#এক_তুমিতে_আসক্ত
#পার্টঃ২৪
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মোঘ
‘বউ রেডি হও ভার্সিটিতে নিয়ে যাবো।
হঠাৎ প্রান্তিকের মুখে ‘বউ’ ডাক শুনে ভরকে যায় অর্ষা। তার কাছে এখনো তার আর প্রান্তিকের বিয়েটা একটা বাজে স্বপ্ন লাগছে।
‘কি হলো যাও’
‘আপনি আমাকে বউ ডাকলেন কেনো?
‘আমার বউকে আমি বউ ডাকবোনা?
‘দেখুন আমি আবারো বলছি যে আমি এই বিয়ে মানিনা।
প্রান্তিক হাঁটু থেকে বালিশটা নামিয়ে ল্যাপ্টপটা ডাউন করে কেবিনেটে রেখে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ায়। পকেটে দুই হাত গুজে অর্ষার দিকে এক পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। ‘মেয়েটা সদ্য গোসল করে এলো। পড়নে একটা নতুন চাকচিক্য শাড়ি। ভেজা চুল থেকে টুপটুপ পানি পড়ছে পেছনে। যার ফল স্বরুপ পিঠে শাড়ির অংশটা ভিজে লেপ্টে আছে। প্রান্তিক এইভাবে অর্ষার দিকে তাকাতেই অর্ষা রাগে কটমট করতে করতে বারান্দায় গেলো তোয়ালে ছড়িয়ে দিতে। পিছন ফিরতেই প্রান্তিকের বুকে মাথা লেগে ধাক্কা খায় সে। প্রান্তিক এক ধ্যানে তাকিয়ে বললো,
‘বউ রেডি হও। তোমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আমাকে অফিস যেতে হবে।
‘আমি আপনার সাথে কোথাও যাবোনা৷ কোথাও না। শুনেছেন আপনি? শুনেছেন? অর্ষার এই আধো চিৎকার করা কথা গুলো শুনে প্রান্তিক মিনমিনিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো,
‘না আমি শুনিনি। আর তুৃমি বললেও শুনবোনা। বুঝাতে চাইলেও বুঝাবোনা। সো হাররি আপ তৈরী হয়ে নাও আমি গোসলে যাচ্ছি।
১৫৯.
প্রিয়ন্তির মুখে অর্ষার বিয়ের কথা শুনে ক্ষানিক অবাক হয় তাইফা। সে বললো,
‘অর্ষা মেনে নিয়েছে?
‘নাগো আপি। অর্ষা মানবে। তবে আমার ভাইয়াকেতো ওহ চিনেনা। ঠিক ভালোবাসিয়ে ছাড়বে।
“আচ্ছা প্রিয়ন্তি বিয়ে এতো নিরবতা অনুসারে হয়েছে অনুষ্ঠান হবেনা?
‘হুম হবে। ভাইয়া বলেছে ঝাঁক ঝমক ভাবে তখনি বিয়ে হবে যখন অর্ষা এই বিয়ে মানতে চাইবে। আপু ওহ কে?
‘ওহ আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড রিমি।
‘হাই বনু।
‘হাই আপি।
প্রিয়ন্তি হেসে তাইফা আর রিমিকে বললো,
‘আপুরা আমি যায় ভার্সিটিতে যাবো। আর তোমরা গেলে রেডি হয়ে নাও। একসাথে না হয় বের হবো। রিমি সাথে সাথে বলে,
‘হুম হুম। আমরা যাবো। তুমি যাও আমরা রেডি হয়ে আসছি।
আর এইদিকে তাইফা মনে মনে ভাবছে,
‘এই একটা সুযোগ। যখন ওদের বিয়ের অনুষ্ঠান হবে তখন মামনিকে এইখানে আনতে হবে।
১৬০.
কিরে অর্ষা থুক্কু ভাবী..কেমন ফিলিংস হচ্ছে?
প্রিয়ন্তির এমন রম্য কথাতে অর্ষা চোখ শক্ত করে তাকায় তার দিকে। প্রিয়ন্তি অর্ষার এই রাগ পাত্তা না দিয়ে পুনরায় আবার বললো,
‘আমার ভাইটা তোকে কতো ভালোবাসে আর তুই….
‘ওনি জেদ দেখায় ভালো না বাসার তাইনা বউ?
