কাশফুলের_ভালোবাসা #পর্বঃ০৭ #লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

0
310

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

ফোনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেহেক,থমথমে তার মুখ।ফোনের মধ্যে শোভা পাচ্ছে মুগ্ধ আর রিয়ার বিয়ের,বৌভাত আর তাদের হানিমুনে যাওয়ার ফটো।ছবিগুলো দেখে মেহেকের পুরোনো ক্ষতগুলো আবারো তাজা হয়ে উঠে।মেহেক যখন ছবিগুলো দেখছিল তখন আবারো ওই আইডি থেকে আরো কিছু ফটো আসে।ছবিগুলো সব সেলফি আর তা তুলেছে রিয়া।ছবিগুলোতে মুগ্ধ ঘুমাচ্ছে আর রিয়া ছবি তুলছে।মেহেকের বুঝতে দেরি হলোনা যে এটা আর কেউ না বরং রিয়া।মেহেক চিন্তায় করতে পারছেনা যে কোন বন্ধু এমনো হতে পারে।মেহেক বিশ্বাসই করতে পারছেনা যে এই মেয়েটা একসময় তার কাছের বন্ধু ছিল।কথাটা সত্য আসলেই মানুষ পরিবর্তনশীল,সময়ের সাথে সাথে মানুষের চরিত্রও পালটে যায়।একটা ছবিতে মেহেকের চোখ আটকে যায়।ছবিটাতে মুগ্ধ চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর মেহেকের মনে পড়ে এই মানুষটা তার বিশ্বাস নিয়ে খেলা করেছে,তার সাথে সংসার করার স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য কারোর সাথে সংসার করছে সে।হঠাৎই মেহেকের মুখ কঠিন হয়ে উঠে।সে দাঁতে কিড়মিড় করতে করতে আইডিটা প্রথমে ব্লক করে তারপর একাউন্টটাই ডিলিট করে দেয়।একাউন্ট ডিলিট করার পর মেহেক অনেক শান্তি শান্তি লাগছে কারণ এই একটা মাত্রই পথ ছিল যার মাধ্যমে রিয়া আর মুগ্ধ তার সাথে যোগাযোগ করতে পারতো।কারণ ইতিমধ্যেই মেহেক তার আগের সিম বদলে নতুন সিম নিয়েছে।ফোনটা একপাশে রেখে কার্বাড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে শাওয়ার নেওয়ার জন্য চলে যায় মেহেক।

প্রায় ১ ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে মেহেক।তার চোখমুখ ফোলা ফোলা যার অর্থ মেহেক কান্না করেছে।আসলে মেহেক অনেক চেষ্টা করেছে কান্না না করার জন্য কিন্তু বেহায়া মন তো আর তা বোঝেনা।

” কেন আমি মুগ্ধের কথা ভুলতে পারছিনা?কেন?সে আমাকে ধোঁকা দিয়েছে,আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।সে মিথ্যুক,ছলনাময়ী মানব,সে বিশ্বাঘাতক।না আমাকে ওর কথা ভুলতে হবে যেভাবেই হোক ভুলতেই হবে।ও যদি আমাকে ভুলে মুভ অন করতে পারে,তাহলে আমিও পারবো।পারতে হবে আমাকে।” আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেকে কথাগুলো বলে মেহেক।

বারান্দায় বসে একমনে কিছু ভাবছে মেহেক।হঠাৎ সে শুনতে পাই কেউ তার দরজায় কড়া নাড়ছে।

” মৃদু এই মৃদু?”

” আসছি আপুনি।”

মেহেক দরজা খুলে দেখে তার বোন দাঁড়িয়ে আছে।

” কিরে কফি দিয়ে আর নিচে নামলিনা কেন?খাবার খাবি না নাকি?”

” হুম আসছি,তুই যা।”

” হুম তাড়াতাড়ি আয়,তোর দুলাভাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে।”

সৃষ্টি চলে যায়।মেহেক কিছুক্ষণ বসে থেকে তারপর উঠে নিচে চলে যায়।নিচে এসে মেহেক দেখে অলরেডি সবাই চলে এসেছে।

” আরে শালিকা যে,এসো এসো।কতদিন পর তোমার সাথে দেখা।”

” কেমন আছেন দুলাভাই?”

