কাশফুলের_ভালোবাসা #পর্বঃ১৪ #লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

0
275

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৪
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” শেষ হলো তাহলে তোদের প্রেম।”

” আরে তুই,আমি তো আরো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।তুই কোথায় চলে গিয়েছিলি?যদি কেউ দেখে ফেলতো তো?”

” তো কি করবো?দেড় ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম।আর তার উপর বারবার কেউ না কেউ আসছিল।তোদের জন্য তো দুবার মিথ্যা কথা বলতে হচ্ছে।”

” কে এসেছিল?”

” তোর গুণধর দুই ভাই।”

” কি বলিস?ভাইয়ারা কি জানতে পেরে গিয়েছিল যে আমি আর ইভান ছাদে আছি?”

” আরে না আমি ম্যানেজ করে নিয়েছি।”

” থ্যাঙ্ক ইউ রে বান্ধবী।তুই কতো ভালো।”

” হয়েছে হয়েছে আর এতো থ্যাঙ্ক ইউ বলতে হবেনা।”

” বান্ধবী তুই তো সিঙ্গেল না?”

” হুম তো?”

” একটা প্রেম কর না।আর কতকাল সিঙ্গেল থাকবি?”

‘প্রেম’ শব্দটা শুনে মেহেকের মন খারাপ হয়ে যায়।

” আচ্ছা আমার কিছু কাজ আছে।আমি যায় হ্যাঁ।”

রিফাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় মেহেক।

এদিকে,

ল্যাপটপে ভার্সিটির প্রজেক্ট তৈরি করছে স্পর্শ।হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠে।ল্যাপটপটা সাইডে রেখে ফোন হাতে নেয় স্পর্শ।স্ক্রিনে ভেজে ওটা নামটা দেখে মুচকি হাসে স্পর্শ।

” এতোদিনে মনে পড়লো আমার কথা।” কিছুটা অভিমান নিয়ে বললো স্পর্শ।

“………” অপরপাশে কি বললো তা শোনা গেলোনা।

” হুম দেখছি কেমন মনে পড়েছে।১ সপ্তাহ পর ফোন দিয়েছো।”

“………”

” তুমি বলেছিলে তুমি ফ্রী হলে দেবে।তাই দিয়নি।”

“…….”

” আচ্ছা ঠিক আছে।এবার বলো কেমন আছো?”

“…….. ”

” আমিও ভালো আছি।তবে তোমাকে ছাড়া ভালো লাগছেনা।কবে আসবে তুমি?”

“……..”

” অপেক্ষায় রইলাম।”

“………”

” আচ্ছা সাবধানে থেকো।”

স্পর্শ ফোন কেটে দেয়।তারপর গ্যালারিতে গিয়ে কারো ছবি দেখতে থাকে।
___________________________________________

ক্লাসে বসে আছে মেহেক,রিফা আর অথৈ।এখন তাদের কোন ক্লাস নেই।

” এই রিফু,এই মেহু কিছু কর না।বোরিং লাগে তো।”

” কি করবো?সার্কাস করার ব্যবস্হা করবো?” বিরক্ত নিয়ে বলে রিফা।

” সত্যি নাকি দোস্ত।তাহলে ব্যবস্হা কর।খুব মজা হবে।”

” ধুর বেডি চুপ থাকতো।”

” আচ্ছা চল বাইরে যায়।” মেহেক বলে।

” হ্যাঁ হ্যাঁ চল ক্যান্টিনে যায়।প্রচুর খিদা লাগছে।”রিফা বলে।

” একটু কম খা নয়তো মুটকি হয়ে যাবি।” হাসতে হাসতে বলে অথৈ।

” চুপ থাক বেডি শয়তানি।শোন আজ আমার তরফ থেকে তোদের থ্রিট।”

” কিরে মেহু আজ কি সূর্য উল্টা দিকে উদয় হলো নাকি?”

