চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।২১ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
338

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।২১ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

দোলার প্রেগন্যান্সির চারমাস চলছে। মাতৃত্বের বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠছে ধীরে ধীরে। একটু শরীর, পেট ফুলেছে। দেখতে গুলুমুলু সুন্দর লাগে। তবুও রৌদ্দুর ফিরে তাকাচ্ছে না ওর দিকে। রৌদ্দুর যেটুকু সময় বাসা থাকে দোলা ওর আশপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে। এটা-সেটা এগিয়ে দেয়। রৌদ্দুর কিছু বলে না চুপ থাকে তা-ও যেটুকু কথা বলে রেগে অন্যর রাগটাও এসে দোলার ওপরে দেখায়। দোলার ভয়ে থাকে রৌদ্দুর রাগে যদি ওর গায়ে কখনো হাত তোলে। কিন্তু রৌদ্দুর গায়ে হাত তুলে না মুখের বুলিতেই ওকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়। রৌদ্দুর রাতে বাইরে থাকলে ওর রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় না। অস্থিরতা তৈরি হয়। রাতে নিঃশব্দে কাঁদে।

রাত দশটা সারাদিন পর রৌদ্দুর বাসায় এসেছে। ওয়াশরুম থেকে পানির শব্দ আসছে। শাওয়ার নিচ্ছে তা বুঝতে দোলার বুঝতে একটুও অসুবিধা হলো না। দোলা বেডের পাশে বসেছিল তখন রৌদ্দুরের ফোনে ম্যাসেজের টুং-টুং আওয়াজে ওদিকে তাকাতেই স্ক্রিনে ভেসে ওঠা বার্তা না চাইতেই পড়ে ফেললো। পড়ে থম মেরে বসে রইলো। এসব কী? হাতে ফোন নিয়ে পুরো কনভার্চেশনের ম্যাসেজগুলো পড়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না ফোন লক। দোলার চোখ দিয়ে অশ্রু কণা গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে লাগলো। রৌদ্দুর এসে দোলাকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ওর ফোনটা হাতে দেখে রেগে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বলল

–“কী সমস্যা? আমার ফোনের হাত দেওয়া সাহস কী করে হয় তোমার?”

দোলা ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
–“আমি গেম? বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে তুমি…জাস্ট একটা গেম জেতার জন্য তুমি আমাকে বিয়ে করেছিলে? আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে? মেয়েদের তোমার মানুষ মনে হয় না?”

রৌদ্দুর ফোনের পাওয়ার বাটন চাপ দিয়ে দেখলো ওর বন্ধু হাসানের ম্যাসেজ ‘বাজি জেতার নাম করে বন্ধু তুমি বাপ হয়ে গেলে?’ রৌদ্দুর দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল “আমি তোমার জীবন নষ্ট করতে চাই নি। তাই তো তোমার আমার বিয়েটা গোপন রেখেছিলাম। বাচ্চাটাও এ্যাবশন করে ফেলে দিতে বলেছিলাম। তুমিই ঝামেলা ঘাড়ে নিতে চেয়েছ। এটাতে আমার কিছু করার নাই।”

দোলা রেগে বলল “বাচ্চাটা কোনো ঝামেলা নয়। আসলে তুমি বাবা হওয়ার যোগ্যতা নেই। আমার ঘৃণা হচ্ছে। তোমার মতো একজন মানুষ আমার সন্তানের বাবা। তোমার সাথে কথা বলতেও আমার রুচিতে বাঁধচ্ছে। ছিহ্”

রৌদ্দুর নিজের কাজ গোছাতে গোছাতে বলল “এতোই যখন সমস্যা তো আছো কেনো? চলে যা-ও। কেউ তো আটকাচ্ছে না।”

–“হ্যাঁ সেটাই। তোমার মতো পাথর মানুষকে আমার ভালোবাসাটাই ভুল। তুমি মানুষটাই ভুল। তোমার জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেলো।”

দোলার কথার প্রতিত্তোর না করে রৌদ্দুর শুয়ে পড়লো। দোলা দীর্ঘ রাত পর্যন্ত গুনগুনিয়ে কান্না করলো। কী করবে ও? সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাল বাপের বাড়ি যাবে। বাচ্চাটা তো ফেলে দিতে পারবে না ওরই তো অংশ। দোলা পেটে হাত দিয়ে বলল “শোন তোর মা তোকে ভালোবাসে। তোর বাবা কিন্তু খারাপ না। তোর বাবা শুধু অন্ধকারে আছে সেই অন্ধকার কেটে গেলে তোর বাবা আমাকে-তোকে ভালোবাসবে দেখবি। কিন্তু কবে কাটবে সেই আঁধার?”