হঠাৎ এমন কথা শুনে প্রিয়ন্তি আর অর্ষা দরজার পানে তাকায়। দেখে প্রান্তিক মোবাইল টিপতে টিপতে আড়ঁচোখে তাকিয়ে কথাটা বললো। প্রিয়ন্তি মুচকি হেসে ঘর থেকে চলে যায়।
অর্ষা দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
‘প্রিয়ন্তির সামনে আমাকে বউ বউ ডাকছেন কেনো? আপনারতো দেখছি লজ্জা সরম কিছুই নেই।
প্রান্তিক ভ্রু কুঁচকে ফোনটা পকেটে রেখে বললো,
‘আমার বউকে বউ ডাকবো নাতো বইন ডাকমু?
‘আমিতো আপনার বোন ওই হয়।
‘খালাতো বোনকে বিয়ে করা যায় বউ। ১০ মিনিট দিলাম এর মধ্যে রেডি না হলে…..
‘থ্রেট করছেন?..
‘নাগো বউ জাস্ট আদেশ করছি..এইটা বলেই প্রান্তিক মুখে শিষ দিতে দিতে বেরিয়ে যায়। অর্ষার মুখে বিরক্তিতে ফোঁটে উঠে,
‘আজব লোক। আমি এই বিয়ে কিছুতেই মানিনা। আর মানবো ওনা।
১৬১.
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। নাফিস সরদারের দিকে পরক্ষনেও তাকাচ্ছেনা অর্ষা। নাফিস সরদার সব বুঝতে পারছে তাই তিনিও আগ বাড়িয়ে কিছু করতে চাচ্ছেনা। মেয়ে তার বড় অভিমানী। প্রান্তিক অর্ষার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে খাবার খাচ্ছে আর অর্ষা এইসব দেখে রাগে কটমট করতে করতে মনে মনে প্রান্তিকের ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করছে।
‘প্রিয়ন…তাইফা আর রিমি এসে দেখে সবাই খেতে বসেছে।
‘সরি সরি আসলে আমরা জানতাম না যে তোমরা খেতে বসেছো।
‘আরে তাইফা আপু এমনভাবে বলছো কেনো? রিমি আপুকে নিয়ে খেতে বসো।
‘না প্রিয়ন্তি আমরা খেয়েই বের হয়েছি। আর অর্ষা তুমি ভার্সিটি যাবেনা?
‘হুম আপু যাবো। বসোনা তোমরা। খেয়ে নাও।
‘নাগো সত্যিই আমরা খেয়ে নিয়েছি।
তাইফা এক পলক ফরহাদ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রিমিকে নিয়ে বাহিরে চলে গেলো৷ আর যাওয়ার সময় প্রিয়ন্তিকে বললো,
‘আমরা ওয়েট করছি৷ জলদি চলে এসো।
১৬২.
সাহেরা বেগম তাইফাকে কল করেই যাচ্ছে তার কোনো হেলদোল নেই।
‘কিরে তাফু আন্টির কল ধর।
‘না
কেনো?
‘মামনি কান্না করবে কলটা ধরলেই।
‘অন্য কিছু ওতো বলতে পারে।
‘হুম তা ঠিক। দাঁড়া একটু আমি কথা বলি।
তাইফা ব্যাগ থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে সাহেরা বেগমকে কল ব্যাক করলো।
‘মামনি কেমন আছো?
‘কল ধরতে এতোক্ষন লাগে?
‘না মানে..ওইতো রাস্তায় তাই। ঔষধ খেয়েছো?.
‘হুম খেয়েছি। শোন না…তুই কোন ভার্সিটিতে যেনো পড়িস? ঢাকা ভার্সিটি তাইনারে?
‘হুম। কেনো বলোতো মামনি?
‘না কিছুনা। শুন না..আমি এখন কলেজ যাবো তুই সাবধানে যাস কেমন?
মাম…তাইফা কিছু বলার আগেই কলটা ওপাশ থেকে কেটে দেয় সাহেরা বেগম।
‘কিরে আন্টি কি বলেছে?
‘আজব। মামনি হঠাৎ ভার্সিটি কোনটা এইটা জানতে চাইলো কেনো?
‘কিরে বল।
রিমির ডাকে তাইফা ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। তাইফা বলে, না না কিছু হয়নি৷ তাইফা দেখলো প্রান্তিক,অর্ষা প্রিয়ন্তি ওরা বের হচ্ছে।
১৬৩.
