কাশফুলের_ভালোবাসা #পর্বঃ০৫ #লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

0
319

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

ড্রয়ংরুমে রিফার সাথে বসে আছে মেহেক।সে আসতে চাইনি তবে রিফা তাকে জোর করে নিচে নিয়ে এসেছে।

” শোনো আমি আবার কাউকে আপনি করে বলতে পারিনা সো আমি তোমাকে তুমি করেই বলছি।”

” ঠিক আছে আপু।”

” ধুর রাখোতো আপু।নাম ধরে ডাকো,আমার নাম অনুজা রিফা।”

” আচ্ছা।”

” হুম।তো তোমাে পুরো নাম কি?আমি তো ভালো করে তোমার নাম জানিনা।”

” মৃদুলা মেহেক।”

” বাহ্ খুব সুন্দর নাম।আমি তোমাকে মেহু বলে ডাকবো,ওকে?”

” হুম।”

” খালি হুম হুম করো কেন?আমার সাথে এইসব হু হা চলবেনা।আমি খুব পকর পকর করি তাই তোমাকেও করতে হবে।”

” আচ্ছা।”

” ধুর।আচ্ছা এবার বলো তো তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?”

” এবার অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি।”

” কি বলো?আমিও তো অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারেে ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি।ওয়াও…..তার মানে আমরা ক্লাসমেট।তাহলে তো আমি তুমি না তুই করে বলবো।আর শোন তুইও তুই করে বলবি।”

” আচ্ছা।”

” ধুর মরা,খালি আচ্ছা আর হুম করে।অন্যকিছুও বল।”

” কি বলবো?”

” আচ্ছা এটা বল তোর বয়ফ্রেন্ড আছে?”

রিফার কথা শুনে মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায়।

” কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”

” উহু….কিছু না।”

” নেই নাকি?”

” না নেই।আপনার….না মানে তোর আছে?”

” হুম আছে।” লজ্জা পাওয়ার ভান করে বলে রিফা।

” তা কে সে?”

” তার নাম হচ্ছে ইভান।”

” বাড়িতে জানে?”

” না আমরা যে প্রেম করি তা বাড়িতে জানেনা তবে ইভানকে বাড়ির সবাই চেনে।”

” তা কিভাবে?”

” আরে ইভান আব্বু বন্ধুর ছেলে।”

” তো তোর ইভান কি করে এখন।”

” সে পড়াশোনা করছে এখনো।মেডিকেল স্টুডেন্ট, ফোর্থ ইয়ারে আছে এখন।আর হ্যাঁ ইভান ভাইয়ার(স্পর্শ) বন্ধুও।”

” ও আচ্ছা।”

মেহেক আর রিফা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে।কথা বলতে বলতে বিকেল হয়ে গেলো কিন্তু রিফার কথা শেষ হলোনা।হঠাৎ বেল বেজে উঠে।রিফা মেহেককে বসতে বলে দরজা খুলে দেয়।দরজার খোলার সাথে সাথে মেহেক হালকা একটা চিৎকারে শব্দ শুনতে পাই।

” দাভাই…….”

ততক্ষণে মেহেক বোন সৃষ্টি আর তার বোনের শাশুড়ীও নিচে চলে এসেছে।

” কিগো ননদীনি হঠাৎ এভাবে চিৎকার করলে কেন?”

” ভাবী দাভাই এসেছে।” দরজার কাছে দাঁড়িয়ে উওর দেয় রিফা।

” ও সৌ এসেছে।ওকে ভিতরে আসতে দাও অনু।বেচারা অনেক দূর থেকে এসেছে।”

রিফার তার দাভাইয়ের হাত ধরে তাকে টেনে ভিতরে নিয়ে আসে।

” দাভাই দেখো আমাদের বাড়িতে কে এসেছে।”

মেহেক এতোক্ষণ ফোনে কিছু করছিল,রিফার কন্ঠ শুনে সে রিফার দাভাইয়ের দিকে তাকাই।কিন্তু রিফার দাভাইকে দেখে মেহেক ছোটখাটো একটা ঝটকা খায় কারণ রিফার দাভাই মানে তার বোনের আরেক দেবর আর কেউ নয় বরং সৌন্দর্য।সৌন্দর্যও মেহেকে দেখে আশ্চর্য হয়।

” আপনি!”

