চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩০ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
320

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩০ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

মেঘলা আকাশ ডিসেম্বর মাসে বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট কাঁদাপানিতে অবস্থা খারাপ। দোলা ও তার বান্ধুবী মিলে সাপ্তাহিক বাজার করতে এসেছে। দোলা উঁচু পেট নিয়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। একটুতেই হাঁপিয়ে উঠছে। ওর বান্ধবী কয়েকবার বলেছে একজায়গায় বসতে ও বসে নি। বান্ধবীদের ওপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে ওর আর ভালো লাগছে না। বাজার শেষে করে বের হলো দোলা ক্লান্তির মাঝেও উৎফুল্ল হয়ে বলল

–“নীলু চল না ফুচকা খাই। আমার না খুব খেতে ইচ্ছে করছে।”

নীলা ওর দিকে তাকালো মেয়েটা হাসছে এতো ছোট কারণে আবদার করে বলল যে কী করবে ভাবনায় পড়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল

–“এই অবস্থায় খাবি? এই অবস্থায় বাইরের খাওয়ার খেলে অসুস্থ হয়ে যাবি আর কয়েকটা মাস পরে খা”

দোলা মুখটা ছোট করে মলিন কণ্ঠে হেসে বলল
–“আর কয়েকটা মাস পরে যদি আমি না থাকি তখন?”

নীলা রেগে গেলো। রাগে গজগজ করতে করতে বলল
–“ফুচকা না খাওয়ার জন্য মরে যাচ্ছে ওনি যা ম*র গা আমার বলতে আসছিস ক্যান?”

দোলা ওর বাহু জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী হয়ে বলল “রাগ করিস ক্যান চল না”

নীলা আর কিছু বলল না মেনে নিলো। দোলার জন্য ওর টেনশন হয়। মেয়েটার ফিউচার যে কি হবে? অল্প বয়সে বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়ে অনেকে মারাও যায়। আর ক’দিন ধরে ও বাজে স্বপ্ন দেখছে। আর এই মেয়ে ওর সাথে ঘটা করে করে মরার কথা বলছে। কেমনডা লাগে?

দোলা তৃপ্তি নিয়ে তৃতীয় প্লেটের ফুচকা হাতে নিয়ে মুখে নিতে যাবে তখন হাত টান লাগলো। ঘাড় ঘুরিয়ে মাক্স, সানগ্লাস পড়া রৌদ্দুরকে চিনতে ও সময় নিলো না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। ও রেগে বলল “এতো বাইরের খোলা নোংরা খাবার খাচ্ছো ক্যানো? জানো না এই সময় এসব খাওয়া তোমার জন্য ঠিক না”

দোলা হাত ছাড়াতে চেয়েও পারলো না ও-ও রেগে গেলো। বলল “কি সমস্যা হাত ছাড়ো। আর আমি যা-ই করি তোমার কী? নিজের কাজে যাও। অসহ্য!”

–“আমি কী করব না করবো সেটা আমার ব্যাপার। নীলা গাড়িতে উঠো। আমি এটাকে আনছি।”

–“ও গাড়িতে উঠবে কেনো? আর এটাকে আনছি মানে কী?”

নীলা ইতস্তত করে বলল “ভাইয়া আমরা যেতে পারব সমস্যা নাই।”

–“আমি পৌঁছে দিলে কী সমস্যা?”

–“না না কোনো সমস্যা না”

নীলা আর কিছু বলল না পার্স থেকে টাকা বের কতে নিলে রৌদ্দুর বলল “তুমি যাও আমি দিচ্ছি।”

নীলা জিনিস পত্র নিয়ে পিছনে উঠে বসলো। শুনলো কত হয়েছে। রৌদ্দুর দু’শ টাকার নোট বের করে দিয়ে দোলার হাত ধরে নিয়ে হাঁটতে লাগলে দোলা চেঁচিয়ে উঠলো বলল “এই টাকা না নিয়ে কই যাচ্ছো? ১প্লেট ফুচকার দাম ৩০ টাকা ৪ প্লেট ফুচকার দাম ১২০ টাকা। আর ৮০ টাকা পাবে তো!”

