চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।২৪ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
383

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।২৪ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

নভেম্বরের শেষের দিন আজকে স্নোফল হচ্ছে থেকে থেকে আজ হানিয়ার লিখিত শেষ পরিক্ষা এরপর প্যাক্টিক্যাল এক্সাম শুরু হবে। শীতে হাত-পা জমে যাচ্ছে। নিজেকে প্যাকেট বানিয়ে এই অবস্থায় বেড়িয়ে পড়লো। দু-মাসের বেশি সময় হলো ও এখানে এসেছে। বাড়ির জন্য মনটা ছটফট করছে। একাকীত্ব ঝেঁকে ধরেছে। এই পরিক্ষা শেষ হলেই বাড়ি যাবে। কিন্তু কবে শেষ হবে এ পরিক্ষা মনে মনে অধৈর্য্যে হয়ে পড়েছে। এই একঘেয়েমি পানশে জীবন ওর ভালো লাগছে না। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না করতে পারলে বোধহয় ওর ভালো লাগতো। কিন্তু এই কান্না দেখার কেউ নাই।

এক্সাম দিয়ে ক্লান্ত মুখে বের হলো এখন আর স্নোফল হচ্ছে না। চারিদিকে অল্প-স্বল্প বরফের আস্তরণ পড়ে আছে।

কিছুদিন পর সোহানের জন্মদিন সোনিয়া হানিয়াকে ইনভাইট করেছে। তাছাড়াও শাবনূর বেগমও বার বার যেতে বলে ফোন করে। ও এড়িয়ে যায় এক্সাম, ক্লাসের বাহানায়। ইরাবতীও যেতে বলেছে। জন্মদিন পড়েছে ছুটির দিনে না গেলেও খারাপ দেখায়। ও মনে মনে ভেবে রেখেছে যাবে।

আজ সোহানের জন্মদিনের শপিং করতে যাবে সবাই। সুভানার আজ শেষ এক্সাম কোনো প্রাকটিকাল নেই। হানিয়াকে দেখতে পেয়ে সুভানা চেচিয়ে ডাকলো– “ঐতো হানিয়া, এই হানিয়া এদিকে আয়।”

হানিয়া মনোযোগ সহকারে কুয়েশ্চেন প্রেপার দেখছিলো হঠাৎ নিজের নাম শুনে হকচকিয়ে গেলো সামনে তাকিয়ে সুভানার সাথে সেজাদ, সায়েমকে দেখে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে গেলো। সায়েম বলল “হাই, হানিয়া! হাউ আর ইউ?”

হানিয়া মোলায়েম কণ্ঠে বলল “ফাটাফাটি। আপনারা?”

–“অল গুড। কিন্তু তোমার ফাটাফাটি জোড় নেই কেনো?”

–“ঠান্ডায় ফাটাফাটি জমে গেছে।”

সুভানা হানিয়ার হাত টেনে বলল “চল, যেতে যেতে কথা বলিস…”

হানিয়া চমকে বলল
–“ওয়েট… আমি কোথায় যাবো?”

–“শপিংয়ে! না বলবি না, আপু তোকে নিয়ে যেতে বলে দিয়েছে বার বার।”

সায়েমও সাই জানিয়ে বলল “হ্যাঁ তাছাড়াও আজ তোমাদের এক্সাম শেষ। এতোদিন পড়ার চাপ গিয়েছে কয়েকদিন রিলাক্স করো।”

–“না আমার প্রাকটিকাল এক্সাম আছে।”

সুভানা হানিয়াকে টেনে গাড়িতে উঠালো। সেজাদ এখানে নিরব ভূমিকা পালন করছে। সেজাদ আর সায়েম সামনে উঠে বসলো। সায়েম বলল “সুভানা তো ম্যাথ তুমি কোন সাবজেক্ট?”

–“ সাইকোলজি”

–“ওহ ডক্টর হয়ে গেলে।”

সুভানা হেসে বলল
–“পাগলের ডক্টর আরেক পাগল”

সায়েমও মজা করে বলল
–“ছোট থেকে কি তুমি ‘মাই এমইন লাইফ’ কী পাগলের ডক্টর লিখতে?”

