১.
“এই মেয়ে এদিকে আসো”ভার্সিটিতে আজ প্রথম পা রাখতেই কিছু সিনিয়র ভাইয়া আর আপু অর্ষাকে দূর থেকে ডাকলো। ওদের ডাকে অর্ষা বেশ ঘাবরে গেছে। সে গ্রামে কিছুটা হলেও শুনেছে ভার্সিটির রেগিং এর কথা। ধীর পায়ে সে তাদের কাছে গিয়ে বললো,”জ্বি ভাইয়া কিছু বলবেন? অর্ষা এই কথা বলার সাথে সাথে পাশ থেকে একটা মেয়ে বললো, এই মেয়ে ভার্সিটির সিনিয়রদের সাথে কিভাবে রেসপেক্টফুলি কথা বলতে হয় তার কোনো ম্যানার্স নেই তোমার? অর্ষা বুঝতে পারছেনা সে এমন কি বলেছে যার ফলে তার ম্যানার্স নিয়ে কথা উঠছে। অর্ষা কিছু বলতে যাবে তার আগে ৩ টা ছেলের মধ্যে একটা ছেলে ওই মেয়েটিকে বললো, ” এই ছারিন দেখ প্রান্তিক এসেছে”। অর্ষা বুঝলো যে মেয়েটার নাম ছারিন। ছারিন বসা থেকে উঠে দৌড়ে যে দিক দিয়ে গেলো সেইদিকে অর্ষা চোখ অনুসরণ করতেই দেখলো,,বাইক পাশে হেলমেট খুলছে একটা ছেলে। “কালো জিন্স এর সাথে টিশার্টের উপরে কালো জেকেট। অর্ষা দেখলো একে একে সবাই ওই ছেলেটার কাছে চলে গেলো৷ অর্ষা সুযোগ পেয়ে সাথে সাথে ওই স্থান ত্যাগ করে ভার্সিটির প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে গেলো। আজকেই অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তির লাস্ট ডেইট।
২.
কিরে তোরা সবাই ওইখানে কি করছিলি? প্রান্তিক এর প্রশ্নের উত্তরে ইরফান বললো, ” আরে ভার্সিটিতে একটা নিউ মেয়ে এসেছে। তাই বুঝতেইতো পারছিস একটু মজা নিচ্ছিলাম। প্রান্তিক বাকা হেসে বললো, আই সি। তাই নাকি? তাহলেতো আজ জমে যাবে সব। ছারিন প্রান্তিকের হাত ধরে ন্যাকামো করে বলে,,কি হবে প্রান্তিক বেপ্স? প্রান্তিক ছারিন এর থেকে হাত ছাড়িয়ে বললো, তোকে না বলেছি? আমাকে এইসব নামে না ডাকতে…এইটা বলেই প্রান্তিক মাথার চুলগুলো উল্টো করতে করতে চলে গেলো। আর এইদিক দিয়ে ছারিন বললো, দেখেছিস ইরফান প্রান্তিক আমার দিকে ভালোভাবে তাকাই ওনা। পাশ থেকে অনিক বললো, ওহ প্রান্তিক বুঝলি? ইরফান, অনিক শৈবাল ইত্যাদি নয়। ছারিন অনিকের কথায় নাক বেংচি কেটে বললো, সেইটাই। এই এই তোরা সবাই এইখানে? ওই মেয়েটাতো পালালো.. ছারিন এর কথায় শৈবাল বললো, পালাবে আর কোথায়..ভার্সিটিতে আজ প্রান্তিক ওকে পালাতে দিলেতো সে পালাবে…এইটা বলেই সবগুলো হেসে ফেললো।
৩.
এডমিশন নেওয়ার পর অর্ষা কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নিলো৷ এই এডমিশনের জন্য সে এতো দূর থেকে শহরে এসেছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠাতে অর্ষা ব্যাগের চেইনটা খুলে ফোনটা হাতে নিলো। কানে ফোনটা নিয়ে মুচকি হেসে বললো,”হ্যাঁ খালামনি বলো…
ওপাশ……..
“না না খালামনি আমি ঠিক এসে পড়বো চিন্তা করোনা।
ওপাশ…..
” আচ্ছা খালামনি। এখন তবে রাখি। এইটা বলে অর্ষা কলটা কাটতেই সামনে “ছারিন আর ওই ছেলেগুলোকে দেখে ভীষম খেলো সে। ছারিন রাগী লুক নিয়ে বললো,” এই মেয়ে ওইসময় তুমি পালালে কেনো? অর্ষা ভয়ে তুতলিয়ে বললো, আ আসআ..
“এই মেয়ে কি আআআ করছো? কাম উইথ মি..এইটা বলেই ছারিন হাঁটা দিলো৷ ছারিনের পিছু পিছু অর্ষাও গেলো। ভয়ে অবস্থা পুরো খারাপ অর্ষার। মনে মনে বললো, ” ইশশ প্রথম দিনেই এতো ঝামালা! এরপরে কি হবে আল্লাহ মালুম।
৪.
