#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_০৯
— কিরে জামাই কে তো ভালোই ব’শ করছিস। তোর আসলেই লজ্জা সরম নেই। আমাদের টাকায় খেয়ে, আমাদের টাকায় পড়ে এখন আমাদেরই অ’প’মা’ন করাস! তোর সা’হ’স কি করে হলো নিজের বর কে দিয়ে আমার মেয়ে কে অ’প’মা’ন করানোর? চা’ক’রা’নী থেকে বড় বাড়ির বউ হয়ে উড়তে শিখে গেছিস তাই না? চা’ক’রা’নী থেকে মহারানী হওয়ার চেষ্টা করিস না। কারণ তোর যোগ্যতা ওই কাজের লোক পর্যন্তই।
দুপুরের খাওয়া শেষে সবাই টেবিল থেকে উঠে পড়েছে। আর কিছুক্ষন পড়েই হয়তো আয়ানারা চলে যাবে। তাই আয়ানা তার মা কে বলেছে যেনো জামাইদের সাথে বসে কথা বলে। এখানের থা’লা বা’স’ন সে উঠিয়ে রাখবে। অনামিকা বেগম যেতে না চাইলেও তাকে জো’র করে পাঠিয়ে দিয়েছে আয়ানা। তারপর নিজেই সব থা’লা বা’স’ন নিয়ে ধুয়ে রাখছিলো। এর মাঝে কোনো একটা কাজে রান্নাঘরে আসেন সাহেরা বানু। আয়ানা কে একা দেখে চোখ জ্ব*লজ্ব*ল করে উঠে তার। এই মেয়ে কে অ’প’মা’ন না করলে তিনি শান্তি পান না। তার উপর রাতের ঘটনা সব টাই সারা তাকে বলেছে। তখন থেকে রা’গে মাথায় আ*গু’ন জ্ব*ল’ছে তার। তাই সুযোগ পেয়ে আয়ানা কে কথা না শুনালেই নয়! সাহেরা বানু একবার আশেপাশে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলেন। কাউকে না দেখে নিশ্চিন্ত মনে রান্নাঘরে প্রবেশ করে উপরোক্ত কথাগুলো ছু*ড়ে দিলেন আয়ানার দিকে। তিনি তো জানেন আয়ানা কে হাজার ভাবে অ’প’মা’ন করলেও সে চুপচাপ শুনে নিবে। তাই তিনি এই সুযোগ কোনো ভাবেই হাতছাড়া করতে চান না।
সাহেরা বানুর কথায় খা’রা’প লাগলো আয়ানার। তখনই মনে পড়লো আদ্রিশের বলা কথাগুলো। ‘মানুষ কে যতো বেশি সুযোগ দেয়া হবে, তারা ততো বেশি কথা শুনাবে।’ আয়ানা নিজেকে শ’ক্ত করে সাহেরা বানুর দিকে ফিরে বললো,
— ফুপি আমার জামাই কে আমি ব’শ করবো না তো কে করবে বলেন তো? আর আমার লজ্জা সরম না থাকুক। আপনার তো আছে তাতেই চলবে। আর টাকা নিয়ে যে খো*টা আপনি দেন তা কি যুক্তিযুক্ত? আপনাদের টাকায় খেয়েছি, পড়েছি তা ঠিক কিন্তু ফ্রি তে তো আপনারা খাওয়ান নি, পড়ান নি। আমাকে খাওয়ানো, পড়ানোর পরিবর্তে অ*মানুষের মতো খাঁ*টি’য়ে’ছে’ন। মাস শেষে বিশ হাজার টাকা ফে’ল’লেও কেউ আপনাদের এতো কাজ করে দিতো না। সাথে অ’প’মা’ন, উঠতে বসতে কথা শুনানো তো ফ্রি। আমার চুপ করে থাকা কে আমার দু’র্ব’ল’তা ভেবে ভুল করবেন না। আমি আপনাদের অনেক সম্মান করি, আপনারা এর যোগ্য হোন বা না হোন। তাই এই সম্মান কে ধরে রাখার চেষ্টা করুন। আর অবশ্যই আমার যোগ্যতা নিয়ে চিন্তা করবেন না। সেটা সময় বলে দিবে কে কিসের যোগ্য।
