কাশফুলের_ভালোবাসা #পর্বঃ১৭ #লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

0
277

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

হেঁটে ক্লাসে দিকে যাচ্ছে অথৈ।মাঝপথেই সে শান্তের গলা শুনে থেমে যায়।শান্ত তাকে ডেকেছে,অথৈ একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে পেছনে ফিরে তাকাই।অথৈ ফিরে তাকাতেই শান্ত একটা মিষ্টি হাসি দেয়।

” কেমন আছো?”

” (দেখা হলেই কি এই প্রশ্নটা করা জরুরি?– মনে মনে) জ্বি ভাইয়া ভালো।”

” (ধুর ভাইয়া বলে পুরো মুডটাই নষ্ট করে দিলো।) কাল ঠিক মতো বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলে তো?”

” জ্বি।আমার…..”

” আচ্ছা যাও তোমার ক্লাস শুরু হয়ে যাবে আবার।”
শান্ত জানে অথৈ এটা বলবে,তাই সেই আগে বলে দিলো।

অথৈও কিছু না বলে পেছন ফিরে চলে যেতে শুরু করে।শান্ত আশা নিয়ে অথৈয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়,এই আশায় যে অথৈ একবার হলেও পেছন ফিরে তাকাবে কিন্তু না অথৈ তাকাইনি।শান্ত আশাহত হয়ে নিজের ক্লাসের দিকে যেতে থাকে।তবে কিছুটা দূরে গিয়ে অথৈ ঠিকই পেছন ফিরে তাকাই।সে দেখে শান্ত চলে যাচ্ছে।শান্তের যাওয়া দিকে তাকিয়ে অথৈ একটা দীর্ঘশ্বাস নেই।

” আমি জানি আপনি জানতেন যে আমি ঠিক মতোই কাল বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলাম।কারণ আপনি যে আমার বাড়ি অবধি আমার পেছন পেছন এসেছিলেন।আপনি হয়তো মনে করেন আমি কিছুই জানিনা কিন্তু না আমি কিছুটা হলেও জানি।আমি ওতোটাও বোকা নয় মিস্টার শান্ত।”
__________________________________________

ক্যান্টিনে বসে গল্প করছে অথৈ,রিফা আর মেহেক।তখন ক্যান্টিনে প্রবেশ করে সৌন্দর্য,স্পর্শ আর তার বন্ধুরা।তারা মেহেকদের থেকে একটা টেবিল দূরে বসে।তাদের অনেক খুশি খুশি লাগছে।সৌন্দর্য ছাড়া বাকি সবাই টেবিলে বসে আর সৌন্দর্য চলে যায় ক্যান্টিনের ভিতরে।কিছুক্ষণ পর সৌন্দর্য অনেকগুলো আইসক্রিম নিয়ে আসে।সে তার বন্ধুদের দিয়ে তারপর আসে মেহেকদের টেবিলে।তাদের জন্য আনার আইসক্রিমগুলো সে টেবিলে রেখে দেয়।

” কিরে দাভাই আজ এতো খুশি খুশি লাগছে কেন তোমাকে?আর তুমি আজ নিজে থেকে আইসক্রিম খাওয়াচ্ছো?ব্যপার কি?” রিফা বলে।

” আরে আজ সৌন্দর্যের পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে আর ও সেকেন্ড হয়েছে।সেই খুশিতে আমাদের ট্রিট দিচ্ছে।” আদিব বলে।

” তাই তো বলি তুমি আইসক্রিম কেন খাওয়াচ্ছো।যাইহোক এই সুযোগে আইসক্রিম খেতে পারছি এটা কিন্তু খুব ভালো।”

অথৈ আর রিফা নিজের আইসক্রিমটা নিয়ে খেতে শুরু করে কিন্তু মেহেক নেয়না।তা দেখে সৌন্দর্য বলে—

” কি হলো মেহেক নিচ্ছোনা কেন?নাও।”

” না মিস্টার সৌন্দর্য আমি খাবোনা।এটা বরং আপনি অন্যকাউকে দিয়ে দিন।”

” কেন খাবে না?আরে লজ্জার কিছু নেই খাও।”

” হ্যাঁ মেহু লজ্জা পেয়েও না।আমরাই তো খাও তুমি।” বলে শান্ত।

” না আসলে ওরকম কিছুনা।আসলে আমার ঠান্ডায় সমস্যা আছি।আমি ঠান্ডাজাতীয় খাবার খেতে পারিনা।এধরণের খাবার খেতে আমার ঠান্ডা লেগে যায়,মাঝেমধ্যে জ্বরও হয়।তো আমি খেতে পারবোনা।”