রৌদ্দুর রাগে দাঁত কিড়মিড় করে আশপাশে দেখলো বলে উঠলো “তুমি আমাকে ম্যাথ শেখাচ্ছ? বেশি কথা না বলে গাড়িতে উঠো।”

দোলা মুখ ফুলিয়ে বলল “তোমার সাথে যাবো না।”

–“সিনক্রিয়েট না করে চুপচাপ গাড়িতে উঠো। নাহলে মাঝ রাস্তায় কোলে করে চুমু খেতে খেতে নিয়ে যাবো।”

দোলা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে বলল “বেলাজ, বেহায়া।”

–“আই নোউ!”

ও আর কিছু না বলে উঠে বসলো।

রৌদ্দুর এই একমাসের বেশি সময় ধরে নিজের সাথে যুদ্ধ করেছে। নিজের সাথে নিজে কী যুদ্ধ করতে পারে? সে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে। দোলাকে না দেখলে আজকাল কিছু ভালো লাগে না সারাক্ষণ দোলাকে নিয়ে টেনশন হয়। আবার নিজের কাছেও আনতে পারছে না। নিজেই ওকে চলে যেতে বলেছিল আবার ফিরতে বলতেও ইগোতে বাঁধছে। তাই দূর থেকে ওকে দেখে। এখন আর অন্য মেয়েদের প্রতি মন আসে না। নিজেকে পাগল পাগল লাগে। গাড়িতে ওরা চুপচাপ আছে। নির্দিষ্ট জায়গায় আসতেই নীলা জিনিসপত্র নিয়ে নেমে গেলো। বলল “ভাইয়া ভিতরে আসুন চা, কফি খেয়ে যান।”

–“অন্য একদিন। তুমি যাও ওর সাথে আমার কথা আছে।”

নীলা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো। দোলা মূর্তির মতো বসে আছে। হাত মোচড়ামুচড়ি করছে। রৌদ্দুর স্বাভাবিক করতে বলল “কেমন আছো?”

–“যেমনটা দেখতে চেয়েছিলে তেমনটাই আছি।”

দোলার খোঁচা মারা কথায় ও কিছু বলল না।
–“দোলা তুমি বিকালে রেডি থাকবে কল দিলে নিচে আসবে।”

দোলা আকাশ থেকে পড়লো যেনো অবাক হয়ে বলল “কোথায় নিয়ে যাবে? মে*রে গুম করে দিবে না-কি? আমি তো তোমার জীবন থেকে সরে এসেছি। বেবিটা সুস্থভাবে এসে গেলে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো তুমি চিন্তা করো না। আমি যতদিন বেচে থাকব আমার বেবির জন্য তোমাকে কেনো কখনো কাউকেই সাফার করতে হবে না। আর কয়েকটা মাস সময় দাও আমাকে…”

রৌদ্দুর ওর এতো কথা শুনে রেগে গেলো। ডিভোর্সের শুনে বুকে ধাক্কা খেলো। দোলার দুহাতে মুখ চেপে ধরে বলল “এতো বেশি কথা বলিস ক্যান? ডিভোর্স চেয়েছি তোর কাছে? তোর একার বেবি? ও আমার ও!”

দোলা ফিক করে হেসে ফেললো হাসতে গিয়ে পেটে চিনচিন করে ব্যাথা করে উঠতে ও পেট চেপে ধরে হাসছে। রৌদ্দুর ওকে ছেড়ে দিলো ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল মনে মনে বলল “পাগল হয়ে গেলো না-কি?”

–“তুমি বাচ্চাকে শিকার করতে চাইতে না আর সেই তুমি বলছ ও তোমার ও! হাও ফানি!”

–“জাস্ট শাট আপ!”

–“দেখো আমাকে নিয়ে গেম খেলেছ মেনে নিয়েছি। আমার বাচ্চাকে নিয়ে কোনো গেম গেলো না প্লিজ। আমি কথা দিচ্ছি ওর জন্য তোমার লাইফে কোনো বাঁধা আসবে না।”

–“আমার বাচ্চা আমার কাছে থাকবে। আর এটা নিয়ে আমি কোনো গেম খেলছি না।”

–“ও তোমার কাছে থাকবে কেনো? আমি এতো দিন পেটে রাখবো আর তুমি নিয়ে যাবে? আবার বিয়ে করবে সৎমার হাতে মা*র খেয়ে ম*রবে?”

