#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩৪ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
রৌদ্দুর বার-বার দোলাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ও দেখেও ধরছে না। রৌদ্দুর নিচে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে মূলত দোলাকে নিতে এসেছে কিন্তু ও যেতে নারাজ। ও কিছুতেই যেতে রাজি না। ও রৌদ্দুরকে বিশ্বাস করতে পারছে না। একবার বিশ্বাস করে বিশ্বাস ভেঙেছে বার বার ভেঙে গুড়িয়ে যেতে চাই না। এটা যে ওর আবার নতুন কোনো গেম নয় তার কী প্রমাণ আছে? রৌদ্দুর ও জেদ ধরে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। আর ফ্ল্যাটের বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে ফোঁসফাঁস করছে। ওপরেও যাচ্ছে না। নীলা রুমে এসে বলল
–“কী রে ভাইয়ার গাড়ি দেখলাম নিচে। আবার কন্টিনিউয়াসলি ফোনও দিয়ে যাচ্ছে তোকে কাহিনী কী?”
–“ও আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাইছে।”
নীলা হুট করে খুশি হয়ে গেলো বলল “ওমা তাই? সে তো ভালো কথা। তুই কী যাবি না?”
–“ও যদি আবার আমার বিশ্বাস ভাঙে আমি মরে যাবো নিলু”
–“ছিহ্ এসব কী বলিস? ভাইয়া মনে হয় ভালো হয়ে গেছে রে হয়তো নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে।”
–“জানি না কিছু।”
দোলা ওয়াসরুমে চলে গেলো। চোখ দিয়ে পানির ফোয়ারা বইছে। হঠাৎ পা পিছলে পড়ে গেলো ব্যথাতুর কণ্ঠে আর্তনাদ করে উঠলো। নীলা চমকে দৌড়ে গেলো। দরজাটা খোলা ছিল বলে ও সহজে ডুকে গেলো। মুহূর্তে ফ্লোরে রক্ত ভেসে উঠলো।
——————
সন্ধ্যায় তখন ঘর অন্ধকার করে বসে আছে ইমন। ইফাজ, হায়াত, হামজা এখন আর হুটোপুটি করছে না। তাদের ইমনের জন্য মন খারাপ। ও সারাদিন রুম অন্ধকার করে বসে থাকে কারোর সাথে ঠিক করে কথা বলে না, ঠিক করে খাই না। ওদের সাথে ঘুরতে যায় না। তাই ওরাও চুপ মে*রে গেছে। ইরাবতী বেগম মনে মনে অনুপাতে পুড়ে যাচ্ছে ছেলেটার সাথে দূরত্ব বাড়ছে সেটা টের পাচ্ছে বেশ করে। সোফায় বসে এসব নিয়ে চিন্তা করছিল তখন কোথা থেকে হানিয়া ছুটে আসল বলল
–“নানুমণি খুব ইম্পরট্যান্ট কথা।”
ইরাবতী বেগম মন খারাপ করে বলল “কী রে দিদিভাই?”
–“তোমার মন খারাপ?”
–“কী আর করব বল? ছেলেটা কথা বলছে না, খাচ্ছে না। চাকরিটাও চলে গেলো কী হবে ওর?”
হানিয়া ভনিতা না করে সরাসরি বলল
–“নানু মামা একটা মেয়েকে ভালোবাসে মেয়েটাও। ওর নাম রুহি অনেক ভালো ও। ওর বাবা-মা অন্য জায়গায় বিয়ে দিতে চাইছে কিন্তু ও বিয়ে করবে না মামাকে বললে মামা ওকে বিয়ে করে নিতে বলেছে। আমি ওদেরকে সব বুঝিয়ে বলেছি। ওরা এখন তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে।”
ইরাবতী বেগম অবাক হয়ে বলল “ইমনকে ভালোবাসে? কিন্তু ওর চাকরিটা তো নেই ওরা কী দেখে মেয়েকে আমার ছেলের সাথে বিয়ে দিবে?”
–“দেখো নানু, এতোকিছুর পর মেয়েটা তবুও মামাকে ভালোবাসে বিয়ে করতে চাই। বিশ্বাস ভালোবাসা ওদের মধ্যে কত গভীর বলত এমন বউমা পাবে কেথাও? ওদের সাথে কথা বলো। ওরা কী চাই শুনো! দরকার হলে সময় চাও মামা চাকরি পেলে ওদের বিয়ে হবে কথাবার্তার এগিয়ে রাখো। আমার কিন্তু রুহিকেই মামি হিসাবে চাই।”
ইরাবতী বেগম চিন্তিত হলো। হানিয়া বলল “মামার ভালো থাকার একাংশ কারণ ও কিন্তু রুহি। ওকে না পেলে মামা ভেঙে গিয়েছে আরো ভেঙে যাবে। তুমি কী ছেলের ভালো চাও না, নানু?”
