#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
চুল খোঁপা করতে করতে নিচে নামছে মেহেক।সে আশেপাশে একবার তাকিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।রান্নাঘরে গিয়ে মেহেক দেখে তার বোন সৃষ্টি রান্না করছে।মেহেক গিয়ে সৃষ্টির পাশে দাঁড়ায়।
” কি রান্না করছিস আপুনি?”
” আরে মৃদু তুই উঠে পড়েছিস।কি খাবি বল?তোর পছন্দের নাস্তা বানাবো?”
” না এতো কিছু করতে হবেনা।তুই প্রতিদিন যা বানাস তাই বানা।আচ্ছা দুলাভাই কোথায় রে?কাল দেখলাম না।”
” আরে তোর দুলাভাইয়ের কাল আসতে একটু লেট হয়েছে।হসপিটালে একটা অপারেশন ছিল।”
” ও আচ্ছা।তো দুলাভাই এখন কোথায়?”
” তোর দুলাভাই এখনো ঘুম।আচ্ছা শোন না মৃদু একটা কাজ করে দেনা বোন।”
” এভাবে বলছিস কেন আপুনি?তুই বল কি করতে হবে আমি এখুনি করে দিচ্ছি।”
” তুই এই কফির কাপ দুটো একটু উপরে দিয়ে আসবি?আসলে আমিই যেতাম কিন্তু তোর দুলাভাই আবার বের হবে কিছুক্ষণ পর,ওর খাবার বানাতে হবে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে আমি দিয়ে আসছি।কিন্তু কার কার ঘরে দেবে?”
” একটা দিবি সৌ এর ঘরে আরেকটা আদুর ঘরে।”
” এরা আবার করা?”
” আরে সৌ মানে সৌন্দর্য আর আদু মানে স্পর্শ।”
” ও আচ্ছা আগে বলবি তো।”
” আচ্ছা যা এবার।ওরা সকালে কফি টাইমলি না পেলে আবার রেগে যায়।”
” হুম যাচ্ছি।দে কফির মগগুলো।”
কফির মগগুলো নিয়ে মেহেক আস্তে আস্তে উপরে উঠতে থাকে।উপরে উঠে সে দ্বিধায় পড়ে যায় প্রথমে সে কার রুমে যাবে।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক ঠিক করে সে প্রথমে স্পর্শের রুমে যাবে তারপর সৌন্দর্যের রুমে।মেহেক ধীর পাশে স্পর্শের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।সে ভাবতে থাকে নক করবে কি করবেনা।অনেক ভেবেচিন্তে মেহেক দরজা নক করার জন্য হাত উঠাতেই সে খেয়াল করে তার দুটো হাতেই কফির মগ।আশেপাশে তাকিয়ে মেহেক একটা ছোট টেবিল দেখতে পাই।মেহেক সৌন্দর্যের মগটা টেবিলটাতে রেখে দরজায় নক করে।দরজা নক করার কিছুক্ষণ পর স্পর্শ দরজা খুলে দেয়।স্পর্শকে একবার উপর থেকে নিচে পড়ক করে নেয় মেহেক।ব্ল্যাক কালারের একটা টিশার্ট পড়েছে আর সাথে হাটুর সমান একটা প্যান্ট।অর্ধেক মুখে তার শেইভিং ক্রিম লাগালো,হয়তো শেইভ করেছিল স্পর্শ।স্পর্শের এই অদ্ভুত লুক দেখে মেহেক অনেক কষ্টে নিজের হাসি আঁটকে রেখেছে।
” কি হলো হাসছো কেন?” গম্ভীর কন্ঠে বলে স্পর্শ।
” কই নাতো।” হাসি আঁটকে বলে মেহেক।
” এখানে তোমার কাজ কি?”
” ওই আসলে কফি দিতে এসেছিলাম।”
স্পর্শ একবার মেহেকের হাতের দিকে দেখে।হঠাৎ করেই স্পর্শের ভ্রু-কুচকে উঠে।
” তোমাকে কফি কে আনতে বলেছে?”
” আপুনি পাঠিয়েছে আসলে….”
