#চন্দ্রপ্রভায়_তুষার_বর্ষণে।।৪৬ পর্ব।। এলার্ট🔞
#তাসনিম_তামান্না
(প্রাপ্ত বয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত)
বড়রা বাড়িতে আগে ফিরে বউ ঘরে তোলার রিচুয়ালের সব গুছিয়ে রাখলো। বউ নিয়ে আসতে একে একে সব পালন করলো। হানিয়া সবাইকে কেমন নার্ভাস ফিল হচ্ছে। সোনিয়া আর সুভানা ওকে সেজাদের রুমে নিয়ে গেলো। রুমটা দেখে ওর বুকটা ধক করে উঠলো। সারারুম ফুল দিয়ে সাজানো সায়েম আগে এসে এই মহান কাজটা নিজ দায়িত্বে করেছে। হানিয়ার আরো নার্ভাস হয়ে গেলো ওরা ওকে বসিয়ে দিয়ে সোনিয়া চলে গেলো। সুভানা ওর সাথে আজেবাজে কথা বলে ইয়ার্কি মারতেছে। হানিয়া ভীত হয়ে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। সুভানাও চলে গেলো সেজাদকে বাইরে দাঁড় করিয়ে সুভানা আর সায়েম রুম সাজানোর টাকা নিলো। হানিয়া ফুলের সজ্জিত বেডের মাঝখানে বসে রইলো। নার্ভাসে শীতের সময়ও হাতের তালু ঘামছে। সেজাদ সব ঝামেলা মিটিয়ে রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। হানিয়া ধক্ করে উঠলো। সেজাদ নিজেও রুমের এমন অবস্থা দেখে অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। হানিয়া মুখে সালাম দিলো। সেজাদ বলল “আপনাকে টাইয়ার্ড দেখাছে। ফ্রেশ হয়ে আসুন।”
হানিয়া উঠে তার লাগেজ খুলে দেখলো সব থ্রি-পিস আর শাড়ি সালেহা আর দোলা মিলে গুছিয়ে দিয়েছে। হানিয়া অনেক ভেবে লাল জর্জেট শাড়ি ও সাথে যাবতীয় জিনিসপত্র নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ফিরে এসে দেখলো সেজাদ রুমে চেঞ্জ করে নিয়েছে। ও খাটে উঠে শুতেই সেজাদ বলল “আপনি কী ঘুমাবেন এখন?”
হানিয়া বিরক্ত হলো এ কোন মানুষের পাল্লায় পড়লো। বলল “কেনো?”
–“নাথিং”
–“তাহলে ঢং করে জিজ্ঞেসা করার মানে কী?”
সেজাদ মাথা চুলকে বলল “বাইরে অনেক সুন্দর চাঁদ।”
–“তো?”
–“আমাদের ফাস্ট নাইটে এভাবে সারারাত চাঁদের আলোয় বসে গল্প করবো।”
–“সারারাত বসতে পারব না। কিন্তু কিছু সময় বসতে পারবো চলবে?”
সেজাদ হেসে বলল “ইয়াহ!”
হানিয়ার খোলা চুল, লাল টুকটুকে শাড়ি পড়া মুখে কোনো প্রসাধনী নেই। স্নিগ্ধ ফুলের ন্যায় বসে আছে পাশে। সেজাদ বলল “আপনার শীত লাগছে না?”
–“না, ঠিক আছি।”
সেজাদ মানলো না উঠে গিয়ে নিজের একটা শাল এলে ওর গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলল “আপনি এতো অলস কেনো? আপনার ঠান্ডায় সমস্যা হয় জানেন না?”
–“আর আপনি খুব বোকা।”
সেজাদ অবাক হয়ে গিয়ে বলল “আমি আবার কী করলাম?”
–“বউকে কেউ আপনি বলে?”
–“আপনি চান আমি আপনাকে তুমি বলে ডাকি? আপনি খুশি হবেন?”
হানিয়া অন্য দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইল। সেজাদ ক্ষীণ হেসে বলল “আচ্ছা বুঝলাম আপনাকে তুমি করে বললে আপনি খুশি হবেন না।”
হানিয়া তীক্ষ্ম চোখে তাকালো ওর দিকে বলল “আমার সাথে মজা করছেন?”
–“ওকে অন কন্ডিশন আপনাকেও আমাকে তুমি করে বলতে হবে।”
–“চেষ্টা করবো।”
–“এখন থেকে শুরু করো হানিয়া।”
‘করো!’ তুমি করে বলছে দেখে হানিয়া ওর দিকে তাকিয়ে বলল “সময় লাগবে।”
–“স্টার্ড তো করো!”
–“ওকে অনেকক্ষণ বসেছি এবার চলো ঘুমাই আমার খুব টায়ার্ড লাগছে।”
ওরা দু’জন বেডের দুপাশে শুয়ে পড়লো। সেজাদ বলল “তোমাকে একটা কথা বলা বাকি জীবনের শুরুতে বলা উচিত।”
–“কী?”
–“তোমাকে চাঁদের আলোয় চন্দ্রকণ্যা লাগত।”
–“লাগতো? এখন লাগে না? খারাপ দেখতে হয়ে গেছি?”
–“উহুম। এখন আমার চন্দ্ররাণী লাগে।”
–“আর আপনি চন্দ্ররাজা?”
