চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।০২ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
596

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।০২ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

ঢাকা শহরে গভীর রাতেও মানুষের আনাগোনা শেষ নেই। গাড়ির ইজ্ঞিনের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে রাস্তা হতে। কিন্তু বাড়িতে সকলে সারাদিনের ক্লান্তিতে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে। কারোর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না। হানিয়াও ক্লান্তিতে তন্দ্রা ডুব দিয়েছিল ঘুম একটু গভীর হতেই ফোনটা বেজে উঠল। চোখ না খুলেই ও হাতড়ে ফোন খুঁজতে লাগল। কিন্তু ফলাফল শূন্য! অগত্যা চোখ খুলে দেখল টেবিলের ওপরে ফোন। অলসে ওর উঠতে ইচ্ছে করল না। দরকারী ফোন ভেবে উঠে ফোন হাতে নিলো ফোনের স্ক্রিনে ভাসছে “ইমু মামু”।

‘ইমু মামু’ নামটা দেখেই হানিয়ার ঘুম ছুটে গেলো। তৎক্ষনা তড়িঘড়ি করে ফোন ধরতে কাল বিলম্ব করল না। ফোন কানে দিয়েই প্রশ্নের ফোয়ারা খুলে বসলো…
–“ইমুর বাচ্চা কোথায় তুমি? সেই দুপুর থেকে উধাও হয়ে গেছ ফোনটাও ধরছো না। তোমাকে খুঁজছি আমি। কোথায় তুমি? কত টেনশন হচ্ছে সে খেয়াল আছে তোমার?”

ইমন কণ্ঠে নিম্ন স্বরে বলল
–“ফোন সাইলেন্ট ছিল।”

হানিয়া ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল
–“কী হয়েছে মামা তুমি ঠিক আছো তো! তোমার গলাটা এমন লাগছে কেনো? কোথায় তুমি? বলো, আমি আসব! কী হলো বলছ না কেনো?”

ইন্দ্র ব্যাথার ঢোক গিলে যথাসম্ভব স্বাভাবিক ভাবে বলল
–“তুই টেনশন করিস না তো আমি ঠিক আছি। তোরা ঠিক আছিস তো?”

হানিয়া হাফ ছেড়ে বাঁচল তবুও মনের কোণে দ্বিধা থেকেই যায় বলল
–“হ্যাঁ সব ঠিক আছে। কোথায় তুমি? কিছু কী পেলে? আমি কিন্তু কিছুতেই এ বিয়েটা করতে পারব না।”

–“তোকে এ বিয়ে করতে হবে না। কালই বিয়ে ভাঙবে।”

–“কীভাবে? কী প্রুফ পেয়েছ তুমি? বলো আমাকে।”

ইমন হানিয়ার কথার উত্তর না দিয়ে হেয়ালি করে বলল
–“সেটা নাহয় কালই দেখবি। নাহলে পালাবি।”

–“দেখ মামা এখন কিন্তু মজা করার সময় নয়। কিন্তু তুমিই তো আমাকে পালাতে বারণ করলে। আমি পালালে তো মিডিয়ায়, বাসার সবাই, ফেন্ডসসার্কেল, আত্মীয়-স্বজনরা, সবাই আমাকেই দোষারোপ করবে, ভুল বুঝবে।”

–“আরে, গাধী! তোকে কী বলছি পালাতে? সাবধানে রাখিস ব্যাগ-ট্যাগ গুছিয়ে রেডি হয়ে বাবু হয়ে বসে থাক। মেয়ে লোক মানেই ২ লাইন বললে ৮ লাইন বেশি বোঝে।”

হানিয়া রাগান্বিত কণ্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলল
–“মেয়েদের নামে বদনাম শেষ হলে বলো কোথায় আছো?”

–“আমি আমার একটা ফেন্ডদের বাসা আছি। তুই নিশ্চিতে ঘুমা। ঘুম থেকে উঠে দেখবি তোর বিয়ে শেষ”

হানিয়া আঁতকে উঠে বলল
–“আমার বিয়ে শেষ মানে?”

ইমন জিভ কেটে বলল
–“উপস! তোর হবু বরের বিয়ে শেষ”

হানিয়া নিজের রাগ কন্ট্রোল করার বৃথা চেষ্টা করে বলল
–“তুমি মজা বন্ধ করে সবটা বলো।”

ইমন ক্লান্ত কণ্ঠে হাই তুলে বলল
–“ফোন রাখ তো আমি একটু ঘুমাই”

