#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
মেহেক,অথৈ আর রিফা হাঁটাতে হাঁটাতে ভার্সিটির পেছনে চলে আসে।ভার্সিটির পেছনে একটা বড় গাছ আছে,ওখানে বসে আড্ডা দিচ্ছে কয়েকজন।মেহেক একটু ভালো করে দেখলে বুঝতে পারে ওখানে সৌন্দর্য আর স্পর্শ দুজনেই আছে আর স্পর্শ হেসে হেসে কথা বলছে।স্পর্শকে হাসতে দেখে তো মেহেক অবাক কারণ ও এসেছে পর্যন্ত স্পর্শকে একবারো হাসতে দেখেনি।
এসব চিন্তা করতে করতেই কখন যে মেহেক তাদের কাছে চলে এসে বুঝতেই পারেনি সে।
” কিরে তোরা ক্লাসে না গিয়ে ঘুরাঘুরি করছিস কেন?” বলে সৌন্দর্য।
” মেহেককে ভার্সিটি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছি আর এখন আমাদের ক্লাস নেই।”
” এই মেয়েটা কে রে সৌন্দর্য?” পাশ থেকে একটা ছেলে বলে।
সৌন্দর্যকে বলতে না দিয়ে রিফা বলে,” ও হচ্ছে মেহেক আমাদের নতুন বান্ধবী।এবার তোমরা তোমাদের পরিচয় দাও।আচ্ছা বাদ দাও আমিই পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।মেহু এটা হচ্ছে শান্ত ভাইয়া,এটা আদিব ভাইয়া,এটা মহুয়া আপু আর এটা হচ্ছে লিজা আপু।”
” আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া আপুরা।”
” ওয়ালইকুম আসসালাম ।” সবাই একসাথে বলে।
” মেহেক আজ থেকে তুমিও আমাদের ছোটবোন আর বন্ধু।কোন হেজিটেশন ফিল করোনা আমাদের সাথে কথা বলার সময়।এখানে কিন্তু সৌন্দর্য আমাদের সবার বড় তাও আমরা সবাই অনেক ভালো বন্ধু।” বলে শান্ত।
” আপনারা সবাই একি ক্লাসে না?”
” সৌন্দর্য ছাড়া আমরা বাকি সবাই সেইম ব্যাচ।”
” তা মেহেক তুমি সিঙ্গেল আছো নাকি?” আদিব বলে।
আদিবের কথা শুনে মেহেক ঘাবড়ে যায়।
” ওই তোর না গার্লফ্রেন্ড আছে?” আদিবের মাথায় টোকা দিবে বলে শান্ত।
” আরে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে?কে সে?”
” ভাই আজ তোর কপালে সত্যি দুঃখ আছে।লিজা যেভাবে লুচির মতো ফুলছে না জানি কখন পুড়ে যায়।”
আদিব লিজার দিকে একটা কিউট স্মাইল দিয়ে তাকায়।কিন্তু লিজার মুখের ভাব দেখেই তার হাসি উবে যায়।লিজা ফট করে আদিবারের চুল ধরে ফেলে।
” তোর গার্লফ্রেন্ড নাই না?তোর গার্লফ্রেন্ড নাই?তো আমি কে?আমি কি কাজের বেটি জরিনা?”
” ছেড়ে দে মা ছেড়ে দে।”
” কি বললি?আমি তোর মা লাগি।দাঁড়া আজ তোর সাধের চুল আমি সব ছিঁড়ে ফেলবো।তোরে যদি আমি আজ টাকলা না বানিয়েছি তো আমার নামও লিজা না।”
” ভুল হয়ে গেছে গার্লফ্রেন্ড আর জীবনেও এরকম কিছু বলবোনা।সত্যি বলছি।”
” তাহলে বল তোর গার্লফ্রেন্ড আছে?”
” আছে আছে আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।”
” আর কোনদিন অন্য মেয়েকে লাইন মারবি?”
