চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪২ পর্ব।। #তাসনিম_তামান্না

0
332

#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪২ পর্ব।।
#তাসনিম_তামান্না

আঁধার কাটিয়ে সূর্য্যিমামা জানান দিচ্ছে সকাল হয়ে গেছে। রাতে গুটিকয়েকজনের ভালো করে ঘুম হয় নি। তা তাদের চোখমুখের বেহাল অবস্থা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সুভানা ঘুম থেকে উঠে হানিয়াকে দেখতে না পেয়ে কপাল কুঁচকালো। কোথায় ও? উঠে দেখলো ওর সুটকেসটাও নেই। মাথায় বজ্রপাত হলো যেনো। হায়াত এখনো ঘুমিয়ে আছে। সুভানা ওকে ডেকে উঠালো বলল “এই তোর বোন কই?”

হায়াত ঘুমুঘুমু হয়ে বলল “কই আবার হবে দেখো বাইরে আছে হয়তো!”

সুভানা বলল “তোর বোনের লাগেজ নেই। একটা জিনিসপত্র নেই।”

ওর ঘুম কেটে গেলো। বলল
–“ফোন কই ফোন দাও আপিকে।”

সুভানা ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ম্যাসেজ “আমি চলে যাচ্ছি আমাকে নিয়ে টেনশন করতে হবে না। তোরা ঘুরেফিরে তাড়াতাড়ি ফিরে যাস। হায়াত-হামজা এক্সাম” ফোন দিলো ফোন বন্ধ। সুভানা হায়াত ভয় পেলো সবাই জানলে কী হবে?

সবার জানতে সময় লাগলো না। সেজাদের বউ কোথায় চলে গেছে। ইমনের ফোনেও সেম ম্যাসেজ। হায়াত-হামজা কী করবে বুঝতে পারলো না। কালকের ঘটনাটার পর এখানে থাকাটা হানিয়ার জন্য সহজ ছিল না। নিজেকে বোঝানো, গোছানোর জন্যও ওর সময় চাই।

ইরাবতী বেগম রেগে গেলো “তোরা কেমন ঘুমান ঘুমালি? আমার নাতনিটা কই গেলো টের পেলি না।”
শাবনূর বেগমের ছোট জা বলল “আপনার নাতনি পালাই গেছে। শহরের নায়কা তারা কী আর এসব বিয়ে-শাদি মানে? তারা হইলো সবসময় নিজেদের নিয়ে ভাবে।”

ইজাজ বলল “আমাদের মেয়ে এমন নয়। আপনি ভুল বুঝছেন। ওর সময় প্রয়োজন সবটা হুট করে হয়ে গেলো। তাই হয়তো মানতে পারছে না।”

ওনি আবারও বলল “কেনো না মানতে পারার কী আছে? আমাদের ছেলে সেজাদ কী খারাপ না-কি? সে কোটিতে একটা। আমাদের ছেলের জন্য মেয়েদের লাইন পড়ে আছে। আপনাদের মেয়েকে কী সেজাদ খাওয়াতে পড়াতে পারবে না? টাকায় মুড়িয়ে রাখবে”

ইমন রেগে গেলো বলল “টাকা দেখাচ্ছেন কাকে? আপনি কিন্তু রিতিমতো অপমান করছেন। মধু কী সেজাদের টাকা বিষয়সম্পত্তি দেখে ইচ্ছে করে বিয়ে করেছে? যদি তা-ই হয় তাহলে এভাবে চলে কেনো যাবে?”

শাবনূর বেগম এবার মুখ খুললেন গম্ভীর কণ্ঠে বলল “আহ্ ছোট্টো থামতো তুই। সবসময় কী সব বলিস।”

–“আমি তোমারে কইছিলাম আমার নাতনিডারে নাও নিলা না। এখন দেখছ তো!”

–“চুপ করবি তুই!”

