💕ভালোবাসি💕 (দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প) Samira Afrin Samia #নিপা পর্বঃ ১২

💕ভালোবাসি💕
(দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার গল্প)
Samira Afrin Samia
#নিপা
পর্বঃ ১২

—মিষ্টি জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।
মিষ্টি – সরি জানু আমি তুষার কে ভালোবাসতে চায়নি। কিন্তু কখন কিভাবে ওই ষাঁড় টা কে ভালোবেসে ফেলেছি তা আমিও জানি না। তুই আমাকে মাফ করে দে।
জান্নাত – আরে পাগলী তুই আমার কাছে মাফ চাইছিস কেন? আমি তো তোদের মাঝে এসে গেলাম সরি তো আমার বলা উচিত।
মিষ্টি – জানু প্লিজ তুই তুষার কে কিছু বলবি না।
জান্নাত – কেন? তুই ওকে ভালোবাসিস তাহলে ওকে বলবি না কেন?
মিষ্টি – আমি ওকে ভালোবাসি কিন্তু ও তো আমাকে ভালোবাসে না। ও তোকে ভালোবাসে।
—জান্নাত মিষ্টির কথা শুনে বুঝতে পারলো। ওরা দুজন দুজনকে ভালোবাসে কিন্তু কেউ কারো মনের কথা বুঝতে পারছে না।
জান্নাত – আমি জানি তোরা দুজন দুজনকে ভালোবাসিস কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারছিস না। তুই ভাবিস তুষার তোকে ভালোবাসে না। আর তুষার যে তোকে ভালোবাসে তা ও নিজেই জানে না। (মনে মনে..)

—রাতে কিছু একটা বিষয় নিয়ে মিষ্টির আম্মু আর আব্বু নিজেদের মাঝে কথা বলছিল।তখনই মিষ্টি পানি নেওয়ার জন্য রুমে বাইরে আসে।
মিষ্টি – ( আম্মু আব্বু কিছু দিন ধরেই কি যেন বলতে চাইছে। কিন্তু বলছে না)
আম্মু কিছু বলবা কি?
মিষ্টি আম্মু – আসলে একটা কথা তোকে বলবো ভাবছিলাম।
মিষ্টি – এতো না ভেবে বলেই ফেলো কি বলবে।
মিষ্টির আম্মু – মিষ্টি কিছু দিন আগে আমাদের বাসায় একজন মহিলা আসছিল। তোর মনে আছে?
মিষ্টি – হুম
মিষ্টির আম্মু – ওনার ছেলের জন্য তোকে ওদের পছন্দ হয়েছে। এখন শুধু এনগেজমেন্ট করে রাখবে। তোর ইন্টার এক্সাম এর পর বিয়ের কথা।
এখন যদি তুই রাজি হস তাহলে,,,,,,,
আমাদের ও ছেলে আর ছেলের ফেমিলি পছন্দ হয়েছে। তুই যদি ছেলেকে দেখে তোর মতামত জানাতি।
মিষ্টি – আম্মু আমি রাজি। তোমাদের ছেলে পছন্দ হয়েছে তাহলে আমার আর ছেলেকে দেখতে হবে না।
মিষ্টির আম্মু – কি?
—মিষ্টি কিছু না ভেবেই বিয়েতে রাজি হয়ে গেল। মিষ্টির বাবা মা অবাক হয়ে মিষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে মিষ্টি আর কিছু না বলে রুমে চলে গেল।
মিষ্টি – রুমে এসে অনেক কান্না করলাম। নিজেকে বুঝালাম শুধু আমার একতরফা ভালোবাসায় কিছু হবে না। তুষার জান্নাত কে ভালোবাসে ওদের লাইফ থেকে আমাকে সরে আসতে হবে।
মিষ্টির আম্মু – কি হলো তোমার মেয়ের?
যে মেয়ে বিয়ের কথা শুনলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নাচত।চিৎকার চেচাঁমেচি শুরু করে দিত।আমাদের জেলে দেওয়ার ভয় দেখাত।আর আজ সে মেয়ে কোন কথা না বলে বিয়ে তে রাজি হয়ে গেল। আমাদের বকাবকি করবে তো দূরের কথা ছেলে টা কে,কি করে, দেখতে কেমন কিছু না জেনে এমনকি ছেলেটা কে না দেখেই বিয়ের জন্য হ্যা বলে দিল।
মিষ্টির আব্বু – তোমার মেয়ের মাথায় কখন কি চলে তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ বলতে পারবে না।
কখন ও কি বুঝতে পারছ তোমার মেয়ে কি করতে চায়?
