#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪০ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না
ঢাকা থেকে খুলনায় যাচ্ছে শাবনূর বেগম ও ইরাবতী বেগমের পরিবারের সকলে। হানিয়া সেজাদের বিয়ের কথা সেদিনের পর আর কেউ উচ্চরণ করে নি। ও যেতে চাই নি খুলনা। এমন একটা বিশ্রী ঘটনা সাথে হায়াত হামজার পরিক্ষা তাকে একপ্রকার যুদ্ধ করে নিয়ে যাচ্ছে। নিশাদের এক্সাম চলছে ওদের সাথে যেতে না পারার আপসোসে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সোনিয়া আর সুভানারা তাদের জায়গা থেকে রওনা দিয়েছে। একগাড়িতে ছোটরা আরেক গাড়িতে বড়রা। সেজাদ, ইমন, হায়াত, হামজা, ইফাজ সকলে কিছু না কিছু নিয়ে কথা বলছে। রাত গভীর হতে একে একে সকলে ঘুমে পড়লো। সেজাদ ড্রাইভ করছে তার ঘুম আসছে না সারা দুপুর ঘুমিয়ে নিয়েছে তবুও কয়েকবার হাই তুলল। ইমন জেগেই ছিল। বলল “চা খাবে? ঘুম কেটে যাবে।”
–“খাওয়াই যায়। বাট আনহাইজেনিক পানি, জায়গা… ”
–“এগুলোই তো মজা ট্রাই করে দেখো। মধুরিমা আপনি কী খাবেন?”
হানিয়া খেঁপে আছে জোর করে আনায় সাথে ঘুমের সমস্যা এভাবে সেঘুমাতে পারে না তার মধ্যে ইমনের ফাজলামিতে রাগ বাড়লো বলল
–“তুই গেল শালা…”
–“তোর বাপের শালা, তোরও শালা, তোর বাচ্চাকাচ্চাদেরও শালা হবো ওয়াও হোয়াট এ্যা রিলেশনশিপ…”
হানিয়া উত্তর করলো না। সেজাদ শব্দ করে হেসে ফেললো। হানিয়ার চোখ মুখ কুঁচকে গেলো। ওরা একটা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড়ালো। সেখানে দু’চারজন লোকজনও দেখা যাচ্ছে। গাড়ি থামাতে হামজা লাফিয়ে উঠে বলল “এসে গেছি?”
–“না, কিছু খেতে চাইলে নাম।”
হামজা আড়মোড়া ভেঙে গাড়ি থেকে নামলো। তখনই শীতের প্রকোপ বোঝা গেলো। হানিয়া টুপি, হাতমোজা এগিয়ে দিলো ওকে। হানিয়া সেজাদের উদ্দেশ্যে বলল “গাড়িটা লক করবেন প্লিজ।”
ইমন চারটা চায়ের অর্ডার করলো। হামজা রেস্তোরাঁর ভিতরে গিয়ে ঝুলিয়ে রাখা খাবার গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে দেখছে। হানিয়া বলল “যা কিনবি হায়াত, ইফাজের জন্যও নিস।”
হামজা বোনের কথায় হিংসাত্মক মনোভাব নিয়ে বলল “ওদেরকে তুই বেশি ভালোবাসিস আপি। আমাকে তুই ভালোই বাসিস না।”
হানিয়া হতাশ নিঃশ্বাস ফেলল। বলল “আমি কাউকে ভালোবাসি না। আদর করি না। খুশি?”