” তুমি!”

একসাথে বলে উঠে মেহেক আর সৌন্দর্য।তারা দুজন যে দুজনকে আশা করি তা তাদের রিএকশেন দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

” দাভাই এ হচ্ছে মেহু ভাবীর ছোট বোন আর আমার নতুন বান্ধবী।”

” হ্যালো বেয়াইন সাহেবা।”

” হ্যালো।”

” অনুু সৌ কে এখন ছেড়ে দাও ওরা পরেও পরিচিত হতে পারবে।সৌ তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নাও।অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছো।” বলে সৃষ্টি।

” জ্বি ভাবী।”

জ্বি বলে সৌন্দর্য চলে তো যাচ্ছে তবে তার চোখ এখনো মেহেকের উপর বিদ্যমান আর মেহেকও অবাক চোখে সৌন্দর্যে দিকে তাকিয়ে আছে।তার মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ” যদি সৌন্দর্য এই বাড়ির ছেলে হয় তাহলে সৌন্দর্যের বাড়িতে আসতে এতোক্ষণ কেন লাগলো?সে আর সৌন্দর্য তো একসাথে ঢাকায় এসেছিল।তাহলে সৌন্দর্য দেরি করো কেন এলো?”

” কিরে মেহু কি ভাবছিস?”

” আচ্ছা উনি কে হয় তোর?”

” আরে এটা আমার দাভাই মানে আমার মেঝো ভাই।”

” তোরা কয় ভাই বোনরে?”

” কেন তুই জানিস না?”

” না,বলনা।”

” আমরা তো ৩ ভাই আর ১ বোন।বড় ভাইকে তো তুই চিনিস তোর জিজু লাগে।আর এখন যাকে দেখলি সে হলো আমার মেঝো ভাই আর দুপুরে যাকে দেখেছিস সে হলো ছোটভাইয়া।”

” ও আচ্ছা।”

” আচ্ছা মেহু চল ছাদে চল।”

” ছাদে কেন?”

” ঘরে আর ভালো লাগছেনা,চল ছাদ থেকে ঘুরে আসি।তুই তো আমাদের ছাদ দেখিসনি।চল চল।”

রিফা মেহেকের হাত ধরে তাকে টেনে ছাদে নিয়ে আসে।ছাদটা দেখে মেহেকের মন ভালো হয়ে যায়।ছাদটা বিভিন্ন ফুলের গাছ দিয়ে খুব সুন্দর করো সাজানো।প্রত্যেকটা গাছে ৩/৪ টা করে ফুল ফুটে আছে।আর ছাদের দুপাশে আছে দুটো দোলনা।

” মেহু তুই একটু দাঁড়া আমি কাপড় গুলো বাসায় রেখে আসছি।”

” আচ্ছা ঠিক আছে।”

রিফা কাপড় গুলো নিয়ে নিচে নেমে যায়।মেহেক হেঁটে হেঁটে ফুলে গাছগুলো দেখছে।হঠাৎ মেহেকের চোখ যায় ছাদের কর্নারে।কেউ দাড়িয়ে আছে সেখানে আর কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।মেহেক উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে আসলে লোকটা কে তবে মেহেককে বেশি কষ্ট করতে হয়নি তার আগেই লোকটা মেহেকের দিকে ফিরে তাকাই।লোকটাকে দেখে মেহেকের হার্ট এক সেকেন্ডের জন্য ধক করে উঠে।লোকটা আর কেউ নয় বরং স্পর্শ।স্পর্শ মেহেকের দিকে একপলক তাকিয়ে আবারো কথা বলতে বলতে নিচে চলে যায়।স্পর্শের গম্ভীর ভাব দেখে মেহেকের খুব আজব লাগছে।

” কি এটিটিউটরে বাবা।ওনার থেকে তো ওনার বড় ভাই সৌন্দর্য ডের ভালো আছে।এসেছি পর্যন্ত মনে হয়না দুদন্ড কথা বলতে শুনেছি।” নিজে নিজে বলে মেহেক।

মেহেক দোলনায় বসে দোল খেতে থাকে।কিছুক্ষণ পর হঠাৎ একজোড়া হাত এসে মেহেকের চোখ চেপে ধরে।হঠাৎ এরকম কিছু হওয়াতে মেহেক ঘাবড়ে যায়।

” কে?”