” এটা আমার মগ না।এটা মেঝো ভাইয়ার মগ।”
এটা শোনার পর মেহেক পাশের টেবিলে রাখা মগটার দিকে তাকাই।স্পর্শও মেহেকের দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাই এবং নিজের মগটাকে দেখতে পাই।কফির মগটা তুলে নিয়ে একবার মেহেকের দিকে তাকাই স্পর্শ।অতঃপর তার মুখের উপর ধপ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয়।দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দে মেহেক চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর পিটপিট করে চোখ খুলে মেহেক।
” হু…..কি এটিটিউট।অভদ্র ছেলে কোথাকার।” মুখ ভেঙিয়ে আস্তে আস্তে কথাগুলো বলে মেহেক।
স্পর্শের রুমের সামনে থেকে সরে এসে মেহেক সৌন্দর্যের রুমের সামনে দাঁড়ায়।দরজায় টোকা দেওয়া পরেও যখন কেউ দরজা খোলে না তখন মেহেক দরজাটা একটা ফাঁক করে ভেতরে উঁকি দেয়।ভেতরে কাউকে দেখতে না পরে মেহেক আস্তে করে ঢুকে পড়ে।কফির কাপটা টেবিলে রেখে যখনি মেহেক চলে আসতে যাবে তখনি তার চোখ পড়ে বিছানার পাশে থাকা ছোট টেবিলটাতে থাকা ছবির ফ্রেমটায়।মেহেক ফ্রেমটা উঠে নিয়ে।ফ্রেমে সৌন্দর্যের ছবি লাগানো আছে।সৌন্দর্যের পড়নে ধবধবে সাদা পাঞ্জাবি,সাথে সাদা পায়জামা।পায়ে ব্ল্যাক কালারের জুতা,হাতে মেন’স ওয়াস আর সেই সাথে মুখে লেগে আছে একটা মিষ্টি হাসি।ছবিটা দেখে মেহেকের ঠোঁটের কোণের হাসি ফুটে উঠে।
” তুমি আমার রুমে কি করছো মেহুরাণী?”
হঠাৎ কারো কন্ঠস্বর শুনে ভয় পেয়ে যায় মেহেক।তার হাত থেকে ফ্রেমটা পড়ে যেতে নিলেও মেহেক সেটা ধরে ফেলে।যার ফলে ফ্রেমটা মরতে মরতে বেঁচে যায়।মেহেক ফ্রেমটা টেবিলে রেখে জোরপূর্বক মুচকি হেসে পেছন ফিরে তাকাই।কিন্তু পেছন ফিরে সে সৌন্দর্যকে দেখে হা।কারণ সৌন্দর্য অর্ধেক জামা-কাপড় পড়ে আছে।মানে সে প্যান্টের বদলে টাওয়াল পড়ে আছে তাও পিংক কালারের।সেই সাথে গায়ে শার্ট থাকলেও তার বোতাম খোলা,যার কারণে সৌন্দর্যের গায়ের মাঝের অংশ পুরোটাই দেখা যাচ্ছে।সৌন্দর্যকে এভাবে দেখে মেহেক ঢোক গিলে।
” কি হলো?তুমি আমার রুমে কি করছো মেহুপাখি?”
” ওই আসলে কফি দিতে এসেছিলাম।” জোরপূর্বক হেসে মেহেক বলে।
” আচ্ছা আমি আসি।আমার কাজ আছে।”
মেহেক তাড়াহুড়ো করে যেতে নিলে পায়ের সাথে পা লেগে সে পড়ে যায় তবে নিচে নয়,সে গিয়ে পড়ে সৌন্দর্যের বুকে।আচমকা এরকম কিছু হওয়ায় মেহেক ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিছুক্ষণ পর মেহেক পিটপিট করে চোখ খোলে।চোখ খোলার সাথে সাথে মেহেক দেখতে পাই সৌন্দর্যের উন্মুক্ত বুক।সৌন্দর্যকে এতোটা কাছে থেকে দেখে মেহেকের তো জান যায় যায় অবস্থা।মেহেক বারবার ঢোক গিলছে।মেহেক সৌন্দর্য বুক থেকে চোখ সরিয়ে সৌন্দর্যের দিকে তাকাই।সৌন্দর্য তখন মেহেক দিকেই তাকিয়ে ছিল,হঠাৎ সৌন্দর্যের চোখে চোখ পড়তেই মেহেক আরো লজ্জা পেয়ে যায়।হঠাৎ মেহেকের খেয়াল হয় তার ডান হাতটা সৌন্দর্যের বুকের উন্মুক্ত জায়গায়।এটা মনে পড়তেই মেহেক তাড়াতাড়ি হাতটা সরিয়ে দূরে আসতে চাইলে ব্যথায় সে চেঁচিয়ে উঠে।
” আহ্…… ” চুলে হাত দিয়ে।
” কি হয়েছে মেহেক?”
