চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩২ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
328

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩২ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

স্তব্ধ তিন মানব-মানবী। মুখ দিয়ে টু শব্দ বের করতে পারছে না। কি বলবে সেটাই খুঁজে পাচ্ছে না। আসলে কী বলা বা করা উচিত এই মুহূর্তে কারোর মাথায় আসছে না। এর মধ্যে পারভেজ ওদের অবস্থা দেখে বলল
–“এটা কী লিক করবো?”

নিশাদ গম্ভীর কণ্ঠে বলল “হ্যাঁ”

হানিয়া মৃদু আর্তনাদ করে উঠে বলল “নাহ!”

নিশাদ খেঁপে গেলো বলল
–“না মানে কী? আমি তোকে বলেছিলাম এরা দু’টো কিছু ঘটাচ্ছে সেদিন রাতে আমি ওদেরকে একসাথে দেখেছি। ওরা অন্যায় করেছে ওদের শাস্তি হবে। মামা নির্দশ মামা কেনো শাস্তি ভোগ করবে?”

হানিয়া বলল “দেখ এটা লিক করলে খুবই খারাপ হবে। চাচ্চু, মামণি, দোলা আর ঐ বাচ্চাটা যে এখনো পৃথিবীতে আসলো না তার বাবা এমন কাজ করছে জানলে বড় হয়ে ওর ওপরে প্রেসার পড়বে।”

নিশাদ চিন্তায় পড়ে গেলো বলল
–“ছেড়ে দিবি? জেনির সাথে বিয়েটা হতে দিবি? নাকি এখন কী করবি?”

–“জানি না।”

–“জানিস না মানে কী?”

নাহিদ বিরক্ত হয়ে বলল “তোরা একটু চুপ করবি। পারভেজ অন্য কোনো উপায় নেই? মানে অন্য কারোর সাথে ভিডিও নেই কী?”

–“সেটা তো আমি বলতে পারব না স্যার। তবে যদি জেনির ফোনটা পাওয়া যায় তাহলে অনেক প্রুভ পেলেও পেতে পারেন।”

নিশাদ বলল “ফোনটা কীভাবে পাবো? ও তো এখন ইমনের বাসায় আছে একটা চান্স নেওয়ায় যায়। কিন্তু সেটা রিক্স”

–“এই রিক্সের কাজটা কে করবে?”

নাহিদ বলল “হায়াত আর ইফাজ”

নিশাদ খেঁপে গিয়ে বলল “ইম্পসিবল!”

হানিয়া বলল “পসিবল। করলে ওরাই করতে পারবে হামজা পারবে না। মাথা গরম করে ফেলবে ও। আর আমি বা তুই ও এখন ও বাসায় যেতে পারবো না। নানু জানে মামা তোর সাথে আছে আর আমি ও দেশে ফিরি নি এটাই জানে সবাই।”

নিশাদ আমতা আমতা করে বলল “তাই বলে হায়াত!”

হানিয়া আর নাহিদ ভ্রু কুঁচকে নিশাদের দিকে তাকিয়ে রইল। নাহিদ বলল
–“তো কী হয়েছে? এটা ছাড়া কোনো উপায় নেই।”

হানিয়া দাঁত কিড়মিড় করে বলল “প্রেম ওনার উতলে উতলে পড়তেছে।”

নিশাদ কিছু বলল না চুপ করে রইল।

সারাদিন পরে প্লান অনুযায়ী সন্ধ্যার সময় হায়াত ও বাসায় গেলো। বাসার পরিবেশ সুবিধাজনক নয়। হায়াতকে দেখে ইরাবতী বেগম খেপে গেলো রেগে বলল “ইমন কই? কোথায় লুকাইছে হা*রা*মজা*দা? আসে নাই? কয়দিন লুকাই থাকবো? বাড়িতে আইতেই হইবো। কুলা*ঙ্গার জন্ম দিছিলাম। আমার ম*রণ হয় না ক্যান…”

কথা বলতে বলতে কেঁদে দিল। সালেহা এসে শাশুড়িকে ধরে সোফায় বসালো। হায়াত দৌড়ে পানি আনলো। জেনিও এসে উপস্থিত হলো। এসে ওও কান্না জুড়ে দিয়ে বলল
–“কারোর কোনো দোষ না আন্টি সব দোষ আমার কপালের। অনাথেরা পোড়াকপালি হয়, আন্টি। আমি কখনোই এখানে আসতাম না যদি না ভিডিওটা এভাবে ছড়িয়ে যেতো। আমি কোথায় যাবো বলুন তো? আমার তো যাওয়ার জায়গা নেই। ভাড়াবাড়ি থেকেও বের করে দিয়েছে।”

ইরাবতী বেগম ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল “কোথাও যেতে হবে না এখানেই থাকবে তুমি। এবাড়ির বউ হয়ে। ইমনকে ফেরার ব্যবস্থা করছি আমি। একটু অপেক্ষা করো মা।”

হায়াত আড়ালে ভেংচি কাটলো। বিরবির করে বলল “অভিনয়ে নাম দে বেডি মার্কেট পাবি।”