মেহেকের কন্ঠ শুনে লোকটা মেহেকের চোখ থেকে হাত সরিয়ে ফেলে।হাত সরতেই মেহেক দোলনা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়ে।মেহেক পেছনে ফিরে দেখে সৌন্দর্য কাচুমাচু মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।

” সরি সরি মেহেক আমি ভেবেছিলাম বোনু,তাই আরকি।”

” সমস্যা নেই মিস্টার সৌন্দর্য।”

” চলো বসে কথা বলি।”

মেহেক আর সৌন্দর্য দোলানায় বসে।মেহেক যথাসম্ভব সৌন্দর্য থেকে দূরত্ব বজায় রেখে বসেছে।

” তাহলে ভাবীই তোমার সেই বোন।”

” হুম।”

” ভাবীর একটা বোন আছে শুনেছিলাম কিন্তু কখনো দেখিনি।তাই তোমাকে চিনতে পারিনি।তুমি কি আমাকে চিনেছিলে?”

” না।আমিও আগে কোনদিন আপনাদের দেখিনি।আমি দুলাভাইকে ছাড়া আপনাদের পরিবারের আর কাউকে তেমন একটা চিনিনা।”

” আচ্ছা।তা তুমি কি সবসময় এরকম চুপচাপ থাকো নাকি আমার সাথেই চুপ করে থাকো।”

” না তেমন কিছুনা।”

” হুম।আচ্ছা তুমি হঠাৎ চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা এলে কেন?এর আগে তো কখনো আসোনি।”

” আছে কিছু কারণ।সময় হলে একদিন জানতে পারবেন।” মুচকি হেসে বলে মেহেক।

” তুমি বড়ই রহস্যজনক একটা মানুষ।”

সৌন্দর্যের কথা শুনে মেহেক আবারো মুচকি হাসে।সে ভাবতে থাকে,

” আসলেই কি আমি রহস্যময় মানুষ?তাহলে তো মুগ্ধ আর রিয়া আমাকে নয় আমি ওদের ঠাকাতাম।কিন্তু এরকম তো কিছুই হয়নি।উল্টো ওরা আমাকে ঠকিয়েছে আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে।”

” কি হলো মেহেক?কোথায় হারিয়ে গেলে?”

” কিছুনা।আচ্ছা আপনি কি কখনো কাউকে ভালোবেসেন?”

” হুম বেসেছি তো আর এখনো বাসি।”

” ও আচ্ছা তার মানে আপনার গার্লফ্রেন্ড আছে।”

মেহেকের কথা শুনে চুলে হাত দিয়ে মুচকি হাসে সৌন্দর্য।সৌন্দর্যের হাবভাবে দেখে মেহেক তার উওর পেয়ে যায়।সে একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়।

” জানেন মিস্টার সৌন্দর্য ভালোবাসা হচ্ছে কাশফুলের মতো।”

” তা কিভাবে?”

” কাশফুলের যেমন শুধু শরৎকালে দেখা মেলে তেমনি সত্যি কারের ভালোবাসাও দেখা মেলে ভাগ্য থাকলে।কাশফুল যেমন শুভ্র,ভালোবাসাটাও সেইরকম শুভ্র,স্বচ্ছ।”

” তোমার এই জ্ঞানী জ্ঞানী কথাগুলো বাবা আমার এই ছোট মাথায় ঢুকছেনা।তবে তোমার কথাগুলো শুনে ভালোলাগলো।”

মেহেক প্রতিউত্তরে কিছু বলেনা।সে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবারো তার জীবন নাম বইয়ের আগে শেষ করে আসা পৃষ্টা গুলো মনে করতে থাকে।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here