#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৩
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” এক্সকিউজ মি মিস,আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমি আপনাকে আগেও কোথাও দেখেছিলাম।”
পাশ থেকে কারো কন্ঠ শুনে মেহেক চোখ খুলে পাশ ফিরে তাকাই।দেখে তার পাশের ছেলে অর্থাৎ সৌন্দর্য তার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
বাস ছেড়ে দিয়েছে প্রায় আধঘন্টা হচ্ছে।এই আধঘন্টা সৌন্দর্য শুধু এটাই চিন্তা করে গিয়েছে যে সে মেহেককে কোথায় দেখছে।
মেহেক চিন্তা করতে থাকে সে কিছু বলবে নাকি চুপ করে থাকবে।কিন্তু মেহেক চিন্তা করতে করতেই সৌন্দর্যের মনে পড়ে যায় আরে এটা তো সেই মেয়েটা যাকে সে গত রাতে লিফট দিয়েছিল।
” আপনি সেই মেয়েটা না যাকে আমি ব্রিজের ওখান থেকে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলাম।”
সৌন্দর্যের যেহেতু মনে পড়ে গিয়েছে তাই মেহেক আর বেশি কথা না বাড়ির হ্যাঁ বলে আবারো বাইরের দৃষ্টি দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
” কিন্তু আপনাকে কিছুটা দেখতে ভিন্ন ভিন্ন লাগছে কেন?” বলে সৌন্দর্য।
বাইরের দিকে তাকিয়েই মেহেক উওর দেয়,
” আমি চশমা পড়েছি তাই।”
সৌন্দর্য এবার খেয়াল করে কাল রাতে মেয়েটা মানে মেহেক চশমা পড়ে ছিলনা তবে আজ পড়েছে।সৌন্দর্য আর কিছু না বলে মোবাইল টিপতে থাকে।
কিছুটা সময় যাওয়ার পর মেহেকের পানির পিপাসা পান।সে পানি পান করার জন্য ব্যাগ থেকে বোতল বের করতে যেয়ে দেখে তাড়াহুড়োর কারণে সে পানির বোতাল অন্য ব্যাগে ঢুকিয়ে ফেলেছে,এখন অন্য ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করাও সম্ভব নয়।এদিকে মেহেকের প্রচুর পানির পিপাসা পেয়ে।
” এইযে শুনছেন?” মিনমিনে স্বরে সৌন্দর্যকে বলে মেহেক।কিন্তু কানে হেডফোন থাকার কারণে সৌন্দর্য শুনতে পাইনা।মেহেক কিছুক্ষণ চুপ থেকে হালকা করে সৌন্দর্যকে ধাক্কা দেয়,এতে সৌন্দর্য চোখ খুলে মেহেকের দিকে তাকাই।সৌন্দর্যের তাকানো দেখে মেহেক কিছুটা হেজিটেশেন ফিল করে।
” কিছু বলবেন মিস?”
” আসলে আমি না পানির বোতল অন্য ব্যাগে রেখে এসেছি।আপনার কাছে পানি হবে?”
সৌন্দর্য তার ট্রাবেল ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে মেহেককে দেয়।মেহেক পানি খেয় বোতল বন্ধ করতে গেলে সৌন্দর্য তাকে বাঁধা দিয়ে বলে,
” বন্ধ করতে হবেনা,ওটা আমাকে দিন।”
মেহেক সৌন্দর্যের দিকে মুখ খোলা বোতলটা বাড়িয়ে দেয় কিন্তু হঠাৎ গাড়ি ঘোরানোর কারণে বোতল থেকে কিছুটা পানি গিয়ে পড়ে সৌন্দর্যের গায়ে।মেহেক জিহ্বায় কামড় দিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকাই আর সৌন্দর্য চোখ বড় বড় করে তার কাপড়ের ভিজা অংশের দিকে তাকিয়ে রয়।
” আই এম সরি,আমি বুঝতো পারিনি এরকম কিছু হবে।প্লিজ রাগ করবেন না।” বিচলিত হয়ে বলে মেহেক।
সৌন্দর্য শান্ত গলায় মেহেকে বলে, ” ইট’স ওকে,এতে আপনার কোন দোষ নেই।”
সৌন্দর্য সমস্যা নেই বললেও মেহেক অনুশোচনার দৃষ্টিতে সৌন্দর্যের ভিজা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
সৌন্দর্য রুমাল দিয়ে ভিজা জায়গাটা মুছে নেয় এরপর মেহেকের দিকে তাকাই।মেহেক তখনো চুপ করে বাইরে তাকিয়ে ছিল।
” এইযে মিস,আপনাকে এতো অনুশোচনায় ভুকতে হবেনা।যা হয়ে তা এক্সিডেন্টলি হয়েছে।”
মেহেক সৌন্দর্যের দিকে আবারো অনুশোচনার দৃষ্টিতে তাকাই।
” আমরা কি পরিচিত হতে পারি মিস?”
