#তোমায়_পাবো_বলে
পর্ব_৯
#নিশাত_জাহান_নিশি
“তুই হাসছিস কেনো টয়া? আমার কথা তোর বিশ্বাস হচ্ছে না? আমি সত্যিই হিমেশকে নয় জিহাদকে ভালোবাসতাম!”
মুহূর্তের মধ্যেই দম ফাঁটা হাসিতে বিঘ্ন ঘটল আমার। সন্দিহান দৃষ্টি পড়ল আপুর অস্থির মুখের গড়নে। ভ্রু যুগল খড়তড়ভাবে কুঁচকে আমি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“কি বললে তুমি? হিমেশকে ভালোবাসতে না তুমি?”
এক অস্থির অনুতাপে আপু মাথা ঝুঁকাতে বাধ্য হলেন। অতঃপর ঋজু কন্ঠে বললেন,,
“প্রথম দিকে অনেকাংশেই ভালোবাসতাম। তবে পরিশেষে যখন জিহাদের সাথে আমার বন্ধুত্ব হয়, দুজন দুজনকে চিনতে শুরু করি, জানতে শুরু করি, বুঝতে শুরু করি। তখন থেকেই কেনো জানি না অল্প স্বল্প করে হিমেশের প্রতি আমার ভালো লাগা, ভালোবাসার টান গুলো ক্রমশ হ্রাসের দিকে ধাবিত হচ্ছিলো। সমস্ত অনুভূতি গুলো আয়ত্তাধীন হয়ে উঠছিলো। জিহাদের অস্তিত্বকেই ক্রমান্বয়ে আষ্টেপৃষ্টে আঁকড়ে ধরছিলো। অতঃপর আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, হিমেশকে নয় জিহাদকেই আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাই! ঠিক হলো ও তাই। জিহাদকেই আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম!”
আপুর স্বার্থপরায়নতার ভাবার্থ বুঝা মাএই ফট করে আমার মাথায় অঢেল রাগ চেঁপে বসল। এতোটাই বিশ্বাসঘাতক আমার আপু? প্রথম ভালোবাসাকে ভুলে সে দিব্যি দ্বিতীয় ভালোবাসা নামক মানুষটাকে অন্তর্পনে গ্রহন করে নিলো? বিবেকে কিঞ্চিৎ পরিমান বাঁধছিলো না তখন? একবার ও জ্ঞানে আসে নি যে, আমি কাউকে নির্মমভাবে ঠকাচ্ছি? তার অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ে খেলা করছি? তার বিশ্বাস ভেঙ্গে, চূড়ে অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছি? প্রেম অন্ধ জানতাম, তবে প্রেমে পড়া মানুষগুলো এতোটাই অন্ধ আর নিচ প্রকৃতির হয় তা আজ জানলাম। রূঢ় কন্ঠে আমি আপুর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললাম,,
“তুমি জানতে না? হিমেশর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিলো?”
“জানতাম! তবে এটা জানতাম না, হিমেশ রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্যই তোকে বিয়ে করছিলো!”
“সর্বনাশ করলে তো আমার? এবার তুমি শান্তি হয়েছ? ফিলিংস সো হ্যাপি না? সেলিব্রেট করার স্কোপ খুঁজছ তাই তো? ব্যাপার না, সেই স্কোপটা ও আমি তোমাকে তৈরী করে দিবো। পুরো পরিবার সেই সেলিব্রেশানে প্রেজেন্ট থাকবে।”
ঠান্ডা মাথায় আপুকে হুমকি দিয়ে আমি প্রখর রাগান্বিত ভাবমূর্তি নিয়ে আপুর সম্মুখ থেকে প্রস্থান নেওয়ার পূর্বেই আপু পেছন থেকে আমার হাতটা টেনে ধরে অসহায় কন্ঠে বললেন,,
“প্লিজ বনু। কাউকে এই ব্যাপারে কিছু বলিস না। সংসারটা ভেঙ্গে যাবে আমার। জিহাদ আমাকে ভুল বুঝবে। পরিবারের সবাই আমাকে ছিঃ, চিৎকার করবে। সমাজে মুখ দেখাতে পারব না আমি। প্লিজ থেমে যা বনু, প্লিজ!”