——-

–“কে আপনি? কথা বলেন না কেনো? আপনি প্রতিনিয়ত ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করছেন আমাকে। রীতিমত বিরক্ত হয়ে গেছি। আপনি ছেলে নাকি মেয়ে?”

ইমন রেগে কথাগুলো বলল। অপরপ্রান্ত থেকে মেয়েলি সুরে হাসির শব্দ ভেসে এলো। ইমন চমকে গেলো। মস্তিষ্ক সিগল্যান দিলো। হাসিটা চেনা।

–“কে আপনি? নাম কী? আমার সাথে কী ফাইজলামি করছেন?”

ওপর প্রান্ত থেকে চাপা কণ্ঠে হেঁসে ফিসফিস করে বলল
–“ভালোবাসি।”

ইমন থমকে গেলো। নরম হতে গিয়েও গম্ভীর কণ্ঠে বলল “আমার বউ আছে। আর তাকে নিয়ে আমি খুশিতে আছি। অযথা আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।”

ওপাশ থেকে শব্দ করে খিলখিল করে আওয়াজ আসল। ইমন ভ্রু কুঁচকে বলল “হাসচ্ছেন কেনো?”

ওপাশ থেকে বলল “সব জানি আপনার সম্পর্কে। আপনি পিউর সিঙ্গেল। অতীত নিয়ে আমার মাথা ব্যথা নেই। আমি তো আপনাকে ভালোবাসি।”

–“প্যাঙ্ক করছেন? আমার এগুলো পছন্দ না রাখছি আর ফোন দিবেন না।”

ওপাশ থেকে তাড়াহুড়ো করে বলল “আরে দাড়ান দাড়ান আপনি এতো ভদ্রলোক কেনো বলুন তো? একেবারে মাম্মাস বয়। এতো কিউট লাল লাল গাল দেখলে চটপট চুমু খেতে ইচ্ছে করে।”

ইমন রেগে বলল
–“বিয়াদপ!”
বলে ফোন কেটে দিল। তারপর ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললো। মেয়েটা কি মনে করেছে গলাটা অন্য রকম করে কথা বললে ও চিনতে পারবে না?

———-

হায়াত পড়াশোনা শেষ করে এসে ফোনটা নিয়ে নিশাদকে কয়েকবার ফোন দিল প্রথম প্রথম বাজতে বাজতে কেটে গেলেও এবার নিশাদ ইচ্ছাকৃত কেটে দিচ্ছে দেখে হায়াতের মনে জিদ চাপলো। মনে মনে জিদ করলো যতক্ষণ ফোন না তুলবে ততক্ষণ ফোন দিতেই থাকবে। হলোও তাই নিশাদ ফোন ধরে ঝাড়ি দিয়ে বলল

–“কী সমস্যা তোর? দেখছিস না ফোন কেটে দিচ্ছি মানে এখন বিজি আছি। এইটুকু কমন ন্সেস নেই?”

কিশোরীর মনে সদ্য প্রেম জন্মানো ফুলটা হঠাৎই নীল রঙের বিষ ছড়িয়ে পড়লো। চোখ জোড়া ছলছল করে উঠল নাক টেনে বলল “এতো রাতে কিসে বিজি তুমি? এতোটাই বিজি যে তোমার আমার সাথে কথা বলারই সময় নেই?”

