#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।১৬ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
আজ আকাশের বোধহয় মন খারাপ। সেই রাতে অঝোর ধারায় বৃষ্টি হলো। এখনো আকাশ থেকে ধূসর মেঘ জমে আছে রোদের দেখা নেই। রাস্তা এখনো ভেজা। বাংলাদেশের মতো এখানে ভাংগা রাস্তা না ও দেশের মতো এদেশে রাস্তায় পানি জমে নি। বৃষ্টির মাটির গন্ধ নেই। অন্য দেশ, অন্য রকমের বৃষ্টি। হানিয়া হাসল। এখন ও রাস্তায় হাঁটছে গায়ে সাদা টি-শার্টের ওপরে লাল-কালো চেকের শার্ট, চুলগুলো পানিটেইল করে বাঁধা ছোট চুলগুলো এলোমেলো হয়ে বেড়িয়ে গেছে। শীতল বাতাসে শীত শীত লাগছে। বেলা সাড়ে ১১টা বাজে উদ্দেশ্য সুভানার বাসা যদি-ও ইচ্ছে ছিল না যাওয়ার অনিচ্ছায় যেতে হচ্ছে। সুভানা যখন ফোন দিয়েছিল তখন সাড়ে নয়টা। রেডি হয়ে খেয়ে পার্সপোর্ট অফিসের কাজ শেষ করে তবেই যাচ্ছে ১টার আগে ফিরবে বলে ঠিক করে নিয়েছে। এই ক’দিনে সুভানার কাছ থেকে পথ ঘাট চলাচলের নিয়ম জেনে নিয়েছে অনেকটা আয়ত্ত করে নিয়েছে পথ ভুলে গেলে ম্যাপ আর লোকজনের কাছ থেকে জেনে নেয়। শুধু এদেশের ভাষাটা আয়ত্ত করতে পারে নি শেখার চেষ্টা করছে সেটাও আয়ত্তে আনার।
হানিয়া ভাবছে শাবনূর বেগম কী বলবে? ওর সাথে কী এমন জরুরি কথা থাকতে পারে? হানিয়ার সাথে ওর তেমন সম্পর্কও নেই। ওনার সাথে হানিয়ার স্নায়ু যুদ্ধ চলে। ওনি খোঁচা মেরে কথা বলে হানিয়াও বলে রাগিয়ে দেয় অবশ্য ও রাগে না মজা পায়। হানিয়া ভাবনার মাঝে তিলোত্তমা প্রেমকুঞ্জে চলে আসলো। এতোদিন বাড়ির নেমপ্লেটের দিকে খেয়াল করি নি বাংলায় লেখা নিচে আবার ইংরেজিতেও লেখা। হানিয়া এতো কঠিন বাংলা বুঝতে পারল না।
হানিয়া কলিং বেল বাজিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সেজাদ তখন ড্রইংরুমে ফাইল, ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করছে। সোহান বল নিয়ে খেলা করছে। সোনিয়া লাইজু রান্না শেষ করে সাওয়ার নিতে গেছে। শাবনূর বেগম, সুভানা যার যার রুমে। সায়েম বন্ধুদের সাথে বাইরে আড্ডা দিতে গেছে। কলিং বেল বাজতেই। সেজাদ চমকে উঠল। মনোপটে হানিয়ার আসার খবর জানান দিল আশপাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খুলে দিলো। হানিয়াকে দেখে ধুকপুক বুক ঢামঢামা ঢোল বাজতে লাগল। হানিয়া কী সে শব্দ শুনতে পাচ্ছে? হানিয়াও সেজাদকে দেখে চমকালো। আগে কখনো এই অদ্ভুত রোবট মানবের সাথে ওর সাক্ষাৎ হয় নি। এখন যখন সামনা-সামনি পড়ে গেছে তখন কিছু না বললেও খারাপ দেখায়। হানিয়া হাসি মুখে “হাই!” ওপাশ থেকে কোনো রেসপন্স আসল না। শুধু তাকিয়ে রইল। হানিয়া ভেবাচেকা খেয়ে গেলো বিব্রতবোধ করছে। হানিয়া বাসার ভিতরে উঁকি দিল কেউ নেই। ভাবল চলে যাবে। হানিয়া ইতস্তত করে বলল “বাসায় কেউ নাই?”