কথাটা বলে ইমন ফোন কল বিচ্ছিন্ন করে দিল। হানিয়া তার পরে আবার ও কল দিল কিন্তু কল যাচ্ছে না বারবার অপর প্রান্তের মহিলাটি বলছে ‘সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না অনুগ্রহ পূর্বক কিছুক্ষণ পর কল করুন’। হানিয়ার রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে যখন পুরোটা বলবি-ই না তখন কল করে এইটুকু ঘা দেওয়ার কী আছে। ঘুমটারও দফারফা করে দিল। হানিয়া কিছুক্ষণ এদিক ওদিক করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগল। সফল ও হলো দু’চোখ ছাপিয়ে ঘুম আসল।

••••

নরওয়ে‘কে শান্তির দেশ বলা হয়। এদেশে সচারাচর অপরাধের প্রবণতা দেখা যায় না। তা-ই বলে কী অপরাধ করে না কেউ? মানুষ জেনে না জেনে অপরাধ করে থাকে হোক সেটা অনিচ্ছাকৃত তাও যেটা অপরাধ সেটা অপরাধই। নরওয়ের রাজধানী অসলো শহরে একটি বারে ককটেল পার্টিতে ছেলেমেয়েদের হইহট্টগোল করছে। বারটি লোকালয় থেকে বেশ দূরে সচারাচর এমন জায়গায় এমন বার দেখা যায় না। এই বারে অবাধ অন্যায় কাজও করা হয়। এক সুদর্শন ধূসর চোখওয়ালা যুবক ওয়াইনের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর তার দৃষ্টি সামনে থাকা চিন্তিত অর্ধবয়স্ক লোকটির দিকে। লোকটি এতো ভেবেও দ্বিধায় ভুগছে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। লোকটি ভাবছে ঠকে যাবে নাতো! লোকটি নরওয়েজীয় (নর্ষ্ক) ভাষায় আমতাআমতা করে জিজ্ঞেসা করল

–“মিস্টার. এসএ আপনি এই বারটা নিয়ে কী করবেন? এটা নিয়ে আপনার লাভ কী?”

যুবকটি শান্ত দৃষ্টি তেমনই শান্ত কণ্ঠে সে ভাষাতেই বলল
–“আমি এমন একটা নির্জন জায়গা খুঁজছিলাম। যেখানে আমি আমার নতুন প্রডাক্টের গার্মেন্টস বানাবো। আমি আমার কাজ নিয়ে সিরিয়াস। আর তাছাড়াও এই বারের লাইসেন্স নেই ইল-লিগাল বার চালাছেন। আইনে জানালে আপনার অবস্থা কী হবে ভাবতে পারছেন?”

লোকটা বোধহয় ভয় পেলো। তবুও তার দ্বিধা সংশয় কাটে নি। যুবকটির পাশে বসা আরেকটি যুবক ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে একবার তার ভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার সামনে অর্ধবয়স্ক লোকটির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকাচ্ছে এবার অধৈর্য্য হয়ে যুবকটি কণ্ঠে একরাশ ক্লান্তি ঢেলে বাংলা ইংরেজি সংমিশ্রণে বলল
–“ব্রো চল হুদাই টাইম ওয়েস্ট করছিস। এই লোক বেশি পার্ট নিচ্ছে। আই থিংক এরে তেল দিয়ে লাভ হবে না। সো প্লিজ লেটস গো। আই নিড টু স্লিপিং।”

কথাটা বলেই পাশের যুবকটির বাহুতে মাথা ঠেকালো। যুবকটি তার কথায় পাত্তা না দিয়ে ধৈর্য্য সহকারে লোকটার সিদ্ধান্ত জানার জন্য বসে আছে। ‘কোনো কিছু পেতে হলে ধৈর্য্য ধারণ করতে হয়’ কথাটি তার মাথায় সবসময় থাকে। সে আবারও নরওয়েজীয় (নর্ষ্ক) ভাষায় বলল

–“আমি লিগালিই এই পুরো জায়গাটা কিনতে চাইছি। আপনার ডিমান্ড আমাকে জানাতে পারেন।”

থেমে টাকার দুইটা সুটকেসটা ঠেলে দিয়ে বলল
–“ ৫ কোটি নরওয়েজিয়ান ক্রোন (যা বাংলাদেশি টাকার ৫০+ কোটি)। আশা করি আপনার এটাতে হয়ে যাবে।”

এতোগুলো টাকা একসাথে দেখে লোকটার চোখ চকচক করে উঠল। এবার পাশে বসা যুবকটা ঝলমলে রাম্য কণ্ঠে বাংলায় বলল
–“লে হালুয়া! টোপ গিলেছে।”

পাশে বসা যুবকটা স্বল্প ঠোঁট বাকিয়ে হেসে আইনই কাগজ এগিয়ে দিল লোকটার দিকে লোকটা আর ভাবল না। এতোগুলা টাকা একসাথে পেলে কে ভাবে? সে-তো টাকা গুলো নিয়ে ইতিমধ্যে কল্পনায় পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here