” কেন কি হয়েছে?” মেহেক বলে।

” না মানে রিফা বলছে থ্রিট দিবে।লাইক সিরিয়াসলি।মেহু আমার মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই ডাল মে কুচ কালা হে।”

” কেন আমি কি থ্রিট দিতে পারিনা নাকি?”

” না না সেটা কখন বললাম।আচ্ছা চল আজ তোরে আমি ফকিন্নি বানাই ছাড়বো।”

” দেখা যাবে।”

মেহেক,রিফা আর অথৈ ক্যান্টিনে আসে।রিফা এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে খুঁজতে থাকে।

” কিরে কাকে খুঁজছিস?” অথৈ বলে।

” আরে দাঁড়া।”

কিছুক্ষণ খুঁজাখুঁজির পর রিফা তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিতে পেয়ে যায়।

” এই তোরা দুজন আমার পেছন পেছন আয়।”

রিফা এগিয়ে গিয়ে কোণার টেবিলটার সামনে দাঁড়ায়।যেখানে বসে আছে স্পর্শ আর তার বন্ধুরা।

” দাভাই কোথায়?”

” সৌন্দর্য একটা কাজে বাইরে গিয়েছে।” লিজা বলে।

” আচ্ছা ভাইয়া আমাকে টাকা দাওতো।”

” টাকা কেন দেবো?টাকা দিয়ে কি করবি?” ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে স্পর্শ।

” মেহু আর অথুরে ট্রিট দিবো।এখন তাড়াতাড়ি টাকা দাও।”

শান্ত এতক্ষণে খেয়াল করে যে অথৈও আছে এখানে।অথৈকে দেখে শান্তের মুখে হাসি ফুটে উঠে।সে একদৃষ্টিতে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।এই দৃষ্টিতে না আছে কোন খারাপ কিছু আর না লালোসার ছোঁয়া,আছে শুধু মুগ্ধতা।

” তুই তোর বন্ধুদের ট্রিট দিবি তো আমি কেন টাকা দেবো?আমি পারবোনা টাকা দিতে।”

” তুমি দেবে নাতো?”

” না দেবোনা।”

” ঠিক আছে দিতে হবেনা।আমি বাসায় গিয়ে বাবাকে বলবো যে বাবা তোমার ছোট ছেলে না প্রেম করে।”

” ওই মিথ্যা কথা বলছিস কেন?”

” আমি আর তুমি জানি এটা মিথ্যা কথা কিন্তু বাবাতো আর জানে না।আর তুমি জানো বাবা আমার কথা কিন্তু বিশ্বাস করে।তো এবার ভেবে দেখো কি করবো।”

” আচ্ছা ঠিক আছে দিচ্ছি টাকা।এই নে।”

” ও ভাইয়া…..ইউ আর সো সুইট।”

” হ্যাঁ…. টাকা পেয়েছিস এখন তো সুইটই বলবি।”

এদিকে এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রিফার কান্ড দেখছিল মেহেক আর অথৈ।

” দেখেছিস মেহু আমি বলেছিলাম না ডাল মে কুচ কালা হে।দেখেছিস,আমি জানতাম এই রিফু নিশ্চয়ই কোন গন্ডগোল করবে।কারণ ও যে কিপ্টা,ও নিজের টাকায় ট্রিট তো দূর একটা চকলেটও খাওয়াবেনা।”

” আ….এভাবে বলছিস কেন।বাদ দে।”

টাকা পেয়ে রিফা নাচতে নাচতে মেহেক আর অথৈ এর কাছে চলে আসে।

” চল এবার।”

” এই তোর ট্রিট না।” অথৈ বলে।

” কেন কি হলো?”

” আমি কই ভাবলাম আজ তুই তোর নিজের টাকা দিয়ে ট্রিট দিবি।কিন্তু আমার ভাবনার সেগুড়ে বালি তুই তো আমার জানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ট্রিট দিচ্ছোস।”

” ওই বেশি জান জান করিস না।বেশি জান জান করলেনা তোর জানরে আমি বলে দেবো।আর ভাইয়ার টাকা মানে আমার টাকা।আমরা কি আলাদা নাকি?এবার বেশি বক বক না করে খেতে চল প্রচুর খিদা লেগেছে।”

মেহেক,রিফা আর অথৈ স্পর্শদের থেকে দূরে একটা টেবিলে বসে।এদিকে শান্ত এখনো অথৈ একদিকে তাকিয়ে আছে।আদিবের ধাক্কায় শান্তের ধ্যান ভাঙে।

” কি মামা কোথায় হারিয়ে গেলে?এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখো শুনি?”