যখন যা ইচ্ছে হয় তখন তাই করে।এখন আবার মাথায় কোন ভুত চাপল যার জন্য কিছু না বলেই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেল।
মিষ্টির আম্মু – কি হলো আমার মেয়েটার এখন তো আমার টেনশান হচ্ছে।
—জান্নাত তুষার কে দেখা করতে বলে। তুষার জান্নাতের সাথে দেখা করতে যায়।দুজনেই চুপ করে বসে আছে। তুষার ভাবছে জান্নাত কে কি ভাবে বলবে যে ও মিষ্টি কে ভালোবাসে।অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর জান্নাত বলতে শুরু করলো।
জান্নাত – তুষার তোমাকে কিছু কথা বলার জন্য এখানে ডাকছি। আমি জানি তুমি আমাকে না মিষ্টি কে ভালোবাসো।
তুষার – জান্নাত আসলে,,,,,,,
জান্নাত – এতে তোমার বা মিষ্টির কোন দোষ নেই। তুমি তো নিজেও জানো না তুমি মিষ্টি কে কতটা ভালোবাসো।আসলে ভালোবাসা জিনিসটা ই এমন কখন কার প্রতি হয়ে যায়। তা কেউ ই বলতে পারবে না।
তুষার – জান্নাত আমি আগে বুঝতে পারিনি আমি তোমাকে ভালোবাসি না। তোমাকে দেখে ভালো লাগছিল। আমি ভালো লাগা কে ভালোবাসা ভেবে ছিলাম। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি ভালো লাগা আর ভালোবাসা এক না। ভালোলাগা হ্মনিকের জন্য যা কিছু দিন গেলে ভুলে যাওয়া যায়। কিন্তু ভালোবাসা সারা জীবনের জন্য যা কখনও ভুলা যায়না। প্লিজ জান্নাত আমাকে তুমি হ্মমা করে দিও।
জান্নাত – এতে তোমার কোন দোষ নেই। তোমার জায়গায় তুমি ঠিক আছো। তোমাকে আমি বলছি না তুমি আমাকে ধোঁকা দিছো।আমি বুঝতে পারছি। আর মিষ্টি ও তোমাকে ভালোবাসে।
তুষার – মিষ্টি আমাকে ভালোবাসে?
জান্নাত – হুম। ও তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমার কথা ভেবে কোন দিনও তোমাকে ওর মনের কথা বলে নি।
তুষার – জান্নাত তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিব তা আমার জানা নেই। তুমি অনেক বড় মনের একজন মানুষ। মিষ্টি তোমার মত ফ্রেন্ড পেয়ে অনেক লাকি।
জান্নাত – হুম।এখন যাও আর মিষ্টি কে তোমার মনের কথা বলে দেও।
তুষার – ছোট একটা ধন্যবাদ দিয়ে তোমাকে ছোট করবো না। শুধু এই টুকু দোয়া করি তোমার লাইফে এমন কেউ আসুক যে তোমাকে অনেক ভালোবাসবে। তোমাকে অনেক খুশি রাখবে। যার কাছে তুমি ওর পুরো পৃথিবী হবে। যে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসার কথা কল্পনা ও করতে পারবে না। ভালো থেকো।
— তুষার চলে গেল। জান্নাত চুপ করে তুষারের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। না চাইতে ও জান্নাতের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।
জান্নাত – আমি ও যে তোমাকে অনেক ভালোবাসি তুষার। ভালোবাসার মানুষটার সুখের মাঝেই যে নিজের সুখ খুজে পাওয়া যায়। তুমি আমার হলেও কোন দিনও আমাকে মনে থেকে ভালোবাসতে পারতে না। কারণ তোমার মনটা তো তোমার কাছে নেই। ওটা তো অনেক আগেই তুমি মিষ্টি কে দিয়ে দিয়েছ।
— তুষার বাসায় আসতে আসতে অনেক রাত হয়ে গেছে।
তুষার – আজ আর মিষ্টির সাথে কথা বলবো না। সকালেই সব বলবো। ওকে আমার মনের কথা বলবো। ওকে বলবো আমি জান্নাত কে না ওকে ভালোবাসি।
— তুষার ওর রুমের দিকে যাচ্ছিল।পিছন থেকে ওর আম্মু ডাকলো।
তুষারের আম্মু – তুষার খাবি না? রাত তো অনেক হলো। আর কতক্ষণ তোর জন্য বসে থাকবো?
তুষার – না আম্মু এখন খাবো না।
তুষারের আম্মু – কাল মিষ্টি কে ছেলেপহ্ম আংটি পড়াতে আসবে।
তুষার – ( আম্মুর কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। ছেলেপক্ষ আংটি পড়াতে আসবে মানে। যাকে ভালোবাসি তাকে আমার ভালোবাসার কথা বলার আগেই হারিয়ে ফেলবো।না এটা হতে পারে না।)
মিষ্টি বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে??