কথা শেষ করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো আয়ানা। আজ অনেক শান্তি লাগছে তার সাহেরা বানুর মুখের উপর কথাগুলো বলতে পেরে। সাহেরা বানুর মুখটাও দেখার মতো হয়েছিল। এসব ভাবতে ভাবতে নিজের রুমে চলে গেলো আয়ানা।
সাহেরা বানু এখনো মুখ হা করে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছেন। তার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আয়ানা তাকে এতগুলো কথা বলেছে। যেই মেয়ে কে হাজার টা অ’প’মা’ন, লা*ত্থি গু*তা দিলেও সে একটা টু শব্দ করতো না, সেই মেয়ে আজ তার মুখের উপর এতো গুলো কথা বলেছে। ম’স্তি’ষ্ক শূন্য হয়ে যাচ্ছে তার। ইচ্ছা করছে আয়ানার চুলের মু*ঠি ধরে ক*ষি’য়ে কয়েকটা থা*প্প’ড় লাগাতে। কিন্তু তা যে আর সম্ভব না ভেবে রা’গে দুঃ’খে নিজের মাথার চুল ছি*ড়’তে ইচ্ছা করছে সাহেরা বানুর। এক রো’ত্তি’র মেয়ে তাকে অ’প’মা’ন করে গেলো এটা কিছুতেই মানতে পারছেন না তিনি।
———
আদ্রিশ রুমে এসে দেখলো আয়ানা কিছু কাগজ পত্র গুছিয়ে ফাইলে রাখছে। চেহারায় উৎফুল্ল ভাব বিদ্যমান। আদ্রিশ আয়ানার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য হালকা কা’শি দিলো। আয়ানা কা’শি’র শব্দে আদ্রিশের দিকে তাকালো আদ্রিশ বললো,
— প্রয়োজনীয় সব কাগজ পত্র নিয়েছো?
আয়ানা মাথা না’ড়া’লো। কারণ সে অলরেডি সব গুছিয়ে নিয়েছে। আদ্রিশ বললো,
— তাহলে তৈরি হয়ে নাও যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। এক ঘন্টার মধ্যে আমরা বের হবো।
যাওয়ার সময় হয়ে গেছে ভেবে মন খা’রা’প হলো আয়ানার। তার কিছুতেই নিজের মা কে এই ন*র’কে একা ফেলে যেতে ইচ্ছা করছে না। কিন্তু কিছু করারও যে নেই।
আদ্রিশ আয়ানার মন খা’রা’প দেখে বললো,
— মন খা’রা’প করো না। আমি সময় পেলে তোমাকে নিয়ে আসবো তোমার বাবা মায়ের সাথে দেখা করাতে। আর তুমিও চাইলে যেকোনো সময় এই বাড়িতে এসে তাদের সাথে দেখা করে যেতে পারো। আর এই বিষয়ে আমার পরিবার কখনোই তোমাকে বাঁ’ধা দেবে না। নিশ্চিন্তে থাকতে পারো।
আদ্রিশের কথায় একরা’শ ভালো লাগা ছেয়ে গেলো আয়ানার মনে। এক চিলতে হাসি ফু’টে উঠলো ঠোঁটের কোণে। আয়ানার ঠোঁটে হাসি দেখে আদ্রিশ ও সামান্য হাসলো। তারপর আয়ানা কে দ্রুত রেডি হতে বলে বাইরে চলে গেলো।
———-
মা কে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কা*ন্না করছে আয়ানা। মন কে বিভিন্ন রকম বুঝ দেয়ার পরও বিদায় বেলায় নিজেকে আ*টকাতে পারে নি সে। মা কে জড়িয়ে ধরে কা*ন্না’য় ভে*ঙে পড়েছে।। অনামিকা বেগম আর মীরার চোখেও পানি ট’ল’ম’ল করছে। অনামিকা বেগম আরেক হাত দিয়ে মীরা কেও কাছে টে*নে নিলেন। দুই মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
— তোরা এভাবে কা*ন্না করছিস কেনো হ্যা? আর কখনো আসবি না নাকি?
