#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১২ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
অন্তরিক্ষে নবচাঁদ তারার ঝিকিমিকি মেলা। ছোট আদুরে সহজ-সরল মনের অধিকারী রূপসী কন্যার আজ ভীষণ মন খারাপ। উদাসীন চাহনিতে, অক্ষিকোটরে জলরাশি এসে ভর করেছে। মন খুলে কাঁদার মতো বোনটা নেই যে তাকে জড়িয়ে ধরে সব বলবে। সে থাকলে হয়তো এমন পরিস্থিতি আসতে দিত না বোনকে আগলে রাখত। রুম অন্ধকারে বুদ হয়ে আছে হামজা চুপিসারে হায়াতের পাশে এসে বসল বলল
–“কী হয়েছে রে? এভাবে বসে আছিস কেনো?”
হায়াত মোলায়েম কণ্ঠে বলল “এমনিতেই।”
–“কেউ কিছু বলেছে তোকে? মন খারাপ?”
হ্যাঁ আজ নিশাদ ফোন দিয়েছিল। সে কাঁদছিল! হায়াত কোনো কথা বলতে পারি নাই ও শব্দ হারিয়ে ফেলেছিল। কী বলবে? কখনো নিশাদকে নিয়ে এমন প্রেম-ভালোবাসা কথা ভাবে নি আর না নিশাদ কখনো বলেছিল। নিশাদ হায়াতকে চুপ থাকতে দেখে বলল “কী হলো বল তুই আমাকে ভালোবাসিস না? আমি কী দেখতে খারাপ? কখনো তোকে অসম্মান করেছি? শুধু তোকে ভালোবেসেছি এটাই কী আমার দোষ? মামাতো বোনকে যদি ভালোবাসা দোষ হয় সে দোষে দোষী হতেও রাজি শুধু তুই আমার হয়ে যা প্লিজ। আমি আর কিছু চাই না।”
হায়াত চুপ থেকে বলল “রাখছি।”
তারপর আর নিশাদ ফোন ম্যাসেজ দিলেও ও ধরে নি। অনেক হু;ম;কিও দিয়েছে কিন্তু ও রেসপন্স করে নি।
হায়াত ওসব কথা বলল না মুখে বলল
–“নাহ! ভাবছি নিশাদ ভাই আমাকে কবে? কীভাবে? ঠিক কখন থেকে ভালোবাসল আমি তো এসব জানিই না।”
–“নিশাদ ভাইয়া আপুকে জানায় আগে কিন্তু আপু ভাইয়াকে নিষেদ করে দেয় তুই ছোট এসব দিকে জড়ালে পড়াশোনার ক্ষতি হবে। পাবলিক জানলে ট্রল করবে। তবুও নিশাদ ভাই জেদ করে আপু শেষে কী কী যেনো শর্ত দেয় ভাই ও মেনে নেয়। আর নিশাদ ভাই যতই ভালো হোক রেগে গেলে কী করে দেখেছিস তো! একদম আউট অফ কন্ট্রোল।”
–“তুই কীভাবে জানলি? তোরা সবাই জানিস আমিই শুধু জানি না?”
–“আমি ও জানতাম না সেদিন নিশাদ ভাই আপুকে বলছিল তোর কথা আমি আড়াল থেকে শুনে ফেলেছিলাম আপু রাগারাগি করছিল। পরে মামার কাছ থেকে জানছি।”
হায়াত চুপ করে রইল। হামজা আবার বলল “তুই কী নিশাদ ভাইকে ভালোবাসিস? বা কিছু ফিল করছিস?”
হমজার কথায় হায়াত চমকালো ওর কেনো জানি মায়া লাগছে এই মায়াটা ঠিক কার জন্য ও বুঝতে পারছে না সময় নিয়ে বলল “আমি কিছু জানি না রে কিছু বুঝতে পারছি না। রাহুলের যদি কিছু হয় তাহলে তো নিশাদ ভাইকে পুলিশে নিয়ে যাবে তাই না? সব আমার জন্য হলো তাই না রে?”
