#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ৩০(অন্তিম পর্ব-০২)
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
অন্যদিনে,
বসে বসে নেটফ্লিক্সে কোরিয়ার ড্রামা দেখছে অথৈ।সে অনেক মন দিয়ে ড্রামা দেখছে তবে তার মনোযোগের ব্যঘাত ঘটাতে বেজে উঠে তার ফোন।প্রথমে তো অথৈ ফোন ধরেনা কিন্তু যখন ফোনটা রিং হওয়া অফ হচ্ছে না তখন বিরক্ত নিয়ে অথৈ ফোন রিসিভ করে।তার ইচ্ছে ছিল ফোন রিসিভ করেই অপর পাশের ব্যক্তিটিকে দু-একটা কথা শুনিয়ে দেবে কিন্তু অপরপাশের ব্যক্তিটি যা বললো তা শুনে তো অথৈয়ের মুখ খোলাই রয়ে গেলো।
” সারাঙ্গে।”
অথৈয়ের হুস আসলে সে তাড়াতাড়ি ফোনটা কানের থেকে সরিয়ে নম্বরটা দেখে।না এটা একটা আননোন নম্বর।
” কে বলছেন আপনি?”
” এখনো চিনতে পারোনি অবুঝপরি?”
” সোজাসুজি বলুন তো আপনি কে?আর হুটহাট ফোন করে এসব কোন ধরনের অসভ্যতামি?”
” জোয়াহে।মনে পড়ে অবুঝপরি?”
” শান্ত?”
” তাহলে এতোক্ষণে চিন্তে পেরেছেন আপনি।”
” আপনি তাহলে অর্থ……”
” জ্বি হ্যাঁ মহারাণী।আপনার “জোয়াহে” এর অর্থ আমি বের করে ফেলেছি।যার অর্থ হচ্ছে আই লাইক ইউ বাট অবুঝপরি আই লাভ ইউ।”
অথৈ কি বলবে বুঝতে পারছেনা।সে ভাবতেই পারেনি শান্ত এর অর্থ এতো তাড়াতাড়ি বের করে ফেলবে।অথৈ কি বলবে বুঝতে না পেরে কট করে ফোনটা কেটে দেয়।
___________________________________________
বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোন টিপছে সৌন্দর্য হঠাৎ কেউ এসে তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে।হঠাৎ এরকম কি হওয়াতে সে ঘাবড়ে যায়।সৌন্দর্য ধাক্কা দিয়ে পেছনের মানুষটাকে সরিয়ে দেয় আর চট করে পেছন ফিরে তাকাই।
” এসব কি হচ্ছে মহুয়া?” রেগে বলে সৌন্দর্য।
” এসব আমি কি শুনছি সৌন্দর্য?”
” কি?”
” মেহেকের সাথে নাকি সামনের সপ্তাহে তোমার বিয়ে?”
” হ্যাঁ তুমি ঠিকই শুনেছো।”
” প্লিজ সৌন্দর্য এই বিয়েটা করোনা।আমি তোমাকে বড্ড ভালোবাসি সৌন্দর্য,নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি।তোমাকে ছাড়া যে আমি বাচাঁতে পারবোনা।” সৌন্দর্যের হাত ধরে বলে মহুয়া।সৌন্দর্য মহুয়া হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নেয়।
” কিন্তু আমি তোমাকে ভালোবাসি না।আমি শুধু তোমাকে একজন বন্ধু নজরেই দেখি।”
” প্লিজ সৌন্দর্য এমন বলোনা।আমি যে খুব কষ্ট হয়।” সৌন্দর্যকে জরিয়ে ধরে বলে মহুয়া।
এদিকে সৌন্দর্য আর মহুয়াকে এই অবস্থা দেখে মেহেকের পায়ের নিচ থেকে মাটি সড়ে যায়।সে এসেছিল মহুয়াকে খাবার দিতে কিন্তু এসে যে এরকম কিছু দেখবে সেটা সে কখনোই ভাবতে পারেনি।মেহেক কোন কথা না বলে চুপচাপ রুমে থেকে বেরিয়ে যায়।
সৌন্দর্য মহুয়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়।
” তোমার কি মোটেও নূন্যতম লজ্জাবোধ নেই।এভাবে হুটহাট জরিয়ে ধরা কোন ধরনের অসভ্যতামি।প্লিজ তুমি আমার চোখের সামনে থেকে এখুনি চলে যায়।নয়তো আমি ভুলে যাবো তুমি আমার বন্ধু ছিল।”
মহুয়া আর কোন কথা না বলে চোখের পানি নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ে।সৌন্দর্য মাথা চেপে ধরে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।
রাতে,
” কিরে মৃদু কেন ডেকেছিস আমায়?”