ইমন বলল “মা, আই থিংক এতো কিছুর পর এখানে থাকা উচিত বলে আমি মনে করছি না। যদি তোমাদের থাকতে ইচ্ছে হয় থাকো আমি আজই ফিরব।”

বলে প্রস্থান করলো। সেজাদ সবটাই শুনলো রুমে বসে। শুধু দীর্ঘ শ্বাস আসছে।

সেদিনই ইরাবতী বেগম ও শাবনূর বেগমের পরিবার খুলনা থেকে ফিরে এলো। গাড়িতে কেউ কারোর সাথে দরকার ছাড়া কথা বলছে না। সেজাদ নিজেও ক্লান্ত হয়ে গেছে কী হচ্ছে? আর কী হবে? এসবের টানাপোড়েনে পুড়ছে। হানিয়ার জন্য টেনশনও হচ্ছে কোথায়ও? ঠিক আছে তো? টেনশনে ভুলভাল কাজ করে ফেলবে না তো?

হায়াত তো বোনের টেনশনে একচোট কেঁদে নিয়েছে। হামজা কিছু বলছে না। সে জানে না কী হবে? বোনের বিয়ে হয়ে গেছে মানে সে তাদেরকে ভুলে যাবে। সংসারে মন দিবে। হায়াতেরও বিয়ে হয়ে গেলে সে একা হয়ে যাবে। কী করবে সে? সেজাদ ওদের বাসার সামনে গাড়ি থামালো। সকলে একে একে নেমে চলে গেলো৷ সকলে গেলেও হামজা থাকলো বলল “ভাইয়া, আপনাকে চিনি কিন্তু জানি না আপনি কেমন! হয়তো আপি নানুর চাপাচাপিতে বিয়েটা মানতে বাধ্য হবে হয়তো বা না। আমি জানি না কী হবে সামনে। ও বলেছিল কখনো বিয়ে করবে না আমাকে আর হায়াতকে নিয়ে বাকিটা জীবন কাটিয়ে দিবে যাই হোক আপনার কাছে একটাই অনুরোধ আমার আপিকে কষ্ট দিবেন না প্লিজ। ও অনেক ভালো। যদি-ও রাগ একটু বেশি। মানিয়ে নিবেন প্লিজ।”

সেজাদ কিছু বলতে পারলো না। অনিশ্চিত ভবিষ্যতে কী আশ্বাস দিবে ও? আদেও কী তাদের একসাথে পথ চলা হবে?
——————–
হানিয়া তার জীবনের এতোবড় সত্যি, পরিবর্তনের কথা চাচা, ফুপুকে জানালো। তারা হানিয়াকে মেন্টালি সাপোর্ট দিলো। ছেলের সম্পর্কে খোঁজ নিতেও শুরু করে দিলো। তারা জানালো সে যা সিদ্ধান্ত নিবে সেটাই হবে। কিন্তু বিয়ের মতো সেনসিটিভ ইস্যু যেনো সে ভালোভাবে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত ন্যায়। এবং সবাইকে এ-ও বলে দিলো। কেউ ওর খোঁজ জানতে চাইলে যেনো সকলে সেটা অশিকার করে। ওরাও সাই জানালো।

তখন সন্ধ্যা হানিয়া ঘুমিয়ে পড়ছিল ঘুম ভাঙার পর শুয়ে ছিল ওর কেনো জানি ক্লান্ত লাগছে। কিছুতেই কোনো সিদ্ধান্তে যেতে পারছে না। রৌদ্দুর ওর রুমে নক করল হানিয়া বলল “কে আসো”

রৌদ্দুরকে দেখার পরও হানিয়া শুয়ে রইলো। রৌদ্দুর বলল “শুনলাম খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে দিছিস। কেনো? আমার মেয়েও তো তোর চেয়ে বেশি খাই।”

–“ভালো লাগছে না ভাইয়া।”

–“তোকে কেমন লাগছে জানিস?”

হানিয়া জিজ্ঞেসাসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ওর দৃষ্টির অর্থ বুঝতে পেরে বলল “পেত্নীরাও ফেল।”

হানিয়া প্রতিক্রিয়া জানালো না। রৌদ্দুর সময় নিয়ে বলল “দুই দিনে এমন হয়ে গেছিস কেনো? ভালো করে খাচ্ছিস না। না কারোর সাথে কথা বলছিস। কী সমস্যা?”

