#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৮
— কি হলো দাঁড়িয়ে আছো কেনো? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবার কোন ভাবনার অ’ত’লে ডু*ব দিলে?
আদ্রিশের কথায় চ’ম’কে তাকালো আয়ানা। ক্লান্ত থাকায় ভীষণ ঘুম পাচ্ছে তার। কিন্তু ঘুমাতে এসে ভীষণ লজ্জার মধ্যে পড়েছে সে। আদ্রিশের সাথে এক বেডে ঘুমাতে হবে ভাবলেই তার গায়ে কাঁ*টা দিচ্ছে। আগের দিন তো ক্লান্ত থাকায় আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। তাই কোনো রকম লজ্জার মধ্যে পড়ে নি। তার উপর সকালের ঘটনা মনে পড়ায় আরও বেশি লজ্জা লাগছে তার।
আদ্রিশের এসবে কোনো ধ্যান নেই। সে মনোযোগ সহকারে ফোনে কিছু একটা করছিলো। এর মধ্যে আয়ানার দিকে চোখ পড়ায় দেখলো সে মূ’র্তি’র মতো দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবছে। আদ্রিশ বুঝে না এই মেয়ে এতো কি ভাবে। তাই সে উপরোক্ত কথাগুলো বললো।
আদ্রিশের কথায় নড়েচড়ে দাঁড়ালো আয়ানা। বললো,
— ওই,, ওই হয়েছে কি…..
আয়ানা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই চুপ হয়ে গেলো। আদ্রিশ গেস করলো আয়ানা কেনো এমন করছে। সে শান্ত চোখে আয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমার সাথে বেড শেয়ার করতে অ’স্ব’স্তি হচ্ছে তাই তো?
আয়ানা চো’রা চোখে আদ্রিশের দিকে চাইলো। আদ্রিশ ফের বলতে লাগলো,
— কিন্তু এছাড়া তো কোনো উপায় নেই। আমরা এখন স্বামী স্ত্রী। তাই বেড শেয়ার করাকে স্বাভাবিক একটা ব্যাপার হিসেবে নাও। আর বিশ্বাস রাখতে পারো। আমি তোমার কোনোরকম সুযোগ নিবো না।
আদ্রিশের কথায় কিছু টা স্বস্তি পেলো আয়ানা। যদিও তার এখনো লজ্জা লাগছে। সে চুপচাপ বেডের এক কোণে গু’টি’শু’টি মে*রে শুয়ে পড়লো আর অল্প সময়ের মধ্যে গভীর নিদ্রায় ত*লি’য়ে গেলো। আদ্রিশ ঘুমন্ত আয়ানার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। অতঃপর লাইট নি’ভি’য়ে নিজেও এক কোনে ঘুমিয়ে পড়লো। তার যে অ’স্ব’স্তি হচ্ছে না তা নয়। তারও ভীষণ অ’স্ব’স্তি হচ্ছে। আগের দিন তো মাঝে একটা বালিশ থাকায় কিছু টা শান্তি মিলেছিলো। কিন্তু আজ তাও নেই। রুমে দুটোই বালিশ মাত্র। আদ্রিশ চোঁখের উপরে হাত রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
———-
সকালে ঘুম ভা*ঙ’তে’ই আয়ানার ঘো’লা দৃষ্টি গিয়ে পড়লো তার হাতের উপরে। চোখ বড় বড় হয়ে গেলো আয়ানার। চোখের ঘুম ঘুম ভাব এক সেকেন্ডে উধাও হয়ে গেলো। হাত আদ্রিশের বুঁ’কে’র উপর দেখে ঢোক গিললো আয়ানা। আদ্রিশের টি-শার্ট এর একটা অংশ শ’ক্ত করে তার হাতের মুঠোয় ব’ন্দি। আয়ানা দ্রুত হাত সরিয়ে উঠে বসলো। মুখে হাত চে’পে ভাবতে লাগলো, ‘ভাগ্যিস উনার ঘুম ভা*ঙা’র আগেই উঠে গেছি। নাহলে কেমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হতো।’ ঘুমন্ত আদ্রিশের মুখের দিকে একবার গভীর দৃষ্টি ফেললো আয়ানা। আগের দিনের মতোই মুখটা কে সি’রি’য়া’স বানিয়ে রেখেছে। আয়ানার লজ্জা লাগলো আদ্রিশের টি-শার্ট এর দিকে নজর যেতেই। কারণ সে যেই অংশ মুঠোয় পুরে রেখেছিলো, সেই অংশের কাপড় কুঁ’চ’কে গেছে। এটা দেখে আর এক সেকেন্ড স্থির থাকতে পারলো না আয়ানা। দ্রুত বিছানা থেকে নেমে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