” শোন আপুনি আমি এই বিয়ে করবোনা।”
” তোর আবার হঠাৎ কি হলো?তুই না রাজি ছিলিস।তাহলে হঠাৎ?”
” আপুনি সংসার একজন মানুষের মন আর ইচ্ছে দিয়ে হয়না।একটা সুন্দর সংসারের জন্য দুজনেই মন আর ইচ্ছের প্রয়োজন।আমি হয়তো এই বিয়েটা মেনে নিতে পারবো কিন্তু মিস্টার সৌন্দর্য পারবেন না।কারণ উনি অন্য একজনকে ভালোবাসেন।”
” এসব তুই কি বলছিস?সৌন্দর্য তো আমাকে……”
” হয়তো লজ্জায় বলতে পারি।কিন্তু আমি আর নিজের চোখে দেখেছি।” তারপর মেহেক সকালের ঘটনাটা সৃষ্টিকে বলে।সব শুনে সৃষ্টি চুপ করে থাকে।তারপর মেহেককে বলে সে এই বিষয়ে সৌন্দর্যের সাথে কথা বলে দেখবে।
পরেরদিন সকালে,
নিজের বিছানা ঘোছাচ্ছে মেহেক।হঠাৎ কোথা থেকে সৌন্দর্য এসে মেহেকের হাত টেনে ধরে তাকে দাঁড় করায়।
” তুমি ভাবীকে কি বলেছো?”
” কি বলেছি?”
” কাল রাতে কি বলেছো?আমি নাকি…… ”
” হ্যাঁ ঠিকই তো বলেছি।আমি জানি আপনি বিয়েতে রাজি নয়।তাই আমিই বিয়েটা ভেঙে দিলাম।”
” বেশি বুঝো তুমি।চুপচাপ ভাবীর কথা মতো বিয়েটা করেনাও।আর যদি একবারো বিয়ে ভাঙার কথা বলেছো তো এরফল ভালো হবেনা।”কথাটা বলে সৌন্দর্য চলে যেতে নেয় তবে মেহেকের কথা শুনে থেমে যায়।
” তাহলে মহুয়া আপুর কি হবে?আপনি কি ওনাকে ধোঁকা দেবেন?প্লিজ আপনি যদি পরিবারের চাপে পড়ে এই বিয়েটা করেন আর মহুয়া আপুকে ছেড়ে দেন তাহলে প্লিজ এরকম করবেন না।কারো ভালোবাসা নিয়ে খেলা বড় পাপ।”
” আমি মহুয়াকে ভালোবাসি না।আমি শুধু ওকে বন্ধু হিসেবে সম্মান করি।” পেছনে না ফিরেই কথাটা বলে চলে যায় সৌন্দর্য।
দেখতে দেখতে মেহেক আর সৌন্দর্যের বিয়ের দিন চলে আসে আর যথাসময়ে তাদের বিয়েও হয়ে যায়।বিয়ে শেষ হলে মেহেক আর সৌন্দর্যকে একসাথে বসিয়ে সবাই তাদের দুজনকে ঘিরে গল্প করতে থাকে।
” নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা রইলো।ভালো থেকে তোমরা আর হয়তো কোনদিন দেখা হবেনা তোমাদের সাথে।”
মেহেক সামনে তাকিয়ে দেখে মহুয়া দাঁড়িয়ে আছে।মহুয়াকে দেখে মেহেকের বুক কেঁপে উঠে কারণ সে বুঝতে পারছে মহুয়ার মনে এখন কি চলছে কারণ সেও একসময় এই পরিস্থিতি স্বীকার হয়েছিল।মহুয়া আহতদৃষ্টি কিছুক্ষণ সৌন্দর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর মেহেকের দিকে একটা হাসি দিয়ে চলে যায়।মেহেকের এখন নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে কিন্তু তারও যে কিছু করার নেই।
.