“এই যে মিস ভীতু রাণী..তোমার নাম কি? পুরুষনালী একটা কন্ঠ শুনেও মাথা নিচু করেই অর্ষা ঘাবরিয়ে বললো, না ম মা..হঠাৎ প্রান্তিক ধমক দিয়ে বললো, ” এই মেয়ে কি মা মা করছো? বলো নাম কি? অর্ষা এইবার একটু মাথা উচু করে প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে বললো,আমার নাম তাসনিম আরা অর্ষা। নিজের নাম বলেই আবার মাথা নিচু করে ফেলে অর্ষা। প্রান্তিক এইবার বললো, “আমাকে প্রপোস করো” প্রান্তিকের কথা শুনে অনিক আর ছারিন বললো,”এই প্রান্তিক এইটা আবার কেমন রেগিং করছিস? অর্ষা এতোক্ষণে ভালোভাবে প্রান্তিকের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,ওহ তাহলে এই ছেলেটায় ওই প্রান্তিক। অর্ষা মুহুর্তেই অবাক হয়ে ঘাবরে বললো, “মা মাব মানে? প্রান্তিক চোখে সানগ্লাসটা পড়ে হাতে বাইকের চাবিটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললো,” প্রপোস” করো। অর্ষা এইবার ছোট বাচ্চাদের মতো কেঁদেই ফেললো। এই প্রথম সে এতো ঝামালা পের হচ্ছে তাও একা। প্রান্তিক অবাক হয়ে বললো, এই মেয়ে তুমি কাঁদছো কেনো? তোমাকেতো খুন নয় প্রপোস করতে বলেছি। অর্ষা কেঁদেই যাচ্ছে। সাড়া ভার্সিটির মানুষ ভীর হয়ে আছে চারিদিক। অর্ষার দিকে এক পলক তাকিয়ে প্রান্তিক এইবার ধমকিয়ে বললো,”এই মেয়ে স্টপ ক্রাই… প্রান্তিকের ধমক শুনে চুপসে যায় অর্ষা। ফর্সা মুখটা লাল টুকটুকে হয়ে গেছে। চোখে পানি টলমল করছে তার। প্রান্তিক এইবার মুখে গাম্ভীর্য এনে বললো,” যতোই তুমি কাঁদোনা কেনো আজ তোমাকে প্রপোস করতেই হবে। অর্ষা প্রান্তিকের কথা শুনে ঘাবরে বললো,দেখুন ভাইয়া প্লিজ আমাকে যেতে দিন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। প্রান্তিক বাকা হেসে বললো,ওহ আচ্ছা তাই? প্রবলেম নেই আমার বাইকে তোমায় দিয়ে আসবো। অর্ষা এইবার আর কোনো উপায় না পেয়ে..বললো, আই লাভ ইউ। এইটা বলতে দেরি অর্ষার গালে ৫ আঙ্গুলের ছাপ পড়তে দেরি হয়নি। অর্ষা অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেই বললো প্রপোস করতে নিজেই আবার থাপ্পড় মারলো! পিছনে ছারিন আর বাকি সবাই মুখ টিপে হাসছে। প্রান্তিক চুলগুলো হাতিয়ে বললো, তোমার সাহস কি করে হয় প্রান্তিক চৌধুরীকে প্রপোস করার? এইবার অর্ষা অনেক অবাক হয়েছে। এতো সুন্দর এক্টিং করতে পারে কেউ? এতো নিখুঁত! অর্ষা আর এক মুহুর্তও এইখানে না দাঁড়িয়ে.. গালে হাত দিয়ে কান্না করতে করতে চলে গেলো ভার্সিটি থেকে।
৫.
দেখো প্রান্তিক আমি থাকতে তুমি অন্য মেয়ের দিকে এইভাবে তাকাতে পারোনা” ছারিন এর কথাকে প্রান্তিক পাত্তা না দিয়ে এক মনে ভার্সিটির চারিদিক তাকাচ্ছে। শৈবাল বললো,আচ্ছা প্রান্তিক তুই এইভাবে ওই মেয়েটার দিকে তাকিয়ে ছিলি কেনো? প্রান্তিক কিছুটা বাঁকা হেসে পকেট থেকে বাইক এর চাবিটা নিয়ে বাইকে উঠে..সবাইকে বাই বলে চলে গেলো।
৬.
বাস্টপে দাঁড়িয়ে আছে অর্ষা। চোখগুলো ফুলে গেছে একদম। পড়াশোনার সুবাদে ঢাকায় এসেছে সে। তার মা তার খালামনির সাথে কথা বলে ডিসাইড করেছে সে..তার খালামনির বাসায় থেকেই পড়াশোনা করবে। অর্ষা আর তার একটা বোন আছে। দুই বোনকে নিজেদের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে অর্ষার মা আর বাবা। অর্ষার বাবাতো মেয়েকে আসতেই দিচ্ছিলোনা। কিন্তু, মেয়ের অনুরোধ ফেলতে পারেননি তিনি। গ্রামে বেশ নাম ডাক আছে তার বাবার। চেয়ারম্যান বলে নয়..বড় মনের একজন মানুষ বলেও সবাই ওনাকে শ্রদ্ধা করেন। বাস আসতেই অর্ষা বাসে উঠে পড়ে।
#এক_তুমিতে_আসক্ত
#সূচনা_পর্ব
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