ইরাবতী বেগম আঁতকে উঠে বলল “তুই কী বলতেছিস এসব? নিজের ছেলের ভালো কে না চাই? ইমনকে এভাবে দেখতে আমার আর ভালো লাগতাছে না ও আবার আগের মতো হোক আমি চাই।”
–“তাহলে ওদের বাসায় কবে যাবে বলো? আমি ও জানিয়ে দি ওদের?”
পিছন থেকে ইমন গম্ভীর কণ্ঠে বলল “মধু, মা বা কেউ কোথাও যাবে না। ওদের ওখানে গিয়ে মাকে ওরা যদি আমার জন্য অপমান করে সেটা আমি সহ্য করতে পারব না।”
–“ওরা যেতে বলেছে একসাথে বসে কথা বলবে বলেছে। সমস্যা কোথায়? অপমান করলে কী আমি ছেড়ে দিব না-কি?”
–“রুমে আয় তোর সাথে আমার কথা আছে।”
ইমন চলে গেলো। হানিয়া ইরাবতী বেগমের দিকে তাকিয়ে উঠে ওর পিছু পিছু গেলো রুম ডুকতেই ইমন প্রশ্ন ছুড়লো।
–“ওদের ওখানে কী কী বলছিস এ টু জেট সব বলবি একটা কথাও এদিক ওদিক যাবে না।”
হানিয়া আমতা আমতা করে বলল। কথা শেষ হতে ঠাস করে ওর গালে চড় পড়লো। ইমন রাগে গজগজ করতে করতে বলল “তুই আমার জন্য মিথ্যা কেনো বলছিস? আমার জন্য ওখানে গিয়ে ওদের কাছে ছোট হয়েছিস? মিথ্যা দিয়ে কিছু শুরু হয় না আর হবেও না। মাকে আর একটা কথাও বলবি না।”
চ’ড়টা এতো জোড়ে ছিলো যে গালটা জ্বলে উঠলো ও গালে হাত দিয়ে ইমনের দিকে তাকিয়ে বলল “মিথ্যা দিয়ে যদি ভালো কিছু হয় তাহলো মিথ্যায় ভালো।”
–“বেশি ডায়লগ বাজি করিস না যা এখান থেকে এসব নিয়ে কোনো কথা হবে না।”
হানিয়া তিব্র অভিমানে বেড়িয়ে আসল একে বারে বাড়ি থেকে। ইমন কখনো এতো জোড়ে মারেনি ওকে কিন্তু আজ ওর ভালোর জন্য মিথ্যা বলেছে তাই মার খেতে হলো! হানিয়া মাথায় চাদর পেচিয়ে মুখে মাক্স, চোখে পাওয়ার চশমা পড়ে একা একায় ঢাকার সন্ধ্যা উপভোগ করতে বের হলো। ভাড়ে করে ধোঁয়া উঠা দুধ চা খেলো। ফুচকা খেলো। এমনিতেই ওর মনটা ভালো হয়ে গেলো। খুশি মনে রিকশা করে বাড়ির পথ ধরল। তখনই আহছানউল্লা আহমেদ ফোন দিলো।
—————
–“কী হলো ফোন দিস না ক্যান?”
–“এখন তো বাংলাদেশে রাত বারোটার বেশি বাজে এতোরাতে ফোন দেওয়া ঠিক হবে?”
–“দিয়া দেখ দুই-তিনবার তারপর যদি না ধরে তখন আর দিতে হবে না।”
সুভানা হানিয়ার হোয়াটস অ্যাপে ফোন দিলো। ফোন ডুকলো কিন্তু কেউ ফোন ধরলো না।
–“ধরে না”
সাইফুল এহসান বলল “কাল ফোন দিও ঘুমাচ্ছে হয়ত। ডিস্টার্ব করা ঠিক না।”
–“তুই চুপ থাক, বড়খোকা। সুভা, আরো দুবার দে”
সাইফুল এহসান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে রুমে চলে গেলো। সেজাদ এখান থেকে উঠতে পারলো না। হানিয়াকে দেখা ও তার কথা শোনার জন্য মনটা ছটফট করতে লাগলো। ঠাই মুখ গম্ভীর করে বসে রইলো।
হানিয়া দোলার রিপোর্ট দেখছিল ওর অবস্থা তেমব ভালো না জ্ঞান ফেরেনি এখনো। বেবির কন্ডিশন ভালো না প্রিম্যাচিউর বেবি হয়েছে। দ্বিতীয় বারের বার ফোন ধরল “হ্যালো”
–“কি রে কি করিস?”
ওপাশ থেকে শাবনূর বেগম গম্ভীর কণ্ঠে ফিসফিস করে বলল
–“ভিডিও কল দে”
–“কিন্তু…”
ধমকে বলল
–“দে!”
অডিও কল কেটে দিলো।
–“টিভিতে খাটিয়ে দে। দেখি ম্যাইয়াডা কী কয়!”
