এক_তুমিতে_আসক্ত #পার্টঃ১৯ #Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

0
376

#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ১৯
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ

শৈবাল একবার প্রান্তিকের দিকে তাকাচ্ছে আরেকবার তাইফার দিকে। শৈবাল প্রান্তিক কে বললো,

‘এই প্রান্তিক তুই ওনাকে চিনিস নাকি?

‘হুম চিনিতো ওইদিন… তাইফা মুচকি হেসে বললো, ‘ভাইয়া আপনি এইখানে? আসলে আমি এই ভার্সিটিতে নিউ আর এই হচ্ছে আমার বন্ধু রিমি [ রিমিকে দেখিয়ে ] রিমি হেসে বললো,’ আরে প্রান্তিক ভাইয়াকে আমি আগে থেকেই চিনি। আমাদের সিনিয়র অনেক। প্রান্তিক তাইফার দিকে তাকিয়ে বললো,’সরি আমাদের ভার্সিটিতে প্রথম এসেই এমন যার্গ এর শিকার হওয়ার জন্য। তাইফা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,

‘ইটস ওকে ভাইয়া। আসলে ভালো যেমন আছে খারাপও আছে।

‘আপনার পা ঠিক আছে?

‘হুম এখন অনেকটা ভালো আছে। আর ভাইয়া প্লিজ আমাকে আপনি বলবেন না। আমি আপনার অনেক জুনিয়র।

‘আচ্ছা তা না হয় আর বললাম না৷ তবে কোনো প্রবলেম নেক্সট টাইমে হলে অবশ্যই আমাকে অথবা শৈবাল মানে আমার ফ্রেন্ড ‘ও’কে জানাবেন। ওর নাম শৈবাল।

প্রান্তিক শৈবালের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতেই শৈবাল মুচকি হেসে বললো,’হুম অবশ্যই বলবা। ইতিমধ্যেই ইরফান,অনিক এসে পড়েছে।

১৩০.

রাহেলা শুনছো? সাহিলের ভাই বলে জেল থেইকা পালাইছে? ঘরে ডুকতে ডুকতে চিন্তিত হয়ে কথাটা বললেন নাফিস সরদার। রাহেলা বানু আফ্রাকে ঘুম পাড়াচ্ছিলেন। এমন কথা শুনে আতকে উঠেন তিনি৷

‘কি বলেন কিভাবে?

‘জানিনা কিভাবে তবে আমি জানি আমাদের বিপদ আসছে।

‘আপনি চিন্তা কইরেন না। আপনি প্রান্তিকরে কল দিয়া বইলা দেন অর্ষাকে সাবধানে রাখতে।

‘হ ঠিকই কইছো। তুমি দরজা বাড়ি বন্ধ কইরা ঘুমাই থাহো। আমি যায় একটু। এইটা বলেই নাফিস সরদার পায়চারি করতে করতে বেরিয়ে গেছেন বাড়ি থেকে।

১৩১.

প্রান্তিক বলছিলো তাইফার সাথে কিভাবে দেখা হয়েছে তা শুনে শৈবাল অবাক হয়ে বলে,’সব কেমন কাকতালীয়। হঠাৎ প্রান্তিকের ফোনে কল আসে।

‘শৈবাল তোরা সবাই এইখানে বস। আমি একটু আসছি।

‘ওকে।

প্রান্তিক একটু দূরে এসে কল ধরে বললো,

‘আসসালামু ওয়ালাইকুম খালুজান’

‘ওয়ালাইকুম সালাম বাবা’।

‘কেমন আছেন খালুজান? সবকিছু ঠিক আছেতো?

‘না কোনো কিছু ঠিক নেই সব এলোমেলো হয়ে গেছে।

‘মানে? কি হয়েছে খালুজান?

‘সাহিলের ভাই জেল থেকে পালিয়েছে’।

‘কিইই!

‘জানিনা বাপ এখন আমি কি করমু তুমি অর্ষাকে দেইখা রাইখো।

‘খালুজান আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি’।

‘কি?

