#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পর্বঃ০৬
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
অর্ষা আজ ভার্সিটি কেমন কাটালি?
“আর বলিসনা তোকে ছাড়া কি আর ভার্সিটি ভালো লাগে?
” মজা নিচ্ছিস! প্রিয়ন্তিক ভেঙে যাওয়া ফেইস দেখে ফিক করে হেসে ফেলে অর্ষা। অর্ষা প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,”ওহু মুটেও এইটা মজা না। সত্যি বলছি।
“তোর কি কিছু হয়েছে অর্ষা?
” না কই কিছু হয়নিতো।
প্রিয়ন্তি অর্ষার থুতনিতে ধরে নিজের দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললো,”দেখ তুই হাসছিস ঠিক আছে। কিন্তু তোর এই হাসি একদম মন থেকে যে আসছেনা..তা আমি বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছি৷ সত্যি করে বলতো কি হয়েছে? অর্ষা এইবার আনমনেই চোখের পানি ছেড়ে দিলো। তারপর প্রিয়ন্তিকে ভার্সিটির সব ঘটনা খুলে বলে। প্রিয়ন্তি রেগে বললো,”কি ওর এতো বড় সাহস তোকে মেরেছে? ওই ছারিন কেতো আমি….
অর্ষা প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে বললো,থাক বাদ দে প্রিয়।
৪২.
কিরে প্রান্তিক কেমন আছিস? আচমকা পরিচিত কন্ঠ পেয়ে ল্যাপ্টপের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো প্রান্তিক৷ বিষ্ময়ের সাথে মুখে বেরিয়ে এলো..”আভেশ!
প্রান্তিক ল্যাপটপটা বিছানায় রেখে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আভেশকে। আভেশ চুল গুলে হাত দিয়ে ইন্সারসিং করতে করতে বললো,”বাহ চিনতে পেরেছিস তবে! আমিতো ভেবেছিলাম তুই আমাকে চিনবিইনা। প্রান্তিক আভেশের পিঠে হালকা এলটা স্লাইড করে বললো,”আভেশ মজা করার হেবিট টা তোর এখনো যায়নি দেখছিস। তুই সে আগের মতোই আছিস।
” কি করবো বল, কোনো রমণীতো আর আমার জীবনে আসেনি যে দেবদাস থেকে রোমিও করে তুলবে [ ঠোঁট উল্টিয়ে ]
আভেশের কথা শুনে হো হো করে হেসে দিলো প্রান্তিক।
৪৩.
মা অর্ষা প্রান্তিকের রুমে দু’কাপ কফি দিয়ে আসবি মা? আসলে রুপা [ কাজের মেয়ে ] আজ আসছেনাতো তাড়াতাড়ি তাই তাকে দিয়ে পাঠাতে পারছিনা এখন। আর প্রিয়ন্তিতো জ্বরে ঘুমে আছে।…মনিশা চৌধুরীর আকুতি স্বরে কথা বলা দেখে, অর্ষা মুখ ফুলিয়ে বললো,”হুম খালামনি আমিতো আর তোমার মেয়েনা বলো! মেয়ে হলে কি আর কেউ এইভাবে বলে!
“ওমা না না মা আমি ওমনভাবে বলতে…মনিশা চৌধুরীকে আর কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অর্ষা হেসে বললো,” ওফ খালামনি আমিতো এমনি বলছিলাম। আচ্ছা দাও আমি দিয়ে আসি। আচ্ছা খালামনি…দু’কাপ কেনো? প্রান্তিক ভাইয়া কি দু’কাপ কফি খাবে?
মনিশা চৌধুরী অর্ষার কথা শুনে হেসে বলে, আরে না না। আসলে আভেশ এসেছে। প্রান্তিকের ছোট বেলার বন্ধু। অনেকদিন পর আজ আভেশ দেশে ফিরেছে। ছোট সময় মা-বাবা একটা কার এক্সসিডেন্টে মারা যায়..এরপরে আমি আর তোর খালুজান এইখানে নিয়ে আসি আভেশকে। এরপর পড়াশোনার জন্য বাইরে পাঠায়। আভেশ আমাদের আরেকটা ছেলে বলতে পারিস। অর্ষা মুগ্ধ হয়ে শুনছে তার খালামনির কথা। কতোটা ভালো মানুষ ওনারা তা না দেখলে হয়তো অজানায় থাকতো।
৪৪.
প্রান্তিকের রুমের দরজার সামনে এসে অর্ষা হুড়মুড় খেয়ে পড়ে যেতেই কেউ একজন অর্ষার কোমড়ে ধরে তাকে সামলায়। অর্ষা ভয়ে চোখ বন্ধ করে কারো একজনের শার্টের বুকের জায়গাটায় খামচে আছে।
“অর্ষা….
হঠাৎ প্রান্তিকের ডাকে চোখ খুলে তাকায় অর্ষা। চোখ খুলে অর্ষা পুরাই ” থ” সাদা শার্ট এর উপর ব্লেজার পড়া..চুলগুলি সিম্পলিভাবে সুঠাম সুদর্শন এক যুবক তাকিয়ে আছে একমনে অর্ষার ভীত ফেইসে। হঠাৎ অর্ষার চোখ যায় ওয়াশরুমের দরজার সামনে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে প্রান্তিক। অর্ষা তাড়াতাড়ি উঠে নিজের ওড়না সামলায়।
প্রান্তিক সামনে এসে বললো, “কি হয়েছে আভেশ?