–“হানিয়া মানে সমস্যার শেষ নাই। সেখানে সমস্যা কথাটার ব্যাখ্যা হয় না।”

–“এতো ভেঙে কেনো পড়ছিস। ছেলেটার সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ নিলাম। দেখশুনতে কিন্তু ভালোই, মেয়ে ঘটিত কোনো ব্যপার নেই। মদ-সিগারেট খাই না শুনে নি এটার সত্যতা কতটা বলতে পারছি না। তুই কিছু ভাবলি?”

–“নাহ! হায়াত হামজার কোনো খবর জানো? ওরা কী ভালো ভাবে পড়াশোনা করছে? এক্সামের আর বেশিদিন বাকি নেই। কি যে করবে ওরা!”

–“ওরা ভালোই আছে পড়ছে ইমনের কাছে শুনলাম। ভাইবোনকে নিয়ে এতো ভাবিস নিজেকে নিয়েও ভাব। গুছিয়ে নে নিজেকে। সিদ্ধান্ত নে কী করবি। তোর ইউনিভার্সিটি খুলবে তখন তো দেশ ছেড়ে যাবি। আমরা তো সেখানে থাকব না। ছেলেটার সাথে রাস্তাঘাটে দেখা হবে তখনও কী পালিয়ে পালিয়ে বেড়াবি?”

হানিয়া কিছু বলল না চুপ করে রইল। রৌদ্দুর ও উত্তরের আশা করলো না উঠে চলে গেলো। হানিয়া ভাবছে ‘সবাই বলছে মেয়ে ঘটিত ব্যাপার নেই। তাহলে সেদিনের ঘটনাটা? একটা মেয়ের কোমড় টেনে চু*মু খেতে যাওয়া। কোনো ভদ্র ছেলের মধ্যে পড়ে?’ হানিয়া কিছু ভাবতে পারছে না মাথা ব্যথা করছে। অনেক ভেবে ফোনটা অন করলো। সকলের এতো কল, ম্যাসেজ, নোটিফিকেশন ইগনোর করে। সুভানা ম্যাসেজের এন্সার না দিয়ে বলল “তোর বড়ভাইয়ের নম্বর দে।”

সুভানা সাথে সাথে সিন করলো। ও জাকির সাথে কথা বলছিল ওর ম্যাসেজ দেখে আর দেরি না করে সিন করে দেখলো। মনে মনে ভীত হলো। দেবে কী দেবে না ভেবে পেলো না। লিখল “কেমন আছিস?”

–“তুই কী নম্বরটা দিতে চাইছিস না?”

–“না না দিচ্ছি দাঁড়া” বলে নম্বরটা দিলো।

হানিয়া নম্বরটা ফোনে তুলে ডায়াল করতে গিয়েও কেটে দিল। বুকের মধ্যে দুমদুম শব্দ হচ্ছে। এমন কেনো হচ্ছে। ও নম্বরটা সেভ করলো ইংরেজিতে সেজাদের নামের প্রথম লেটার ‘S’ দিয়ে। ও সময় নিয়ে ফোন দিলো। দু’বার বাজার পর ধরলো।

ও কাজ করছিল। কয়েকটা ফাইল দেখছিল আর কফি খাচ্ছিল আনোন নম্বর দেখে দুবার না ধরলেও তৃতীয়বার ধরলো। “হ্যালো!”

হানিয়া দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কোনো ভনিতা না করেই বলল “আপনার কী দেখা করার জন্য সময় হবে?”

সেজাদ হানিয়ার কণ্ঠ শুনে দাঁড়িয়ে গেলো। পুরো দু’দিন পর খোঁজ পেলো। কণ্ঠ শুনতে পেলো। তা-ও মলিন কণ্ঠ ও বলল “কোথায়? কখন আসতে হবে?”

–“আপনি কখন ফ্রি?”

–“এনিটাইম।”

–“লোকেশন, টাইম ম্যাসেজে পাঠিয়ে দিবো”

চলবে ইনশাআল্লাহ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here