হানিয়া হেসে বলল “শুধু ডক্টর লিখতাম। অবশ্য ছোট বেলায় ওগুলো সব চাপাবাজি ছিলো।”

–“তো এখন কী তুই চাপাবাজি ছেড়ে দিচ্ছিস?”

–“তুইও তো ছাড়িস নাই আমি ছাড়ব ক্যামনে?”

সায়েম সন্দিহান কণ্ঠে বলল “হানিয়া সুভানার কয়েকটা সিক্রেট ডক্যুমেন্টস ফাঁস করো। লুকিয়ে প্রেম ট্রেম করে না-কি?”

সুভানা চোখ মুখের এক্সপ্রেশন চেঞ্জ হয়ে গেলো। হানিয়া ওর দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো। সেটা দেখে ওর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।

–“প্রেম না তবে ক্রাস…”

সুভানা ওর মুখ চেপে ধরে কাঁদো কাঁদো হয়ে তাকালো। সায়েম পিছনে তাকালো।

–“ওর মুখ ছাড় বলতে দে তুই কী করিস আমরাও একটু জানি।”

সুভানা কাচুমাচু করে ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো বলল “ও তো মজা করছে।”

সায়েম রেগে গেলো ভাইদের এই এক সমস্যা বোন প্রেম করে মানতে পারে না অথচ নিজেরা অন্যর বোনের সাথে ঠিকি প্রেম করবে। একপ্রকার ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল

–“দেখছিস ব্রো এটাকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে দাদুমণি মা ঠিকি বলে মেয়ে হয়েছে বিয়ে হবে ছেলে খুঁজতে হবে। শুধু তুমি, বাবা, বড়বাবা, সুভানা আপুর জন্যই বিয়ে কথা তোলা যাচ্ছে না”

সুভানার চোখে পানি চলে এলো। সেজাদ লুকিং গ্লাসে সেটা দেখে শান্ত কণ্ঠে বলল
–“প্রেম করে না পছন্দ করে। মানুষের একে ওপরকে পছন্দ হতেই পারে এটা অস্বাভাবিক কিছু না। ছেলে ভালো হলে দুজন সহ পরিবারের মত হলে বিয়ে হবে”

হানিয়ার মন খারাপ হচ্ছিল সুভানার চোখে পানি দেখে। ও তো ফ্রি ভাবেই বলল এভাবে এতো সিরিয়াসলি হয়ে যাবে ভাবে নি। সেজাদের কথা শুনে মন খারাপ উড়ে গেলো। সুভানার হাত জড়িয়ে ধরে কিন্তু ও হাত ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো অভিমান করে মুখ ঘুরিয়ে আছে। হানিয়া সিরিয়াস ঝগড়ার মুডে এসে বলল

–“আরে ভাইয়া এতো সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছেন কেনো? নিজের বেলায় ষোল আনা আর বোনের বেলায় এক আনাও না।”

সায়েম বুঝতে না পেরে বলল “মানে?”

হানিয়া খেঁপে গেলো বলল
–“মানে বুঝেন না? নিজে প্রেম করেন আর বোন প্রেম করলে দোষ! আজব। আমার ক্লাস ফাইভে একটা ক্রাস ছিল তো কি হয়েছে? আমি তার সাথে বিয়ে করে বাচ্চা কাচ্চা জন্ম দিসি? ক্রাস হলে সিরিয়াসলি ক্রাস খেতে হবে আমার মায়ের মতো একেবারে বিয়ে।”

সুভানা ওর দিকে বড়বড় চোখ করে তাকালো হানিয়া নিজের কথা ঘটা করে বলতে চাই না৷ ও বুঝলো হানিয়া রাগের মাথায় বলছে। সুভানা গম্ভীর হয়ে বলল
–“তুই ক্যারেক্টার থেকে সরে যাচ্ছিস। এইটা ইমুমামা না আমার ভাই। রাগের মাথায় আরো কিছু বলে দে আমার সম্পর্কে তখন দেখিস”

হানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল “সরি ভাইয়া।”

সায়েম কৌতুহল নিয়ে বলল “তোমার বাবা-মায়ের লাভ ম্যারেঞ্জ?”