” আরে আমি কেন লাইন মারতে যাবো?আমার এতো সুন্দর,ভালো,শান্ত লেজ বিশিষ্ট একটা গার্লফ্রেন্ড থাকতে আমি কেন অন্য মেয়েকে লাইন মারবো?আমি কি এরকম তুমিই বলো বাবু।”
” হুম জানি আপনি কতো ভালো।লুইচ্চা পোলা।আর যদি তোরে আমি অন্য মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করতে দেখেছি তো তোর চুল……”
” না না আর যাই কর প্লিজ আমার চুলরে কিছু করিস না।”
” না কিছু করবো কেন?কিছু করবো না জাস্ট তোর চুলে আগুন লাগিয়ে দেবো।”
এতোক্ষণ নীরবে সবাই আদিব আর লিজার কান্ড দেখছিল এবার লিজার কথা শুনে সবাই একসাথে হেসে উঠে।হাসতে হাসতে হঠাৎ মেহেকের চোখ পড়ে শান্তের উপর।শান্ত কেমন করে যেন অথৈ এর দিকে তাকিয়ে আছে।মেহেক অথৈ এর দিকে তাকিয়ে দেখে সে নিজের মতো হাসতে ব্যস্ত।
রিফা,অথৈ আর মেহেক ক্লাসে দিকে যাচ্ছে।হাঁটতে হাঁটতে মেহেক রিফাকে কানে কানে বলে,
” আচ্ছা রিফু শান্ত ছেলেটা কেমন রে?”
” কেন কি হয়েছে?হঠাৎ এরকম প্রশ্ন করছিস কেন?”
” আরে আমরা যখন হাসাহাসি করছিলাম তখন শান্ত ভাইয়া কেমন করে যেন অথুর দিকে তাকিয়ে ছিল।”
” আরে তুই শান্ত ভাইয়ার ব্যপারে উল্টাপাল্টা কিছু ভাবিসনা।শান্ত ভাইয়া খুব ভালো ছেলে।শোন তোকে একটা সিগরেট বলি।”
” কি?”
” আসলে শান্ত ভাইয়া না অথুকে পছন্দ করে।”
” তোকে বলেছে নাকি?”
” আরে ধুর উনার কি আর কোন কাজ নেই নাকি যে আমাকে বলবে।”
” তাহলে তুই কিভাবে জানলি?”
” আরে ওনার হাবভাব দেখে যে কেউ বুঝতে পারবে।আর আমিও তো প্রেমে পড়েছি তাই আমি বুঝি কাউকে পছন্দ করলে বা প্রেমে পড়লে তার আচরণ কেমন হয়।”
” ও আচ্ছা।”
” শোন এটা অথুকে বলিস না।”
” কেন?বললে কি হবে?”
” আসলে অথু কেন যেন শান্ত ভাইয়াকে তেমন একটা পছন্দ করেনা।সবসময় এড়িয়ে এড়িয়ে চলে।”
” কিরে তোরা কি এতো ফুসুরফুসুর করছিস?আমাকেও তো বল।”
” কিছু না।চল তাড়াতাড়ি ক্লাসে দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
রিফা একহাতে অথৈ আর অন্যহাতে মেহেকের হাত ধরে ক্লাসের উদ্দেশ্যে দৌড় দেয়।
__________________________________________
” কিরে রিফু এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?কারো জন্য অপেক্ষা করছিস নাকি?” রিফাকে জিজ্ঞেস করে মেহেক।
” আরে আমার বাবুর জন্য দাঁড়িয়ে আছে।” মাঝখান থেকে বলে উঠে অথৈ।
” বাবু!”
” এই তোর লজ্জা করেনা নিজের হবু জিজুকে বাবু বলতে?” রেগে অথৈকে বলে রিফা।
” ও মা লজ্জা কেন করবে?সে আমার হবু জিজু হলেও ভাই তো আর না।”
” জিজু আর ভাই সমান।তাই ভাইয়ের নজরে দেখবি।লিচু মেয়ে কোথাকার।”
” হ্যালো গার্লস।কেমন আছো তোমরা?”