‘পরে বলবো আপনারা আগে আসুন ঢাকায়’। কালকেই রওনা দিন আপনারা বাকি কথা আসার পর হবে।

‘কিন্তু…

‘না খালুজান আর কোনো কিন্তু নয়৷ অলরেডি অনেক রিস্কে আছে অর্ষা। আর আমি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করছি যেইভাবেই হোক সাহিলের ভাইকে ধরতে হবে’।

‘আচ্ছা বাবা। সাবধানে থেকো।

‘আপনারাও সাবধানে থাকবেন। ওরা আপনাদের ক্ষতি করার কোনো কমতি রাখবেনা।

প্রান্তিক কলটা কেটে হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরে। প্রান্তিক মনে মনে ভাবছে, ‘জানেনা এরপর যা যা হবে তার কোনোটা সহ্য করতে পারবে কিনা অর্ষা। কি জানি এরপর কি রিয়েক্ট করবে অর্ষা।

১৩২.

১০ মিনিট হয়ে গেছে সব স্টুডেন্ট বের হয়ে গেছে ভার্সিটির ক্লাসগুলো থেকে৷ অর্ষার দেখা নেই। বাইকে হেলান দিয়ে বার বার হাত ঘড়িটা দেখছে। এইবার প্রান্তিক কিছুটা চিন্তায় পড়ে গেলো। হঠাৎ মনে পড়ে যায় সাহিলের ভাইয়ের বিষয়টা৷ প্রান্তিক আর এক মুহুর্তও ওয়েট না করে অর্ষার ক্লাসের সামনে গেলো ক্লাসে উঁকি দিয়ে দেখে কেউ নেই৷ প্রান্তিক এইবার পাগলের মতো অর্ষাকে খুঁজতে লাগলো। অর্ষা অর্ষা বলে চিৎকার করছে যা বার বার দেয়ালে প্রতিশব্দ হচ্ছে। হঠাৎ চোখ যায় অর্ষা আসছে বিড়বিড় করতে করতে মাঠ দিয়ে হাঁটছে। প্রান্তিক রেগে চোয়াল শক্ত করে অর্ষার দুই হাতের দুই কাঁধ ঝাঁক দিয়ে বললো,’এই মেয়ে তোমার কোনো ম্যানার্স নেই হুম? সবাই বেরিয়ে এসেছে। তুমি! তুমি কই ছিলে হ্যাঁ? আনসার মি…… প্রান্তিকের চিৎকার শুনে ঘাবরে যায় অর্ষা। সে প্রিন্সিপালরুমে গিয়েছিলো বেতন দিতে। কিন্তু প্রান্তিক হঠাৎ এমন করবে সে ভাবেনি নয়তো বলেই যেতো।

‘এই মেয়ে শুনছোনা আমি কি বলছি? আনসার দাও..

‘আ আস্ আসলে…প্রিন্সিপাল স্যারের কাছো গিয়েছিলাম।

‘বলে গেলে খুব কষ্ট হয়ে যেতো তোমার তাইনা? মানুষকে টেনশনে ফেলে কি শান্তি পাও তুমি হুম?

প্রান্তিক এমনভাবে রেগে কথা বলছে যে অর্ষার মুখে কোনো কথায় আসছেনা। সে কি বলবে ভেবেই পাচ্ছেনা। আসলেই তার বলে যাওয়া উচিৎ ছিলো। কি বলবে এখন কিছুই অর্ষা ভেবে পাচ্ছেনা। প্রান্তিক হেলমেট লাগিয়ে রাগী লুক নিয়ে গম্ভীর ভাবে বললো,’উঠো’

অর্ষা বাইকে উঠতেই প্রান্তিক বাইক স্টার্ট দেয়। কিন্তু প্রান্তিকের গাড়ি চালানো দেখে অর্ষার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। বার বার প্রান্তিক কে অনুরোধ সুরে বলছে,

‘আস্তে চালান প্লিজ ভাইয়া আস্তে চালান। এক্সসিডেন্ট হবে।

কে শুনে কার কথা? প্রান্তিক হাই স্পিডে বাইক চালাচ্ছে।

‘ভাইয়া প্লিজ…. অর্ষা অস্ফুটে বললো। প্রান্তিক হঠাৎ বাইক থামিয়ে দেয়। আচমকা বাইক থেমে যাওয়াতে অর্ষা বড় বড় চোখ করে চারপাশটা তাকিয়ে একবার দেখে নেই৷ প্রান্তিক বাইক থেকে নেমে হেলমেট খুলতে খুলতে বললো,’বাইকেই বসে থাকবে নাকি নামবে?