–“একচুয়েলি ওটা কী ম্যারেঞ্জ জানি না। মিক্সড ম্যারেঞ্জ বলতে পারেন”

ওদের কথার মাঝে গাড়ি এসে থামলো শপিংমলের সামনে। সকলে চুপচাপ নেমে সোনিয়াকে ফোন দিয়ে জেনে নিলো কোথায় ওরা সে অনুযায়ী ভিতরে গেলো। সেজাদের হানিয়ার ক্রাসের কথা শুনে রাগ, হিংসা লাগছে মনে মনে কিন্তু ওপরে ওপরে শান্ত। এদিকে হানিয়া সুভানার অভিমান ভাঙাতে ব্যস্ত। সোনিয়া, সোহান, লাইজু নিজেদের মধ্যে কেনাকাটা করছিলো তখনই ওদের আগমন ঘটে।

–“আরে হানিয়া এসেছ। কি ব্যাপার বলতো ও বাড়িতে যাচ্ছোই না দাদুমনি খুব রেগে গেছে তোমার ওপরে।”

–“এক্সাম চলছে তো আপু। শেষ হলে দেখা করে আসব।”

–“কই ভাবলাম আজ তোমাকে নিয়ে যাবো। এদিকে তোমার এক্সাম শেষ হয়নি।”

সবাই যে যার মতো কেনাকাটা করছে হানিয়া ঘুরে ঘুরে দেখছে। এর আগে একবার এসেছিল। শীতের পোশাক কিনতে কিন্তু সে-সময় তাড়াহুড়ায় ভালো করে কিছু খেয়াল করে নি। ওয়াচ শপে ডুকে ওয়াচ দেখছিল একটা টাচ ওয়াচ বেল্ট পিংক কালার হায়াতের পছন্দের রং নিজের হাতে পড়ে দেখছিলো তখনই বলল

–“আপনার হাতে মানাচ্ছে।”

চোখ তুলে সেজাদকে পকেটে হাত ভরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিব্রতবোধ করলো। এই লোকটার সামনে দাঁড়ালেই বুকের কম্পন টের পাই। ও ঘড়িটা রেখে দিল। হানিয়া ঘুরে ঘুরে অন্যগুলো দেখলো। ছেলেদের একটা ঘড়ি ও ভিষণ পছন্দ হলো। ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করলো এমন ঘড়ি নয়টা পাওয়া যাবে কিনা? ওরা বললো যাবে। সেজাদ শান্ত কণ্ঠে বলল “এক কোয়ালিটির এতো ওয়াচ নিয়ে কী করবেন? দোকান দিবেন?”

–“না, বাসার জন্য। কয় দিন পর দেশে যাবো তো!”

সেজাদ চমকালো বলল “পার্মানেন্টলি?”

–“নাহ। বেড়াতে।”

সেজাদ শান্ত হলো বলল “চলুন ওরা রুফটপে রেস্টুরেন্টে গিয়েছে। আমাদের ডাকছে।”

হানিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে সেজাদের পাশাপাশি দূরত্ব রেখে লিফটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কিছুক্ষণ পর লিফট খুলতেই হানিয়ার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো ঠোঁট জোড়া ফাঁক হয়ে গেলো লিফটের ভিতরে দু’জন বিদেশি চু*ম্ব*নরত অবস্থায় দেখে। সেজাদ শান্ত কণ্ঠে বলল “হানিয়া চোখ নামান”

হানিয়া পাশ ফিরে সেজাদকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিব্রতবোধ করলো চোখ নামিয়ে নিলো। দুজন লিফট থেকে বের হয়ে গেলে ওরা ডুকলো লিফট। ওদের দুজনের ভিতরে ভিতরে হাঁসফাঁস লাগছে। বিদেশিদের কালচার এটা জেনেও হানিয়া লজ্জায় গুটিয়ে রইলো। সেজাদ শান্ত ভঙ্গিতে রইলো। হানিয়া আর সারাক্ষণ কিছু বলে নি চুপচাপ ছিল। শপিং শেষে হানিয়া ক্যাব বুক করে সেজাদের চোখের দৃষ্টি থেকে বেঁচে শান্তি পেলো যেনো। এমন এই পরিস্থিতির জন্য ঘড়ি ছাড়া আর কিছু কিনতে পারে নি।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here