” কিছুনা।”

” সত্যি কিছু না নাকি হুম…হুম….”

” আরে ধুর কিছুনা।”
__________________________________________

ভার্সিটির পড়া তৈরি করছে মেহেক।তখন কেউ তার দরজায় নক করে।মেহেক দরজা খুলে দেখে সৌন্দর্য এসেছে।

” আরে মিস্টার সৌন্দর্য।আপনি হঠাৎ?”

” কেন আসতে পারিনা নাকি?”

” না না তা কখন বললাম।এটা তো আপনাদেরই বাড়ি তো আসতেই পারেন।কিন্তু হঠাৎ এলেন তাই আরকি।”

” আমি ভেতরে আসতে পারি?”

” ভেতরে….আচ্ছা আসুন।” কিছুটা সংশয় নিয়ে বললো মেহেক।

ভিতরে এসে সৌন্দর্য একবার ঘরে চোখ বুলিয়ে নেয়।

” বসুন।”

” হুম।কি করছিলে?”

” ও কিছুনা পড়ছিলাম আরকি।আপনি কি জরুরি কিছু বলতে এসেছেন?”

” হুম।তো যেটা বলতে এসেছিলাম।তুমি টিউশন এর কথা বলেছিলেনা?”

” হুম।”

” আমি তোমার জন্য দুটো টিউশন ম্যানেজ করেছি।দুজনই মেয়ে আর ক্লাস ৯ এ পড়ে।তোমার কোন অসুবিধা হবে?”

” না না কোন অসুবিধা হবেনা।”

” তাহলে কাল থেকে পড়াশোনা শুরু করো।”

” আচ্ছা।ধন্যবাদ মিস্টার সৌন্দর্য,আমাকে সাহায্য করার জন্য।”

” এতো ধন্যবাদ দেওয়ার কিছু নেই।তোমাকে সাহায্য করতে পেরে আমার ভালোই লেগেছে।”

মেহেক কিছু না বলে একটা কৃতজ্ঞতার হাসি উপহার দেয়।

” আচ্ছা তুমি পড়ো আমি আসছি।”

মেহেকও মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়।সৌন্দর্য চলে গেলে মেহেক আবারো পড়তে বসে।পড়া শেষ হলে মেহেক নিচে চলে আসে খাবার খেতে।

শোয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে মেহেক,তখন তার রুমে আসে তার বোন সৃষ্টি।

” আসতে পারি?”

” আরে আপুনি তুই।জিজ্ঞেস করার কি আসে।আয় আয় ভিতরে আয়।”

সৃষ্টি এসে বিছানায় বসে।

” কিরে এভাবে কি দেখছিস?” চুল বাঁধতে বাঁধতে বলে মেহেক।

” আমি এটা কি শুনছি মৃদু?”

” কি শুনছি আবার?”

” তুই নাকি টিউশনি করবি।”

” হুম করবো তো।কাল থেকে শুরু করবো।”

” কিন্তু কেন?আমি আছি তোর দুলাভাই আছে।যা দরকার তুই আমাদের বলবি,আমাদের থেকে নিবি।”

” নারে আপুনি,এটা হয়না।আর এটা আমার কাছে তো নতুন কিছু নয়।আমি তো চট্টগ্রামে থাকতে টিউশন করেই নিজের খরচ চালিয়েছি তাহলে এখন কেন নয়।তুই চিন্তা করিস না আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারবো।”

” ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস।”

সৃষ্টিতে মন খারাপ করে চলে যায়।একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে মেহেকও শুয়ে পড়ে।

চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here