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে চাঁদ দেখছে মেহেক।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে মেহেককে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সৌন্দর্যও তারপাশে এসে দাঁড়ায়।অনেকটা সময় তাদের মধ্যে নিরবতা থাকে।
” আপনি আমার কাশফুলকে ছেড়ে আমাকে কেন বিয়ে করেছেন?”
মেহেক হঠাৎ এরকম প্রশ্নে সৌন্দর্য ঘাবড়ে যায়।সে ভীতদৃষ্টিতে মেহেকের দিকে তাকাই।আমতো আমতো করে সৌন্দর্য কিছু বলবে তার আগেই মেহেক আবারো বলে,
” নিন কানের দুলটা পরিয়ে দিন।একটা কানের দুল কি আর ভালো লাগে।”
এটা বলে একটা কানের দুল সৌন্দর্যের দিকে বাড়িয়ে দেয় মেহেক।কানের দুলটা দেখে সৌন্দর্য আরো ঘাবড়ে যায়।
” কি হলো কি দেখছেন পড়িয়ে দিন।”
মেহেকের কাজে সৌন্দর্য এতোটা শক খেয়েছে যে সে কিছুই বলতে পারছেনা।কাঁপা কাঁপা হাতে কানের দুলটা নিয়ে মেহেককে পরিয়ে দিয় সৌন্দর্য।
কানের দুলটা পড়ানো হলে মেহেক সৌন্দর্যের দিকে ফিরে তাকাই।
” এবার বলুন তো আপনার কাশফুলকে কেমন লাগছে?”
মেহেকের কথা শুনে সৌন্দর্যের হার্টবিট বেড়ে যায়।
” আপনি কি ভেবেন আমি কখনোই জানতে পারবোনা সত্যিটা?আপনি ভুল ছিলেন মিস্টার সৌন্দর্য।সত্যিটা হয়তো আমি কোনদিন জানতে পারতাম না যদি না আপনি তা লিখে না রাখতেন।ঠিকই ধরেছেন আমি আপনার ডাইরি পড়েছি।”
মেহেকের কথা শুনে সৌন্দর্যের চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
” প্রথম যেদিন ডাইরিটা পেয়েছিলাম সেদিন শুধু প্রথমপৃষ্ঠা পড়েছিলাম।কিন্তু কিছুদিন আগেই আমার মনে পড়ে আপনার ডাইরির কথা।তাই আপনি যখন বাড়ি ছিলেন না তখন আমি আপনার ডাইরিটা খুঁজে বের করি আর তার সাথে পাই এই কানের দুল।ডাইরি পড়ে আর দুল দেখে আমার আসল কথা বুঝতে অসুবিধে হয়নি।”
আবারো চুপ করে যায় মেহেক।সৌন্দর্য কিছু বলেনা
সে শুধু চুপ করে মেহেকের কথা শুনতে থাকে।
” এতোই যখন ভালোবাসতেন তাহলে আগে বলেননি কেন?”
” আমি ভেবেছিলাম বললে তুমি মানবেনা আর ভাবীরও সেটা ভালো লাগবেনা তাই……”
” কি দরকার ছিল সেইদিন মিথ্যা কথা বলার যে আপনি আমাকে বাসে চিনতে পারেননি।”
” আমি চাইনি তোর কোন সমস্যা হোক।”
” জানেন মিস্টার সৌন্দর্য,আমি আপনার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা হলেও আমার প্রথম ভালোবাসা কিন্তু আপনি নন।আমি এর আগেও…..”