‘ভাইয়া আমরা শপিংমলে এসেছি কেনো?

‘মানুষ শপিংমলে কি করতে আসে? খেতে???

‘না সেইটা বলিনি। মানে আমাদেরতো বাসায় যাওয়ার কথা এইখানে কেনো?

‘আগে নামো পরে বলবো। প্রান্তিক অর্ষার হাত ধরে তাকে নামিয়ে লিফটে উঠে পড়ে। লিফট থামে ৫তলায়।

‘বেশ সুন্দর শপিংমলটা তাইনা?

‘হুম তার জন্যইতো তোমাকে আনলাম। এক দোকানের স্টাফ বললো,’স্যার কি লাগবে বলুন।

‘শাড়ী দেখান। অর্ষা অবাক হয়ে বললো,’শাড়ী কেনো?

‘তোমার জন্য’

‘ভাইয়া আমিতো শাড়ী পড়িনা।

‘ওফ অর্ষা চুপ থাকোনা। আপাতত দেখো কোন শাড়ীটা বেশি পছন্দ হয়।

স্যার এইটা আপনার ওয়াইফকে বেশ মানাবে। একজন দোকানের স্টাফ এইটা বলাতে থতমত খেয়ে যায় অর্ষা। সে প্রান্তিকের দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয় দুজনের। অর্ষা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে। অর্ষা কি বলবে ভাবতে পারছেনা। অর্ষা দোকানিকে বলতে যাবে..যে আমি ওনার… অর্ষাকে সম্পূর্ণ কথা শেষ না করতে দিয়েই প্রান্তিক বললো, ‘হুম জানি। কারণ ও’কে সব কিছুতেই মানায়। অর্ষা পুরাই থ ‘। আর প্রান্তিকের মুখে সবার অগোচরে মুচকি হাসি।

১৩৩.

প্রিয়ন্তি মনিশা চৌধুরী এতো শপিং দেখে হতভম্ব। প্রিয়ন্তি লাফিয়ে যায় অর্ষার কাছে।

‘এই অর্ষা এতো শপিং কে করলোরে? ভাইয়া?

‘হুম।

‘কি কি এনেছেরে?

‘সবার জন্য এনেছে। নে খুলে দেখে নে। আচ্ছা চল রুমে যায়। অর্ষা আর প্রিয়ন্তি রুমে যেতেই মনিশা চৌধুরী বললো,’কিরে বাবা এতো শপিং!

‘আম্মু রাতে আব্বু আসার পর আমার রুমে দুজন একটু এসো। কিছু কথা আছে। এইটা বলে প্রান্তিকে পা বাড়ালো নিজের রুমের দিকে। মিসে মনিশা চৌধুরী মনে মনে ভাবলেন,’ আল্লাহ মালুম’ই’ জানেন ছেলেটার মাথায় আবার কি ঘুরঘুর করছে।

১৩৪.

নতুন বাসায় উঠেছে তাইফা। থাকার মতো একটা৷ চৌকি দিয়েছেন বাড়িওয়ালী খালামনি। রিমি কল করছে বার বার ব্যস্ততার জন্য কিছুতেই কল ধরতে পারছেনা সে। গুছ গাছ বাকি সব। তাইফা ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ে একটা চাঁদর বিছিয়ে।

১৩৫.

‘অর্ষা প্রিয়ন্তি স্টোর রুমে যে ভাড়াটে টা এসেছে তাকে খাবারটা দিয়ে আয়তো।

‘কেনো মা? সে রান্না করেনি?

‘দেখো মেয়ের কথা। মেয়েটা একা মানুষ। তাও আজ মাত্র উঠেছে। রান্না বান্না হয়তো কিছুই হয়নি। যা দিয়ে আয়।

‘অর্ষা চল। প্রিয়ন্তি আর অর্ষা স্টোর রুমের দিকে গেলো।

১৩৬.

‘দরজায় ঠকঠক আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তাইফার। সে চশমাটা চোখে দিয়ে ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে দরজা খুলতেই অর্ষা আর প্রিয়ন্তি ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। আর অবাক সুরে দু’জনেই বলে উঠে,’আপু আপনি?

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here