সেজাদ শান্ত কণ্ঠে বলল “আছে।”
–“তাহলে কী ভিতরে যেতে পারি?”
সেজাদ মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে সরে দাঁড়ালো। হানিয়া হাঁফ ছেড়ে ভিতরে ডুকে গেলো। বিরবির করে সেজাদকে “ব্যাটা, রোবট, ভ্যাম্পেয়ার” বলে সম্মদধোন করলো। সোহান হানিয়াকে দেখে “সুইটগার্ল” বলে দৌড়ে এসে হানিয়াকে জড়িয়ে ধরল। হানিয়া ওকে নিচু হয়ে কলে নিলো। সুভানাও দৌড়ে এলো ও মুলত বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল হানিয়াকে দেখে আসলো। সেজাদও দরজা বন্ধ করে হানিয়ার পিছনে আসলো। সুভানা বলল “বেবস তুই বেঁচে আছিস? একটু আগে এতো ফোন দিলাম ধরলি না।”
–“তোর বিয়ে না খেয়ে এতো তাড়াতাড়ি মরব না।”
–“একিই তোর হাত লাল… আহারে খুব জোরে বেঁধেছিল ওরা? সাতচুন্নিীর দল আমার বেবসটাকে বাঁধছিল সামনে পেলে দেখিস কী করি চুলের ধরে ঘুরাবো।”
–“ফুটো ডায়লগ কম দে। আমি ঠিক আছি। নিজের হয়ে মারপিট করতে পারিস না আবার আমার হয়ে মারপিট করবে। হাহ্”
সুভানা মুখটা ছোট করে বলল “আবার খোঁটা দিলি?”
হানিয়া ভ্রু নাচিয়ে বলল
–“কোনো সন্দেহ আছে? বাই দ্যা ওয়ে তোর দাদুমণিকে ডাক কী বলবে ওনি আমাকে আবার ফিরতে হবে।”
সুভানা মুখ ঝামটা দিয়ে বলল
–“পারব না নিজে খুঁজে নে। হুহ্…”
কথাটা বলে চলে গেলো সিড়ি দিয়ে। হানিয়া ঠোঁট উল্টে সোহানের দিকে তাকিয়ে বলল “সুইটহার্ট তুমি কী ওনাকে ডেকে দিতে পারবে?”
–“ইয়েস, ইয়েস। তু তুমি সিট ডাউন কলো (করো) আমি এখনি ডেকে আনছি।”
–“ওকে। এই নাও তোমার জন্য চকলেট।”
সোহান চকলেট পেয়ে খুশি হয়ে গেলো বলল “থ্যাংকিউ মাম্মা’তো চকলেট খেতে দেয় না শুধু বকা দেয় ক্যাভিটি হবে বলে।”
–“ওকে তাড়াতাড়ি ওনাকে ডেকে আনো।”
সোহান ছুটে গেলো। হানিয়ার এবার পাশে খেয়াল হলো সেজাদ পকেটে হাত ভরে ওর পাশে বেশ দূরত্ব নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হানিয়া ভড়কে গেলো। হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু সফল হলো না। চুপচাপ গিয়ে সোফায় বসল। সেজাদও সোজাসুজি অপর পাশে বসলো। ও তাকিয়ে আছে দেখে হানিয়ার অস্বস্তি হচ্ছে। হাঁসফাঁস লাগছে। হানিয়া রাগ লাগছে এই ছেলের জায়গায় অন্য ছেলে হলে দুমদাম কয়েক ঘা লাগিয়ে দিত শুধু বান্ধবীর ভাই বলে সহ্য করতে হচ্ছে। হানিয়া সেজাদের দিকে তাকিয়ে বলল “আপনি কী ট্যারা?”