” আমার চুল।”
সৌন্দর্য খেয়াল করে মেহেকের চুল তার শার্টের বোতামের সাথে আটকে আছে।সৌন্দর্য তাড়াতাড়ি চুলটা ছাড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।এটা দেখে মেহেক চেষ্টা করে।আর অনেক টানাটানির পর মেহেক চুলটা ছাড়াতে সফল হয়।চুলটা খুলে যাওয়া পর আর একমিনিটও মেহেক সৌন্দর্যের রুমে থাকেনা।
এদিকে সৌন্দর্য এখনো একটা ঘোরের মধ্যে আছে।হঠাৎ তার চোখ যায় নিচে মেঝের দিকে।কিছুটা একটা দেখে প্রথমে তার ভ্রু-কুচকে উঠলেও পরক্ষণে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে।
অন্যদিকে,
নিজের রুমে এসে হাঁপাচ্ছে মেহেক।তার চোখের সামনে এখনো সৌন্দর্যের অর্ধেক পরিহিত শার্টের দেহটা ভেসে উঠছে।মেহেক ফ্যান ছেড়ে দিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।তারপর জগ থেকে পানি ঢেলে তা ঢকঢক করে খেয়ে নেয়।মেহেক মুখে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে কিন্তু পরমুহূর্তেই ফট করে চোখ খুলে ফেলে আর বড় বড় নিশ্বাস নিতে থাকে।
” হায়….কেন যেন আমি ওনার রুমে গেলাম।এখন চোখ বন্ধ করলেই ওনার কথায় মনে পড়ছে।আর শয়তান বেটাও শার্ট পড়েছে ঠিক আছে বোতাম গুলো লাগাবেনা।দূর ছাতার মাথা।”
মনে মনে সৌন্দর্যকে বকা দিতে দিতে হঠাৎ মেহেকের কিছু মনে পড়েছে আর সে হোহো করে হেসে উঠে।অনেক চেষ্টা করার পরও মেহেক নিজের হাসি কনট্রোল করতে পারছিলনা।
” স্পর্শ বুইড়া দাদু,হাহাহা……”
আসলে মেহেক স্পর্শের হাফ শেভিং ক্রিম লাগানো চেহারাটার কথা মনে পড়েছে।আর তা মনে পড়তেই মেহেকের হাসি পাই।
” কিন্তু যাই বলো এটার ভিতরে কোন রসকস নাই।কেমন যেন চুপচাপ আর গম্ভীর।আমার সাথে এসেছি পর্যন্ত ভালো করে একটা কথাও বলেনি।আরে ওনার কথা কি বলছি আমিও তো এরকমি।অপরিচিত কারো সাথে কথা বলিনা।আচ্ছা একবার কি ওনার সাথে কথা বলে দেখবো?না না বাবা দরকার নেই এই বুইড়া দাদুর সাথে যেছে কথা বলতে যাওয়ার।আমার কি ঠেকা পড়েছে নাকি?হু…..।তার থেকে সৌন্দর্য অনেক ভালো।কি সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি করে কথা বলে।”
মেহেক এসবই ভাবছে তখন তার ফোনে টুং করে একটা শব্দ হয়।মেহেক বিছানার অপর পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে দেখে মেসেঞ্জারে কেউ মেসেজ দিয়েছে।মেসেজ হাসিমুখে মেসেজটা ওপেন করে কিন্তু মেসেজটা দেখেই তার মুখের হাসি উবে যায়।
চলবে…..
(আগের পর্বে বেশির ভাগ কমেন্ট ছিল যে ” গল্পের নায়ক কে?সৌন্দর্য নাকি স্পর্শ?” তো এই প্রশ্নের উওর আপনারা পাবেন তবে একটু ধৈর্য ধরতে হবে
মাত্রই তো গল্প শুরু হলো।এখনই যদি সবকিছু বলে দিয় আর রহস্য না রাখি তাহলে গল্প পড়ে কি ভালো লাগবে?তাই একটু ধৈর্য ধরে গল্পটা পড়ুন,আপনাদের সব প্রশ্নের উওর আপনাআপনি পেয়ে যাবেন।)