–“না নেই সময়। নিব্বা নিব্বিদের মতো আমি এমন টাইম টু টাইম কথা বলে নেকামি করতে পারব না।”

হায়াত ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। নিশাদ জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে নিজেকে সামলিয়ে বলল

–“মেডিক্যাল জীবন কেমন জানিস? সারাদিন ক্লাস করে এসে ক্লাসের পড়া করতে করতে কোনো দিন সকাল হয়ে যায় টের পাই না। আমার কথা বলার এনার্জি থাকে না। তাও এতো কিছুর মাঝে তোমার সাথে একটু কথা বলি। এইটুকু কথা বলাই তোর পোষাই না তুই বলতেই থাকিস আর আমি ও আবেগে ভেসে তোর কথা শুনি এতে তোর আমার দুজনের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে। এটা আমি চাই না। তোর এক্সাম খারাপ হলে তোর বোন কষ্ট পাবে। ও তোদের কত ভালোবাসে বলতো! আমি যখন বলেছি তুই আমার হবি তখন আজ হোক দশ বছর পর হোক তুই আমার হবি। আমার না হলে কারোর হতে দিব না।”

নিশাদের কথা শুনে কান্না থামলো না। বোকা কিশোরী আবেগে ভেসে কেঁদেকেটে একাকার হয়ে গেলো। একসময় নিজেকে শান্ত করে হানিয়ার রুমে গেলো দেখলো পুরো খাট জুড়ে হামজা হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। হানিয়া না থাকার পরও ওরা দুজন বোনের রুমে ঘুমায়। নিশাদের সাথে কথা বলার চক্করে বোনের রুমে ওর কয়েকদিন ঘুমাতে আসে নি। হামজা একাই ঘুমিয়েছে সে ক’দিন আজ আবার আসলো। ও হামজাকে ঠেলে সরিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো। বোনটাকে এতো মিস করে৷ কবে যে আসবে?

—————-

আইসক্রিম খেয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে হানিয়ার ধুমসে জ্বর এসেছে। জ্বরে হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে বিছানায় পড়ে আছে। বিরবির করে বলছে ‘সব ছেলে এক শালা লুচ্চা গুলা। আসিস আবার তোর থোবড়া পাল্টে দিবো। বান্ধবীর ভাই বলে বেঁচে গেলি’। ওর কথা কিছু বুঝতে পারল না। রাত্রি ওর এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেলো। হলসুপারকে জানালো। ডক্টর ডাকলো। সেবা করল রাত জেগে। সকালে দিকে জ্বর ছেড়ে গেলেও গা গরম, গলা ব্যথা, সর্দি-কাশি। সুস্থ না হওয়ার পর্যন্ত কারোর ফোন ধরবে না ম্যাসেজে কাজ মিটিয়ে নিবে বাড়িতে শাবনূর বেগম জানতে পারলে ভাষণের শেষ থাকবে না। সুভানা হানিয়ার খোঁজ না পেয়ে হোস্টেলে চলে এসে ওর এমন অবস্থা দেখে বলল

–“আরে বেবস বেঁচে আছিস? আহারে তোর জন্য খুবই দুঃখ লাগতেছে থাক কষ্ট পাস না। ঠিক হয়ে যাবি।”

সুভানার অযথা ফালতু কথা শুনে হানিয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল “এক চড়ে উঁড়ে শ্বশুর বাড়ি গিয়ে পড়বি।”

সুভানা ভয় পাওয়ার ভান করে বলল “বইন মাফ কর এই ভয়েসে কথা বলিস না। ডাইনি ও ফেল তোর কাছে।”

হানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল
–“আমার কপালে সব পাগল জুটে।”

–“তুই তো পাগলের ডক্টর হবি তাই আমরা পাগল তোর কাছ থেকে ফ্রিতে টিটমেন্ট নিব।”

–“সিরিয়াস হ সব কিছুতেই মজা।”

–“আচ্ছা তুই যেহেতু অসুস্থ এই ক’দিন আমার বাসায় থাক। এখানে তোর অসুবিধা হবে। দাদুমণি অসুস্থ খবর জানলে তোকে তুলে নিয়ে যাবে।”

–“পাগল তুই এক্সাম। আর ওখানে গেলে পড়া হবে না। আর তুই বাসায় কিছু বলবি না। জানিসই তো আজ-কাল এ বাড়ির খবর ও বাড়ি যায় আর ও বাড়ির খবর এবাড়ি আসে। কী একটা অবস্থা।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here