“যখন একটা মানুষের সাথে দিনের পর দিন অন্যায় করেছিলে। তার অগোচড়ে তাকে রীতিমতো ঠকাচ্ছিলে। তার কোমল হৃদয়টাকে বেদনায় জর্জরিত করছিলে, তখন এই কথা গুলো মাথায় আসে নি তোমার? সমাজ, পরিবার, জিহাদ ভাই তাদের কথা একবার ও স্মরনে আসে নি?”
কিঞ্চিৎ মুহূর্ত থেমে আমি পুনরায় বললাম,,
“খামোখা আমি হিমেশকে দোষারোপ করছিলাম। এখন তো মনে হচ্ছে হিমেশ যা করেছে একদম ঠিক করেছে। তোমার মতো দ্বিমুখী মেয়ে মানুষদের ঠিক এভাবেই শাস্তি দেওয়া উচিত! বোনের বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়াতে খুব কেঁদেছিলে না? দুদিন না খেয়ে ছিলে, রাতের পর রাত আমার সাথে নির্ঘুম কাটিয়েছিলে, অনুতাপ, অনুশোচনায়, অপরাধবোধে প্রতিনিয়ত দ্বগ্ধ হচ্ছিলে? তখন সত্যিই ভেবেছিলাম বোনের কষ্টে তুমি হয়তো সত্যিই খুব কষ্ট পাচ্ছ। কিন্তু এখন তো সবটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেলো। সত্যিটা জেনে শুনেই তুমি কষ্ট পাচ্ছিলে আপু! তোমার পাপের ফল তোমার ছোট বোনকে ভোগ করতে হয়েছে বলেই তুমি অনুশোচনায় কাতরাচ্ছিলে।”
আপু আমার হাতের বাঁধনটা ছেড়ে দিলেন। অতঃপর ফুঁফিয়ে কেঁদে দৌঁড়ে সিঁড়ি টপকে দুতলায় উঠে গেলেন। দীর্ঘশ্বাস নির্গত করে আমি ধীর গতিতে হেঁটে ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়ালাম। ইতোমধ্যেই পরশ ভাই উপস্থিত সবাইকে উপেক্ষা করে জড়তা কাটিয়ে অস্থির কন্ঠে আমায় ডেকে বললেন,,
“টয়া?”
মাথা উঁচিয়ে আমি প্রশ্নবিদ্ধ চোখে পরশ ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। পরশ ভাই সংকোচবোধ করে শার্টের কলারটা টেনে আমার দিকে সরল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“ঢাকায় ব্যাক করতে হবে আমার! ইউ নো না? ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে?”
মুখ খুলে প্রত্যুত্তর করার পূর্বেই আমার সমবয়সী কাজিনরা সমস্বরে আওয়াজ তুলে পরশ ভাইকে বললেন,,
“এই না না। আপনার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না ভাইয়া। বড় আপুনির বিয়ে না খেয়ে আপনার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না!”
পরশ ভাই ভ্যাবাচ্যাকা খেতেই আম্মু নরম গলায় পরশ ভাইকে শুধিয়ে বললেন,,
“দুটো দিন থেকে গেলে কি হয় বাবা? আমার মেয়ে ও তো দীর্ঘ এক মাস তোমাদের বাড়িতে থেকে, খেয়ে, পড়ে এসেছে। আমাদের ও একটু সুযোগ করে দাও, তোমার সেবা-যত্ন করার, আদর যত্ন করার, মন ভরে একটু আপ্যায়ন করার।”
মেঝো চাচী, ছোট চাচী পেছন থেকে পরশ ভাইকে আবদারের স্বরে বললেন,,
“থেকে যাও না পরশ প্লিজ। দুটো দিনেরই তো ব্যাপার। আমাদের বাড়িতে যখন বিয়ের অনুষ্ঠান হয় না? তখন পুরো এলাকায় নাঁড়া পড়ে যায়। বিয়ে বাড়ি পুরো জমজমাট, আনন্দ-অনুষ্ঠানের রোল পড়ে যায়, নাচ-গান, হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠে পুরো মহল্লা। আশা করছি তোমার ও ভালো লাগবে! এনজয় করবে খুব।”
পরশ ভাই রাগে গজগজ করে ক্ষিপ্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন আমার দিকে। আমি ঠোঁট উল্টিয়ে ইশারায় বললাম,,
“আমি কি করব? পারলে আপনি সামলান!”