–“তোর জন্য কিছু হয় নি অমনি কী গাধী বলি? শোন একজন মানুষ আরেকজন মানুষ কে কারণ ছাড়া পছন্দ-অপছন্দ করতেই পারে রাহুল তোকে পছন্দ করে প্রপোজ করেছে তাতে কী হয়েছে? তুই তো রিজেক্ট করেছিস। কিন্তু নিশাদ ভাই না বুঝেই ছেলেটাকে মারল এটা উচিত হয় নি।”
হায়াত চুপ করে রইল। সোশাল মিডিয়ায় ঢোকা যাচ্ছে না যাচ্ছে তাই অবস্থা নিশাদ-রাহুল-হায়াত কে নিয়ে নানানজন নানানরকমের কথা বলছে। কমেন্টগুলোতে সবদোষ হায়াতকেই দিচ্ছে। হায়াত সেগুলো দেখে আরো ভেঙে পড়ছে। হামজা হানিয়ার কাছে ফোন দিল হানিয়া ফোন করতেই হামজা বলল “আপু তুই ফ্রী আছিস?”
হানিয়া বাইরে থেকে এসে শুয়েছে। হামজার কথা শুনে বলল “তোদের জন্য আমি সবসময় ফ্রী”
–“আপু রাহুলের এই অবস্থার জন্য হায়াত নিজেকে দায়ী করছে”
–“আরেহ না রাহুল সুস্থ হয়ে যাবে। ওর বাবা-মা সাথে কথা হয়েছে অনেকটা সুস্থ আছে জ্ঞান ফিরেছে। টেনশনের কারণ নেই।”
হায়াত হাসফাস করতে করতে বলল “আর নিশাদ ভাইয়ের কী হবে?”
হানিয়া চুপ করে রইল। হায়াত আবারও বলল “কী হলো বলছ না কেনো আপু।”
–“জানি না। নাহিদ ভাইয়া সামলে নিবে মনে হয়।”
তারপরের কয়েকদিন অনায়েসে কেটে গেলো। সময় চলছে কিন্তু থেমে গেছে হায়াত। ওর পড়াশোনায় মন নেই এতো ট্রল হয়েছে বিষয়টা নিয়ে সবাই দোষ ওকেই দিচ্ছে। মেন্টালি ট্রমার মধ্যে কাটছে। রাহুল আগের থেকে সুস্থ আছে নাকের হাড়টা ভাঙছিল সার্জারি করেছে তার পুরো টাকাটাই নিশাদ দিয়েছে ওর বাবা-মা’র কাছে ক্ষমাও চেয়েছে। হামজা, ইমন আর বাড়ির সবাই হায়াতের এমন অবস্থা মেনে নিতে পারছে না। হায়াতকে কখনো এতোটা ভেঙে পড়তে দেখে নি। প্রাণচঞ্চল মেয়েটা আচমকা নিভে গিয়েছে। ইমন, হামজা, হানিয়াসহ বাড়ির সবাই ওকে বোঝাল জীবনে এমন কিছু কিছু সময় আসে যা আমাদের হাতে থাকে না। হানিয়া সাফমানা করে দিল এসএসসি এক্সামের আগে আর কোনো শুটিং, সুট করবে না। ওরাও মেনে নিল। ওরা হায়াতের মনটা ঠিক করতে বাড়ির সবাই মিলে রাত ১২টাই বাইরে বের হলো। ঢাকা শহরে রাত ১২ হলেও লোকজন সমাগম কম নাই। পুরান ঢাকায় হাজী বিরিয়ানি খেলো সবাই মিলে। লাচ্চি খেতে গিয়ে ঘটল বিপত্তি ইমন একজায়গায় না বসে হাঁটাহাঁটি করছিল হটাৎ একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা খেয়ে সব লাচ্চি ওর শার্টে পড়ে নষ্ট হয়ে গেলো। ইমন বিরক্তি নিয়ে সামনের দিকে তাকালো মেয়েটা ইনোসেন্ট ফেস করে বলল
–“সরি, ইমন স্যার। আমি বুঝতে পারি নাই।”
ইমন বলল “ইট’স ওকে। আপনি এখানে?”