প্রিয়ন্তি,তাইফা আর রিমি এক গাড়িতে আর প্রান্তিক অর্ষা অন্য গাড়িতে। প্রান্তিক ড্রাইভ করতে করতে বলে,
‘মানুষ দেখি জামাইকে কতো ভালোবাসে আর আমার বউ! একটা করলা।
প্রান্তিকের এমন অদ্ভুত জথা শুনে অর্ষা অবাক হয়ে রেগে বলে,
‘কিই? আমি করলা তাইনা? আমি করলা??????? আলতো চিৎকার করে কথাটা বলাতে প্রান্তিক এক হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বললো,
‘ইশশ আস্তে এখনিতো আমার কানটা ফেটে যেতো। আর আমি ভুল কি বললাম? তুমিতো করলাই৷ তিতা মানুষ মুখে একটু মধু ও নাই। প্রান্তিক কথায় অর্ষা ভীষণ রেগে যায়। সে বললো,
‘কি? আমি তিতা না? আমি তিতা? বুঝাচ্ছি মজা..এইটা বলেই অর্ষা প্রান্তিকের চুল মুঠোয় করে ধরে ঠোঁটে ঠোঁট মিশিয়ে দেয়। ক্ষানিক পরে ঠোঁট দুটো ছেড়ে দিয়ে জানালার বাইরে মাথা রাখে। অকল্পনীয় এই ঘটনায় ভীষম খায় প্রান্তিক৷ আর অর্ষা নিজের এহেন কান্ডে হতবাক। কি করতে কি করে বসেছে সে! প্রান্তিক অবাক হয়ে পরে মিটিমিটি হেসে বললো,
‘বাহ্ বউ তোমার মুখেতো অমৃত আছে।
‘আপনাকে…আ আমি..
‘ইশ বউ তোমাকে রাগলেনা? পুরা লাল টুকটুকে টমেটো লাগে।
‘কিই? টমেটো!
‘হুম গোল টমেটো। এইটা বলেই মুচকি হাসে প্রান্তিক।
১৬৪.
ভার্সিটিতে অর্ষাকে নামিয়ে চলে যায় প্রান্তিক। যাওয়ার সময় স্পষ্ট ভাবে বলেছে যেনো কোনো ছেলে বিরক্ত করলে,
‘প্রান্তিকের নাম বলে।
প্রিয়ন্তি রিমি আর তাইফা অর্ষার কাছে আসে। তাইফা প্রিয়ন্তিকে আলতো ধাক্কা দিয়ে বললো,
‘তোর মুখতো লজ্জায় সোহাগা হয়ে গেছে কেনোরে?
‘লজ্জা? ওমা লজ্জা পাবো কেনো?.
‘তাহলে তোমার মুখটা লজ্জাবতী হয়ে আছে কেনো গো?
‘রিমি আপু তোমরা কি যে বলো আল্লাহ এই জানে চলোতো ভেতরে যায়।
১৬৫.
অর্ষা ভয়ে ঘাবরে তাইফা রিমি আর প্রিয়ন্তিকে আকঁড়ে ধরে আছে। সামনে পরে আছে আহত একটা ছেলে। আর প্রান্তিক হাতের মুঠোয় শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে। পাশে দাঁড়িয়ে আছে শৈবাল,ইরফান অনিক। তারা সবাই প্রান্তিক কে শান্ত করার চেষ্টায় ব্যাকুল হয়ে আছে।
একটু আগে…..
প্রিয়ন্তি আমি আগে যায় তুই রিমি আর তাইফা আপুকে নিয়ে ভার্সিটির গেইটে আয়। ক্লাস শেষতো তাই ভালো লাগছেনা বসতে।
‘ওকে।
অর্ষা মাঠে যেতেই একটা ছেলে হাঁটু গেড়ে বসে গোলাপ ফুলের তোড়াটা ধরে বলে উঠলো,
‘আপনাকে আমি ভালোবাসি’
ব্যাস অনিক কল করে বলে দিয়েছে প্রান্তিক কে।
‘তোকে না বলেছি? কোনো ছেলে কিছু করলে আমার নাম বলতে?
‘আ আ..
‘ভাইয়া তুমি অর্ষাকে বকছো কেনো?
‘প্রিয় চুপ থাক। কি হলো বলো বলিনি আমি?
‘আ আমার কোনো দোষ নেই বিলিভ করেন। আ আসলে..
‘গাড়িতে গিয়ে বসো।
‘কি হলো গাড়িতে গিয়ে বসো…প্রান্তিকের ধমকে অর্ষা তাড়াতাড়ি গিয়ে গাড়িতে বসে। আর মনে মনে আল্লাহকে বলে,
‘আল্লাহ এইবার বাঁচিয়ে দাও প্লিজ।
🌸প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা রমজান মাস তাই গল্প ছোট ছোট করে দিতে হচ্ছে। কিন্তু ছোট করে হলেও আমি প্রতিদিন গল্প দিবো। মানিয়ে নিবেন। কারণ রোযা রেখে কষ্ট হয়ে যায়। আবার পরীক্ষাও সামনে তাই প্রবলেম হচ্ছে। ধন্যবাদ❤️
চলবে….