রাত তখন ২:৩০ বাজে। হায়াত ইফাজ পা টিপে টিপে ইমনের রুমের সামনে আসলো। এই রুমেই জেনিকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। রুমের চাবি দিয়ে লক খুলে নব মোচড়ালো সাবধানে। উঁকি দিয়ে দেখলো জেনি গভীর ঘুমে কাঁদা হয়ে আছে। ওরা তাড়াতাড়ি ফোন খুঁজে বেরিয়ে আসলো। এতো সহজে যে কাজটা হয়ে যাবে ওরা ভাবতেই পারে নি। নিচে নিশাদ আর হানিয়া অপেক্ষা করছে। ওরা মেনডোর খুলে বেড়িয়ে আসলো। ইফাজ এসেই হানিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলল “মিসিউ আপি।”

হানিয়া ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল
–“আমিও তো সোনা!”

নিশাদ বলল “হায়াত ইফাজ তোরা সাবধানে থাকিস। আমাদের এখানে বেশিক্ষণ থাকা ঠিক হবে না।”

ওরা ফোন নিয়ে বিদায় নিলো। পারভেজকে ওরা ফ্ল্যাটে নিয়ে এসেছে। ফোনে লক করা লকটা খুলে ওরা প্রুভ পেলো। আরো কয়েকটা নোংরা ভিডিও, ছবি। হানিয়া ভেবে পেলো না। একটা মেয়ে কতটা নিচু হলে নিজের ভিডিও ভাইরাল করে শুধু মাত্র জেদ পুরোনের জন্য। পারভেজ ওই ভিডিও থেকে আরো কয়েকটা ভিডিও ফেইক আইডি থেকে ওয়েবসাইটে লিক করে দিলো। হানিয়ার এটা করতে মন সাই দিচ্ছিল না কিন্তু এটা না করলে যে সকলে ইমনকে দোষারোপ করছে ভুল বুঝছে। নিশাদের হম্বিতম্বিতে লিক করে দিলো। নাহিদ বার বার ফোন দিয়ে সব শুনে নিয়ে বলে দিচ্ছে কি করবে ওরা ওরাও সেটাই করছে। রুবা প্রেগন্যান্ট সে জন্য নাহিদকে ও রাতে বাইরে থাকতে দেয় না। সব কাজ শেষে সকলে অপেক্ষায় থাকলো সকাল হওয়ার। ইমন থম মেরে বসে আছে রুমে এখনো সে এসব কান্ডকারখানা কিছু জানে না।

সকাল হলো সোসাল মিডিয়ার ভিডিওটা ভাইরাল হয়েছে আবারও। সকলে জেনিকে ছিঃ চিতকার করছে। জেনি সকাল থেকে ফোন খুঁজে পাচ্ছে না সেটা নিয়ে ওর মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

সকালে হানিয়া ইমনকে রেডি হতে বলল “রেডি হয়ে নে মামা ও বাড়িতে যেতে হবে।”

–“কিছু পেলি না? আমাকে জেনিকে বিয়ে করতে হবে?”

হানিয়া ঢং করে বলল
–“হ্যাঁ রে মামা। নিজে তো সোসাল মিডিয়ার যাস না। সকলে তোর বাড়ির সামনে গিয়ে ভাংচুর করছে। খুব খারাপ অবস্থা বিয়ে না হলে খুব খারাপ হবে।”

ইমন আঁতকে উঠে বলল “কি বলছিস? মা, ভাইয়া, ভাবি, ইফাজ ওরা ঠিক আছে তো?”

–“কিছু ঠিক নাই তুই তাড়াতাড়ি রেডি হ। আমাদের এখনি বের হতে হবে।”

বাড়ির সকলের টেনশনে ইমন আর কিছু ভাবতে পারলো না ঝটপট রেডি হয়ে রওনা দিল বাড়িতে। নাহিদও এসে গেছে। ওদের সাথে যাবে বলে। বাড়ির সামনে গাড়ি এসে থামতেই ইমন হন্তদন্ত হয়ে বাড়ির ভিতরে গেলো। ইরাবতী বেগমসহ আরো কিছু মহিলারা বসে ছিল। ইমনকে আসতে দেখে ইরাবতী বেগম খেঁপে গেলো তেড়ে রাগে মারতে আসলো। বলল “কালাঙ্গার দু’দিন কই ছিলি? আবার কোনো মেয়ের সর্বনাশ করে ফিরছিস?”