” আরে মেহু খা না একদিন খেলে কিছু হবেনা।” রিফা বলে।

” এই না তোরা কেউ জোর করিসনা।ওর সমস্যা আছে তাই কেউ জোড় করবিনা।ও খেতে না চাইলে ঠিক আছে সমস্যা নেই।তুমি বসো আমি আসছি।”

এটা বলে সৌন্দর্য চলে যায় আর কিছুক্ষণ পর একটা প্যাকেট আর একটা কোলড্রিংক এর বোতল নিয়ে আসে।

” এই নাও এই বার্গার আর কোলড্রিংকটা নাও।এই দুটোই কিন্তু ঠান্ডা জাতীয় খাবার না সো এখন কিন্তু কোন মানা শুনবোনা।তোমাকে খেতেই হবে।”

মেহেকও আর না করেনা।বার্গার আর কোলড্রিংকটা সৌন্দর্য থেকে নিয়ে নেয়।এদিকে সৌন্দর্যের বিহেভিয়ার মহুয়ার কাছে মোটেও ভালো লাগছেনা।সৌন্দর্যের মেহেকের প্রতি এতো কেয়ার মহুয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।রাগে হোক বা কষ্টে তার চোখে পানি জমে যায়।
__________________________________________

কিছুদিন পর,

টিউশন থেকে ফিরছে মেহেক।সে খুশিমনে হেঁটে হেঁটে আসছে কিন্তু হঠাৎ করেই বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়।

” এই বৃষ্টিটা এখনিই নামতে সময় পেলো।ধুর কেন যে ছাতাটা আনলাম না।”

মেহেক দৌড়ে একটা ছাউনির নিচে দাঁড়ায়।সে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে বৃষ্টি কমে যাওয়ার দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে কিন্তু বৃষ্টি কমার বদলে উল্টো বেড়ে চলছে।

” ধুর এখন আমি কি করি?বৃষ্টি তো কমার নামই নিচ্ছেনা।এখন বাড়ি কি করে ফিরবো?রিক্সা নেবো?কিন্তু এখন তো মাসের শেষের দিক।হাতে তেমন টাকাও নেই।রিক্সা নিয়ে টাকা নষ্ট করবো?”

কিছুক্ষণ চিন্তা করার পর মেহেক নিজের মনে মনেই বলে—

” ধুর নিয়েই নিয় রিক্সা।বাকি দিনগুলো কোনভাবে ম্যানেজ করে নেবো।”

মেহেক এদিক-ওদিক তাকিয়ে রিক্সা খুঁজছে কিন্তু একটা রিক্সার দেখাও সে পাচ্ছেনা।

” ও আল্লাহ একটা রিক্সার দেখা পাচ্ছিনা।আজ সব মুসিবত আজ একসাথে এসে পড়েছে।”

মেহেক দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে কি করবে তখন একটা গাড়ি এসে মেহেক সামনে দাঁড়ায়।হুট করে গাড়ি এসে থামায় মেহেক ঘাবড়ে যায়।মেহেক আশেপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়।বৃষ্টির কারণে জায়গাটা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে গিয়েছে এখন।মেহেকের ভয় ভয় লাগলেও সে সেটা বাইরে প্রকাশ করেনা।

” ভেতরে এসে বসো।”

গাড়ির ভেতর থেকে কারো কন্ঠস্বর শুনে মেহেক চমকে যায়।এরকম অদ্ভুত কথা শুনে মেহেকের ভয় আরো বেড়ে যায়।

” কি হলো ভেতরে এসে বসো।”

মেহেক ভেতরে বসেনা,সে নিজের জায়গায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পর কেউ ছাতা হাতে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে।কাউকে বেরিয়ে আসতে দেখে মেহেক ভয়ে পিছিয়ে যায়।লোকটা এসে মেহেকের সামনে দাঁড়ায়।

” কি হলো শুনতে পাওনি নাকি?তোমাকে না ভিতরে আসতে বললাম।”

” আমি কেন গাড়ির ভেতরে যাবো?”

” কেন যাবে মানে?তোমার কি বাড়ি ফেরার শখ নেই নাকি?”

” আমি….নিজেই…বাড়ি যেতে পারবো।আর আমি অপরিচিত কারো সাথে যেতে ইচ্ছুক নয়।”

” অপরিচিত?”