–“আপনি না তুমি।”
–“ওহ হ্যাঁ আর তুমি চন্দ্ররাজা?”
–“হুম।”
সেজাদ চোখ বন্ধ করলো। গালে নরম স্পর্শ পেলো। ফিসফিস করে শুধালো। “প্রথম রাতের আমার পক্ষ থেকে তোমার গিফট।”
–“চন্দ্ররাণী আমাকে বেসামাল করো না। তোমারই লস।”
–“এমন লস সব মেয়েরই স্বামীর কাছে হয়ে থাকে। চন্দ্ররাণীর নাহয় চন্দ্ররাজার কাছে হলো।”
সেজাদ চোখ খুলে পাশে হানিয়ার দিকে তাকিয়ে ওর কাছাকাছি চলে গেলো। অধরের ভাঁজে অধর গুঁজল।
চন্দ্ররাজা ও চন্দ্ররাণীর ভালোবাসার সাগরে ডুব দিলো।
——————
মাঝরাত তখন দোলা খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে চিৎকার দিয়ে উঠে বসলো। রৌদ্দুর ওর চিৎকারকে ধরফরিয়ে উঠে বসে বলল “কী হয়েছে?”
রৌদ্দুর লাইট জ্বালিয়ে দিলো। দোলা ট্রমার মধ্যে থেকে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি ঝড়তে লাগলো। রৌদ্দুর বলল “কী হয়েছে বলবে তো! বাজে স্বপ্ন দেখছ?”
–“হুম খুব বাজে।”
দোলার চিৎকারে মিছরি নড়েচড়ে উঠে কান্না শুরু করে দিয়েছে। রৌদ্দুর মিছরিকে মাঝখান থেকে উঠিয়ে ফিডারে করে খাবার দিলো ওর কান্না থামতেই বেডের পাশে দোলনায় শুইয়ে দিলো। মিছরি আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে পড়লো। রৌদ্দুর দোলার কাছে আসলো। চোখে পানি মুছে দিয়ে বলল “এক বাচ্চার মা হয়ে গেছো। এখনও বাচ্চাদের মতো ভুলভাল স্বপ্ন দেখে কাঁদছ? সো লেইম।”
দোলা ওর দিকে তাকিয়ে বলল “প্রেম করার সময় তো বাবু ছাড়া ডাকতে না। আমি বাবু ছাড়া কী?”
–“হ্যাঁ তুমি বাচ্চা এখন হয়েছ”
দোলা ফিক করে হেসে দিলো। রৌদ্দুরকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে বলল “তাহলে বাচ্চাকে বিয়ে করেছ কেনো? বাল্যবিবাহর কেস ঠুকে দিবো।”
রৌদ্দুর দোলাকে বুকে চেপে ধরে বলল “দোলা তোমাকে আর মিছরিকে বুকে নিলে এতো শান্তি কেনো হয়?”
–“তোমার বুকে মাথা রাখলে আমারও শান্তি লাগে।”
–“দোলা!”
–“হুম”.
–“আমার মিছরিকে নিয়ে খুব টেনশন হয়। বড় হলে ও কেমন হবে? আদেও ওকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারব কিনা জানি না।”
–“আমি চাই ও হানিয়ার মতো হোক। ওর মতো দায়িত্ববান, কেয়ারিং, সব দিক দিয়ে পারফেক্ট”
–“তাই যেনো হয়।”
দোলা চুপ করে থেকে বলল
–“আমাকে একটু ভালোবাসো না।”
রৌদ্দুর ওকে সরিয়ে দিয়ে বলল “এখনও সুস্থ হও নি। সরো ঘুমাবো।”
দোলা সরলো না ওর গলা জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী গলায় বলল “চলো সেকেন্ড বেবির প্লান করি।”
রৌদ্দুর ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল “তুমি এখনো ফিট নও। সময় হোক সব হবে।”
দোলা বলল “আচ্ছা তাহলে একটু আদর করো।”
রৌদ্দুর ওর কপালে চুমু খেয়ে বলল
–“এই আহ্লাদীটাকে কবে এতো ভালোবেসে ফেললাম নিজেও জানি না। তুমি আরো গুলুমুলু হও তো তোমাকে গুলুমুলু দেখতেই বেশি ভালো লাগে আদর আদর লাগে।”
–“তুমি বেশি বেশি ভালোবাসলে। আদর করলে আমি মটু হয়ে যাব।”
–“আমার ভালোবাসায় কী মোটা হওয়ার মেডিসিন আছে?”
–“হুম। নাহলে দেখলে না তুমি ভালোবাসো বলে কতো মোটা হয়ে গেছি। আরো ভালোবাসলে আরো মোটা হয়ে যাবো।”
–“আমার গাধী পাগলিটা।”
দোলা রৌদ্দুরের বুকে নাক ঘষলো। কাঁধের কাছে জোরে কামড় দিলো। রৌদ্দুর বলল “এতো রাক্ষসী কবে হলে?”
–“তোমার কাছ থেকেই তো শিখেছি।”
–“তাই না? দেখি এবার কীভাবে সহ্য করতে পারো।”
দু’জনে মেতে উঠলো ভালোবাসা-বাসি খেলায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ।
বিঃদ্রঃ যারা ওদের রোমান্টিক পর্ব চেয়েছিলেন। ছোটরা দূরে থাকবেন।