হানিয়া বাঁধা দিলো। ইরাবতী বেগম ওকে দেখে থেমে গেলো। এতোগুলা মাস পর দেখে আবেগ আসলেও রাগে ভাঁটা পড়লো সেটা। বলল “আসছিস? তোর মামা দেখ সব শেষ করে দিয়েছে। সর্বনাশ করেছে যখন বিয়ে করতে বল। ইজাজ কাজী ডাক।”

–“কাউকে ডাকতে হবে না নানু। আর না তোমার ছেলে কারোর সর্বনাশ করেছে।”

–“কি বলছিস? মনগড়া কথা বলিস না মধু। আমাকে ওরা ঔ ভিডিও দেখিয়েছে ওটা ইমনই ছিল। সবাই ইমনকে খারাপ বলছে।”

–“আচ্ছা তাই? তা তারা কই? আজ আসে নি পুরা কাহিনী বলতে? হামজা সেদিন যারা আসছিল সবাইকে ডেকে আনতো চেহারা দেখি।”

হামজা গেলো ডাকতে সাথে ইফাজও যোগ দিলো।
–“ওদেরকে ডাকবে কেনো?”

–“সেটা একটু পরেই দেখতে পাবে। আর জেনি কই আমার হবু মামি কই? জেনি হবু মামি, জেনি হবু মামি।”

জেনি ফোন পাচ্ছে না তার ওপরে সকলের এমন আদিখ্যেতা তার ওপরে চিৎকার চেচামেচি বিরক্তি নিয়ে নিচে এসে হানিয়াকে দেখে চমকালো মনে মনে। হানিয়া ওকে দেখতে পেয়ে হেসে ফোন দেখিয়ে বলল “এটা খুঁজছিলে বুঝি?”

–“আমার ফোন! তোমার কাছে? তুমি আমার ফোন চুরি করেছ?”

–“না শুধু একটু দরকারে নিয়েছি একটু পরেই তোমার জিনিস তোমার কাছে ফিরবে। ওয়েট করো।”
ছেলেপেলেরা দল বেঁধে থমথমে মুখে এসে উপস্থিত হলো। নিশাদ দেখে বলল
–“আপনারা ভালো আছেন তো? আগের দিনের হট নিউজ কষ্ট করে বাড়ি বয়ে এসে বলে গেলেন। আর আজকের নিউজ দিয়ে জাননি কেনো? লজ্জা করছিল?”

–“আমরা এসব ভিতরের কাহিনী জানতাম না ভাই। মেয়েটা এমন কেঁদেকেটে বলল যে মায়া হলো।”

ইরাবতী বেগম বুঝতে না পেরে বলল “কী বলছিস তোরা? কী হয়েছে আবার?”

হানিয়া বলল “আমি দেখাচ্ছি তোমার সো কল্ড হবু বউয়ের কাহিনী।”

উপস্থিত যারা জানত না ওটা ইমন নয় রৌদ্দুর এছাড়াও এই মেয়ের অন্য ছেলেদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক ছিল। সকলে ঘৃণ্যয় ছিঃ ছিঃ করে উঠলো। ইরাবতী বেগম ইমনকে জড়িয়ে ধরে মুখে চুমু খেয়ে কেঁদে কেটে বলল “আমার ছেলে কিছু করে নি। আমার ছেলে নির্দোষ। আমার ছেলেকে আর কেউ খারাপ কথা বলবে না। আমার ছেলে ভালো শুনতে পেয়েছ তোমরা আর কেউ আমার ছেলের নামে খারাপ কথা বলবে না। আমার ছেলেকে আমি খারাপ শিক্ষা দেয় নি।”

ইফাজ চোখ-মুখ কুঁচকে বলল “একটু আগে কুলাঙ্গার ছিল আর এখন আমার ছেলে হয়ে গেলো? কী পাল্টিবাজ দাদুমণি গো তুমি!”

সালেহা বেগম ছেলেকে চোখ রাঙালে তা দেখে ইফাজ চুপ করে গেলো।

জেনি রাগে জেদে চিৎকার করে উঠলো বলল “ওসব মিথ্যা ওরা আমাকে ফাঁসাচ্ছে। তোমরা আমাকে বিশ্বাস করো।”

নাহিদ বলল
–“আমরাও তো বলতে পারি তুমি ইমনকে ফাঁসাচ্ছ! কেনো ফাঁসাচ্ছ বলো? নাহলে তোমাকে লকাপে ডোকাতে সময় লাগবে না আমার।”

জেনি ভয় পেলো বলল
–“ইমনকে ভালোবাসি কিন্তু ও অন্য একটা মেয়েকে ভালোবাসে। আমার সেটা সহ্য হয় না। তাই ওকে নিজের করে পেতে এমনটা করেছি।”

ইরাবতী বেগম রেগে ওকে থাপ্পড় মেরে নাহিদকে বলল “নাহিদ ওর শাস্তির ব্যবস্থা করো। আমার ছেলের সম্মান নিয়ে ওর ভালোবাসা পেতে চেয়েছে সেটা ভালোবাসা নয় জেদ।”

আস্তে আস্তে সকলে বিদায় নিলো চলে গেলে। এতোক্ষণ চুপ থাকা ইমন বলল “এতোগুলো বছরেও নিজের ছেলেকে চিনতে পারলে না,মা? আপসোস হচ্ছে মা! তোমার যোগ্য সন্তান হতে পারলাম না।”

ইরাবতী বেগমকে কিছু বলতে না দিয়ে দ্রুত পায়ে প্রস্থান করলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here