আয়ানা, মীরা দ্রুত মাথা না’ড়ি’য়ে বললো,
— না, না আসবো তো।
অনামিকা বেগম বললেন,
— তাহলে এভাবে কাঁ*দ’ছি’স কেনো? দেখি চোখ মো*ছ দুইটা। ওখানে ভালো ভাবে থাকবি। সবার কথা শুনে চলবি। সকলের সাথে ভালো ব্যবহার করবি বুঝেছিস?
আয়ানা আর মীরা মাথা ঝা’কা’লো। অনামিকা বেগম এবার কিছু টা নিম্ন স্বরে বললো,
— যখন ইচ্ছা হবে এখানে চলে আসবি। আর মা কে নিয়ে কোনোরকমের চিন্তা করবি না কেমন! আমার মেয়েরা সুখে থাকলে আমিও সুখে থাকবো।
অনামিকা বেগম দুই মেয়ের হাত ধরে জামাইদের কাছে গেলেন। অ’শ্রু’শি’ক্ত চোখে আদ্রিশ আর আহিল কে উদ্দেশ্য করে বললেন,
— আমার মেয়েদের দেখে রেখো বাবা। এখন তোমরাই ওদের সব।
তিনি মীরার হাত আহিলের হাতের মাঝে দিয়ে বললেন,
— আমার মেয়ে কে সুখে রেখো। ভরসা করে ওর হাত তোমার হাতে দিলাম। কখনো এ হাত ছেড়ে যেও না বাবা।
আহিল একহাতে মীরার হাত শ’ক্ত করে মু’ঠো করে ধরে অনামিকা বেগম কে বললো,
— চিন্তা করবেন না মা। এই হাত জীবন থাকতে কখনো ছাড়বো না। সবসময় আ’গ’লে রাখবো। বিশ্বাস করতে পারেন।
অনামিকা বেগম আহিলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন। তারপর আয়ানার হাত ধরে আদ্রিশের সামনে গিয়ে বললেন,
— আমার এই মেয়েটা কে একটু সুখ দিও বাবা। মেয়েটা আমার এতোটা বছর ধরে শুধু ক*ষ্ট’ই পেয়েছে। সুখের মুখ দেখে নি। তোমার কাছে একটাই অ’নু’রো’ধ আমার মেয়েটাকে ক*ষ্ট দিও না। একটু সুখ, ভালোবাসা দেয়ার চেষ্টা করো। আমার কেনো যেনো মনে হয় তুমিই পারবে আমার মেয়ে কে সুখে রাখতে, সারা জীবন আ’গ’লে রাখতে। কি রাখবে তো আ’গ’লে?
ফাইয়াজ কি বলবে ভেবে পেলো না। সে নিজেও এখনো আয়ানার বিষয় নিয়ে শিওর না। তবে সে মন থেকে চায় আয়ানা কে মেনে নিতে। আদ্রিশ অনামিকা বেগম কে এক সাইড দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,
— আপনি চিন্তা করবেন না। আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করবো আপনার মেয়ে কে ভালো রাখতে। বাকিটা সৃষ্টিকর্তার উপর।
অনামিকা বেগম আয়ানার হাত, আদ্রিশের হাতে তু’লে দিয়ে মেয়ের কপালে একটা চু’মু খেলেন।
এসব কিছু দেখে মনে মনে ফু*স’ছে’ন সাহেরা বানু। তার কাছে এসব নে*কা’মো ছাড়া আর কিছুই না। তিনি মুখ বাঁ’কা করে ভেতরে চলে গেলেন। এসব দেখে তার গা জ্বা*লা করছে।
চলবে?