মেহেক এবার সৌন্দর্যের দিয়ে নিলিপ্ত দৃষ্টিতে তাকাই।সৌন্দর্য এমনিতেই কারো সাথে বেশি কথা বলেনা তবে তার কেন যেন মনে হচ্ছে মেহেকের মন ভালো নেই তাই সে তার সাথে একটু কথা বলে তাকার খারাপ লাগাটা একটু কমাতে চাইছে।
” হুম।” ছোট করে জবাব দেয় মেহেক।
” নাম কি আপনার?”
” মৃদুলা মেহেক।আপনার?”
” শাহরিয়ার সৌন্দর্য।আপনার নামটা অনেক সুন্দর।”
” আপনার নামটা অনেক আনকমন।”
” থ্যাঙ্ক ইউ।তা আপনি কোন ক্লাসে পড়েন?”
” অর্নাম ফার্স্ট ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম।আপনি?”
” আমি মাস্টার্স করছি।আমি তাহলে তোমাকে তুমি করে বলতে পারি যেহেতু তুমি আমার ছোট।”
” হুম।”
” তা কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
” ঢাকা।”
” ও….আমিও ঢাকায় যাচ্ছি।তো তুমি ঢাকায় কোথায় যাচ্ছো?”
” আপুর বাসায়।আপনি বোধহয় ঘুরতে যাচ্ছেন?”
” না আমি আমার নিজ বাসায় যাচ্ছি।”
” তাহলে চট্টগ্রামে কেন এসেছিলেন?”
” বন্ধুর বিয়ে এটেন্ড করতে এসেছিলাম।তো তুমি বুঝি বোনের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছো?”
” হুম।” মেহেক ইচ্ছে করেই সৌন্দর্যকে সত্যিটা বলেনি,কারণ সে চাইনা তার এই শহর ছেড়ে যাওয়ার কারণটা কেউ জানুক।
মেহেক আর সৌন্দর্য আর কোন কথা বলেনা।মেহেক বাইরে তাকিয়ে প্রকৃতি দেখতে থাকে আর সৌন্দর্য আবারো কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে গান শুনতে শুরু করে।
প্রায় আড়াইঘন্টা চলার পর বাস এসে থাকে একটা হোটেলের সামনে।১৫ মিনিটের জন্য বিরতি নেয় বাস।সবাই একেক একেক করে বাস থেকে নেমে পড়ে।সৌন্দর্যেও বাস থেকে নামার জন্য উঠে দাঁড়ায় কিন্তু যে যেতে নিয়েও থেমে যায়।প্রায় সবাই নেমে গেলেও মেহেক তার জায়গায় বসে বাইরে তাকিয়ে আছে।তাকে দেখে মনে হচ্ছেনা সে নামবে তাও ভদ্রতার খাতিরে সৌন্দর্য তাকে জিজ্ঞেস করে,
” এইযে মিস মেহেক তুমি নিচে নামবেনা?”
মেহেক সৌন্দর্যের দিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে তাকাই।আসলে সে নিচে নামতো তবে এই প্রথম সে একা ট্রাভেল করছে।তার ভয় হচ্ছে না জানি যদি আবার বাস ছেড়ে দেয় তবে তো সে আরেক বিপদে পড়বে।মেহেকের তাকানো দেখে সৌন্দর্য বুঝতে পেরে যায় তার সমস্যা।সে মুচকি হেসে মেহেককে আশ্বস্ত করে বলে,
” কিছু হবে না,তুমি নিশ্চিন্তে নামতে পারো।আর এতো ভয় পেয়োনা আমি আছি তো।চলো আমার সাথে।”
এখন মেহেকের একমাত্র ভরসা সৌন্দর্য।তাই সে সৌন্দর্যের উপর ভরসা করে বাস থেকে নেমে পড়ে।মেহেক সৌন্দর্যের পেছন পেছন হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করে।
” ওয়াশরুমে যাবে?”
পিটপিট চোখ করে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ উওর দেয় মেহেক।সৌন্দর্য তাকে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিয়ে নিজেও ওয়াশরুমে চলে যায়।
ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে মেহেক দেখে সৌন্দর্য আগে থেকেই তার জন্য অপেক্ষা করছে।সৌন্দর্যকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেহেকের দেহে প্রাণ ফিরে আসে।সে এতোক্ষণ এই ভয়ে ছিল না জানি সৌন্দর্য তাকে রেখে চলে যায় কিন্তু না সৌন্দর্য তা করেনি দেখে মেহেক খুশি হয়।
” চলো।”
মেহেক মাথা নাড়িয়ে সৌন্দর্যের পেছন পেছন চলতে শুরু করে।হঠাৎ সৌন্দর্য থেকে জিজ্ঞেস করে,
” কিছু খাবে?”