” আমি ভালো আছি।তুমি কেমন আছো সেটা বলো।”

” আমিও ভালো আছি।”

” গুড।আচ্ছা বসো বসো খেয়ে নাও।সৃষ্টি মেহেকে খাবার দাও।”

” হ্যাঁ দিচ্ছি।মৃদু তুই বস।”

মেহেক পুরো টেবিলে চোখ ঘুড়িয়ে দেখে শুধু দুটো চেয়ার খালি আছে।একটা তার দুলাভাইয়ের পাশে অপরটা স্পর্শের সামনে বা বলা যায় সৌন্দর্যের পাশে।কোন উপায় না পেয়ে মেহেক সৌন্দর্য পাশে বসে পড়ে।মেহেককে দেখে সৌন্দর্য একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়,তার বিনিময়ে মেহেকও একটা কিউট স্মাইল দেয়।চোখ সরিয়ে সামনে তাকাতেই মেহেকের চোখ আটকে যায় স্পর্শের উপর।মেহেক স্পর্শের দিকে তাকিয়ে একটা মিষ্টি হাসি দেয় কিন্তু স্পর্শ সৌন্দর্যের মতো না হেসে উল্টো চোখ নামিয়ে খাবার খেতে থাকে।স্পর্শের এই বিহেভে মেহেক অনেকটা অপমান বোধ করে।

” হু….ঢং।কি হতো একটু হাসলে?হাসলে কি ওনার দাঁত খুলে পড়ে যাবে?নাকি ওনার হলুদ দাঁত দেখা যাবে?আরে হ্যাঁ এটাও তো হতে পারে উনি হলুদ দাতঁ দেখানোর ভয়ে হাসছেন না।এরকম হলে তো…..হাহাহা….” মনে মনে এসব কথাগুলো ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে মেহেক।

” কিরে মেহু এভাবে নিজে নিজে হাসছিস কেন?ভুতে ধরেছে নাকি?” পাশ থেকে ফিসফিস করে কথাটা বলে রিফা।

রিফার কথায় হাসি বন্ধ করে চুপচাপ খাবার খেতে থাকে মেহেক।খাবার শেষ হলে সবাই যে যার কাজে চলে যায়।সৌন্দর্য আর স্পর্শ চলে যায় ভার্সিটি আর রিফা তার রুমে চলে আসে।মেহেক রুমে না গিয়ে বরং তার বোনকে সাহায্য করছে।থালাবাসন ধোঁয়া হলে মেহেক তার বোনকে বলে—

” আপুনি শোন,তোর সাথে কিছু কথা আছে।”

” হ্যাঁ বল।”

” আপুনি আমি এখানে বেড়াতে আসিনি।আমি একেবারে ঢাকা চলে এসেছি।”

” হুম।”

” মানে আমি এখর ঢাকা শহরে থাকবো আর এখানেই পড়াশোনা করবো।”

” হুম।তারপর?”

” তারপর মানে?তুই এমনভাব বলছিস যেন তুই আগে থেকে জানতিস।”

” জানতাম না তবে আন্দাজ করেছিলাম।তুই চিন্তা করিস না আমি তোর দুলাভাই আর আমার শশুড়-শাশুড়ীর সাথে কথা বলে নিয়েছি।তুই এখানে থেকেই পড়াশোনা করতে পারিস।তোর দুলাভাই এতে আরো খুশি হয়েছে।”

” আমি তোদের এখানে বেশিদিন থাকবোনা আপুনি।আমি খুব তাড়াতাড়ি একটা বাসা খুঁজে সেখানে শিফট হয়ে যাবো।”

” বেশি কথা বলিস না।এখানে তুই কিছুই চিনিস না।তাই বলছি কয়েকমাস আমাদের এখানে থাক তারপর বাকিসব চিন্তা করিস।”

মেহেক আর কিছু না বলে নিজের রুমে চলে আসে।

বিকেলবেলা,

বারান্দায় বসে উপন্যাসের বই পড়ছে মেহেক।সে বই পড়তে এতোটায় মগ্ন ছিল যে খেয়ালই করেনি তার পেছনে যে কেউ দাঁড়িয়ে আছে।

” ভাউ…….”

” আ…..” চিৎকার করে উঠে দাঁড়ায় মেহেক।

মেহেক পেছন ফিরে দেখে রিফা তার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছে।

” রিফুনি……এভাবে কেউ ভয় দেখায়?আ….কি ভয়টাই না পেয়েছিলাম।”

” হাহাহাহা…..ভীতু মেহু।এতে কেউ ভয় পাই নাকি?”