পরশ ভাই রাগে টুকটুকে রঙ্গিন হয়ে কপাল ঘঁষতেই সদর দরজা থেকে আব্বুর আগমন ঘটল। হাসি হাসি মুখে আব্বু ড্রইং রুমের দিকে পা বাড়িয়ে আম্মুকে উচ্চ আওয়াজে শুধিয়ে বললেন,,
“শুধু পরশকেই থাকতে বলছ কেনো সাইদা? ছেলেটার গোটা পরিবার কি দোষ করেছে? খবর দাও উনাদের। একে-অপরের সাথে আনন্দ-অনুষ্ঠান ভাগাভাগি করে নেই।”
পরশ ভাই নিরুপায় হয়ে অসীম রাগ আয়ত্তের চেষ্টায় কপাল চাঁপড়াতে আরম্ভ করলেন। মেঝো চাচীর মেয়ে স্নিগ্ধা হঠাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে পরশ ভাইয়ার দিকে উঁকি মেরে বললেন,,
“কি হয়েছে ভাইয়া? মাথায় যন্ত্রনা হচ্ছে?”
হু হা শব্দে হেসে উঠলাম আমি। উপস্থিত সবাই আমার দিকে বিস্মিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। পরশ ভাই পারছেন না, চোখ দিয়ে আমায় গুলি বিদ্ধ করতে! উড়নার আঁচল দিয়ে হাসি চেঁপে আমি মাথা নিচু করে নিলাম। তাৎক্ষনিক আমার থেকে সবাই দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলেন। এর মধ্যে আব্বু গলা খাঁকিয়ে পরশ ভাইয়ার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“কি পরশ? রাজি তো আমাদের শর্তে?”
পরশ ভাই ইতস্ততবোধ করে আব্বুর দিকে অস্থির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,
“একচুয়েলি আঙ্কেল। অফিসে আমার অনেক ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে। আজ না গেলে হয়তো অনেক বড় একটা ডিল হাত ছাড়া হয়ে যাবে। আই হোপ সো, আপনি বুঝবেন!”
আব্বু অসম্মতি জানিয়ে রূঢ় কন্ঠে বললেন,,
“উহু। আমি বা আমরা কিছু বুঝতে চাই না। আগামী দুদিন তোমার কোথাও যাওয়া হচ্ছে না ব্যাস। আর তাছাড়া এই ইয়াং বয়সে আনন্দ, হুল্লোড় করবে না তো কোন বয়সে করবে বলো? অযথা কাজের চাপ মাথায় না চেঁপে আনন্দ, হুল্লোড়কে সামান্য প্রশ্রয় দাও৷ তাহলেই খিটখিটে মেজাজটা কিঞ্চিৎ আয়ত্তে আসবে! এই অতি ক্ষুদ্র জীবনটাকে আনন্দের সহিত উপভোগ করতে পারবে।”
আব্বুর প্রতিটা কথাতেই লজিক ছিলো। সত্যিই তো কখনো ভেবে দেখা হয় নি! মানুষটা কেনো এতো খিটখিটে মেজাজের? কেনো হুটহাট রেগে যান? কেনো এতো বাজে ব্যবহার করেন? কেনো সহজ বিষয়টাকে জটিল ভাবে দেখেন? মানুষটার জীবনে তো কোনো আনন্দ, উল্লাসের সামান্যতম ছিঁটেফোঁটা ও নেই। না আছে একটু খানি হাসির রেশ। মোদ্দা কথা, উনি কোনো আনন্দ-অনুষ্ঠানেই যেতে চান না। কেমন যেনো নির্জীব, নিষ্প্রাণ, নিষ্প্রভ। এভাবে আবার জীবন উপভোগ করা যায় নাকি? বেঁচে থাকার সঠিক ভাবার্থ উপলব্ধি করা যায় নাকি? এই হুতুম পেঁচা লোকটাকে তো নিজের ঠিক করা নির্দিষ্ট গন্ডি থেকে বেরুতে হবে। হাসি, খুশি, আনন্দ, হুল্লোড়র মেতে থাকতে হবে। তবেই তো জীবনকে জীবনের মতো করে উপভোগ করতে পারবে!