” আমি জানি সেসব।”
” এসব জানার পরেও তাহলে কেন আমাকে বিয়ে করেছেন।”
” ভালোবাসা কোন পাপ নয়।সবারই ভালোবাসার অধিকার আছে।আমি তোমার প্রথম ভালোবাসা হতে পারিনি এতে কোন আপসোস নেই তবে আমি চাইবো যেন আমি তোমার শেষ ভালোবাসা হয়।আমি কি তোমার শেষ ভালোবাসা হতে পারবো কাশফুল?”
মেহেক কিছুনা বলে সৌন্দর্যের চোখের দিকে তাকিয়ে তাকে।তারপর চুপচাপ তার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে থাকে।হঠাৎ করেই মেহেকের চোখের কার্নিশ বেয়ে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে।
.
.
.
৫ বছর পর,
” দাঁড়াও মামুনি।আস্তে দৌড়াও পরে যাবে।”
বিচের মধ্যে ছোট একটা মেয়ের পেছনে দৌড়াচ্ছে মেহেক আর দূর থেকে এই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করছে সৌন্দর্য।পিচ্চি মেয়েটা আর কেউ নয় মেহেক আর সৌন্দর্যের একটা সুন্দর অংশ,তাদের মেয়ে মেহেরিন।বছর বেশি না ৪ বছর।
” মাম্মা আমাতে দরতে পাববে না।” ছোট মেহেরিন একটা বলে খিলখিল করে হাসছে আর দৌড়াচ্ছে।
সৌন্দর্য,মেহেরিন আর মেহেক বিচে এসেছে কিছুক্ষণ একা সময় কাটাতে।এই ৫ বছরে সবাই নিজে নিজেন লাইফ গুছিয়ে নিয়েছে।নাইরা পরের বছরেই সিউল থেকে ফিরে এসেছিল আর এসেই কিছুদিনের মধ্যে স্পর্শকে বিয়ে করে নেয়।তাদেরও একটা মেয়ে আছে “নুরি”।ইভান এখন একজন সাকসেসফুল ডাক্তার।রিফার সাথে তারও বিয়ে হয়ে গিয়েছে।তাদের একটা কিউট মেয়ে আছে ” তুর”।অথৈ আর শান্ত তারাও তাদের লাইফ গুছিয়ে নিয়ে।পরিবার পরিজন নিয়ে তারাও বেশ আছে।তাদের ঘর আলো করে একটা ফুটফুটে ছেলে হয়েছে “সূক্ষ্ম”।আদিব আর লিজার সাথে মেহেকের শেষবার দেখে হয়েছে তাদের মেয়ে ” অনুরা” তার জন্মদিনে।
মেহেক মেহেরিনের পেছন পেছন দৌড়াতে দৌড়াতে একসময় তাকে ধরে ফেলতে সক্ষম হয়।
” এইতো আমার মাম্মাকে ধরে ফেলেছি।মাম্মামের সাথে দুষ্টমি হ্যাঁ।”
মেহেকের কথা শুনে আবারো খিলখিল করে হেসে মেহেরিন।মেয়ের হাসি দেখে মেহেকের মুখেও হাসি ফোঁটে।
” তোমার মেয়ে বুঝি?”
হঠাৎ করো কন্ঠস্বরে মেহেক পেছনে ফিরে তাকাই।কিন্তু যাকে দেখে তাতে তার বুক ধক করে ওঠে।এতোদিন পর না না এতো বছর পর এভাবে মুগ্ধের সাথে দেখা হবে সেটা কখনোই ভাবতে পারেনি মেহেক।মেহেক মুগ্ধকে একবার পড়ক করে নেয়।অনেকটাই শুকিয়ে গিয়েছে মুগ্ধ।আগে মতো আর হ্যান্ডসাম,গুড লুকিং লুক তার এখন আর নেই।
” হ্যাঁ আমার মেয়ে।” কাঁপা কাঁপা গলায় বলে মেহেক।
” খুব মিষ্টি তোমার মেয়েটা।কেমন আছো তুমি?”
