিজে খেতে পারবো।
মিষ্টি – কেন আমি খাইয়ে দিতে পারবো না। নাকি আমার হাতে খেলে তোমার পেট ভরবে না।
— তুষার আর কিছু না বলে চুপচাপ মিষ্টির হাতে খেয়ে নিচ্ছে।
তুষার – মিষ্টি?
মিষ্টি – হুম
তুষার – কি হয়েছে বলবি?
মিষ্টি – তুমি নাকি নিয়ে করবে?
— বিয়ের কথা শুনে তুষারের গলায় কিছু আটকে গেল। তুষার কাশতে লাগলো। মিষ্টি পানির গ্লাস তুষারের দিকে এগিয়ে দিলে তুষার গ্লাস টা হাতে নিয়ে এক ডুকে সবটুকু পানি খেয়ে নিল
তুষার – তোকে কে বললো আমি বিয়ে করবো?
মিষ্টি – কে আর বলবে আন্টি বলছে।
তুষার – ধুর আম্মুর যতসব পাগলামী কথা।
মিষ্টি – তুমি বিয়ে করবে না?
তুষার – তোর কি মনে হয়? আমার এখন বিয়ের বয়স হয়ছে। আর আমার মত বেকার ছেলের কাছে কে মেয়ে বিয়ে দিবে?
মিষ্টি – আমি কি জানি। আন্টি ই তো বললো।
তুষার – আম্মু বললো আর তুই বিশ্বাস করে নিলি গাধী কোথাকার।
মিষ্টি – তো কি করবো?
তুষার – তোর কিছুই করতে হবে না।
মিষ্টি –

কয়েকদিন কেটে গেল,,,,,,,,,,
তুষার – (আমি কি জান্নাত কে ভালোবাসি নাকি মিষ্টি কে? মিষ্টি কে নিয়ে যতটা ভাবি ততটা তো জান্নাত কে নিয়ে ও ভাবে না। মিষ্টি কে একদিন না দেখলে আমার কিছুই ভালো লাগে না। মিষ্টি কে কোন ছেলে কিছু বললে আমার এত রাগ উঠে কেন? ঐ দিন ওই ছেলেটা কে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছিল।
মিষ্টি কে না দেখলে আমার কষ্ট হয়। জান্নাত কে না দেখলে তো আমার এতটা কষ্ট হয়না। তবে কি এটাকেই ভালোবাসা বলে।জান্নাত কে আমি শুধু পছন্দ করি আর একে ই আমি ভালোবাসার নাম দিতে গেছিলাম।)

আমার জান্নাতের সাথে কথা বলতে হবে। ওকে সব কিছু বুঝিয়ে বলতে হবে।
— আবিরের ফোন আসলো।তুষার ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই আবির বলতে লাগলো।
আবির – কিরে তুই। তোর জ্বর হয়ছিল তুই কতদিন ধরে অসুস্থ আর আমাকে জানানোর প্রয়োজন ও মনে করলি না। আমি কি তোর এতটাই পর।
তুষার – আরে শুন তুই যেমন ভাবছিস তেমন কিছু না। আমি এখন সুস্থ আছি। জ্বর তো কবেই সেরে গেছে।
আবির – আমি তোর কোন কথা শুনতে চাই না আমি বিকেলে তোর বাসায় আসছি।
তুষার – তোর আসতে হবে না। আমি ই বিকেলে তোর সাথে দেখা করবো। তোর সাথে কিছু কথা ছিল।
আবির – সত্যি আসবি তো?
তুষার – হুম
আবির – মিষ্টি কে নিয়ে আসবি ভাই?
তুষার – আবির।
আবির – প্লিজ দোস্ত প্লিজ।
তুষার – আচ্ছা নিয়ে আসবো।
আবির – লাভ ইউ ভাই। তারাতারি আসিস কিন্তু।
— আবির ফোন রাখার একটু পরেই জান্নাতের ফোন আসে
জান্নাত – তুষার তুমি এখন কেমন আছো?
তুষার – হ্যা জ্বর সারছে। আগে থেকে অনেক ভালো।
জান্নাত – তুষার অনেক দিন হয়ে গেল আমাদের দেখা হয় না।
তুষার – হুম
জান্নাত – তো আজ বিকেলে কি আমরা দেখা করতে পারি?
তুষার – জান্নাত আসলে আজ আবিরের সাথে দেখা করার কথা ছিল। একটু আগেই কথা হলো। আবিরের সাথে দেখা না করলে ও রাগ করবে। আমরা আগামী কাল দেখা করি?
জান্নাত – হুম। আচ্ছা তাহলে তুমি নিজের খেয়াল রেখো।এখন রাখছি।
তুষার – হুম।

— বিকেলে তুষার মিষ্টি কে নিয়ে কফি শপে যেতে চাইলে মিষ্টি যেতে চাচ্ছে না
মিষ্টি – আমি কফি শপে যাবো না। আমি ফুচকা খেতে যাবো।
তুষার – মিষ্টি দেখ আবির আসবে আর ওকে আমি কফি শপে আসতে বলছি।
মিষ্টি – তো কি হয়ছে? তুমি আবির ভাইয়াকে ফোন করে বলো আমরা কফি শপে যাবো না। আর আবির ভাইয়া ও তো ফুচকা খেতে পছন্দ করে। ভাইয়া কিছু ই মনে করবে না।
তুষার – তুই জানলি কি করে আবির ফুচকা খেতে পছন্দ করে?
মিষ্টি – কেন? তোমার মনে নেই আমরা কত বার এক সাথে ফুচকা খেতে আসছি।
তুষার – অহ হুম মনে পরছে।
মিষ্টি – তুষার?
তুষার – হুম
মিষ্টি – কি হয়ছে তোমার?
তুষার – কই কি হয়ছে? কিছু ই তো হয়নি।
মিষ্টি – কিছু একটা তো হয়েছে। তুমি কি যেন চিন্তা করছো। মনে হচ্ছে কোন কিছু তোমাকে খুব ভাবাচ্ছে। কি হয়েছে আমাকে বলো।
তুষার – কি হবে আমার? কি ভাববো আমি। আর তুই কবে থেকে এত পাকনা হয়ছস?
সারাক্ষণ শুধু পাকনামি করা।
মিষ্টি – যা ইচ্ছা তা হোক। আমার কি?
আমি আর তোমার সাথে কথা ই বলবো না।
— মিষ্টি আগে আগে হাটতে লাগলো। তুষার মিষ্টির পিছনে হাটছে।
তুষার – কি হচ্ছে এসব আমার সাথে?
এই মিষ্টি কেন আমার সব কিছু বলার আগেই বুঝে যায়? আমি কিছু নিয়ে চিন্তা করছি এটা ও বুঝলো কি ভাবে?
— মিষ্টি পিছনে তাকিয়ে দেখে তুষার ওর থেকে অনেক পিছনে
মিষ্টি – কি হলো হাটছ না কেন? এখন কি তোমাকে কোলে নিয়ে যেতে হবে।
তুষার – তুই যা আমি আসছি তো।
মিষ্টি – তারাতারি আসো।

চলবে 💕