এ বলে ওকে বেশি ভালো বাসে আবার ওরা বলে ওদেরকে না একে বেশি ভালোবাসি। এদের চুলোচুলিতে কিছু বলেও লাভ হয় না।
সেজাদ অবাক না হয়ে পাড়ছে না। হানিয়ার এতো কেয়ারিং, রেসপন্সিবল ও কল্পনা করে নি। এই যে গাড়ি লক করতে বলল ভিতরে হায়াত, ইফাজ ঘুমিয়ে আছে বলে। আবার এখন ওদের জন্য খাবার নিতে বলছে।
ওরা ভাড়ে চা খেয়ে আবারও গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি চলতে লাগলো গন্তব্যের দিকে। ইমন, হামজা ঘুমিয়ে পড়ছে। সারাটা রাত সেজাদ আর হানিয়া জেগে রইলো। কিন্তু কেউ কারোর সাথে কথা বলছে না। ওরা পৌছালো সকাল নয়টার দিকে তখন চারিদিকে রৌদ্রময়। বড়দের গাড়ি আগেই চলে এসেছে।
ওরা গাড়ি থেকে নামতে দেখতে পেলো সেজাদের দাদুর ছোটভাই মানে ছোটদাদুর পরিবারের লোকজনকে। ওরা একে একে নামলো বাড়ির কেয়ারটেকার এলো জিনিসপত্র নিতে। ছোটদাদুর পরিবারের ছেলেদের ছেলেমেয়েরা সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হানিয়া-হামজা-হায়াতের দিকে। হঠাৎ কোথা থেকে একা লোক এসে হায়াতকে জড়িয়ে ধরল। ও ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। ওর চিৎকার শুনে লোকটা ভয় পেয়ে দূরে সরে গেলো বলল “এই তুই চিৎকার করলি ক্যান? আমারে ভুইলা গেলি টুম্পা?”
হানিয়া হায়াতকে জড়িয়ে ধরল। রীতিমতো ভয়ে কাঁপছে। সেজাদ বলল “চাচা ও আপনার টুম্পা নয়। ও একটা বাচ্চা মেয়ে। আপনাকে ভয় পাচ্ছে।”
–“আমার টুম্পাকে আমি চিনতে ভুল করি না। ও আমার লগে যাবি টুম্পা? চল…”
বলে আবারও হাত টেনে ধরলো। হানিয়া রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে বলল “এমন করছেন কেনো? হাত ছাড়ুন ও ভয় পাচ্ছে। ও কোনো টুম্পা নয় ও হায়াত আমার বোন ছাড়ুন।”
লোকটা হানিয়াকে দেখে বলল “এই তোর তো বিয়ে রে। তুই এখানে ক্যান? এই সেজাদ তোর বউ এটা তোর সাথে আজ ওর বিয়ে হবে রে। আজকে আমিও টুম্পাকে বিয়ে করব। কী মজা… কী মজা”
লোকজন লোকটাকে টেনে নিয়ে গেলো। হানিয়া লোকটার কথা শুনে মনে ভয় ডুকে গেলো। সেজাদ নিজেরও হাসফাস লেগে গেলো। অস্বস্তিকর পরিবেশ হয়ে উঠেছে। সেজাদ নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করে বলল “আ’ম এক্সটেমলি সরি। ওনি আসলে টুম্পা নামক এক ব্যাক্তিকে ভালোবাসত সে পৃথিবীতে নাই সেসব সহ্য করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে।”
হায়াত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে উঠলো বলল
–“আমি এখানে থাকব না। আমি ঢাকা যাব আপি। ঐ লোকটা আমাকে বিয়ে করে নিলে।”
ইমন বলল “দূর বোকা ওনি তোর বাবার বয়সী মেন্টালি সিক সেজন্য এমনটা করছে।”
–“না না আমি চলে যাবো। আপি চল।”
সেজাদ বলল “সরি হায়াত। ওনি আর এদিকে আসবে না। তুমি ভয় পেয়ো না। আমি প্রমিজ করছি। ওকে? চলো এতো দূর থেকে এসেছ রেস্ট নিবে চলো।”
সেজাদ বাড়ির দিকে গেলো সাথে হামজা ইফাজ হায়াতকে নিয়ে গেলো। ছোটদাদুর পরিবারের লোকজন তাদের কাছে আসতে ভয় দ্বিধা সংশয় কাজ করছে তাই তারা দূরে দূরে আছে। ইমন বলল “কী রে চল”
–“ঐ লোকটা কী বলে গেলো?”