জল্পনা কল্পনায় ইতি টেনে আমি রাগে ফুসফুস করা পরশ ভাইয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। অতঃপর গলা খাঁকিয়ে পরশ ভাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,
“আন্টির ফোন নাম্বারটা দিন আব্বুকে। আব্বু আন্টির সাথে কথা বলবেন!”
“আর ইউ মেড টয়া? তুমি ও এই কথা বলছ?”
রূঢ় কন্ঠে আমি বললাম,,
“দিতে বলছি দিন। কথা বাড়াচ্ছেন কেনো অযথা?”
মুহূর্তের মধ্যে পরশ ভাই চোয়াল শক্ত করে বললেন,,
“ইউউউ…
খড়তড় দৃষ্টিতে আমি চোখ ঘুড়িয়ে ইশারা করে বললাম,,
“আশেপাশে সবাই আছেন। অযথা সিনক্রিয়েট করবেন না!”
পরশ ভাই তাৎক্ষনিক মাথা নিচু করে নিলেন। দাঁতে দাঁত চেঁপে প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে আমার দিকে কঠোর দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন। ভাবলেশহীন ভাবে আমি শরীর দুলিয়ে আশেপাশে দৃষ্টিপাত করতেই লোকটা মাথা নিচু করে নিলেন। আন্টির নাম্বারটা ডায়াল করে পরশ ভাই ফোনটা অধিক নম্রতার সহিত আব্বুর দিকে এগিয়ে দিলেন। আব্বু ফোনটা কানে ধরতেই পরশ ভাই অকস্মাৎ নম্র কন্ঠে আমায় শুধিয়ে বললেন,,
“ওয়াশরুমটা কোন দিকে?”
প্রত্যুত্তর করার পূর্বেই আমার ছোট চাচীর মেয়ে নীলা উৎসাহের সহিত বলে উঠল,
“আসুন ভাইয়া। আমি দেখিয়ে দিচ্ছি!”
বিস্মিত না হয়ে পারছি না! ১৬ বছরের কুমারী নীলা ও নাকি শেষ পর্যন্ত পরশ ভাইয়ার উপর নিমগ্ন হয়ে উঠেছে? এ তো দেখছি আমার সব বোনরাই পরশ ভাইয়াতে কাবু! মানুষটা ফুঁস, মন্তর জানে নাকি? প্রথম দেখাতেই যে কোনো কাউকে নজর বন্ধী করে নেন! জোরপূর্বক হাসি টেনে পরশ ভাই নীলার উদ্দেশ্যে বললেন,,
“টয়া দেখিয়ে দিক?”
নীলা মন খারাপ করতেই আমি হাসি চেঁপে পরশ ভাইকে বললাম,,
“চলুন!”
হুড়মুড়িয়ে বসা থেকে উঠে পরশ ভাই আমার পিছু নিলেন। এক তলার বাঁ পাশের ওয়াশরুমটার দিকে মোড় নিয়েছি আমি। পেছন থেকেই পরশ ভাইয়ার স্বস্তির শ্বাস আমার কর্নকুহরে মিহি ভাবে ভেসে এলো। মানুষটা যেনো মাএ হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচলেন। মুক্ত বাতাস ফুসফুসে সঞ্চার করতে সমর্থ হলেন। ঝড়ের বেগে মনে হলো পরশ ভাই পেছন থেকে আমার বাঁ হাতটা টেনে ধরলেন। হেচকা টানে আমাকে মানুষটার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রক্তিম চোখে চোয়াল শক্ত করে বললেন,,
“কি হচ্ছে এসব? ড্রামা করছ সবাই মিলে?”