তুষারের আম্মু – ওর আম্মু তো বললো রাজি হয়েছে।
তুষার – কি মিষ্টি রাজি হয়েছে। ও তো বিয়ের কথা শুনতে ই পারে না। ওর আম্মু আব্বু তো ওর ভয়ে কোন দিন ও ওকে বিয়ের কথা বলেনি।তাহলে আজ এমন কি হলো যার জন্য মিষ্টি বিয়েতে রাজি হয়ে গেল।
তুষারের আম্মু – মিষ্টির কি হয়েছে তা বলতে পারবো না। কিন্তু তোর কি হয়েছে তা বল।মিষ্টি বিয়েতে রাজি হওয়ায় কি তুই খুশি হস নি?
তুষার – তুমি আমার মা হয়ে এমন কথা বলতে পারলা।আমি যাকে ভালোবাসি সে অন্য কাউকে বিয়ে করার জন্য রাজি হয়ে গেছে আর তা শুনে আমি খুশি হব।আমি কি তোমার ছেলে না অন্য কারো ছেলে?
ছোট বেলায় আমাকে কি মেলা থেকে কুড়িয়ে আনছিলা??(মনে মনে…)
আমার খুশি হওয়া আর না হওয়াতে কার কি আসে যায়।
তুষারের আম্মু – এটা কেমন কথা?
তুষার – (আমার মিষ্টির সাথে কথা বলতে হবে)
আমি একটু আসছি। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।
তুষারের আম্মু – কিরে এতো রাতে কই যাস?
তুষার – তোমার ফিউচার নাতি নাতনির আম্মু কে আমার করে পেতে যাই। আমার জন্য দোয়া করো।
তুষারের আম্মু – মিষ্টির বিয়ের কথা শুনে পাগল-টাগল হয়ে গেলি নাকি?
— তুষার ওর আম্মু কথার উত্তর না দিয়ে সোজা মিষ্টির বাসায় এসে মিষ্টির রুমে গিয়ে দেখে মিষ্টি বারান্দায় দাড়িয়ে আছে। তুষার মিষ্টির কাছে গিয়ে মিষ্টি কে ওর দিকে ফিরিয়ে।
তুষার – তুই কোন দিনও বলিস নি কেন তুই যে আমাকে ভালোবাসিস?
মিষ্টি – কেন বলবো?
তুষার – একটা থাপ্পড় দিব। না বললে বুঝবো কি ভাবে?
মিষ্টি – সব কথা কি সব সময় বলে দিতে হয়? কিছু কথা না বললে ও বুঝে নেওয়া লাগে।
তুষার – হ আমি তো গণক হয়ছি। কেউ কিছু না বললে ও তার চোখ দেখে মনের কথা বুঝে নিব।
মিষ্টি – যাকে ভালোবাস তার চোখ দেখে মনের কথা বুঝতে না পারলে এটা কেমন ভালোবাসা?
তুষার – বুড়িদের মত কথা বলবি না।
মিষ্টি – তুমি তো আমাকে ভালোবাস না। তুমি তোমার ওই শাঁকচুন্নি, কান কাটা পেত্নী, বিষকন্যা গফের কাছে যাও।
তুষার –
মিষ্টি – সরি সরি শাঁকচুন্নি, কান কাটা পেত্নী, বিষকন্যা না ওটা তো আমার জানু।তুমি জানুর কাছে যাও এখানে কেন আসছ?
তুষার – তোকে ভালোবাসি তাই আসছি। শুনলাম তুই নাকি বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছিস।
মিষ্টি – আর ভালোবাসা কাল আমার এনগেজমেন্ট।রাজি না হলে কি আর এনগেজমেন্ট হতো?
তুষার – এতদিন তো বিয়ের কথা শুনতেই পারতি না। আর তোর তো এখনও আঠারো বছর হয়নি। তাহলে এখন কেন বিয়ে করবি।তুই তো এখনও ছোট।
মিষ্টি – এখন বিয়ে হবে না। কাল শুধু এনগেজমেন্ট হবে। বিয়ে আমার এইচএসসি এক্সাম এর পর হবে।
তুষার – তোর মাথা ঠিক আছে তো। এসব কি তুই বলছিস।ভুতে ধরলো নাকি তোকে?
মিষ্টি – ভুতে ধরবে কেন। তুমি প্রেম করবে আমি সোজা বিয়ে করবো। তোমার থেকে এক ধাপ আগে।
তুষার – একটা থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিব।বললেই হলো। তুই শুধু আমার। তুই আমার না হলে আর কারো হতে পারবি না। আমি তোকে অন্য কারো হতে দিব না।
মিষ্টি – আমি তোমার ছাড়া আর কারো হবো ও না।
তুষার – তাহলে বিয়ের জন্য রাজি হলি কেন?
মিষ্টি – এটা তো রাগের মাথায় হ্যা বলে দিছিলাম।
তুষার – এতো পিচ্চি মেয়েট এত রাগ কেন?
রাগ করে আর কিছু করতে পারলি না বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেলি।তোর মতো এমন রাগ যদি সবার হয় তাহলে অবিবাহিত কেউ থাকবে না। সবাই রাগের মাথায় বিয়ে করে নিবে।

চলবে 💕