মেহেকের মুগ্ধকে কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে তবে সে নিজেকে শান্ত করে নেয়।
” বেশ ভালো আছি।”
” তাহলে লাইফে মুভ অফ করলে।”
এবারো মুগ্ধকে কিছু একটা শুনিয়ে দিতে ইচ্ছে করেছিল মেহেকের তবে এবারো সে নিজেকের সংযত করে নেয়।
” বউ-বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে এসেছেন বুঝি?”
” না।একাই এসেছি।”
” ও।বউ-বাচ্চা কেমন আছে?”
” জানিনা।হয়তো ভালোই আছে।”
মেহেকের মুগ্ধের কথাটা কেমন যেন লাগলো।পরে সে মুগ্ধের থেকে জানতে পারে বিয়ের ৭ মাস পরেই রিয়া কনসিভ করেছিল।মুগ্ধ এতে খুব খুশি হয়েছি তবে রিয়া বাচ্চা রাখতে চাইনি।এই নিয়ে তাদের মধ্যে অনেক ঝগড়া হতো।একসময় মুগ্ধ অনেক বুঝানোর পরে রিয়া বাচ্চা রাখতে রাজি হয়ে যায়।তবে রিয়ার প্রেগনেন্সির যখন ৫ মাস তখন কোনভাবে রিয়া সিঁড়ি থেকে পড়ে যায় আর বাচ্চা মিসক্যারোজ হয়ে যায়।তবে এই ঘটনার পরেও তারা নিজেদের সামলে নিয়েছিল।তবে আস্তে আস্তে তাদের দূরত্ব বাড়ে।একসময় মুগ্ধের মনে হতে থাকে রিয়া ইচ্ছে করে বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলেছি।শুরু হয় তাদের মধ্যে ঝগড়ক-বিবেদ।মাঝেমধ্যে মুগ্ধ রিয়ার গায়ে হাতও তুলতো।এসবে অতিষ্ঠ হয়ে রিয়া মুগ্ধকে ডির্ভোস দিয়ে দেয় আর তার কিছুদিন পর অন্যকাউকে বিয়ে করে নেয়।
মুগ্ধের কথা শুনে মেহেকের রিয়ার বেবিটার জন্য খারাপ লাগে।
” আরে মুগ্ধ তুই এখানে?ওয়াট এ সারপ্রাইজ।”
” সৌন্দর্য তুই এখানে।”
” তোর ভাবী আর মেয়েকে নিয়ে ঘুরতে এসেছিলাম।”
” তো ভাবী কোথায়?দেখা করবিনা নাকি?”
” আরে তোর সামনেই তো দাঁড়িয়ে আছে।”
সৌন্দর্যের কথা শুনে মুগ্ধের মনে হচ্ছে তার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে।
” মেহেক….?”
” হ্যাঁ,ওই আমার স্ত্রী মেহেক আর এ আমাদের মিষ্টি মেয়ে মেহেরিন।মেহেক এই হচ্ছে আমার সেই বন্ধু যার বিয়ের জন্য আমি চট্টগ্রাম গিয়েছিলাম।”
মেহেক কিছু না বলে চুপচাপ মুগ্ধের দিকে তাকিয়ে থাকে।মুগ্ধ আর কিছু না বলে কাজের বাহানা দিয়ে চলে যায়।
” না চুখুমণি আগে আমাকে খাওয়া।তোকে পরে।”
” না মাম্মাম আগে আমাতে খাওয়াবে।” তোতলাতে তোতলাতে কথাটা বলে মেহেরিন।
” কি হয়েছে বাচ্চারা?”