আয়ানা চলে যেতেই চোখ খুললো আদ্রিশ। তার ঘুম আরও অনেক আগেই ভে*ঙে’ছে। বলতে গেলে তেমন ঘুমই হয় নি। নতুন জায়গায় সহজে মানিয়ে নিতে পারে না সে। সময় লাগে। সারা রাত একপ্রকার আয়ানার ঘুমই দেখেছে সে। মাঝখানে একবার চোখ লেগে এসেছিলো। কিন্তু নিজের দেহে কারোর হাতের ছোঁয়া অনুভব হতেই ঘুম ভে*ঙে যায় আদ্রিশের। তার ঘুম যথেষ্ট হালকা। চোখ খুলতেই দেখে আয়ানা কিছু একটা বিড়বিড় করছে আর হাত দিয়ে কিছু একটা খুঁজে চলেছে। তারপর তার বুঁকের উপরের টি-শার্ট এর অংশ টা শ’ক্ত করে চে’পে ধরে পুনরায় গভীর ঘুমে ত*লি’য়ে যায় আয়ানা। এমন শ’ক্ত করে ধরেছে যেনো কোনো কাংক্ষিত বস্তু পেয়ে গেছে সে। ছেড়ে দিলেই হা’রি’য়ে যাবে। আয়ানার চেহারায় একটা আলাদাই প্রশান্তির ছা’প দেখেছে আদ্রিশ। তাই চেয়েও হাত টা সরাতে পারে নি। আয়ানার ঘুম ভে*ঙে যেতে পারে তাই। আর এখনো আয়ানা জা’গ’তে’ই সে চোখ বন্ধ করে নিয়েছিলো। নাহলে হয়তো ভীষণ লজ্জায় পড়তো মেয়ে টা।
আদ্রিশ নিজের চুলগুলো কে হালকা নে’ড়ে’ছে’রে ঠিক করতে করতে ভাবলো, ‘মেয়ে টা আমার কাছে আসলে নিজেকে বড্ড অচেনা লাগে। যেই আমি কখনো কোনো মেয়ে আমার গায়ে হাত দিলে তা স’হ্য করতে পারি না, এমনকি নিজের ফ্রেন্ড কেও গায়ে হাত রাখতে দিতাম না সেই আমি কিনা একটা মেয়ে কে এতো ঘন্টা আমার গায়ে হাত রেখে ঘুমাতে দিয়েছি। কিন্তু কেনো? আজ পর্যন্ত যতো মেয়েই আমার গায়ে হাত রেখেছে, তখন মনে হয়েছে কেউ আমার শরীরে আ*গু’ন জ্বা*লি’য়ে দিয়েছে। অথচ এই মেয়ে গায়ে হাত রাখাতে তেমন কোনো অনুভূতি হলো না। বরং মন টাতে আলাদাই প্রশান্তি ছে’য়ে গিয়েছিলো। এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে?
———
আয়ানা ফ্রেস হয়ে বাইরে এসে দেখলো আদ্রিশ বেডে নেই। আয়ানার মনে এখনো ভ’য় কাজ করছে এই ভেবে আদ্রিশ আবার বুঝে গেলো না তো! ঘুমের মধ্যে এমন একটা আ*কা’ম করেছে ভেবে নিজেকেই নিজে কয়েকটা থা*প্প’ড় লাগাতে ইচ্ছে করছে আয়ানার। সে বেলকনিতে উঁকি দিয়ে দেখলো আদ্রিশ সেখানেই আছে। কারোর সাথে ফোনে কথা বলছে। আয়ানা চুপিসারে রুম থেকে বেরিয়ে আসলো। আদ্রিশের দিকে তাকালেও এখন তার লজ্জা লাগছে।
আদ্রিশ রুমে এসে দরজা খোলা দেখে বুঝলো আয়ানা বাইরে চলে গেছে। সে নিজেও চলে গেলো ফ্রেস হতে। কিন্তু বাইরে এসে বি’পা’কে পড়লো আদ্রিশ। রুমে খুঁজে কোনো towel পেলো না। রাতে ঘুম না হওয়ায় মাথা ঝি’ম’ঝি’ম করছিলো তার। তাই একটু মাথাও ভিজিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এখন দেখছে towel ই নেই। আদ্রিশ ভাবলো আয়ানা কে ডাকবে বা কাউকে দেখলে বলবে ওকে রুমে পাঠিয়ে দিতে। দরজার কাছে আসতে আদ্রিশের মাথায় আসলো সে তো তার বউয়ের নামই ঠিকমতো জানে না। দুই তিনবার শুনেছে অন্যদের মুখে কিন্তু অতো টা খেয়াল করে নি। এখন উ’ল্টা’পা’ল্টা নাম ধরে ডাকলে তো ভীষণ লজ্জায় পড়তে হবে। এখনো সে বউয়ের নামটাই ঠিকমতো জানে না। আদ্রিশ নিজের মাথায় জো’র দিয়ে ভাবতে লাগলো,
‘কি যেনো বলে ডাকে সবাই? আমেনা মনে হয়,, না না, আমেনা না, আরে কি যেনো ছিলো? আয়না? হ্যা হ্যা এমনই কিছু ছিলো। আয়না মনে হয় কিন্তু আমি তো sure না। উফঃ!