ইমন সফটওয়ার ইন্জিনিয়ার মেয়েটা ইমনের সাথে অফিসে কাজ করে কাজের বাইরে কথাও বলে না তারা। মেয়েটা স্বল্প পরিচিত মডেলও ইমন এটা জানে না।
–“কাজিনদের সাথে এসেছি স্যার। আপনি?”
–“মিস রুহি। এটা অফিস নয়। তাই স্যার স্যার বন্ধ করুন। আমি ফ্যামেলির সাথে এসেছি।”
–“কিন্তু আপনার শার্ট নষ্ট হয়ে গেলো। এই নিন টিস্যু।”
ইমন টিস্যুটা নিয়ে বলল “আসছি।” বলে প্রস্থান করল। ইরাবতী তাকিয়ে ছিল ছেলে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। মেয়েটার চোখ অন্য কথা বলছে। মেয়েটাকে দেখা মাত্র চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলল। পছন্দ হয় নি। দেখতে সুন্দর তবুও ওনার পছন্দ হয় নি। রুহি হেঁসে ভাইবোনদের কাছে গেলো।
•••
~তিলোতমা প্রেমকুঞ্জ~
সন্ধ্যাবেলা শাবনূর বেগম বসে আছে। ওনি আজ-কাল কেমন চুপ হয়ে গেছে। সকলে যার যার কাজে ব্যস্ত। সেদিন এবাড়ি থেকে যাওয়ার পর হানিয়ার আর এবাড়ির কারোর সাথে দেখা হয় নি একমাত্র সুভানা ছাড়া। সেজাদ আর সায়েম আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় এসেছে। সেজাদ শাবনূর বেগমের সামনের সোফাই বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। শাবনূর বেগম এই নিয়ে কয়েকবার সুভানাকে ডেকেছে সুভানা আসছে না। সোহানকে বলল “মণিকে টেনে আনোতো দেহি তোমার গায়ে কেমন শক্তি।”
সোহানও নিজের শক্তি দেখাতে সুভানাকে আনতে গেলো। সেজাদের এসব দিকে খেয়াল নেই ও কাজে মগ্ন হয়ে আছে। সুভানা হেলতে দুলতে এসে বলল “কী হয়েছে এতোবার ডাকছ কেনো? ঘুমিয়েও শান্তি নাই।”
–“সন্ধ্যাবেলা আবার কিসের ঘুম। মানসে সন্ধ্যাবেলা ঘুমাই?”
সুভানা সেকথার উত্তর দিল না। বলল
–“তুমি বলো কী জন্য ডেকেছ?”
শাবনূর বেগম আমতাআমতা করে বলল “তোর বান্ধবী তো আহে না। কই তোরে ভুলে গেলো না-কি? দরকার শেষ আর ভুইলা গেলো?”
–“কার কথা বলছ হানিয়া?”
সেজাদ কাজে মগ্ন ছিল। হানিয়া নামটা ওর মস্তিষ্কে গিয়ে আঘাত করল। এই ক’দিন মেয়েটাকে ভুলেই গেছিল। আজ ভোরে এই মেয়েকে নিয়ে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছে। কী যে-ই সে-ই স্বপ্ন সেটা সবটা মনে পড়ছে না সবটা অস্পষ্ট। চোখ ল্যাপটপে থাকলেও কান খাড়া করে রাখল।
–“ হ হ ঐ মাইয়াডা। আহে না ক্যান?”
সুভানার ঘুম ভাব উড়ে গেছে সন্ধিহান কণ্ঠে বলল “কেনো বলো তো? তুমি তো ওকে সহ্যই করতে পারো না। ও না আসলে তো তোমারই ভালো। আসল কাহিনী কও তো! কী ব্যাপার? হ্যাঁ?”
চলবে ইনশাআল্লাহ