সেজাদ নড়েচড়ে বসে ভ্রু কুঁচকে বলল “হোয়াট? হোয়াট ডু ইউ মিন বাই ট্যারা?”
হানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল “ট্যারা বুঝেন না? এই যে (বলে চোখ বড়বড় করে নিজের নাকের দিকে তাকিয়ে বলল) এমন দেখলে মনে হয় তাকিয়ে আছে একদিকে কিন্তু মনে হয় সে সে দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।”
হানিয়ার চোখ ট্যারা সোজা করে চোখ ঝাপটালো। সেজাদ ওর কথা আর মুখভঙ্গি দেখে শব্দ করে হেসে বলল “ভেরি ফানি।”
হানিয়া চোখ-মুখ কুঁচকালো। ততক্ষণে সোহান এসে উপস্থিত হয়ে সেজাদের দিকে বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল “সুইটগার্ল, ঝিঁমু তোমাকে রুমে ডাকছে। কাম, কাম।”
হানিয়া উঠে গেলো। সেজাদ স্বাভাবিক হতে চেয়েও পারল না একা একা হাসল কিছুক্ষণ। সায়েম এসে সেজাদকে একা হাসতে দেখে বলল “হোয়াটস আপ ব্রো? এতো হ্যাপির রিজন কী আমাকেও বলো আমিও হাসি।”
সেজাদ হেসে বলল
–“নাথিং।”
সুভানা এসে বলল “হানিয়া কই গেলো ব্রো? এখানেই ছিল তো! চলে গেলো না-কি!”
–“নো, দাদুমণির রুমে।”
–“ওহ ওয়াও হানিয়া এসেছে। ভাই হিসাবে রেসপনসেবলিটি আছে না? কই গেলো? ডাক ডাক”
সুভানা, সেজাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সায়েম আমতাআমতা করে বলল “হোয়াট? এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো? আই নো আ’ম হ্যান্সাম।”
–“অতি ভক্তি চোরের লক্ষণ। হ্যান্সাম না ছাই তোকে চোরের মতোই লাগে।”
–“চোখের ডক্টর দেখা ইডিয়েট। আচ্ছা শুন হানিয়ার বোন আছে না? ওটা কী সিঙ্গেল? হানিয়া তো ভাই বানিয়ে নিল। ওর প্রতি বোনের ফিলিংস চলে আসছে এখন ছোটটাই সম্বল।”
সায়েমের কথা শুনে সুভানা, সেজাদ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো। সুভানা বলল
–“আর ইউ ম্যাড ব্রো?”
–“ভুল কী বললাম?”
সুভানা মুখ চেপে হেঁসে বললো
–“ও অনেক ছোট এখনো স্কুলে পড়ে। তাছাড়া ওর একটা ক্রেজি লাভার আছে সে জানলে। তোমার নাক ফাটিয়ে দিবে। এই সেদিন একটা ছেলের নাকের হাড় নাড়িয়ে দিয়ে নিজেই তার চিকিৎসার ব্যবস্থা খরচ করলো।”
–“আহারে বেচারা ও নাকি আমি স্কুল পড়ুয়া মেয়েটাও প্রেম করে আমি কী দোষ করলাম?”
–“তোমার এতো গার্লফ্রেন্ড থাকতে আরো চাই? আর হায়াত বাচ্চা, বোকা মেয়ে ও তো জানতোই না ওকে কেউ ভালোবাসে। সেদিন জানলো। হানিয়াই ওকে জানতে দেয় নি। ওই পাগলটাকে চাপে রাখত। যেই এখানে আসলো সব জানাজানি হলো। শালা পাগল একটা মানুষ হলো না। পাগলকে সোজা করতে হানিয়াই যথেষ্ট বিয়াদপটা…”
সুভানা বকবক করতে করতে শাবনূর বেগমের রুমের দিকে অগ্রসর হলো।
চলবে ইনশাআল্লাহ