” কেউর টা জানিনা তবে আমি ভীষণ ভয় পেয়েছি।আরেকটু হলে তো মনে হয় আমার হার্টবিট বন্ধ হয়ে যেতো।”

” হাহাহা…..ভীতু মেয়ে।তা এতো মনোযোগ দিয়ে কি পড়ছিলিস?”

” বই পড়ছিলাম আর কিছুনা।”

” আচ্ছা চল।”

” কোথায়?”

” শপিংয়ে যাবো।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”

” আমি যাবোনা।তুই যা।”

” চুপ।কোন কথা না।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে।”

মেহেককে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রিফা চলে যায়।মেহেকও একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রেডি হতে থাকে।

অন্যদিকে,

রিফা এসে সৌন্দর্যের দরজার সাথে পায়চারি করছে।রিফা যখনি ঘুরে সৌন্দর্যের দরজায় টোকা দিবে তার আগেই দরজা খুলে সৌন্দর্য বেরিয়ে আসে।সৌন্দর্যকে দেখে রিফা সেখান থেকে চুপিচুপি কেটে পড়তে নিয়ে সৌন্দর্য তাকে থামিয়ে নেয়।

” কিরে বোনু কি হয়েছে?” কিছুটা গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে সৌন্দর্য।

” না কিছুনা।” জোরপূর্বক হেসে রিফা বলে।

” বোনু সত্যি করে বলতো কি চাই তোর?”

” ওই আসলে দাভাই মানে……”

” এতো মানে মানে না করে সোজা সোজা বল কি চাই তোর?” মোবাইলের দিকে তাকিয়ে।

” আসলে আমি একটু শপিংয়ে যাবো।তুমি যাবে আমার সাথে।”

” না আমার সময় নেই।কাজ আছে আমার।”

” প্লিজ দাভাই চলোনা প্লিজ প্লিজ।দেখো আমরা দুটা একা মেয়ে।ফিরতে যদি রাত হয়ে যায় তখন?”

” দুটা একা মেয়ে মানে?দুজন কোথা থেকে এলো?তোর সাথে আর কেউ যাচ্ছে নাকি?”

” হুম মেহু যাচ্ছে তো।ও বেচারি একা বাসায় কি করবে?তাই ওকেও নিয়ে যাবো।”

সৌন্দর্য কিছুক্ষণ চুপ থেকে কিছু একটা চিন্তা করে।

” আচ্ছা যা তৈরি হয়ে নে।বের হওয়ার আগে আমাকে ডেকে দিস।”

” ও থ্যাঙ্ক ইউ দাভাই।ইউ আর সো সুইট।”

” হয়েছে হয়েছে আর এতো মাখন লাগাতে হবেনা।”

” তুমি আমাকে এভাবে বলতে পারলে দাভাই।তুমি তো আমার মিষ্টি দাভাই তোমাকে কি আমি মাখন লাগে পারি?তুমিই বলো?”

” হয়েছে হয়েছে এবার যা।দেরি হলে কিন্তু আমি যাবোনা।”

” এই না না আমি যাচ্ছি।” বলে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসে রিফা।

রেডি হয়ে ড্রয়ংরুমে বসে সৌন্দর্যের জন্য অপেক্ষা করছে মেহেক আর রিফা।বিগত ১৫ মিনিট যাবৎ তারা অপেক্ষা করে যাচ্ছে তবে সৌন্দর্যের কোন খবর নেই।অবশেষে আরো ৫ মিনিট পর সৌন্দর্য এলো।

” এতোক্ষণে তোমার আসার সময় হলো।হা…..চলো চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

” হুম চল।”

তারা তিন বের হবে সেই সময় কেউ তাদের উদ্দেশ্য বলে—

” কোথায় যাচ্ছো তোমরা?”

চলবে…….

(আজ আমার কি হয়েছে আমি নিজেই জানিনা।৬ পার্ট না দিয়ে ৭ পার্ট দিয়ে দিয়েছি আগে।কয়েকজন তো পড়েই ফেলেছে।তাই ভাবলাম এটা দিয়ে দিয়। আজ যেহেতু ২ টা পার্ট দিয়েছি কালকে আর গল্প দেবো। )

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here