লোকটা নিজের মুখের সামনে থেকে ছাতা সরায়।এতোক্ষণ ছাতার কারণে মেহেক লোকটা মুখ দেখতে না পেলেও এবার ঠিকই দেখতে পাই।ছাতে হাতে লোকটা আর কেউ না বরং স্পর্শ।

” আমি তোমার অপরিচিত?”

” আপনি?”

” হ্যাঁ আমি তো কাকে আসা করেছিলে?এবার যাবে নাকি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে?দাঁড়িয়ে থাকলে থাকো।আমি যাই,আমার অনেক কাজ আছে।”

” এই না না আমি আসছি।”

মেহেক গাড়ির ভিতর গিয়ে বসে।স্পর্শও ছাতা বন্ধ করে গাড়িতে বসে।ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে নিজের চশমাটা মুছে নেয় মেহেক।

স্পর্শ নিজের মতো গাড়ি চালাচ্ছে।দুজনের মাঝে কোন কথা নেই।কিন্তু মেহেকের মনে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে অনেক্ষণ ধরে।সে চিন্তায় আছে সে স্পর্শকে প্রশ্ন করবে কি না।অবশেষে সব চিন্তা বাদ দিয়ে মেহেক প্রশ্ন করেই ফেলে–

” আচ্ছা আপনি এখানে কি করছেন?”

” মানে?”

” মানে আপনি এই রাস্তায় কি করছেন?আর আপনি জানলেন কি করে যে আমি বৃষ্টির কারণে আটকে পড়েছি।”

” ভাবী ফোন করে বলেছিল যে তুমি ছাতা নাওনি,তাই বৃষ্টিতে আটকা পড়ে যাবে।আমিও এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম আর যাওয়ার সময় তোমাকে দেখলাম।সো উল্টাপাল্টা কিছু ভেবোনা।”

” উল্টাপাল্টা আবার কি ভাববো?”

” উল্টাপাল্টা মানে এটা ভেবোনা আমি তোমাকে পছন্দ করি বা আমি তোমার পিছু নিচ্ছি।”

” ও হ্যালো মিস্টার আমি এরকম কিছুই ভাবিনি।”

মেহেক আর কোন কথা বলেনা,স্পর্শও আর নিজ থেকে কিছু বলেনা।

গাড়ি চলতে চলতে হঠাৎ মাঝরাস্তা থেমে যায়।হঠাৎ গাড়ি থেমে যাওয়ায় মেহেক প্রশ্ন করে—

” কি হলো?গাড়ি থামালেন কেন?”

” আমি থামাইনি।”

” তাহলে কি ভুতে থামিয়েছে?” বিরক্ত নিয়ে প্রশ্ন করে মেহেক।

” গাধা গাড়ি নিজে নিজে থেমে গিয়েছে।তুমি বসো আমি দেখছি কি হয়েছে।”

স্পর্শ ছাতা নিয়ে বাইরে চলে যায়।কিছুসময় পর হতাশ মুখে ফিরে আসে।

” কি হয়েছে?গাড়ি ঠিক হয়েছে?”

” গাড়ি এখন আর চলবেনা।”

” চলবেনা মানে?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে মেহেক।

” চলবেনা মানে চলবেনা।”

” তাহলে এখন কি করবো?এই বৃষ্টির মধ্যে বাড়ি কিভাবে পৌঁছাবো?”

” জানিনা।”

” উনি নাকি আমাকে বৃষ্টি থেকে সেভ করে বাড়িতে পৌঁছে দিতে এসেছে।এখন দেখো ওনার খাটাড়া গাড়ির জন্য দুজনেই ফেঁসে গেলাম।” বিরবির করে বলে মেহেক।

” কি বিরবির করছো?”

” কিছুনা।এবার বাড়ি কিভাবে ফিরবো?”

” চিন্তা করো কিভাবে ফিরে যাবো।”

অনেক্ষণ চিন্তা করার পর মেহেক আর স্পর্শ একসাথে বলে উঠে—-

” আইডিয়া।”

চলবে…..

(কাল না দেওয়ার জন্য দুঃখিত।সামনেই আমার পরীক্ষা,যার জন্য এখন পড়ার প্রচুর চাপ।আশা করি বুঝতে পারবেন সমস্যাটা।আর হ্যাঁ আমি জানি আপনারা নায়ককে সেটা এখনো কেন বলছিনা তা নিয়ে আপনারা বিরক্ত।তো এতোদিন যখন ধৈর্য ধরেছেন একটু সময় ধৈর্য ধরুন।আমি তাড়াতাড়িই নায়ককে সমানে নিয়ে আসবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here