#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৩৫ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
দোলার জ্ঞান ফিরছে না দেখে রৌদ্দুর উদ্ভ্রান্তের মতো কান্না করছে সকলে ওর কাণ্ড দেখে অবাক না হয়ে পারলো না। যে ছেলে বউকে মানতে চাই নি বউকে বাড়ি ছাড়া করলো সে বউয়ের জন্য এমন করতে দেখে যেকেউ-ই অবাক হবে। হানিয়ার ঠ্যাস মারা কথাও তাকে ছুঁতে পারছে না। কিন্তু আগে হলে নিজেও দু চার কথা শুনিয়ে ঝগড়াঝামেলা বাঁধিয়ে ফেলতো। রৌদ্দুরের করিডরে একা বসে ছিল হানিয়া ওর পাশে গিয়ে বসলো কিছুক্ষণ নিবর থেকে বলল “অবশেষে নিজের ভালোটা বুঝতে পারলে অবশেষে কোনো নারী মানুষের দেহকে নয় মনকে ভালোবাসলে। সে তোমাকে তার শূন্যতা বোঝাতে পারলো, কাঁদাতে পারলো। আমি আজ খুব খুশি জানো? এমন একটা দিনের জন্য কত অপেক্ষা করেছি অবশেষে আসলো ঠিকি। কিন্তু দেরি না হয়ে যায়।”
রৌদ্দুর তাকালো ওর দিকে। হানিয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলল “সরি ভুলে বার বার তুমি বলে ফেলার জন্য।”
রৌদ্দুর ওর কথার প্রতিত্তোর করল না বলল
–“আমার পাপের ফল আমার স্ত্রী সন্তান পাচ্ছে?”
–“কারোর পাপের ফল কেউ পাই না। তুমি বরং নামাজ পড়ে দোয়া করো। সরি দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।”
রৌদ্দুর ওর কথা শুনে মাথা এলি সম্মতি জানিয়ে উঠে গেলো তার কয়েকঘন্টা পর ভোর পাঁচটার দিকে দোলার জ্ঞান ফিরলো। উঠেই বাচ্চা বাচ্চা করে কান্না জুড়ে দিল। সকলে যখন বলল বাচ্চা ঠিক আছে ওর বিশ্বাস হলো না বাচ্চাকে আনতে বলল কিন্তু বাচ্চাকে আনা কোনো ভাবে সম্ভব নয়। নার্সেরা ওকে শান্ত করতে পারলো না। রৌদ্দুর এতোক্ষণ বাইরে বসে ছিল। দোলার জ্ঞান ফেরার পনেরো মিনিট আগেই ও এসেছে। ওকে এতো হাইপার হতে দেখে ভিতরে গেলো। ওকে আসতে সকলে বেরিয়ে গেলো। নার্স এখনো দোলাকে ধরে রেখেছে। ওকে দেখে দোলা শান্ত হয়ে বলল “আমার বাচ্চা রোদ। আমার বাচ্চাকে এনে দাও। ওকে ছাড়া আমি বাঁচব কীভাবে? আমি মা হিসাবে ব্যর্থ রোদ। আমি ভালো মা না?”
ও চেয়ার টেনে ওর বেডের পাশে বসলো ওর হাত মুঠোয় নিয়ে বলল “আমাদের মেয়ে হয়েছে দোলা। সি ইজ ফাইন। প্রি ম্যাচুউর বেবি তো তাই ও বেবিকেয়ারে আছে। এখন আনলে ওর ক্ষতি হবে।”
–“তবে আমাকে নিয়ে চলো”
–“এই অবস্থায় তুমি যেতে পারবে?”
দোলা কিছু বলতে পারলো না কেঁদেই গেলো। নার্স দোলাকে ইনজেকশন পুশ করলো। ও মিনিটক্ষাণিকের মধ্যে আবারও ঘুমের দেশে পাড়ি জমালো। নার্সটা নিজের কাজ করে চলে যেতে রৌদ্দুর দোলার ললাটে ওষ্ঠ ছুঁলো।
আহছানউল্লা আহমেদ কেবিনের বাইরের গ্লাস থেকে সেটা দেখে নিজের স্ত্রীকে বলল “তোমার ছেলে বোধহয় এবার মানুষ হবে।”
ওনি তাকালো বলল “আমার ছেলে? তোমার ছেলে না?”
–“ওতো তোমার কথা শুনে আমার কথা শুনে না। আমি মানেই ওর কাছে বিরক্তিকর পারসোন।”
–“এমনভাবে বলছ কেনো?”