–“তুমি আমার পাশ থেকে দেখো এই টুকুর জন্য আবার টিভিতে কানেক্টেড করব?”
শাবনূর বেগম সেজাদর শুকনো গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল “যেটা কইছি এইডা কর। বেশি কথা বলবি তো বাংলাদেশে গিয়ে রিক্সাওয়ালার সঙ্গে বিয়া দিয়া দিমু।”
সুভানা বিরক্তি নিয়ে “দূর।” বলে সব ঠিক করে ভিডিও কল দিলো। হানিয়া বিরক্ত হলো। রিসিভ করে রেগে বলল “কি হয়েছে? কথা বলিস না ক্যান? মেজাজ কিন্তু ঠিক নাই।”
ওর মুখে এখনো মাক্স, চশমা, মাথায় চাদর জড়ানো। সুভানা ভড়কে গিয়ে বলল “এই তোর এই অবস্থা ক্যান? এতোরাতে তুই কোথায়?”
–“ওহ আমি হসপিটালে… ”
–“হোয়াট ক্যানো?”
–“দোলা ওয়াসরুমে পড়ে গেছে। কন্ডিশন খুব ক্রিটিকাল।”
–“ওমাইগড বেবি? বেবি ঠিক আছে?”
–“প্রিম্যাচিউর বেবি। ডক্টর দেখছে। দোলার জ্ঞান ফিরছে না। ওর বাসার সবাই কান্না করছে। সবচেয়ে মজার ব্যপার কী জানিস? মিস্টার. আহমেদের কান্না আহা যাই হোক…”
–“ওয়াও সেই লেভেলর ইন্টারেস্টিং কাহিনী। তোকে কিছু বলে নাই?”
নিশাদ চা এনে হানিয়াকে দিল। সেটা নিয়ে বলল
–“এই বেডা আমাকে কী বলবে? ও হানিয়া আহমেদকে চিনে? আমি অবশ্য একটু খোঁচাখোঁচি করে কথা বলছিলাম এই বেডা কিছু কয় না ছলছল চোখে আঁখি মাখা বদনে তাকিয়ে থাকে। সেটা দেখে বড়ভাইটুস বকছে। হাম থুড়িই কেয়ার করি! হুহ্!”
সুভানা ফিক করে হেসে বলল “তুই আসলে মানুষ হবি না সিরিয়াস টাইমেও ঠ্যাস মারা ছাড়িস না বেচারা তোর কাছে নাকানিচুবানি খাই”
–“দূর বাদ দে তো এটাকে এবার আমি সোজা করে ছাড়ব। এই বাচ্চাটার জন্য এতো কিছুর ছাড় দিলাম। বাই দ্যা ওয়ে তুই কবে আসবি?”
সুভানা পাশে শাবনূর বেগমের দিকে তাকালো ওনি ফোন নিয়ে বলল “যাওয়ার আগে যে সবাইকে বলে যেতে হয় এটুকু বুদ্ধিসুদ্ধি তোমার মাথায় নাই?
হানিয়া ভড়কে গিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল। ওনি বলল “মুখের মাক্সফাক্স নামাও। কথা বুঝি না।”
–“না না। আসলে তাড়াহুড়ায় ছিলাম তো তাই বলতে পারি নাই।”
–“তোমার নানী কই? আমার ফোন লাগে না ক্যান?”
–“নানুর ফোন ভেঙে গেছে। আমি কাল ফোন দিতে বলবো।”
–“হ তাই বলো। তা মাক্স খুলো না ক্যান?”
হানিয়া মনে মনে বিরক্ত হলো। কিন্তু প্রকাশ না করে মুখ খুললো। মুখের পাশে চড়ের জায়গায় অন-টাইম ব্যান্ডেজ লাগানো। তা দেখে ওনি বলল “মুখে কী হয়েছে তোমার?”
হানিয়া টান দিয়ে ব্যান্ডেজ উঠিয়ে দিল অবশ্য একটু ব্যাথা পেলো বলল “কিছু হয় নাই।”
নিশাদ ওর কথা শুনে মিটমিট করে হেসে বলল “মিথ্যা বলস ক্যান। বল তোর পাকনামির জন্য চড় খেয়েছিস। তার দাগ ডাকতে…”
হানিয়া চোখ পাকিয়ে তাকালো ওর দিকে নিশাদ চুপ করে নিঃশব্দে হাসলো। কোনো ছেলের কণ্ঠ শুনে সেজাদ কেমন জেলাস ফিল হলো। শাবনূর বেগম শুনতে পেলো বলল “কিসের জন্য? কার কাছে খেয়েছ?”
হানিয়া বেজায় রাগ, বিরক্ত হলো এই মহিলার সব কিছু জানা লাগবে। “মিথ্যা কথা বলছিলাম। তাই মামার কাছে খেয়েছি।”
চলবে ইনশাআল্লাহ