” আসলে ওনি পড়ে যাচ্ছিলেন তাই…
“এই মেয়ে চোখ কি অন্ধ দেখে চলাফেরা করতে পারোনা? আর তোমাকে কে বলেছে কফি আনতে? রুপা কোথায়? অর্ষা মাথা নিচু করে চুপ হয়ে আছে। প্রান্তিক রেগে এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে অর্ষার দিকে অনল দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে। আভেশ অর্ষার দিকে এক পলক তাকিয়ে বললো,” আরে প্রান্তিক ছেড়ে দেনা। ওনারতো কোনো দোষ নেই। দরজার সামনে একটু পানি পরেছিলো তাইতো…
“থাম আভেশ” ভালোভাবে দেখে চলাফেরা করতে পারেনা? এই মেয়ে যাও এইখান থেকে। কফির বারোটাতো বাজিয়েইছো আবার কফি নিয়ে এসেছিলে?
“অর্ষা বরাবরের মতো চুপই আছে। সে চুপচাপ প্রান্তিকের রুমের বাইরে পা ফেললো।
” প্রান্তিক তুই শুধু শুধু মেয়েটাকে এতো কথা শুনালি। আসলেই কিন্তু ওর কোনো দোষ ছিলোনা।
“চল..ফ্রেশ হয়ে আয়। একসাথে খেতে নিচে যাবো।
আভেশ আর কিছুই বললোনা। কারণ সে জানে প্রান্তিক কে এখন এইসব বলা যেই কথা না বলা একই কথা।
৪৫.
অর্ষা…অর্ষা…প্রান্তিকের উচ্চ স্বরে অর্ষা তাড়াতাড়ি রুম থেকে বের হয়ে আসে।
” ক কি ভাইয়া?
“তুমি নাকি খাবেনা?
” না আসলে ভাইয়া.
“শাট আপ..চলো টেবিলে….. প্রান্তিক অর্ষার হাত ধরে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। আভেশ এক ধ্যানে তাকিয়ে মনে মনে কি একটা ভেবে যেনো হেসে ফেললো।
হালকা আকাশী রংয়ের টিশার্টে প্রান্তিক কে বেশ মানিয়েছে। অর্ষা একদম সাধারণ মেয়ে। সালোয়ারের সাথে কামিজ পড়েছে। নীল রংয়ের।
টেবিলে খেতে বসতেই প্রান্তিক আড়চোখে অর্ষাকে দেখে বললো, ” আভেশ মেয়েরা চোখে কাজল পরলে একটু বেশি মায়াবী হয়ে যায় তাইনা? প্রান্তিকের কথা শুনে অর্ষা চোখ নিচে নামিয়ে ফেলে৷ আভেশ অর্ষার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বললো,”হুম শুধু মায়াবী নয় বল মায়াবতী হয়ে যায়। হঠাৎ খাবার টেবিলে প্রিয়ন্তির এন্ট্রি।
“আভেশ ভাই তুমি আমার রুমে একটাবার গিয়ে আমাকে দেখে আসলেনা? [ মনটা খারাপ করে ]
আরে প্রিয় রাগ করছিস কেনো? তোর জ্বর ঘুমিয়ে ছিলি তাই আর ডাকা হয়নি। প্রিয়ন্তি একটু আভেশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে রুটি ছিড়তে ছিড়তে বললো,” আভেশ ভাই বিয়ে টিয়ে করবেনা নাকি?
“আল্লাহ যখন চাইবে অবশ্যই করবো। প্রান্তিক বললো,” আল্লাহ চায় কিন্তু তুই চাসনা ওইটা বল।
প্রিয়ন্তিঃ আচ্ছা আভেশ ভাই তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ? আভেশ অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,”মায়াবী, হাসি-খুশি, তার ভীত চাহনিতেও যেনো একটা মায়া থাকে। তার মধ্যে ম্যাচিউরিটি থাকা চায়। প্রান্তিক আভেশকে অনুসরণ করে অর্ষার দিকে তাকালো। আর মনে মনে ভাবছে,”আভেশের কথার মধ্যে কিছুতো একটা ছিলোই।
৪৬.
এই প্রান্তিক কোথায় ছিলি? ইরফানের প্রশ্নে প্রান্তিক পাশে থাকা প্রিয়ন্তি আর অর্ষার দিকে তাকিয়ে বললো,”তোমরা যাও আমি আসছি।
ওরা যেতেই প্রান্তিক ভ্রু কুচকে বললো,”কেনো আমাকে খুঁজছিলি বোধহয়!
“হুম খুঁজবোইতো। আজ ছারিন নাকি কি করবে।
” কি করবে?
“তোর কপালে নাকি দুঃখ আছে।
” দুঃখ! প্রান্তিক চৌধুরীর কপালে? প্রান্তিক ফিক করে হেসে দেয়। শৈবাল বললো,ভাই বি সিরিয়াস। ছারিন নাকি ভার্সিটির ছাঁদ থেকে লাফ দিবে তুই ওর প্রপোস এক্সসেপ্ট না করলে। প্রান্তিক চোখে সানগ্লাসটা পরে একটা ডিবেল স্মাইল দিয়ে বললো, দিতে দে লাফ। আমিও দেখি ছারিন মাহাদীয়ার কতো বড় হৃদপিণ্ড।
চলবে….