আহছানউল্লা আর কিছু বলল না।
তারপরের হসপিটালের কয়েকদিন গেলো ব্যস্ততায়। রৌদ্দুর যে কি-না রাতে ছাড়া বাসায় থাকত না সে এই ক’দিন হসপিটালের চেয়ারে বসে কাটালো। দোলাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়া। কি লাগবে না লাগবে সব নিয়ে ছোটাছুটি করা। ইতিমধ্যে নতুন সদস্যর জন্য জামা কিনে ভর্তি করে ফেলেছে। সকলে খুশি যেনো ধরে না। দোলা শুধু অবাক হয়ে দেখে। রৌদ্দুরের পরিবর্তন ভাবাচ্ছে তাকে…
আহছানউল্লা আহমেদ ডাক নাম মিছরি নাম দিয়েছে এটা নিয়ে রৌদ্দুর দ্বিমত করে নি। ভালো নাম এখনো কিছু ঠিক করে নি মিছরি মনে ডাকছে সবাই। পাঁচদিন হসপিটালে থেকে বাড়িতে ফিরল সবাই। দোলা ফিরতে না চাইলে শাশুড়ির কাছে কড়া কথা শুনে আর কিছু বলে নি বলতে সাহস হয় নি।
৩১শে ডিসেম্বর থার্টি ফার্স্ট নাইটে কে কী করবে সেটা নিয়ে সবার মাথা ব্যথার শেষ নেই। হানিয়া এই ক’দিন বেশিরভাগ সময়ই হসপিটালে ছিল। আহমেদ বাড়িতেই ছিল। তার দরুন ঘুম হয় নি। আজ এবাড়িতে ফিরে খেয়ে দেয়ে দরজা দিয়ে ঘুমাচ্ছে।
এহসান পরিবারের সদস্যরা বাংলাদেশে এসেছে দু’দিন হলো। বাংলাদেশ ফেরার পরের দিনই লাইজু স্বামী, সন্তানদের নিয়ে বাপের বাড়ি গিয়েছে। বাংলাদেশ ফিরলে এটাই তার প্রথম কাজ হয় প্রতিবার এবারও বাদ গেলো না। সাইফুল এহসান, সোনিয়া, সোহান, সাঈদ আসে নি সাঈদের কিছু কাজ পড়ে যাওয়ায়। তারা আর কিছুদিন পর আসবে একসাথে।
শাবনূর বেগম একা একা বিরক্ত হয়ে গেলো সেজাদ সারা সকাল বন্ধুদের সাথে কাটিয়ে দুপুরে এসে ঘুমিয়েছে। শাবনূর বেগম নাতির শান্তির ঘুম সহ্য হলো না ঠেলে তুলে দিলো।
–“কী সমস্যা দাদু? ঘুমাতে দাও এখন কোথাও যাবো না।”
–“তুই যাবি না তো কী হইছে? আমি যাবো। আমারে এই ঠিকানায় নিয়া চল”
ওনি একটা কাগজে লেখা ঠিকানা দেখিয়ে বলল। সেজাদ সেটা দেখে বলল
–“এখানে কী কাজ তোমার? এখানে যেতে একঘন্টার বেশি সময় লেগে যাবে। জ্যাম থাকলে তো কথায় নেই।”
–“আমি কিছু শুনতে চাই না তাড়াতাড়ি রেডি হইয়া নিচে আয়।”
সেজাদ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে উঠে পড়লো। শাবনূর বেগম এতো জেদি তার কথা না শুনলে আবার তিনি ইমোশনাল ফুল হয়ে যায়। ওরা রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো। দু-ঘন্টা সময় পার করে অবশেষে আসলো একটা বাড়ির সামনে কলিং বেল বাজতে কয়েকসেকেন্ড পর একটা ছেলে এসে দরকার খুলে দিয়ে বলল “আপনারা কারা? কাকে চাই?”
–“তুমি কেডা?”
সেজাদ ইম্পব্যারেস ফিল করছে। ও ভিতরে আসতে চাই নি কিন্তু শাবনূর বেগম তো সে কথা শোনার ব্যক্তি নয়। জোড় করেই এনেছে। এটা কার বাসা এটাও জানে না তাকে জানানো হয় নি। ইফাজ তার পাওয়ার চশমাটা ঠেলে দিয়ে বলল “কানা না-কি? চোখে দেখেন না আমি মানুষ!”
–“আমি তো দেখতাছি লেজ ছাড়া বাঁদর।”
অপরিচিত বয়স্ক মহিলার কাছে অপমানজনক কথা শুনে সেটা গায়ে না মেখে সেটাই সাই জানিয়ে বলল “লেজ ছাড়া নই। লেজ আছে প্যান্টের মধ্যে দেখাবো? ওপস আমি আবার আমার স্পেশাল লেজ সবাইকে দেখাই না। টিকিট কাটতে হবে দেখতে হলে টিকিট ফি ওয়ানলি ওয়ান ফিফটি থাউজ্যান্ড ক্রোর।”
সেজাদ না চাইতেও হেসে ফেললো। ছেলেটা যে ভারি দুষ্টু সেটা তার কথায় প্রকাশ পাচ্ছে। শাবনূর বেগম চোখ-মুখ কুঁচকে তাকিয়ে রইল। সালেহা এসে ইফাজকে ধমক দিল বলল “এসব কোন ধরনের বেয়াদবি ইফাজ। গুরুজন হয় সরি বলো ফাস্ট।”
ইফাজ বিরবির করে বলল “আইছে আমার হিটলার মা।”
–“কী বিরবির করছ জোড়ে বলো…”
–“সরিইই!”
বলে জায়গায় থেকে চলে গেলো।
–“দুঃখিত। আমার ছেলেটা একটু দুষ্টু। কাকে চান?”
–“তোমার শাশুড়ি বাড়িতে আছে?”
–“জি আছেন।”
–“তারে ডাক দাও সে আমারে চিনব।”
–“আচ্ছা ভিতরে আসুন বসুন আমি ডাকছি।”
ওরা গিয়ে সোফায় বসল। সেজাদের কাছে মহিলাকে চেনা চেনা লাগলো। মনে করার চেষ্টা করলো কোথায় দেখেছে?
চলবে ইনশাআল্লাহ