মেহেক মাথা নাড়িয়ে না উওর দেয়।
” তাহলে চলো তোমাকে বাসে দিয়ে আসি।”
মেহেকও ভালো মেয়ের মতো কোন কথা না বলে সৌন্দর্যের পেছন পেছন বাসের কাছে চলে আসে।মেহেক বাসে উঠে গেলে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে আর পেছন ফিরে সৌন্দর্যের দিয়ে তাকাই।
” আমার কিছু খাবার লাগবে?আপনি একটু এনে দিতে পারবেন?”
” বলো কি কি লাগবে?”
” ২টো চিপিস,১ টা পানির বোতল,২ টো ম্যাংগো বার আর ৫ টা চুইংগাম।”
” আর কিছু?” মুচকি হেসে প্রশ্ন করে সৌন্দর্য।
মেহেক মাথা নাড়িয়ে না সম্মতি দেয়।
” যাও তুমি ভিতরে গিয়ে বসো আমি আসছি।”
মেহেক আর কোন কথা না বলে নিজের সিটে এসে বসে পড়ে।
বাস ছাড়া সময় হয়ে গিয়েছে।মেহেক চিন্তা হয়ে বারবার বাইরে তাকাচ্ছে কারণ এখনো সৌন্দর্য আসেনি।তার ভয় হচ্ছে না জানি সৌন্দর্য বাস মিস করে দেয়।
বাস ছাড়ার আগে শেষবারের মতো সবাইকে বাসে উঠার জন্য বলে কিন্তু তখনো সৌন্দর্যের কোন খবর নেই।
কন্ট্রাকটর বাস আবারো নিজের গন্তব্যের উদ্দেশ্য চলতে শুরু করার প্রস্তুতি নিচে।মেহেক একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।বাস চলতে শুরু করে তবে হঠাৎ থেমে যায়।মেহেক দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সৌন্দর্য হাঁপাতে হাঁপাতে এসেছে।সৌন্দর্যকে দেখে মেহেকের মুখে হাসি ফুটে।সৌন্দর্য নিজের সিটে এসে ধপ করে বসে পড়ে।
” কোথায় ছিলে এতোক্ষণ?”
” তোমার জিনিসগুলো আনতে গিয়ে ভিড়ে আটকা পড়েছিলাম।”
সৌন্দর্যের কথা শুনে মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায় কারণ আজ তার জন্য সৌন্দর্য বাস মিস করতে করতে বেঁচেছে।সৌন্দর্য মেহেকের খারাপ লাগাটা বুঝতে পারে।
” এই এতে মন খারাপ করোনা তো।এতে তোমার কোন দোষ ছিলনা।নাও তোমার জিনিস।”
মেহেক সৌন্দর্য থেকে জিনিসগুলো নিয়ে নেয়।তারপর সেখান থেকে একটা চিপস,একটা ম্যাংগো বার আর দুটো চুইংগাম নিয়ে মেহেক সেগুলো সৌন্দর্যের দিয়ে বাড়িয়ে দেয়।
” কি?”
” নিন এগুলো।”
” লাগবেনা তুমি রাখো তোমার কাছে।”
” আরে রাখুন তো।”
মেহেক জিনিসগুলো সৌন্দর্যের হাতে ধরিয়ে দেয়।সৌন্দর্যও আর কথা না বাড়িয়ে জিনিসগুলো তার ব্যাগে রেখে দেয়।এরপর আর কোন কথা হয়না মেহেক আর সৌন্দর্যের মাঝে।মেহেক বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে আর সৌন্দর্য গান শুনতে শুনতে।
বাস কন্ট্রাকটারের ডাকে সকালে ঘুম ভাঙে মেহেকের।সে পিটপিট করে চোখ খুলে কিন্তু চোখ খুলে নিজে অবস্থা দেখে ঘাবড়ে যায় মেহেক।
চলবে……
(আগের পর্বে আমি লিখেছিলাম মেহেকের দাদী।ওটা আসলো দাদী হবেনা নানী হবে।আমার এই ভুলটার জন্য আমি সত্যি দুঃখিত।)
(দুইদিন গল্প না দেওয়ার জন্য আমি সত্যি খুব খুব দুঃখিত।আসলে এই দুইদিন ফোনে নেটওয়ার্ক ছিলোনা।ফেসবুক,ইউটিউব কিছুই ব্যবহার করতে পারিনি।তবে আমি জানিনা এটা শুধু আমার ক্ষেত্রে হয়েছে নাকি সবার ক্ষেত্রে।তাও আই এম সরি।)