আদ্রিশের ভাবনার মাঝে চা’পা’নো দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করলো আয়ানা। হাতে তার towel। মূলত এটা রাখতেই রুমে এসেছে সে। আদ্রিশের কথা ভাবার তা’লে towel সাথে নিয়েই রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো। আয়ানা আদ্রিশের ভেজা চুল দেখে বুঝলো, নিশ্চই আদ্রিশ towel খুঁজেছে। সে আদ্রিশের হাতে towel টা দিয়ে নিম্ন স্বরে বললো,
— সরি,, আমি ভুল করে মুখ মু’ছ’তে মু’ছ’তে সাথেই নিয়ে চলে গিয়েছিলাম।
আয়ানা চলেই যাচ্ছিলো কিন্তু আদ্রিশের দাঁড়াতে বলায় থেমে গেলো। আদ্রিশ আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো,
— তোমার নাম কি?
আদ্রিশের প্রশ্ন শুনে মুখ টা হা হয়ে গেলো আয়ানার। সবাই তার নাম জানে, অথচ তার বর ই তার নাম জানে না। আয়ানার এক্সপ্রেশন দেখে আদ্রিশ একটু মাথা চু’ল’কা’লো। তারপর আয়ানা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— কি হলো হা করে আছো কেনো? মুখের মধ্যে তে*লা’পো*কা ঢু’কে যাবে তো।
আদ্রিশের কথায় আয়ানার হা করা মুখ আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেলো। কিন্তু চোখে মুখে এখনো অবাক ভাব বি’রা’জ করছে। সে অবাকতার সাথেই বললো,
— আয়ানা রহমান।
আদ্রিশ মনে মনে কয়েকবার আয়ানার নাম আ’ও’ড়া’লো। তারপর বললো,
— তুমি কি আমার নাম জানো?
আয়ানা হ্যা বোধক মাথা নাড়ালো। আদ্রিশ বললো,
— জানলে ভালো তবুও আমিই একবার বলে দেই। আমার নাম আদ্রিশ আহসান। এবার তুমি যে কাজে যাচ্ছিলে যেতে পারো।
দাঁড়ালো না আয়ানা। রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। কি লজ্জাজনক বিষয় তার বর তার নাম জানতো না। যদিও সে নিজেও জানতো না যদি না আনিকা বলতো।
———–
রান্না ঘরে এসে আয়ানা দেখলো তার মা অনেক ধরণের খাবার রান্না করেছে। এখন সেসব সাজাচ্ছে। এতসব কাজ মা একা করছে দেখে ভীষণ খা’রা’প লাগলো আয়ানার। আগে তো তাকে দিয়ে সব করানো হতো। এখন হয়তো সব কাজ তার মা কে দিয়ে করানো হবে ভেবে চোখে পানি চলে আসলো আয়ানার। সাহেরা বানু আর তার মেয়ে তো একটা কাজেও হাত লাগায় না বরং এক গ্লাস পানি লাগলেও তারা আয়ানা কে ডাকতো পানি দেয়ার জন্য। আয়ানা মনে মনে ঠিক করলো, সে ভালো কোনো জায়গায় চান্স পেয়ে গেলে তারপর টিউশন দেয়া শুরু করবে অথবা কোনো চাকরি করবে। সেই টাকা দিয়ে একটা লোক রাখবে যাতে তার মা কে কাজে সাহায্য করে।
আয়ানার ভালো কোথাও চান্স পাওয়ার ইচ্ছে টা আরও দৃ’ঢ় হলো। তাকে ভালো কোথাও চান্স পেতেই হবে এমন একটা চিন্তা ভাবনা তার ম’স্তি’ষ্কে ভালোভাবে গে*থে নিলো সে। তারপর মায়ের খাবার সাজানোতে সাহায্য করতে লাগলো। যদিও অনামিকা বেগম বা’র’ণ করেছিলেন কিন্তু কে শুনে কার কথা।
চলবে?