–“পাগলে কত কী বলে তাই বলে কী সব ধরে বসে থাকতে হবে? চল টায়ার্ড রেস্ট নিবি।”
•••—•••
ফ্রেশ হয়ে সকলে নাস্তা করে নিলো। রেস্ট নিতে গেলো। সোনিয়া আর সুভানারাও চলে এসেছে। সুভানার রুমে হানিয়া, হায়াত, সুভানা শুয়ে আছে। হায়াত মনে মনে এখনো ভীত হয়ে আছে। সুভানা ওকে এটা সেটা বলছে। হানিয়া ঘুম পেয়েছে ও ঘুমাচ্ছে।
ঘুম ভাংলো সুভানার ডাকে তখন দুপুর দু’টো বাজে হায়াত এখনো ঘুমাচ্ছে। সুভানা বলল
–“কী মরার মতো ঘুমাচ্ছিস বলতো! মনে হচ্ছে সারারাত বরকে খুশি করে দিনে ঘুমাচ্ছি।”
হানিয়া আশপাশে দেখে নিলো হায়াত আছে কিনা তারপর উঠে সুভানাকে মেরে বলল “আমার ভাইবোনের সামনে এসব ভুলভাল কথা বলবি না।”
–“শুন তোর ভাইবোন না আর ছোট নেই। বড় হয়ে গেছে আমাদের থেকেও বেশি বুঝে।”
–“তুই চুপ কর ঘুমাতে দে”
–“আরে উঠে গোছল করে নে। ছোট দাদুের বাসায় আজ দুপুরে দাওয়াত। সকলে চলে গেছে শুধু তুই আমি বাকি। দাদুমণি থ্রিপিস পড়ে যেতে বলেছে।”
হানিয়া উঠে কলঘরে গিয়ে গোছল সেরে নিল। ব্লু রংয়ের পাকিস্তানি থ্রি-পিস পড়েছে। ওকে এই রংয়ে মানিয়েছে। সুভানা দেখে বলল “তোকে এতো সুন্দর লাগছে রে। আমি ছেলে হলে তোকেই বিয়ে করতাম।”
–“জাকি ভাইয়া জানে তোর সমস্যার কথা?”
সুভানা বুঝতে পারলো না কিসের সমস্যার কথা বলছে ও। তারপর বুঝতে পেরে দুমদাম মরলো। ওরা দু’জন গুছিয়ে রেডি হয়ে গেলো ওবাড়িতে। অনেক পুরোনো বাড়ি সাদা রংয়ে কালচে পড়ে গেছে। বাড়িতে ঢোকার আগে সুভানা বলল “শুন মাথায় ঘোনটা দে।”
হানিয়া প্রশ্ন করলো না মাথায় ওড়না দিলো। এখানকার লোকজনদের মনমানসিকতা কেমন ও জানে না। ছেলেদের খাওয়া দাওয়া শেষ ওরা আসতে লাইজু বলল “বস এতোক্ষণ লাগে তোদের।”
ওরা খেতে বসে গেলো। কিছু মেয়েরা ওদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। হায়াত লেমন কালারের গাউন পরেছে। সে বোনের পাশে বসে খাচ্ছে ফিসফিস করে বলল “আপি এরা এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো?”
–“আমি কীভাবে জানব? ওদের কাছে শুনে আয়।”
–“দূর”
হানিয়াকে সার্ভ করতে গিয়ে ওর গায়ে ডাল ফেললো। ও হতভম্ব হয়ে বলল “ওহ শিট!” মেয়েটা ভয় পেয়ে গেলো। সম্ভবত ওর মা ধমকে উঠলো বলল “একটা কাজও ঠিক মত করতে পারিস না।”
–“না না বকবেন না আন্টি। ড্রেস চেঞ্জ করলে হয়ে যাবে।”
সোনিয়া বলল “খেয়ে চেঞ্জ করো। এখন আপাতত টিস্যু দিয়ে মুছে নাও”
হানিয়া খেয়ে উঠে গেলো। টিস্যু দিয়েও সে দাগ পুরোটা উঠলো না। সোহানের সাথে হামজা, ইফাজ খেলছিল। সেজাদ, সায়েম আর ইমন এটা সেটা নিয়ে কথা বলছিল তাদের সাথে আরো ছোট ছেলেরা আছে। সোহান দৌড়ে এসে বলল “সুইটগার্ল…আই মিস ইউ।”
হানিয়া ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলল “মিস ইউ টু।”
সেজাদ তাকালো। থমকে গেলো। আগে কখনো থ্রি-পিসে দেখে নি হানিয়াকে। তার রূপে মুগ্ধ হলো। সুভানা আর হায়াত ও আসলো। সুভানা ওর অন্য ভাইদের উদ্দেশ্য করে বলল “ভাইয়ারা বেড়াতে নিয়ে যাবে না? রুমে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।”
তাদের মধ্যে একজন বলল “মেলা হচ্ছে চলো তাহলে।”
–“বিকালে বের হব তাহলে।”
চলবে ইনশাআল্লাহ