–“এতো বেশি কথা বলো ক্যানো? আমি তোমার সাথে সংসার করতে চাই। স্বাভাবিক লাইফ চাই। আর তোমার এই সময় রেস্টের প্রয়োজন।”

–“ওয়াও নিউ গেম। বাট সো সরি আমি তোমার গেমে থাকতে চাই না।”

–“দোলা, আ’ম সরি। সরি ফর এভরিথিংক।”

–“সরি বললে সব ঠিক হয়ে যায় না, রোদ। আমি আর ফিরতে চাই না তোমার লাইফে। আমি নিজেকে গুছিয়ে নিতে চাই তুমি প্লিজ এসে না।”

দোলা চলে গেলো। রৌদ্দুর তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো। সবটা ঠিক করতে চাউ ও। দোলার সাথে সংসার বাঁধতে চাই। সব কী ঠিক হবে?

——————–

আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনের মতো আজ দিনও শুরু হয়েছে। ছুটির দিন হওয়ায় শীতে সকলে দেরিতে ঘুম থেকে উঠেছে। আজ কারোর বিশেষ তাড়া নেই। সালেহা তার স্বামী ইজাজ ও শাশুড়িকে চা দিলো। সকাল সকাল কলিং বেল বাজতেই গিয়ে খুলে দেখলো। পাড়ার ছেলেপেলেরা, ভাবিরা দল বেঁধে এসেছে এতো লোকজন দেখে সালেহা হকচকিয়ে গেলো। হেসে বলল “থার্টি ফাস্ট নাইটের পিকনিকের টাকা তুলতে এসেছ না-কি?”

–“না গো কাকি ইমন ভাই বাড়ি না-কি?”

–“হ্যাঁ আজ ছুটির দিন বাড়িতেই আছে। ওকে খুজছ কেনো?”

–“খালাম্মাও বাড়িতেই আছে?”

–“হ্যাঁ”

–“ডাকেন তো কথা বলি।”

সালেহা শাশুড়িকে ডেকে দিলো সাথে ইজাজও আসলো এতো লোকজন আসার কাহিনী বুঝতে পারলো না ওরা কেউ।

–“কি হয়েছে আজ সকাল সকাল সকলে দল বেঁধে যে!”

–“খালাম্মা পাড়ায় এতো নষ্টামি তো সহ্য করা যাচ্ছে না। একজন থেকে তো অন্যরা নষ্টামি শুরু করবে। পাড়ায় তো নষ্টামিতে ভরে যাচ্ছে…”

ইরাবতী বুঝতে পারলো না বলল
–“কি বলছ বাবা? বুঝলাম না যদি খুলে বলতে…”

–“আপনার ছোট ছেলে তো একটা মেয়ের সর্বনাশ করেছে। ভিডিও লিক হয়ে গেছে। সোসাল মিডিয়ায় ডোকা যাচ্ছে না।”

ইরাবতীর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। বলল
–“না না বাবা এসব কী বলছ? আমার ছেলে এমন না। ও আর যাই করুক এসব করবে না কখনো।”

ইজাজ রেগে বলল “আমার ভাইয়ের নামে কী বলছ এসব?”

–“যা দেখেছি তা-ই বলছি। বিশ্বাস না হলে এই দেখেন ভিডিও।”

নোংরা ভিডিও দেখে ইরাবতী বেগম রাগে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। রাগে ইমনের রুমে গিয়ে ঘুমন্ত ইমনকে টেনে তুলে এলোপাতাড়ি মারতে লাগলো। চিৎকার চেচামেচিতে ইফাজ, হায়াত, হামজা উঠে বসে সব শুনে কী করবে ভেবে পেলো না।
হানিয়া ঘুম থেকে উঠে কফি খাচ্ছিল আর পড়ছিলো। হামজার ফোন পেয়ে সব জেনে কি করবে ভেবে পেলো না। মাথায় ঘুরলো তাকে ফিরতে হবে শিগগিরই!

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here