বিস্মিত দৃষ্টিতে আমি মানুষটার দিকে তাকিয়ে নির্বোধ কন্ঠে বললাম,,
“কে, কোথায় ড্রামা করল?”
“থেকে যেতে বলছ কেনো আমায়? এর মাঝে আবার আমার পরিবারকে টেনে আনলে কেনো?”
“আপনার পরিবার আমার কাছে আলাদা কিছু নয়! আন্টি, পিয়ালী আপু, পায়েল সবাই আমার মনের খুব সন্নিকটের। তাই সবার সাথেই আনন্দ-অনুষ্ঠানটা ভাগাভাগি করতে চাইছি!”
“ওকে ফাইন। ভাগাভাগি করে নাও। আই হেভ নো প্রবলেম৷ তবে এর মাঝে আমাকে টানছ কেনো? কাজকর্ম রেখে আমি তোমাদের ড্রামা দেখব এখানে বসে বসে?”
“আমার পরিবার ভালোবেসে আপনাকে এই পুরো ব্যাপারটাতে ইনভলভ করতে চাইছেন। আর আপনি কিনা সেই অতি অমূল্য ভালোবাসাটাকে নাটক হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন? এতোটাই অবিবেচক আপনি? এতোটাই নিচ মন মানসিকতার?”
পরশ ভাই থমকালেন। মুহূর্তের মধ্যে আমার হাতের বাঁধনটা ঢিলে করে খানিক ইতস্ততবোধ করে বললেন,,
“স্যরি। যদি আমার কথায় হার্ট হয়ে থাকো। একচুয়েলি আমি বুঝাতে পারছি না আমার অবস্থাটা। তাই অকারনে রিয়েক্ট করে বসছি।”
রাগ, জেদ অসহ্য পর্যায়ে ঠেকছিলো আমার। তীক্ষ্ণ কন্ঠে আমি পরশ ভাইকে শাসিয়ে বললাম,,
“ইউ হেভ টু গো নাও। কেউ আটকাবে না আপনাকে। হোল লাইফ এভাবে নিসঙ্গ, নির্জীব, নিষ্প্রান হয়ে বাঁচবেন এটাই ঠিক আপনার জন্য। আপনি সভ্য সমাজের মানুষদের অন্তর্ভুক্ত নন বুঝেছন? অন্ধকারে নিমজ্জিত দুর্বিষহ জীবনটাই আপনার প্রাপ্য!”
জায়গা পরিত্যাগ করতেই পরশ ভাই পুনরায় পেছন থেকে আমার হাতটা টেনে ধরে কেমন যেনো বেদনাহত কন্ঠে বললেন,,
“নিসঙ্গতা কখনো আমার প্রাপ্তি হতে পারে না। সঙ্গ কূলেই আমার ললাট পরিপূর্ণ করেছেন বিধাতা। ধ্যান ভেঙ্গেছে আমার বহু পূর্বেই, তবে নিমগ্নতা ভাঙ্গলে খান খান হয়ে যাবে তোমার মনের প্রতিটা অলি-গলি!”
“মূর্খের বাস নিমগ্নতায়! মগ্নতা হতে হবে নিদ্রাহীন রাতের মতো। ধ্যান ভাঙ্গতে আরম্ভ করেছেন মাএ। নিমগ্নতা ও ভেঙ্গে ফেলুন বীরদর্পে!”
“পাবো তো তাকে? যার জন্য এই নব উপাখ্যান?”
প্রত্যুত্তর করার পূর্বেই “রুম্পা আপু” মানে বিয়ের কনে ওয়াশরুমের পাশের রুমটা থেকে বেশ ব্যতিব্যস্ত ভঙ্গিতে বই হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলেন। পরশ ভাই তড়িঘড়ি করে আমার হাতটা ছেড়ে দিতেই রুম্পা আপু আমাদের সম্মুখীন হলেন। চশমাটা চোখ থেকে এক ইঞ্চি নিচে নামিয়ে রুম্পা আপু আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে বললেন,,
“হু ইজ হি?”
#চলবে…?