” চুখুমণি তুমি আগে আমাকে খাইয়ে দেবে।”
” না মাম্মাম আগে আমাকে।”
আমাকে,আমাকে করে ঝগড়া করতে থাকে ছেলে-মেয়ে দুটো।ছেলেটা হচ্ছে সৃষ্টি আর স্বচ্ছের ছেলে কাব্য।খুবই মিষ্টি তবে রাগী টাইপের।
” আচ্ছা বাবা দুজনেই শান্ত হও।আমি দুজনকেই খাইয়ে দেবো।আসো।”
মেহেক কাব্য আর মেহেরিন দুজনকেই যত্ন করে খাইয়ে দেয়।
হোটেলেন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে মেহেক।সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পানির ঢেউয়ের শব্দ শুনছে।সৌন্দর্য পেছন থেকে এসে মেহেককে জরিয়ে ধরে।
” কি ভাবছো কাশফুল?” সৌন্দর্য এখন মেহেককে এই নামেই ডাকে।
“আচ্ছা আপনার কি কখনো এটা ভেবে কষ্ট বা আপসোস হয়না সে আপনার স্ত্রীর চোখে সমস্যা আছে বা সে চশমা পড়ে?”
” শোন কাশফুল কেউ কখনো পারফেক্ট হয়না।প্রত্যেক জিনিসে কোন না কোন খুঁত থাকে।সেই পারফেক্ট না থাকা জিনিসটাকে নিজেকে পারফেক্ট করে নিতে হয়।তোমার চশমা পড়া নিয়ে আমার কোনদিনও কোন সমস্যা ছিলনা আর না কখনো হবে।”
” আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলবো?”
” বলো।”
” আজ যার সাথে বিচে দেখা হয়েছে তাকে আপনি চেনেন?”
” হ্যাঁ।ও আমার ফ্রেন্ড মুগ্ধ।”
” ওনার এই পরিচয় ছাড়াও আরো একটা পরিচয় আছে।উনি আমার…… ”
” তোমার প্রথম ভালোবাসা ছিল।তাই তো?”
সৌন্দর্যের কথা শুনে মেহেক চমকে তার দিকে তাকাই।
” আপনি…..”
” আমি তোমাদের সব কথাই শুনেছি।”
” আপনি রাগ করেননি?”
” না।আমি তোমাকে আগেই বলেছি আমার তোমার অতিত নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই।আমি শুধু তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যতে হতে চায়।আমি কাশফুলের ভালোবাসা হতে চায়,শেষ ভালোবাসা।”
সৌন্দর্যের কথা শুনে মেহেকের মন থেকে পাথর সমান বোঝা নেমে যায়।সে প্রথম রাতের মতো আজো সৌন্দর্যের কাঁধে মাথা রাখে।আজও তার চোখের কার্ণিশ বেয়ে জ্বল ঘড়িয়ে পড়ে তবে তার সুখের।
__________________সমাপ্ত____________________
(অবশেষে গল্পটা শেষ হলো।এই গল্পটাতে আপনাদের এতোটা ভালোবাসা পাবো এটা আমি ভাবতে পারি।যারা যারা গল্পটা পড়েছেন তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ এবং ভালোবাসা।অনেকের কাছেই হয়তো গল্পটা অগোছালো লেগেছে কিন্তু আমি যে এভাবেই ভেবে রেখেছিলাম।তবে যাইহোক যারা শেষ পর্যন্ত গল্পটা পড়েছেন তাদের আবারো ধন্যবাদ।নতুন গল্প নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসার চেষ্টা করবো।ততদিন সবাই ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।ধন্যবাদ।)
~গল্পের নাম “কাশফুলের ভালোবাসা” কেন?
এই প্রশ্নের উওর হচ্ছে এখানে কাশফুল বলতে মেহেককে নির্দেশ করা হয়েছে।কাশফুলের ভালোবাসা মানে মেহেকের ভালোবাসাটাকে বোঝানো হয়েছে।