” বাবু……।তুমি চলে এসেছো।জানো তোমার জন্য কত অপেক্ষা করেছি আমি।”
” আরে আমার আধিঘরওয়ালি।ও সো সুইট তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করেছো।”
” রিফু এটা কে?” কানে কানে রিফাকে বলে মেহেক।
” এটাই হচ্ছে ইভান।”
” ও আচ্ছা তাহলে এই হচ্ছে অথুর বাবু।”
” ও তাহলে তুমিই মেহেক।তোমার কথা রিফার মুখে অনেক শুনেছি আজ দেখেও নিলাম।হাই আমি ইভান।”
” হ্যালো ভাইয়া।”
” রিফু দেখ আজ আমার বাবুটাকে ওয়ার্ট শার্টে কত কিউট লাগছে।হায় কিসি কি নাজার না লাগে।”
” রিফু তোকে একটা কথা বলবো?রাগ করবিনা তো?” মেহেক বল।
” বল কি বলবি।”
” শোন না তোর বয়ফ্রেন্ডটা না আসলেই অনেক কিউট।পুরোই কিউটের ড্রাম।আমারো এখন বলতে ইচ্ছে করছে হায় কিসি কি নাজার না লাগে।”
রিফা অথৈ আর মেহেকের কথায় কিছু না বললেও সে ভিতরে ভিতরে রাগে ফুসছে।তার ইভানের উপর এতো রাগ হচ্ছে যে ইচ্ছে করছে তাকে কাঁচা চিবিয়ে খেতে।
” দাঁড়া আজ তোর সাজগোজ আমি বার করছি।যেখানে আমাকে নিজের বান্ধবীরা তোর দিকে নজর দিচ্ছে না জানি বাকি মেয়েগুলো তোকে চোখ দিয়ে গিলে খায়।” মনে মনে কথাগুলো বলে রিফা।
” তো গার্লস চলো সামনে কফিশপটাতে গিয়ে বসি।”
” হ্যাঁ হ্যাঁ বাবু চলো চলো।”
” দাঁড়া।শোন তোরা আগে আগে যা,আমার ওর সাথে কিছু কথা আছে।”
” কি কথা তোর বাবুর সাথে?”
” তোকে কেন বলবো?যা বলার আমি ওকে বলবো।তুই এখন মেহেকের সাথে আগে আগে হাঁট আমরা আসছি।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।বাবু তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো আমার কাছে।আই মিস ইউ বাবু।মেহু চল।”
মেহেক আর অথৈ যখন কিছু দূরে যায় তখন রিফা চোখ বড় বড় করে ইভানের দিকে তাকাই।
” এই এই।”
” কি হয়েছে?এভাবে ছাগলের মতো ব্যাঁ ব্যাঁ করছো কেন?”
” কি আমি ছাগল।” রেগে বলে রিফা।
” আরে না না আমি ছাগল কেন হবে?তুমি তো মহিষ।” মুচকি মুচকি হেসে বলে ইভান।
” রাখ তোর ছাগল,মহিষ।আমি এই ব্যপারে তোর সাথে পরে কথা বলছি।তার আগে এটা বল এতো সেজেগুজে এসেছিস কেন?”
” কোথায় সাজলাম?আমি কি মেয়ে নাকি যে সাজগোছ করবো?আর তুমি তুই তুই করে কেন বলছো?”
” একশো বার বলবো হাজার বার বলবো।আর তুই বলছিস তুই সাজিসনি।তাহলে জেল দিয়ে চুলগুলো স্টাইল করেছিস কেন?আর এতো সুন্দর করে শার্ট পড়েছিস কেন?”
” ও মা বাইরে একটি একটু পরিপাটি হয়ে আসবো না?”
” রাখ তোর পরিপাটি।এরপর থেকে তুই চুলগুলো কাকের বাসার মতো করে আসবি আর পুরোনো জামাকাপড় পড়ে বের হবি।আর যদি তোকে আমি একটু স্টাইল করে আসতে দেখেছি তো তুই শেষ।”
” কি করবে?”
” বেশি কিছুনা জাস্ট তোর জামাকাপড় গুলো একটু ছিঁড়ে দেবো।তারপর সেসব জামাকাপড় পড়ে দেখি তুই কিভাবে বাড়িতে ফেরত যেতে পারিস।”
রিফার শেষের কথাগুলো শুনে ইভান ভয় পেয়ে যায়।
অন্যদিকে,
” কিরে অথু এইভাবে হাসছিস কেন?”
” হাহাহা…..দেখ রিফু কিভাবে ক্ষেপেছে।”
” তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে রাগিয়ে দিলি।দেখ এখন কিভাবে ইভান ভাইকে জাড়ছে।”
” হাহাহা…..কি করবো বল,ওরে ঝালাইতে ভালো লাগে।”
মেহেক আর কিছু না বলে রিফা আর ইভানের দিকে তাকাই।তাদের দেখে মেহেকের মুগ্ধ আর তার কথা মনে পড়ে যায়।সেও এরকম রাগ করতো যদি কোন মেয়ে মুগ্ধের প্রশংসার করতো।
” না না মেহু তুই এসব কি ভাবছিস।ভুলে যা মুগ্ধের কথা।মুগ্ধ বলে কেউ তোর জীবনে ছিল একথা ভুলে যা।”
চলবে……